![ননীক্ষীর, প্রথম স্মার্ট ইউনিয়ন](uploads/2023/12/02/1701493137.6.-Goplaganj-Smart.jpg)
গোপালগঞ্জের প্রথম স্মার্ট ইউনিয়ন হিসেবে স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে মুকসুদপুর উপজেলার ননীক্ষীর ইউনিয়ন।
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছে ওয়েবসাইট ও অ্যাপ। এটা দিয়ে ঘরে বসেই ল্যাপটপ অথবা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নিতে পারবে ৩৬ ধরনের নাগরিক সেবা। এ ছাড়া বেকারদের দেওয়া হচ্ছে বিনামূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ। পাশাপাশি ইউনিয়নের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা হয়েছে সিসি ক্যামেরা।
সমাজসেবীরা বলছেন, স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরিতে এমন উদ্যোগ দেশের অন্য চেয়ারম্যানদের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে। আর উপজেলা প্রশাসন বলছে, শুধু ননীক্ষীর ইউনিয়ন পরিষদই নয়, সাফল্য পেলে বাকি ইউনিয়নও স্মার্ট ইউনিয়নের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
গত শুক্রবার সরেজমিনে ননীক্ষীর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা গেছে, ২০২১ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশের পর ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। এর ভিত্তি থাকবে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট সমাজ। এ পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে মুকসুদপুর উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় কাজ করে যাচ্ছে ননীক্ষীর ইউনিয়ন পরিষদ।
স্মার্ট ইউনিয়ন গড়তে ননীক্ষীর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ রনি আহমেদের উদ্যোগে ইউনিয়নের জন্য তৈরি করা হয়েছে ননীক্ষীর স্মার্ট ইউনিয়ন পরিষদ নামে একটি ওয়েবসাইট ও অ্যাপ। সেখানে ওই ইউনিয়নের প্রতিটি পরিবারের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক তথ্য, ছবি, মোবাইল নম্বর, পরিবারের সদস্য সংখ্যা, আয়-ব্যয়ের তথ্য, ভাতা-সুবিধা, হোল্ডিং ট্যাক্স, আয়কর, কৃষি-অকৃষি জমিসহ ৩৬ ধরনের ডাটা থাকবে। এর মাধ্যমে ইউনিয়নের প্রতিটি পরিবারের বেকার যুবকদের শনাক্ত করে কর্মসংস্থানের জন্য দেওয়া হবে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ। পাশাপাশি একই অ্যাপের মাধ্যমে ভোগান্তি ছাড়াই সাধারণ মানুষ ঘরে বসেই মোবাইল অথবা ল্যাপটপ দিয়ে নিতে পারবে জন্ম ও মৃত্যু সনদ, বিভিন্ন ধরনের ভাতা।
এদিকে ইউনিয়নের প্রতিটি পরিবারের বেকার যুবক-যুবতীদের দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে গড়ে তোলা হয়েছে শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার নামে একটি ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। সেখানে বিনামূল্যে ৭২ জনকে দুই মাসব্যাপী কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এর আগের ব্যাচে ৭৫ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ইউনিয়নের প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিক, স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন সরকারি অফিসে বসানো হয়েছে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন। ইউনিয়নটির সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা হয়েছে সিসি ক্যামেরা। এর ফলে ইউনিয়নে কমেছে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড।
কম্পিউটার প্রশিক্ষণার্থী আশিক সরদার জানান, ‘আমরা যারা বেকার যুবক-যুবতী রয়েছি তারা এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিতে পারছি। পরে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে পারছি।’
অপর প্রশিক্ষণার্থী রিমি আক্তার বলেন, ‘দেশে এখন চাকরির বাজার খুব সীমিত। এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আমরা নিজেদের তৈরি করতে পারছি।’
কম্পিউটার প্রশিক্ষক দিদারুল ইসলাম রাজীব ও রাব্বি হোসেন বলেন, প্রশিক্ষণ নিয়ে চাকরির পেছনে না ঘুরে নিজেই উদ্যোক্তা হয়ে গড়ে উঠতে পারবে বেকাররা।
স্থানীয় শিক্ষক লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘ইউনিয়নের ওয়েবসাইটে আমাদের তথ্য থাকায় অনেক সুবিধা পাচ্ছি। কোনো ভোগান্তি ছাড়া সহজেই আমরা জন্ম ও মৃত্যুসনদ পাচ্ছি। এ ছাড়া সরকারি ভাতা দেওয়ায় সমন্বয় এসেছে। যারা প্রাপ্য তারাই ভাতা পাচ্ছেন। এতে সরকারি সুযোগ-সুবিধা সুষমভাবে বণ্টন হচ্ছে। সহজেই ঘরে বসে আমরা ৩৬ ধরনের সুবিধা পাচ্ছি।’
ননীক্ষীর বাজারের ব্যবসায়ী আকিদুল ইসলাম বলেন, ‘ইউনিয়নের পুরো এলাকায় সিসি টিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। এখন রাতে দোকানে থাকতে হয় না। আমরা নিশ্চিন্তে বাড়িতে যেতে পারি। এতে এলাকায় চুরি ডাকাতিসহ অপরাধমূলক কাজ কমে গেছে।’
চেয়ারম্যান শেখ রনি আহমেদ বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে সরকার স্মার্ট বাংলাদেশের যে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, এটি তারই অংশবিশেষ। এখান থেকে মানুষ ৩৬ ধরনের সুবিধা পচ্ছে। এতে ইউনিয়নবাসীর ভোগান্তি কমেছে।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সভাপতি ড. মো. আবু সালেহ বলেন, ‘দেশের অন্যসব ইউনিয়নের জন্য এটি অনুকরণীয় হতে পারে। এটি সব ইউনিয়নে হলে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। কমে আসবে ভোগান্তি।’
মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম ইমাম রাজী টুলু বলেন, ‘ননীক্ষীর ইউনিয়ন পরিষদই নয়, সাফল্য পেলে বাকি ইউনিয়নও স্মার্ট ইউনিয়নের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এমন উদ্যোগে সাধারণ মানুষের নাগরিক সেবা পেতে যেমন ভোগান্তি কমাবে, তেমনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বড় ভূমিকা রাখবে।’