![মূল সড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা](uploads/2023/12/02/1701501111.Auto.jpg)
ঢাকার সড়কে রেজিস্ট্রেশনবিহীন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। যদিও এগুলো বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কিন্তু সেই নির্দেশনা শুধু কাগজে-কলমে। গত বছরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন টাস্কফোর্সের সভায় ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। সেই সিদ্ধান্তের পর সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযান চালায় ট্রাফিক বিভাগ। কিন্তু সম্প্রতি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা রাজধানীর মূল সড়কগুলোয় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
ওই সাঁড়াশি অভিযানের সময় ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান বন্ধ করতে বেশ তৎপর ছিল প্রশাসনের সবাই। অভিযানের কিছুদিন যেতে না যেতেই স্থবির হয়ে পড়ে অভিযান। একদিকে অবৈধ অটোরিকশার দৌরাত্ম্য, অন্যদিকে অদক্ষ চালকের কারণে রাজধানীতে দিন দিন বাড়ছে যানজট। ঘটছে দুর্ঘটনা, প্রাণ হারাচ্ছেন হাজারও সাধারণ মানুষ। দেখা গেছে, হাইওয়ে রোডে বড় গাড়ি চলার মধ্যে দ্রুতগতিতে রাস্তা পার হয় অটোরিকশা। যার ফলে ঘটে বড় সব সড়ক দুর্ঘটনা।
রাজধানীতে এখন পর্যন্ত ঠিক কী পরিমাণ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে, তা সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগই নম্বরবিহীন এবং বাকিগুলো রেজিস্ট্রেশনবিহীন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালকরাই চালাচ্ছেন এসব অটোরিকশা। স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব যানবাহনে দুর্ঘটনা ঘটে বেশি। দুর্ঘটনার পর পুলিশ অভিযান চালালেও পরে আবারও সড়কে ফিরে আসে এসব যানবাহন।
সরেজমিনে দেখা যায়, মালিবাগ, খিলগাঁও, কমলাপুর, যাত্রাবাড়ী, সিপাইবাগ, ডেমরা, হাজারীবাগ, কলাবাগান, মতিঝিল, ফকিরাপুল, পল্টন, সায়েদাবাদ, বেইলী রোড, বাড্ডা, নতুনবাজার, কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল, রামপুরা, বাংলামোটর, মগবাজার, শান্তিবাগ, গোলাপবাগসহ রাজধানীর সব এলাকাতেই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার অবাধ বিচরণ চলছে। স্বল্প দূরত্বের যাত্রীরা চলাচল করছেন এসব অটোরিকশায়। পেছনের আসনে ঠাসাঠাসি করে বসতে হচ্ছে তিনজনকে। চালকের পাশে অবৈধভাবে অতিরিক্ত আসন সংযোজন করে বসানো হচ্ছে দুই পাশে দুজন যাত্রী। ফলে একটি অটোরিকশায় যাত্রী থাকছে পাঁচজন। আবার অনেকে তিনজন নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছায়।
বেসরকারি চাকরিজীবী মো. রানা বলেন, ‘রাজধানীতে যথাসময়ে গণপরিবহন না থাকায় অটোরিকশায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এসব গাড়ি ম্যাক্সিমাম ক্ষেত্রেই চালায় অদক্ষ চালকরা। তারা কে কার আগে যাবে, কে কাকে অতিক্রম করবে, এই প্রতিযোগিতায় মাতোয়ারা থাকে সারাক্ষণ। ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত।’
জয়নাল আলম নামে এক পথচারী বলেন, ‘কোনোমতে রিকশার হ্যান্ডেল ধরতে পারলেই সে রাতারাতি চালক হয়ে যায়। মূলত এদের অটোরিকশাগুলো দিচ্ছেন গ্যারেজের মালিকরা। তারা যদি অটোরিকশা চালকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে গাড়িগুলো চালাতে দিতেন তবে সড়কে দুর্ঘটনা কমে যেত।’
মগবাজার মোড়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে বসে ছিলেন মো. মনসুর মিয়া। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা তো অবৈধ, এটা কেন চালাচ্ছেন? প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এই গাড়ি চালাতে তেমন কোনো শক্তি লাগে না, পিকআপ টানলেই গাড়ি দৌড়ায়। তা ছাড়া প্যাডেলচালিত গাড়িতে মানুষ তেমন আর উঠতে চায় না। অটোরিকশা খুব তাড়াতাড়ি চলে, মানুষের সময়ও বাঁচে, আমাদেরও কষ্ট কম হয়। তবে ব্রেক একটু কম ধরে।
শাহবাগ এলাকায় আরেক অটোরিকশা চালক মো. বিপুলের সঙ্গে কথা হলো। তিনি জানান, অটোরিকশা দিয়ে দ্রুত ভাড়া টানা যায় এবং সময় বাঁচে। তা ছাড়া প্যাডেলচালিত গাড়িতে অনেক কষ্ট, মানুষ কষ্ট করতে চায় না। আমার আগে প্যাডেলের গাড়ি ছিল। তখন আমার গাড়িতে মানুষ তেমন উঠত না। দিনশেষে সংসার চালাতে কষ্ট হতো, এখন অটোরিকশা দিয়ে দৈনিক হাজার টাকা ইনকাম করি। আমার সংসার এখন ভালোই চলে।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল খবরের কাগজকে জানান, ঢাকার রাস্তায় অবৈধ অটোরিকশার অবাধ বিচরণ ঠিক না। এসব বিষয়ে পুলিশকে কিছু নির্দেশনা দেওয়া আছে। তা ছাড়া এসব বিষয়ে আমাদের ট্রাফিক বিভাগ কাজ করে।
অটোরিকশার দৌরাত্ম্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মুনিবুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘রাজধানীতে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় বাস-সিএনজি না চলায় কিছু অসাধু আটোরিকশার মালিক বেশি টাকার লোভে এসব অবৈধ অটোরিকশা চলমান রেখেছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত অভিযান চালাচ্ছি।’
অতিরিক্ত কমিশনার মুনিবুর রহমান আরও বলেন, ‘অভিযানে আটক করা হচ্ছে অবৈধ অটোরিকশাগুলো। কিন্তু মাঝে মাঝে শহরের অলিগলি ছেড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে অটোরিকশাগুলো মূল সড়কে চলে আসে। এদের দৌরাত্ম্য বন্ধে আমরা বদ্ধপরিকর।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক বলেন, ‘ঢাকার সড়কে রেজিস্ট্রেশনবিহীন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। যদিও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু এখনো বন্ধ হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘অটোরিকশা বন্ধ করতে হলে রিকশাচালক এবং উভয়পক্ষের বিষয়টি বিবেচনায় আনতে হবে এবং সরকারিভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। মাঝে মাঝে আমরা দেখি অটোরিকশার কারণে সড়কে যানজট তৈরি হয় এবং বড় বড় সড়কে দুর্ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে সরকারের সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত বলে আমি মনে করি।’