![দুদকে বেশির ভাগ অভিযোগ ত্রুটিপূর্ণ, ব্যক্তিগত শত্রুতা](uploads/2024/02/11/1707635114.ACC.jpg)
গত এক বছরে দুর্নীতি ও অনিয়মসংক্রান্ত অভিযোগের প্রায় ৯৬ শতাংশ আমলে নেয়নি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মাত্র ৪ শতাংশ অনুসন্ধানযোগ্য হিসেবে গ্রহণ করে প্রতিষ্ঠানটি। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট অভিযোগ জমা হয়েছিল ১৫ হাজার ৪৩৭টি। এর মধ্যে মাত্র ৮৪৫টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করা হয়। এ সময়ে মামলা হয়েছে ৪০৪টি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে পাঠানো হয়েছে ৯১৩টি। বাকি ১৩ হাজার ৬৭৯টি অভিযোগ ফেলে দেওয়া হয়েছে।
ব্যক্তিগত-পারিবারিক ও ব্যবসায়িক বিরোধ, জমিসংক্রান্ত, প্রতিবেশীর সঙ্গে বিরোধ, সহকর্মীর সঙ্গে ব্যক্তিগত বিরোধ, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, অভিযোগের অস্পষ্টতা, তথ্য বিভ্রাট, অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম-ঠিকানা না থাকা এবং দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ না হওয়ায় বিপুলসংখ্যক অভিযোগ ফেলে দেওয়া হয়েছে।
এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালেও মাত্র ৫ শতাংশ আমলে নিয়েছিল দুদক। বাকি ৯৫ শতাংশ অভিযোগ আমলে নিতে পারেনি। ওই বছর মোট অভিযোগ এসেছিল ১৯ হাজার ৩৩৮টি। এর মধ্যে ৯০১টি অভিযোগ অনুসন্ধানযোগ্য হয়। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ৩ হাজার ১৫২টি অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও দপ্তরে পাঠানো হয়। অনুসন্ধান অযোগ্য বিবেচনায় বাকি ১৫ হাজার ২৮৫টি অভিযোগ ফেলে দেওয়া হয়।
২০২১ সালে অভিযোগ আসে ১৪ হাজার ৭৮৯টি। ৫৩৩টি অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়। ২ হাজার ৮৮৯টি অভিযোগ বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বাকি ১১ হাজার ৩৬৭টি অভিযোগ ফেলে দেওয়া হয়।
২০২০ সালে ১৮ হাজার ৪৮৯টি অভিযোগ জমা হয়। অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয় ৮২২টি। ২ হাজার ৪৪৯টি অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও দপ্তরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ১৫ হাজার ১৯৮টি অভিযোগ ফেলে দেওয়া হয়।
২০১৯ সালে অভিযোগ আসে ২১ হাজার ৩৭১টি। অনুসন্ধানের জন্য আমলে নেওয়া হয় ১ হাজার ৭১০টি অভিযোগ। বিভিন্ন দপ্তর ও বিভাগে পাঠানো হয় ৩ হাজার ৬২৭টি। ১৬ হাজার ৩৪টি অভিযোগ ফেলে দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে দুদক সচিব (বদলির আদেশপ্রাপ্ত) মাহবুব হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘অভিযোগ যাচাই-বাছাইয়ের জন্য একটি কমিটি করা আছে। নির্দিষ্ট মানদণ্ড ও কিছু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই করা হয়। মানদণ্ডের বাইরে অভিযোগের অনুসন্ধান করে কাঙ্ক্ষিত ফল আসে না। তবে দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ এবং প্রয়োজনীয় তথ্যসংবলিত অভিযোগ পেলে তা যথারীতি অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করা হয়। এ ছাড়া পারিবারিক বিরোধ, জমিজমাসংক্রান্ত, ব্যক্তিগত শত্রুতা, অসম্পূর্ণ ও ত্রুটিপূর্ণ অভিযোগগুলো বেশি আসে। আইনগতভাবেই এগুলো আমলে নেওয়ার সুযোগ দুদকের নেই।’
দুদক সূত্র জানায়, যেকোনো অভিযোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে ১০০ নম্বরের একটি মার্কিং করা হয়ে থাকে। অভিযোগটি দুর্নীতির অন্তর্ভুক্ত কি না, সেই বিষয়ে বিভিন্ন মানদণ্ড বিবেচনা করে নম্বর দেওয়া হয়। এই পদ্ধতিতে যেগুলোতে ৬০ নম্বর পাওয়া না যায়, সেগুলো অনুসন্ধান করেও সুফল পাওয়া যায় না। আর যেগুলো ৬০ বা তার বেশি নম্বরে আসে, সেগুলো অনুসন্ধানের জন্য নেওয়া হয়। যাচাই-বাছাই কমিটি বেশ কিছু বিষয় বিবেচনা করে থাকে। প্রথমত দেখা হয়, অভিযোগটি দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ কি না। এরপর অভিযোগটি কাকে সম্বোধন করে পাঠানো হয়েছে, অভিযোগকারীর পরিচয়, নাম-ঠিকানা, টেলিফোন নম্বর আছে কি না, প্রাপ্ত অভিযোগটির সুনির্দিষ্ট ও বস্তুনিষ্ঠতা আছে কি না, শত্রুতাবশত অথবা হয়রানির উদ্দেশ্যে অভিযোগটি দেওয়া হয়েছে কি না; অভিযুক্ত ব্যক্তির দপ্তর, তার দাপ্তরিক পদমর্যাদা, বর্ণিত অপরাধ করার ক্ষমতা ও সুযোগ আছে কি না প্রভৃতিসহ অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সময়কাল, অভিযোগের দরখাস্তে বর্ণিত অপরাধের ব্যক্তি ও অর্থ-সঙ্গতির পরিমাণ বিবেচনা করা হয়। সর্বশেষে অভিযোগটি আমলে নিলে অনুসন্ধান শেষে সেটা আদালতে প্রমাণ করা যাবে কি না ইত্যাদি বিষয়ও যাচাই-বাছাই কমিটির বিবেচনায় থাকে। দুর্নীতিসংক্রান্ত অভিযোগ কীভাবে আবেদন করতে হয়, সে বিষয়ে দুদকের ওয়েবসাইটে সুনির্দিষ্টভাবে বলে দেওয়া আছে।