![পেঁয়াজের দাম এক বছরে আকাশচুম্বী](uploads/2024/02/12/1707718704.Onion.jpg)
আড়তে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯৫-১০০ টাকা কেজি। পাইকারিতে ১০০-১০৬ টাকা। সেই পেঁয়াজ খুচরা বাজারে ভোক্তাদের কিনতে হচ্ছে ১০০-১১০ টাকা কেজি। খুচরা বাজারের এই দাম গত বছরের তুলনায় কেজিতে ৮০ টাকা বা ২০০ শতাংশ বেশি। কারণ গত বছর এই সময়ে পেঁয়াজ ৩০-৪০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে।
বিক্রেতারা বলছেন, মুড়িকাটা শেষ পর্যায়ে। ১৫ দিনের মধ্যে হালিকাটা (সিজন) পেঁয়াজ উঠে যাবে। তখন দাম ৪০-৫০ টাকায় নেমে যাবে। রমজান মাসে অর্ধেকে নেমে যাবে দাম। আলুও বেশি দামে ভোক্তাদের কিনতে হচ্ছে। কারণ বর্তমানে ৩৫ টাকা কেজি আলু বিক্রি হলেও গত বছরের এই সময়ে ২২-২৫ টাকা কেজি খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হয়েছে। কেজিতে বেড়েছে ১৫ টাকা বা ৬০ শতাংশ।
তবে বছরের ব্যবধানে ডিমের দাম তেমন বাড়েনি। বর্তমানে ১৩৫ টাকা ডজন বিক্রি হচ্ছে। গত বছরেও সামান্য বেশি দামে ক্রেতাদের ডিম কিনতে হয়েছে।
রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে সংশ্লিষ্ট বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এবং সরকারি সংস্থা টিসিবির ওয়েবসাইট ঘেঁটে এমনই তথ্য পাওয়া গেছে।
দেশে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ উৎপাদন হলেও ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করলে বাংলাদেশে বাড়তে থাকে দাম। এই দাম কেজিতে ২০০ টাকাও হয়েছে। বাধ্য হয়ে সরকার দেশি পেঁয়াজের কেজি ৬৫ টাকা বেঁধে দিলেও তার ধারেকাছে নেই। মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম বাড়ার পর ৮০-৯০ টাকায় নামে। কিন্তু হঠাৎ করে এ সপ্তাহে বেড়ে যায়। খুচরা পর্যায়ে ভোক্তাদের কেজিতে ১২০-১৩০ টাকায় কিনতে হয়েছে। বিভিন্ন মোকাম থেকে রাজধানীতে আমদানি কমে যাওয়ায় এভাবে হঠাৎ করে দাম বেড়ে যায় বলে বিক্রেতারা জানান।
তবে গতকাল আবার ঢাকার বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়ে গেলে দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা কমে। এর ফলে আড়ত থেকে খুচরা পর্যায়ে কম দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে। দামের ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মিনহাজ ট্রেডার্সের মো. খলিল খবরের কাগজকে বলেন, পেঁয়াজের দাম কমেছে। আড়তে এক কেজি পেঁয়াজের দাম এখন ৯৫-১০০ টাকা, যা আগের দিন ১১০-১১৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে মেহেরপুরের পেঁয়াজ আরও কম দামে ৭০ টাকায় কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আড়তে কমায় পাইকারি পর্যায়েও কমেছে দাম। প্রতি পাল্লা ৪৫০-৫৩০ টাকা বা ৯০-১০৬ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে বলে পাইকারি বিক্রেতারা জানান।
সেই দামের পেঁয়াজ ঢাকার বিভিন্ন বাজারে ১০০-১১০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে বলে খুচরা বিক্রেতারা জানান। জানতে চাইলে মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারের রফিক বলেন, ‘১০০-১১০ টাকায় পেঁয়াজের কেজি বিক্রি করা হচ্ছে; যা আগের দিন ১১০-১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আড়তে বেশি দাম। তাই আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’ এদিকে কারওয়ান বাজারে এই দামে পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে বলে বিক্রেতারা জানান। এই বাজারের খুচরা বিক্রেতা হালিম, লিটন, তুহিনসহ অন্যরা জানান, আগের দিন ১১০-১২০ টাকা কেজি বিক্রি করা হলেও গতকাল রবিবার ১০০-১১০ টাকায় বিক্রি করা হয়। সরবরাহ বেশি হলে দাম আরও কমবে।
তবে বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজের দাম কমলেও পাড়া-মহল্লা বা অলিগলিতে তেমন কমেনি। গতকালও মোহাম্মদপুরের স্বপ্নধারা হাউজিং বাজারে এক কেজি পেঁয়াজ ১৩০ টাকায় কিনতে হয়েছে বলে আসিফ নামের একজন ক্রেতা জানান।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সূত্র জানায়, দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২৫ লাখ টনের মতো। তবে রমজানে পেঁয়াজের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। এই মাসে প্রায় পাঁচ লাখ টন লাগে। বর্তমানে ১০০-১২০ টাকা কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হলেও টিসিবি বলছে, গত বছরের এই দিনে ৩০-৪০ টাকা ছিল। বছরের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ৮০ টাকা বা ২০০ শতাংশ।
পেঁয়াজের উৎপাদন বেশি হলেও এত দাম কেন? জানতে চাইলে আড়তদার খলিল বলেন, রমজান মাসের আগেই নতুন পেঁয়াজ উঠে যাবে। তখন দাম কমে যাবে। ৪০-৫০ টাকায় নেমে যাবে। অন্যান্য আড়তদারও একই তথ্য জানান। তারা বলছেন, দেশে প্রচুর পেঁয়াজের উৎপাদন হয়েছে। মুড়িকাটার মৌসুম শেষ হওয়ায় কয়েক দিন থেকে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়ে গেছে। তবে রবিবার আবার সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কমতে শুরু করেছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম অর্ধেকে নেমে যাবে।
পেঁয়াজের পথেই রয়েছে আলু। দাম বেড়ে ৫০-৬০ টাকা কেজি হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে সরকার ৩৫ টাকা কেজি দাম বেঁধে দেয়। তার পরও ভরা মৌসুমেও কমছে না দাম। গত বছরের এই সময়ে ২০-২৫ টাকা কেজি বিক্রি করা হলেও গতকাল ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। টাউন হল বাজারের খুচরা বিক্রেতা রফিকসহ অন্য খুচরা বিক্রেতারা বলেন, দাম বেশি। ৩৫-৪০ টাকা কেজি। অথচ সরকার অনেক আগে এর দাম ভোক্তাপর্যায়ে ৩৫-৩৬ টাকা বেঁধে দিয়েছে।
এদিকে কারওয়ান বাজারেও দেখা গেছে আলুর দাম বেশি। বিক্রমপুর স্টোরের সবুজসহ অন্য আড়তদাররা জানান, ২৫-২৭ টাকায় এক কেজি আলু বিক্রি করা হচ্ছে। সেই আলু পাইকারি পর্যায়ে ১৫০ টাকা পাল্লা বলে সেলিমসহ অন্যান্য পাইকারি বিক্রেতা জানান। ভোক্তাদের কাছে ৩৫ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে বলে হালিমসহ বিভিন্ন বাজারের খুচরা বিক্রেতারা জানান।
টিসিবি বলছে, গত বছরের এই দিনে আলু বিক্রি হয়েছে ২২-২৫ টাকা কেজি। বছরের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ১৫ টাকা বা ৬০ শতাংশ। বিক্রেতারা বলছেন, ‘দাম কমবে কি না তা বলা যাবে না। কারণ কত উৎপাদন হচ্ছে তা জানি না। তবে আমদানি বেড়ে গেলে দাম কমবে। এটা পচনশীল পণ্য। ধরে রাখা যাবে না।’
এদিকে আগে কম দামে ডিম বিক্রি হলেও বছরখানেক থেকে আর কমছে না। ১৩০-১৪০ টাকা ডজনে আটকে আছে। কয়েকটা কোম্পানি সিন্ডিকেট করে ডিমের দাম গত বছরের আগস্টে হঠাৎ করে বাড়িয়ে দেয়। তা বাড়তে বাড়তে ১৭০ টাকা ডজন ঠেকে। এ নিয়ে হইচই পড়লে অনেক পরে পেঁয়াজ, আলুর সঙ্গে ডিমের দাম সর্বোচ্চ ১৪৪ টাকা ডজন বেঁধে দেয়। তার থেকে কম দামেই ১২৫-১৩০ টাকা ডজন ডিম বিক্রি হয়। কিন্তু নিয়ম অমান্য করে অস্বাভাবিক দামে বিক্রি করায় ডায়মন্ড এগ লিমিটেড ও সিপি বাংলাদেশ কোম্পানিকে জরিমানা করেছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন (বিসিসি)। এই দুই কোম্পানিকে সাড়ে ৩ কোটি টাকা জরিমানা করার পরই আবার বেড়ে গেছে ডিমের দাম। বর্তমানে কিছুটা কমে ১৩৫-১৪০ টাকায় ডিমের ডজন বিক্রি করা হচ্ছে বলে বিক্রেতারা জানান।
টিসিবি বলছে, গত বছরের এই দিনেও ৪৫-৪৭ টাকা হালি বা ১৪১ টাকা ডজন বিক্রি হয়েছে। বছরের ব্যবধানে ডজনে বেড়েছে ৬ টাকা বা ৪ শতাংশ। ডিম বিক্রেতারা বলছেন, করপোরেটরা না কমালে খুচরা বাজারে কমবে না ডিমের দাম। জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের ডিম বিক্রেতা রাফসান বলেন, ‘বর্তমানে ১৩৫-১৪০ টাকা ডজন বিক্রি করা হচ্ছে। গোড়ায় কমালে আমরাও কম দামে বিক্রি করতে পারব।’