বগুড়া সদর উপজেলার এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ মামলা মিথ্যা প্রমাণের জন্য ভুয়া অ্যাফিডেভিট বা ঘোষণা পত্র তৈরি করার অভিযোগ উঠেছে বগুড়া বারের দুজন আইনজীবীর বিরুদ্ধে।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক মো. আশিকুল খবির এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আইনজীবী ও নোটারি পাবলিক মো. নাজমুল হুদা পপনকে আগামী ৩ মে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এ অ্যাফিডেভিট শনাক্তকারী আইনজীবী হায়দার রহমান মিয়া।
ওই আদালতের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর নরেশ মুখার্জী এ অভিযোগ স্বীকার করে বলেছেন, ‘এ বিষয়ে নাবালিকা ওই ছাত্রী আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছে।’ নরেশ মুখার্জী বলেন, ‘অ্যাফিডেভিটে যে মেয়ের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে তা ধর্ষিতার নয়, এমন কি স্বাক্ষরও নকল। অ্যাফিডেভিটটি বিয়ের ডিক্লারেশন-আইনে নোটারি পাবলিকদের এ ক্ষমতা দেওয়া হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আদালতে ওই ছাত্রী তার বিয়ের সম্পর্কে যে জবানবন্দি দিয়েছে, তাতে সে আসামি ইউসুফকে বিয়ে করার কথা অস্বীকার করেছে। মায়ের বিবরণ অনুযায়ী ওই শিশুর বয়স ১২ বছর আর ডাক্তারি পরীক্ষায় তার বয়স ১৪-১৫ বছর বলে উল্লেখ করা হয়েছে।’
ওই স্কুলছাত্রীকে বিয়ের প্রলোভন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে বেশ কয়েকবার বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে শিশুটির মা ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বগুড়া সদর থানায় মো. ইউসুফ প্রামাণিক, মো. রাব্বী, মোছা. দুলালী খাতুন ও সুজনসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন। এ মামলায় মো. ইউসুফ আলী প্রামাণিকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে অন্য ৩ জনের বিরুদ্ধে তাকে সহযোগিতা করার কথা বলা হয়েছে। তবে আদালতে দাখিল করা চার্জশিটে তদন্তকারী কর্মকর্তা শুধু মো. ইউসুফ প্রামাণিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনলেও অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করা হয় অন্য ৩ জন আসামিকে।
নোটারি পাবলিক অ্যাডভোকেট মো. নাজমুল হুদা পপনকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আদালতের এ নির্দেশ তিনি এখনো পাননি এবং এ ঘটনার জন্য তিনি দায়ী নন।’
বিয়ের ডিক্লারেশন দেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় থাকার পরেও তিনি কীভাবে তার দায়িত্ব এড়াতে পারেন, এ প্রশ্নের জবারে, মো. নাজমুল হুদা পপন বলেন, ‘প্রত্যেকটি অ্যাফিডেভিট করা হয় একজন শনাক্তকারী আইনজীবীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আর এ অ্যাফিডেভিটটিও করা হয়েছে বগুড়া বারের সিনিয়র আইনজীবী হায়দার রহমান মিয়ার দেওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে। সুতরাং আমি এ ঘটনার জন্য দায়ী নই।’
বিয়ের ডিক্লারেশন দেওয়ার আইনগত ক্ষমতা নোটারি পাবলিকদের আছে কি না, এ প্রশ্নের জবারে মো. নাজমুল হুদা পপন বলেন, ‘২০১৬ সালে আইন মন্ত্রণালয় এ ক্ষমতা বাতিল করার পর সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে যে, আগে কাজি অফিসে বিয়ে রেজিস্ট্রি করতে হবে তারপর নোটারি পাবলিক অ্যাফিডেভিট করতে পারবেন।’
অ্যাফিডেভিট শনাক্তকারী আইনজীবী হায়দার রহমান মিয়ার সঙ্গে এ অভিযোগ নিয়ে সেল ও ল্যান্ডফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি বারবার বলেন, ‘এ বিষয়টি তার মনে নেই। তবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়া অ্যাফিডেভিট করার আইনগত কোনো সুযোগ নেই। তাই এ ক্ষেত্রে অবৈধ কিছু হয়নি।’
মামলার নথি এবং অন্য কাগজপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, যে অ্যাফিডেভিটটি আদালতে দাখিল করা হয়েছে তা তৈরি করা হয় ২০২১ সালের মে মাসের ৩ তারিখে। আর ধর্ষণের মামলাটি করা হয়েছে একই বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ ইউসুফেরে সঙ্গে শিশুটির বিয়ে দেওয়া হয়েছে ধর্ষণ মামলার প্রায় ৪ মাস আগে। অ্যাফিডেভিটে শিশুটির নামের অক্ষরে “জ” থাকলেও অ্যাফিডেভিটে অক্ষর আছে “য” আর মূল নামে কোনো যুক্তাক্ষর না থাকলেও এফিডেভিটে যুক্তাক্ষর আছে। মায়ের নামও অসম্পূর্ণ এবং মেয়ের বয়স দেখানো হয়েছে ২২ বছর।
আদালতে ওই শিশুর দেওয়া জবানবন্দিতে বলা হয়েছে, তাকে বল প্রয়োগ করে নন জুডিশিয়াল ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে নেওয়া হয়।
মামলার অভিযোগ পত্রের সঙ্গে যুক্তকরা মেডিকেল রিপোর্টে শারীরিক সম্পর্কের প্রমাণ থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ মামলার অভিযোগপত্রে শিশুটিকে প্রলোভন দিয়ে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে কয়েকবার ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।
বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি নরেশ মুখার্জী জানান, মামলার আসামি মো. ইউসুফ প্রামাণিক জামিন নিয়ে পালিয়ে গেছেন। আর অ্যাফিডেভিটে যে কাজির কাছে বিয়ের যে তথ্য দেওয়া হয়েছে তার কোনো কাগজপত্র আসামি পক্ষ আদালতে দেখাতে পারেনি।