![অটিস্টিক শিক্ষার্থীদের জন্য নেই সমন্বিত পাঠ্যক্রম](uploads/2024/04/02/1712032661.otistic.jpg)
দেশে অটিস্টিক শিক্ষার্থীদের জন্য এখনো তৈরি হয়নি সমন্বিত পাঠ্যক্রম। ফলে বিশেষ এসব শিক্ষার্থীদের পাঠদান পদ্ধতিতে নিজস্ব ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভর করছে বিদ্যালয়গুলো। একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ না পাওয়ায় শিক্ষকরা কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে পারছেন না বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের। এমন বাস্তবতায় আজ বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে পালিত হবে ১৭তম বিশ্ব অটিজম দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘সচেতনতা-স্বীকৃতি-মূল্যায়ন: শুধু বেঁচে থাকা থেকে সমৃদ্ধির পথে যাত্রা।’
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এবং নতুন শিক্ষাক্রমের শিখন বিশেষজ্ঞ ড. তারিক আহসান খবরের কাগজকে বলেন, ‘স্পেশাল এডুকেশনের একটা নীতিমালা আছে। বর্তমানে সেটা সংশোধন করার সময় হয়েছে। নতুনভাবে জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা হয়েছে। এই রূপরেখার আলোকে এটাকে হালনাগাদ করতে হবে।
তিনি বলেন, আপডেট করা হলে এসব ছেলেমেয়েরা পৃথক থাকবে না। অন্যথায় স্পেশাল এডুকেশনের মডেল অনুযায়ী তারা পরবর্তী সময়ে মূল ধারায় খাপ খাওয়াতে পারে না। এসব শিশু অনেকটা ডে-কেয়ার সেন্টারের শিশুদের মতো বেড়ে ওঠে। এই জায়গা থেকে তাদের বের হওয়াটা জরুরি। এ জন্য নীতিমালা নেওয়া এবং তা বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে।
জাতীয় প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কিত সমন্বিত বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা-২০১৯ এর আওতায় সর্বমোট ৭৪টি বিশেষ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয় রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকার মিরপুর, লালবাগ, উত্তরা, যাত্রাবাড়ী এবং ৬টি বিভাগীয় শহরে (রাজশাহী, খুলনা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, রংপুর ও সিলেট) ৬টি, গাইবান্ধা জেলায় ১টি এবং সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় ১টিসহ মোট ১২টি স্পেশাল স্কুল ফর চিলড্রেন উইথ অটিজম স্কুল রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে অটিজম ও এনডিডি সমস্যাগ্রস্ত শিশুদের অক্ষরজ্ঞান, সংখ্যা, কালার ম্যাচিং, এডিএল, মিউজিক, খেলাধুলা, সাধারণ জ্ঞান, যোগাযোগ, সামাজিকতা, আচরণ পরিবর্তন এবং পুনর্বাসন বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব বিদ্যালয়ে নির্দিষ্ট কোনো পাঠ্যক্রম নেই। সুইড বাংলাদেশের সিলেবাস অনুসারে এখানে পাঠদান করা হয়। তবে এটা গতানুগতিক শিক্ষা পদ্ধতি না হওয়ায় নানা ধরনের চ্যালেঞ্জে পড়তে হচ্ছে শিক্ষকদের। বেতন ভাতা ছাড়া বিদ্যালয়ের সব খরচ নিজস্ব তহবিল থেকে করতে হয়। রয়েছে জনবলের অভাব। থেরাপির সুযোগ-সুবিধাও অপর্যাপ্ত।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅ্যাবিলিটিজ (প্রতিবন্ধী) বা এনডিডি সুরক্ষা ট্রাস্ট একটি পাঠ্যক্রমের খসড়া প্রস্তুত করেছে। কিন্তু সেটা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এর সঙ্গে সমন্বয় করা হয়নি। এ কারণে চলতি মাসে এনসিটিবির সঙ্গে এ বিষয়ে কর্মশালা করে পাঠ্যক্রম চূড়ান্ত করা হবে।
বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) এর তথ্য অনুযায়ী, স্কুল পর্যায়ে ১ হাজার ১৮০ জন, কলেজ পর্যায়ে ২২৯ জন, মাদরাসায় ৫৫ জনসহ সর্বমোট ১ হাজার ৪৬৪ জন অটিস্টিক শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে ছাত্রী ৪৯৬ জন। অন্যদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এর জনশুমারির মতে, প্রতিবন্ধীদের মধ্যে শতকরা প্রায় ৪ জন অটিজমে আক্রান্ত।
রাজধানীর রমনা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়ের ১৪০ জন বিশেষভাবে সক্ষম শিক্ষার্থী রয়েছে। এরমধ্যে ৭৯ জন অটিস্টিক। সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক মোসাম্মৎ তাহমীনা পারভীন খবরের কাগজকে বলেন, সমন্বিত কারিকুলাম থাকলে সুবিধা হয়। সবাই একইভাবে শিক্ষালাভ করতে পারে। একই সঙ্গে বিদ্যালয়ে শিক্ষা উপকরণ ও শিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া এসব শিক্ষার্থীদের মূল ধারায় সম্পৃক্ত করতে হবে।
রাজধানীতে কিছু সুযোগ-সুবিধা মিললেও ঢাকার বাইরের বিদ্যালয়গুলোর অবস্থা শোচনীয়। গাজীপুরের পূবাইল বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সারওয়ার হাসান খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমার বিদ্যালয়টি একদম গ্রাম পর্যায়ে। সবার আর্থিক অবস্থা অসচ্ছল। অটিস্টিক শিশুদের ভালোভাবে পাঠদান করতে হলে আমাদের শিক্ষকদের আরও প্রশিক্ষণের দরকার আছে।’
তবে সরকারি ছাড়াও বেসরকারিভাবে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানদের এসব কাজে এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন হাইকেয়ার প্রতিবন্ধী স্কুলের সাবেক শিক্ষক পার্থ ঘোষ। খবরের কাগজকে তিনি বলেন, ‘বিশেষভাবে সক্ষম শিক্ষার্থীদের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে আমাদের সবার কাজ করা উচিত। এ ছাড়া তাদের পাঠদান পদ্ধতি নিয়ে একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ থাকতে হবে।’
অটিজম দিবস উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তিনি বলেন, অটিজম ও নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিসএ্যাবিলিটিজ (এনডিডি) বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু ও ব্যক্তিদের যথাযথ পুনর্বাসনে সরকারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বেসরকারি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে। অটিজম ও এনডিডি শিশু ও ব্যক্তিদের জীবনব্যাপী সেবা ও ভালোবাসার প্রয়োজন হয়। তাই অটিজমসহ অন্যান্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে কাউন্সেলিং ও রেফারেল সেবা এবং সহায়ক উপকরণ ও সহায়ক প্রযুক্তি প্রদান করে আন্তর্জাতিক মানের সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু-কিশোরদের সম্ভাবনাগুলোকে চিহ্নিত করে সঠিক পরিচর্যা, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও স্নেহ-ভালোবাসা দিয়ে মানবিক পরিবেশে গড়ে তোলা হলে তারাও পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সম্পদ হিসেবে গড়ে উঠবে। রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে সবার সঙ্গে অটিজম ও প্রতিবন্ধিতার শিকার ব্যক্তিকেও সম্পৃক্ত করতে হবে। এ লক্ষ্যে আরও বেশি প্রযুক্তিবান্ধব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে তিনি নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী (এনডিডি) সুরক্ষা ট্রাস্টকে আহ্বান জানান।
এ ছাড়া সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার সকাল দশটায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দিবসটি পালনে নানা কর্মসূচি পালন করবে।