![মৌসুমি রোগের মহামারি](uploads/2024/04/18/1713416708.ICDDRB.jpg)
এবার দেশে মশা ও পানিবাহিত রোগ আগের চেয়ে ভয়ানকভাবে বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ববিদরা। এ ছাড়া মৌসুমি ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং ডায়রিয়া ও কলেরার স্থানীয় মহামারির শঙ্কাও করছেন কেউ কেউ। ইতোমধ্যেই জ্বর সর্দি কাশি দেখা দিয়েছে প্রায় ঘরে ঘরে। কলেরা-ডায়রিয়া দেখা দিয়েছে দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষের মধ্যে। একদিকে তাপমাত্রা বৃদ্ধি অন্যদিকে দেশজুড়ে এডিস মশার বিস্তারে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে বলে এই আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর প্রভাবে দেশজুড়ে ডেঙ্গু, কলেরা, ডায়রিয়া, টাইফয়েড, জন্ডিসের পাশাপাশি নিউমোনিয়ারও বিস্তার ঘটতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে সারা বছরই কলেরার প্রকোপ থাকলেও সরকারি পর্যায় থেকে এটি এক ধরনের গোপন রাখা হয়। কিন্তু এবার কলেরার বড় আকারে বিস্তার ঘটতে পারে। ফলে এসব রোগের বিষয়ে দেরি না করে হাসপাতালগুলো প্রস্তুত রাখা জরুরি। প্রয়োজনমতো চিকিৎসাসামগ্রীও ঢাকাসহ মাঠপর্যায়ে যাতে রাখা যায় সেদিকেও নজর দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন কেউ কেউ। অন্যদিকে পাহাড়ি অঞ্চলে এবার ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইমেরিটাস অধ্যাপক ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ খবরের কাগজকে বলেন, ‘মৌসুমি রোগব্যাধি থেকে সুরক্ষায় সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। দূষিত পানি ও খাবার পরিহার করা, ছাতা নিয়ে বের হওয়া, রোদ এড়িয়ে চলা, ঘন ঘন পানি পান করা, লবণযুক্ত পানি পান করা জরুরি। বয়স্ক ও শিশুদের ব্যাপারে বেশি সতর্ক থাকতে হবে।’
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কয়েকটি টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহামুদুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘বরাবরই গরমের সময় আমাদের দেশে পানিবাহিত ও খাদ্যবাহিত জীবাণুর প্রভাব বেশি। দূষিত পানি ও পচা বাসি খাবার থেকে এই জীবাণুর বিস্তার ঘটে। পথে ঘাটে চলাচলকারী মানুষ গরমে অতিষ্ঠ হয়ে অনেকেই যেখানে সেখানে জীবাণুযুক্ত পানি পান করে। আবার যেসব ঘরে ফ্রিজ নেই তারা পচা বাসি খাবার খেয়েও জীবাণুতে আক্রান্ত হয়। ঢাকার সাপ্লাই পানিতেও জীবাণু পাওয়া যায়।’
ওই রোগতত্ত্ববিদ বলেন, দেশে সারা বছরই কম-বেশি কলেরা লেগে থাকে। যা এখন দেশীয় মহামারির পর্যায়ে আছে। এখন আর এটা নিয়ে লুকোছাপা করার কিছু নেই। বরং কলেরা নিয়ন্ত্রণে আরও সতর্কতা ও নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তা না হলে দ্রুত সময়ের মধ্যেই এটা আরও খারাপ হয়ে যাবে। পাশাপাশি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণেও আরও অনেক বেশি পদক্ষেপ নিতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে এবার পরিস্থিতি জটিল হওয়ার আশঙ্কাই বেশি। এক দিকে গরমে মানুষের শরীর থেকে বেশি ঘাম বের হয়ে পানিশূন্যতা তৈরি হবে অন্যদিকে মানুষ পর্যাপ্ত নিরাপদ পানির অভাবে দূষিত পানি পান করে ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড, জন্ডিস, হেপাটাইটিস এ ও সি সহ আরও কিছু রোগের জীবাণু ও ভাইরাসে আক্রান্ত হবে। অন্যদিকে তাপমাত্রার প্রভাবে এডিস মশার বিস্তার যেভাবে আছে তাতে ডেঙ্গু আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে তীব্র বায়ু দূষণের প্রভাবে শ্বাসতন্ত্রের সমস্যাও এবার তীব্র হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
ওই রোগতত্ত্ববিদ বলেন, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা জোরদার ও জনসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি সিটি করপোরেশন ও ওয়াসার মতো সংস্থাগুলোকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।
একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকর্তা তুহিন সমদ্দার মায়ের সঙ্গে ঈদ ও বৈশাখীর ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন বরিশালের বাড়িতে। সেখানে রোদের মধ্যে দুদিন ঘোরাঘুরির পর তৃতীয় দিনেই তীব্র জ্বরে আক্রান্ত হন। সঙ্গে শরীর ও মাথাব্যথা। প্রথমে প্যারাসিটামল দিয়ে সামলানোর চেস্টা করেছিলেন। কিন্তু ৩ দিনেও পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। চিকিৎসক দিয়েছেন অ্যান্টিবায়োটিক। সঙ্গে ডেঙ্গু ও টাইফয়েডের টেস্ট করাতেও দিয়েছেন।’
তুহিন সমদ্দার গতকাল খবরের কাগজকে বলেন, ‘ঢাকায় আসা জরুরি কিন্তু একদিকে জ্বর কমছে না অন্যদিকে শরীরও প্রচণ্ড দুর্বল। একাধিকবার বমিও হয়েছে। এর মধ্যে বাইরে যে তাপ তাতে ঘর থেকে বের হওয়ার সাহস করি না।’
রাজধানীর কামরাঙ্গিরচরের অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক আজাহার আলী গতকাল সকালে জরুরি কাজে গিয়েছিলেন মিরপুরের শিক্ষা অফিসে। ফেরার পথে হেঁটে সনি সিনেমা হলের কাছে এক আত্মীয়র বাসায় রওনা করেন। মাঝামাঝি পথ যেতেই তিনি ফুটপাতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। পথচারীরা ধরাধরি করে তাকে প্রথমে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে নিয়ে যান, সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। চিকিৎসকরা জানান, রোদের তাপে আজাহার আলী হিট সিনকোপে আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেই সঙ্গে তিনি আগে থেকেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত থাকায় তার অবস্থা জটিল হয়ে ওঠে।’
সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মোস্তফা কামাল রউফ খবরের কাগজকে বলেন, ‘গত তিন চার দিন ধরে যে তাপপ্রবাহ চলছে কিংবা সামনে যদি এই গরম আরও বেড়ে যায় তবে হিট ক্রাম্প, হিট সিনকোপ কিংবা হিট স্ট্রোকের সমস্যা বাড়বে। ফলে ঘর থেকে খোলা আকাশের নিচে বের হতে হলে সবাইকে সতর্ক থাকা দরকার। যতটা সম্ভব ছায়া দেখে চলাচল করা, ছাতা ব্যবহার করা, নিরাপদ পানি সঙ্গে রাখা জরুরি। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।’
গত মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন সোমবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ৪৩ বছরের মধ্যে খেপুপাড়ায় এটাই ছিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। অন্যদিকে ঢাকায় মঙ্গলবার তাপমাত্রা ছিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে অনুভূত হচ্ছিল আরও বেশি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুসারে এমন তাপমাত্রা আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকতে পারে। আর তাপমাত্রা যত বেশি থাকবে মৌসুমি রোগব্যাধির ব্যাপ্তিও ততই বাড়বে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তেরর কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুসারে, এ বছর ইতোমধ্যেই দেশজুড়ে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব চলছে। ডেঙ্গুতেও প্রতি মাসেই আক্রান্ত ও মৃত্যু বাড়ছে।
কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের প্রথম ৩ মাসেই দেশে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৪ লাখ ৭৩ হাজার ৩০২ জন। এর মধ্যে প্রতি মাসেই আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে (জানুয়ারিতে ১ লাখ ৫২ হাজার ৩২৮ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৪৩৪ জন ও মার্চে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৫৪০ জন)। আর গত ৩ মাসে সর্বোচ্চ ডায়রিয়ার প্রকোপ ছিল খুলনা বিভাগে। সেখানেও প্রতি মাসে পর্যায়ক্রমে ডায়রিয়া রোগী বেড়েছে (জানুয়ারিতে ৪৩ হাজার ২১৪ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৪৩ হাজার ৯৭৩ জন ও মার্চে ৪৬ হাজার ৩৬৭ জন)।
এদিকে সরকারি তথ্যে কলেরার বিষয়টি না থাকলেও আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র- আইসিডিডিআরবির সর্বশেষ গবেষণা প্রতিবেদন অনুসারে দেশে এখনো বছরে ১ লাখের বেশি মানুষ কলেরায় আক্রান্ত হন। গত বছর ১৯ এপ্রিল আন্তর্জাতিক গবেষণা জার্নাল ন্যাচারে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয় আইসিডিডিআরবির ঢাকা ও ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের থেকে সংগ্রহ করা নমুনা পরীক্ষায় তারা উল্লেখযোগ্য হারে ভিব্রিও কলেরা শনাক্ত করেন। ২০২০-২০২১ সালে এই গবেষণা করা হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিশ্বে কলেরার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোতে তুলনামূলক সবচেয়ে বেশি রোগী রয়েছে। যদিও জিটিএফসিসি (দ্য গ্লোবাল টাস্ক ফোর্স অন কলেরা কন্ট্রোল) রোডম্যাপের লক্ষ্য পূরণের জন্য বাংলাদেশ একটি দেশব্যাপী কলেরা-নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা প্রণয়ন করছে।
আইসিডিডিআরবির গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, ২০০০ সালে দেশের গ্রামাঞ্চলে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার রোগীদের মধ্যে ৩৯ দশমিক ৪১ শতাংশ ছিল কলেরায় আক্রান্ত। যে হার ২০২১ সালে বেড়ে হয়েছে ৬২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। শহরের রোগীদের মধ্যে এই হার ২০০০ সালে ছিল ৪৯ দশমিক ১৫ শতাংশ যা ২০২১ সালে বেড়ে হয় ৭১ দশমিক ০৮ শতাংশ।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যালেরিয়া কার্যক্রম শাখার তথ্য অনুসারে, দেশের পাবর্ত্য অঞ্চলের এবারও ম্যালেরিয়ার প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। গত বছর মোট ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ছিল ১৬ হাজার ৫৬৭ জন এবং মারা গেছেন ৬ জন। এ বছরে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৩ মাসে আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ১৫৮ জন এবং মারা গেছেন ২ জন।
ম্যালেরিয়া কর্মসূচির ব্যবস্থাপক ডা. শ্যামল সাহা খবরের কাগজকে বলেন, ‘দেশে যত ম্যালেরিয়া রোগী তার ৬৫ শতাংশই তিন পার্বত্য জেলার। এর মধ্যে আবার সবচেয়ে বেশি থাকে বান্দরবানে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, এ বছর ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৯১৬ জন ও মারা গেছেন ২৩ জন। গত বছর দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৩ লাখ ১৬ হাজারের বেশি আক্রান্ত হয় ডেঙ্গুতে এবং মৃত্যু ঘটেছে ১ হাজার ৬৭৮ জনের।
অপরদিকে চলতি মৌসুমের রোগব্যাধি নিয়ে গতকাল বুধবার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং আইসিডিডিআরবির গবেষকরা যৌথভাবে ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভেইল্যান্স ইন বাংলাদেশ শীর্ষক এক সেমিনারের আয়োজন করে। এতে জানানো হয়, দেশের ১৯টি হাসপাতালে সার্ভেইল্যান্সের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমণের প্রকোপ বাড়ে তাই এই সময়টাকে গবেষকরা ফ্লু এর মৌসুম হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস থেকে সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশে প্রতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের টিকা বা ফ্লু-শট নেওয়ার সুপারিশ করেন গবেষকরা। এ ছাড়াও ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত রোগীদের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত বলে তারা মনে করেন।
আইইডিসিআর এবং ন্যাশনাল ইনফ্লুয়েঞ্জা সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভেইল্যান্স থেকে প্রাপ্ত ফলাফল তুলে ধরেন। স্বল্প সময়ের জ্বর এবং কাশির অভিযোগ নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ১ লাখ পনের হাজারের বেশি রোগীর মধ্যে প্রায় ১১ শতাংশের মাঝে ইনফ্লুয়েঞ্জার উপস্থিতি পাওয়া যায়। এ ছাড়াও, হাসপাতালে ভর্তি ইনফ্লুয়েঞ্জা পজিটিভ রোগীদের মধ্যে প্রায় প্রতি একশ জনে ১ জন মারা যান। তবে, ৬০ বছরের বেশি বয়স্ক ব্যক্তি এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে এই মৃত্যুর হার স্বাভাবিকের চেয়ে তিন গুণ বেশি দেখা যায়।
অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন, তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, বাংলাদেশে সারা বছরই ফ্লু শনাক্ত হয়ে থাকে তবে প্রতি বছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে ফ্লু শনাক্তের হার বৃদ্ধি পায় এবং জুন থেকে জুলাই মাসে এর প্রকোপ সর্বোচ্চ হয়। এই কারণে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা মৌসুম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনি মৌসুম শুরুর আগেই ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা নিয়ে সুরক্ষিত রাখার প্রতি এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার মৌসুমে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ইনফ্লুয়েঞ্জার একটা মহামারির সম্ভাবনা এবং অ্যান্টিবায়োটিকের অযৌক্তিক ব্যবহার প্রতিরোধের ওপর জোর দেন।
তিনি বলেন, ‘চলমান এই ফ্লু এর মৌসুমে যদি জ্বর, সর্দি, কাশির মতো লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে অ্যান্টিবায়োটিক নেওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে যেন ওষুধের প্রতি রেজিস্ট্যান্স তৈরি না হতে পারে। এ ছাড়াও হাত ধোয়া, মাস্ক পরা এবং কাশি দেওয়ার শিষ্টাচারগুলো সারা বছর মেনে চললে আমরা শুধু ইনফ্লুয়েঞ্জা বা শ্বাসতন্ত্রের অসুখ নয়, অন্যান্য সংক্রামক রোগও প্রতিরোধ করতে পারব।’
আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন ২০০৮ থেকে ২০১০ সালে আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানী ড. কে জামান গবেষণা করে দেখেছিলেন যে গর্ভাবস্থায় মাকে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন দিলে মায়ের পাশাপাশি নবজাতকেরও ৬৩% রোগের ঝুঁকি কমে যায়। এই গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গর্ভাবস্থায় মায়েদের ফ্লু ভ্যাকসিন দেওয়ার পরামর্শ দেয়।
আইসিডিডিআরবির অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট ডা. ফাহমিদা চৌধুরী জানান, বিশ্বে প্রতি বছর ২ লাখ ৯০ হাজার থেকে ৬ লাখ ৫০ হাজার মানুষ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর (হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘হাসপাতালগুলোকে ইতোমধ্যেই সতর্ক করা হয়েছে। প্রয়োজনমতো প্রস্তুতি রাখতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া অধিদপ্তর থেকেও তদারকির ব্যবস্থা করা হয়েছে।’