ঢাকা ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

মৌসুমি রোগের মহামারি

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০৫ এএম
আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০৫ এএম
মৌসুমি রোগের মহামারি
প্রচণ্ড গরবে হাসপাতালে শিশু রােগীর সংখ্যা বাড়ছে। বুধবার রাজধানীর আইসিডিডিআর,বি থেকে তোলা। খবরের কাগজ

এবার দেশে মশা ও পানিবাহিত রোগ আগের চেয়ে ভয়ানকভাবে বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ববিদরা। এ ছাড়া মৌসুমি ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং ডায়রিয়া ও কলেরার স্থানীয় মহামারির শঙ্কাও করছেন কেউ কেউ। ইতোমধ্যেই জ্বর সর্দি কাশি দেখা দিয়েছে প্রায় ঘরে ঘরে। কলেরা-ডায়রিয়া দেখা দিয়েছে দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষের মধ্যে। একদিকে তাপমাত্রা বৃদ্ধি অন্যদিকে দেশজুড়ে এডিস মশার বিস্তারে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে বলে এই আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর প্রভাবে দেশজুড়ে ডেঙ্গু, কলেরা, ডায়রিয়া, টাইফয়েড, জন্ডিসের পাশাপাশি নিউমোনিয়ারও বিস্তার ঘটতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে সারা বছরই কলেরার প্রকোপ থাকলেও সরকারি পর্যায় থেকে এটি এক ধরনের গোপন রাখা হয়। কিন্তু এবার কলেরার বড় আকারে বিস্তার ঘটতে পারে। ফলে এসব রোগের বিষয়ে দেরি না করে হাসপাতালগুলো প্রস্তুত রাখা জরুরি। প্রয়োজনমতো চিকিৎসাসামগ্রীও ঢাকাসহ মাঠপর্যায়ে যাতে রাখা যায় সেদিকেও নজর দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন কেউ কেউ। অন্যদিকে পাহাড়ি অঞ্চলে এবার ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কা করা হচ্ছে। 

ইমেরিটাস অধ্যাপক ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ খবরের কাগজকে বলেন, ‘মৌসুমি রোগব্যাধি থেকে সুরক্ষায় সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। দূষিত পানি ও খাবার পরিহার করা, ছাতা নিয়ে বের হওয়া, রোদ এড়িয়ে চলা, ঘন ঘন পানি পান করা, লবণযুক্ত পানি পান করা জরুরি। বয়স্ক ও শিশুদের ব্যাপারে বেশি সতর্ক থাকতে হবে।’ 

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কয়েকটি টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহামুদুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘বরাবরই গরমের সময় আমাদের দেশে পানিবাহিত ও খাদ্যবাহিত জীবাণুর প্রভাব বেশি। দূষিত পানি ও পচা বাসি খাবার থেকে এই জীবাণুর বিস্তার ঘটে। পথে ঘাটে চলাচলকারী মানুষ গরমে অতিষ্ঠ হয়ে অনেকেই যেখানে সেখানে জীবাণুযুক্ত পানি পান করে। আবার যেসব ঘরে ফ্রিজ নেই তারা পচা বাসি খাবার খেয়েও জীবাণুতে আক্রান্ত হয়। ঢাকার সাপ্লাই পানিতেও জীবাণু পাওয়া যায়।’ 

ওই রোগতত্ত্ববিদ বলেন, দেশে সারা বছরই কম-বেশি কলেরা লেগে থাকে। যা এখন দেশীয় মহামারির পর্যায়ে আছে। এখন আর এটা নিয়ে লুকোছাপা করার কিছু নেই। বরং কলেরা নিয়ন্ত্রণে আরও সতর্কতা ও নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তা না হলে দ্রুত সময়ের মধ্যেই এটা আরও খারাপ হয়ে যাবে। পাশাপাশি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণেও আরও অনেক বেশি পদক্ষেপ নিতে হবে। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে এবার পরিস্থিতি জটিল হওয়ার আশঙ্কাই বেশি। এক দিকে গরমে মানুষের শরীর থেকে বেশি ঘাম বের হয়ে পানিশূন্যতা তৈরি হবে অন্যদিকে মানুষ পর্যাপ্ত নিরাপদ পানির অভাবে দূষিত পানি পান করে ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড, জন্ডিস, হেপাটাইটিস এ ও সি সহ আরও কিছু রোগের জীবাণু ও ভাইরাসে আক্রান্ত হবে। অন্যদিকে তাপমাত্রার প্রভাবে এডিস মশার বিস্তার যেভাবে আছে তাতে ডেঙ্গু আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে তীব্র বায়ু দূষণের প্রভাবে শ্বাসতন্ত্রের সমস্যাও এবার তীব্র হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

ওই রোগতত্ত্ববিদ বলেন, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা জোরদার ও জনসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি সিটি করপোরেশন ও ওয়াসার মতো সংস্থাগুলোকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। 

একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকর্তা তুহিন সমদ্দার মায়ের সঙ্গে ঈদ ও বৈশাখীর ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন বরিশালের বাড়িতে। সেখানে রোদের মধ্যে দুদিন ঘোরাঘুরির পর তৃতীয় দিনেই তীব্র জ্বরে আক্রান্ত হন। সঙ্গে শরীর ও মাথাব্যথা। প্রথমে প্যারাসিটামল দিয়ে সামলানোর চেস্টা করেছিলেন। কিন্তু ৩ দিনেও পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। চিকিৎসক দিয়েছেন অ্যান্টিবায়োটিক। সঙ্গে ডেঙ্গু ও টাইফয়েডের টেস্ট করাতেও দিয়েছেন।’ 

তুহিন সমদ্দার গতকাল খবরের কাগজকে বলেন, ‘ঢাকায় আসা জরুরি কিন্তু একদিকে জ্বর কমছে না অন্যদিকে শরীরও প্রচণ্ড দুর্বল। একাধিকবার বমিও হয়েছে। এর মধ্যে বাইরে যে তাপ তাতে ঘর থেকে বের হওয়ার সাহস করি না।’

রাজধানীর কামরাঙ্গিরচরের অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক আজাহার আলী গতকাল সকালে জরুরি কাজে গিয়েছিলেন মিরপুরের শিক্ষা অফিসে। ফেরার পথে হেঁটে সনি সিনেমা হলের কাছে এক আত্মীয়র বাসায় রওনা করেন। মাঝামাঝি পথ যেতেই তিনি ফুটপাতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। পথচারীরা ধরাধরি করে তাকে প্রথমে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে নিয়ে যান, সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। চিকিৎসকরা জানান, রোদের তাপে আজাহার আলী হিট সিনকোপে আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেই সঙ্গে তিনি আগে থেকেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত থাকায় তার অবস্থা জটিল হয়ে ওঠে।’ 

সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মোস্তফা কামাল রউফ খবরের কাগজকে বলেন, ‘গত তিন চার দিন ধরে যে তাপপ্রবাহ চলছে কিংবা সামনে যদি এই গরম আরও বেড়ে যায় তবে হিট ক্রাম্প, হিট সিনকোপ কিংবা হিট স্ট্রোকের সমস্যা বাড়বে। ফলে ঘর থেকে খোলা আকাশের নিচে বের হতে হলে সবাইকে সতর্ক থাকা দরকার। যতটা সম্ভব ছায়া দেখে চলাচল করা, ছাতা ব্যবহার করা, নিরাপদ পানি সঙ্গে রাখা জরুরি। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।’

গত মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন সোমবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ৪৩ বছরের মধ্যে খেপুপাড়ায় এটাই ছিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। অন্যদিকে ঢাকায় মঙ্গলবার তাপমাত্রা ছিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে অনুভূত হচ্ছিল আরও বেশি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুসারে এমন তাপমাত্রা আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকতে পারে। আর তাপমাত্রা যত বেশি থাকবে মৌসুমি রোগব্যাধির ব্যাপ্তিও ততই বাড়বে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তেরর কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুসারে, এ বছর ইতোমধ্যেই দেশজুড়ে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব চলছে। ডেঙ্গুতেও প্রতি মাসেই আক্রান্ত ও মৃত্যু বাড়ছে। 

কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের প্রথম ৩ মাসেই দেশে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৪ লাখ ৭৩ হাজার ৩০২ জন। এর মধ্যে প্রতি মাসেই আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে (জানুয়ারিতে ১ লাখ ৫২ হাজার ৩২৮ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৪৩৪ জন ও মার্চে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৫৪০ জন)। আর গত ৩ মাসে সর্বোচ্চ ডায়রিয়ার প্রকোপ ছিল খুলনা বিভাগে। সেখানেও প্রতি মাসে পর্যায়ক্রমে ডায়রিয়া রোগী বেড়েছে (জানুয়ারিতে ৪৩ হাজার ২১৪ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৪৩ হাজার ৯৭৩ জন ও মার্চে ৪৬ হাজার ৩৬৭ জন)। 

এদিকে সরকারি তথ্যে কলেরার বিষয়টি না থাকলেও আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র- আইসিডিডিআরবির সর্বশেষ গবেষণা প্রতিবেদন অনুসারে দেশে এখনো বছরে ১ লাখের বেশি মানুষ কলেরায় আক্রান্ত হন। গত বছর ১৯ এপ্রিল আন্তর্জাতিক গবেষণা জার্নাল ন্যাচারে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয় আইসিডিডিআরবির ঢাকা ও ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের থেকে সংগ্রহ করা নমুনা পরীক্ষায় তারা উল্লেখযোগ্য হারে ভিব্রিও কলেরা শনাক্ত করেন। ২০২০-২০২১ সালে এই গবেষণা করা হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিশ্বে কলেরার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোতে তুলনামূলক সবচেয়ে বেশি রোগী রয়েছে। যদিও জিটিএফসিসি (দ্য গ্লোবাল টাস্ক ফোর্স অন কলেরা কন্ট্রোল) রোডম্যাপের লক্ষ্য পূরণের জন্য বাংলাদেশ একটি দেশব্যাপী কলেরা-নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা প্রণয়ন করছে। 

আইসিডিডিআরবির গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, ২০০০ সালে দেশের গ্রামাঞ্চলে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার রোগীদের মধ্যে ৩৯ দশমিক ৪১ শতাংশ ছিল কলেরায় আক্রান্ত। যে হার ২০২১ সালে বেড়ে হয়েছে ৬২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। শহরের রোগীদের মধ্যে এই হার ২০০০ সালে ছিল ৪৯ দশমিক ১৫ শতাংশ যা ২০২১ সালে বেড়ে হয় ৭১ দশমিক ০৮ শতাংশ। 

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যালেরিয়া কার্যক্রম শাখার তথ্য অনুসারে, দেশের পাবর্ত্য অঞ্চলের এবারও ম্যালেরিয়ার প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। গত বছর মোট ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ছিল ১৬ হাজার ৫৬৭ জন এবং মারা গেছেন ৬ জন। এ বছরে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৩ মাসে আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ১৫৮ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। 

ম্যালেরিয়া কর্মসূচির ব্যবস্থাপক ডা. শ্যামল সাহা খবরের কাগজকে বলেন, ‘দেশে যত ম্যালেরিয়া রোগী তার ৬৫ শতাংশই তিন পার্বত্য জেলার। এর মধ্যে আবার সবচেয়ে বেশি থাকে বান্দরবানে।’ 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, এ বছর ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৯১৬ জন ও মারা গেছেন ২৩ জন। গত বছর দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৩ লাখ ১৬ হাজারের বেশি আক্রান্ত হয় ডেঙ্গুতে এবং মৃত্যু ঘটেছে ১ হাজার ৬৭৮ জনের। 

অপরদিকে চলতি মৌসুমের রোগব্যাধি নিয়ে গতকাল বুধবার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং আইসিডিডিআরবির গবেষকরা যৌথভাবে ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভেইল্যান্স ইন বাংলাদেশ শীর্ষক এক সেমিনারের আয়োজন করে। এতে জানানো হয়, দেশের ১৯টি হাসপাতালে সার্ভেইল্যান্সের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমণের প্রকোপ বাড়ে তাই এই সময়টাকে গবেষকরা ফ্লু এর মৌসুম হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস থেকে সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশে প্রতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের টিকা বা ফ্লু-শট নেওয়ার সুপারিশ করেন গবেষকরা। এ ছাড়াও ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত রোগীদের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত বলে তারা মনে করেন।

আইইডিসিআর এবং ন্যাশনাল ইনফ্লুয়েঞ্জা সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভেইল্যান্স থেকে প্রাপ্ত ফলাফল তুলে ধরেন। স্বল্প সময়ের জ্বর এবং কাশির অভিযোগ নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ১ লাখ পনের হাজারের বেশি রোগীর মধ্যে প্রায় ১১ শতাংশের মাঝে ইনফ্লুয়েঞ্জার উপস্থিতি পাওয়া যায়। এ ছাড়াও, হাসপাতালে ভর্তি ইনফ্লুয়েঞ্জা পজিটিভ রোগীদের মধ্যে প্রায় প্রতি একশ জনে ১ জন মারা যান। তবে, ৬০ বছরের বেশি বয়স্ক ব্যক্তি এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে এই মৃত্যুর হার স্বাভাবিকের চেয়ে তিন গুণ বেশি দেখা যায়।

অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন, তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, বাংলাদেশে সারা বছরই ফ্লু শনাক্ত হয়ে থাকে তবে প্রতি বছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে ফ্লু শনাক্তের হার বৃদ্ধি পায় এবং জুন থেকে জুলাই মাসে এর প্রকোপ সর্বোচ্চ হয়। এই কারণে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা মৌসুম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনি মৌসুম শুরুর আগেই ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা নিয়ে সুরক্ষিত রাখার প্রতি এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার মৌসুমে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ইনফ্লুয়েঞ্জার একটা মহামারির সম্ভাবনা এবং অ্যান্টিবায়োটিকের অযৌক্তিক ব্যবহার প্রতিরোধের ওপর জোর দেন। 

তিনি বলেন, ‘চলমান এই ফ্লু এর মৌসুমে যদি জ্বর, সর্দি, কাশির মতো লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে অ্যান্টিবায়োটিক নেওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে যেন ওষুধের প্রতি রেজিস্ট্যান্স তৈরি না হতে পারে। এ ছাড়াও হাত ধোয়া, মাস্ক পরা এবং কাশি দেওয়ার শিষ্টাচারগুলো সারা বছর মেনে চললে আমরা শুধু ইনফ্লুয়েঞ্জা বা শ্বাসতন্ত্রের অসুখ নয়, অন্যান্য সংক্রামক রোগও প্রতিরোধ করতে পারব।’

আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন ২০০৮ থেকে ২০১০ সালে আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানী ড. কে জামান গবেষণা করে দেখেছিলেন যে গর্ভাবস্থায় মাকে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন দিলে মায়ের পাশাপাশি নবজাতকেরও ৬৩% রোগের ঝুঁকি কমে যায়। এই গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গর্ভাবস্থায় মায়েদের ফ্লু ভ্যাকসিন দেওয়ার পরামর্শ দেয়।

আইসিডিডিআরবির অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট ডা. ফাহমিদা চৌধুরী জানান, বিশ্বে প্রতি বছর ২ লাখ ৯০ হাজার থেকে ৬ লাখ ৫০ হাজার মানুষ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর (হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘হাসপাতালগুলোকে ইতোমধ্যেই সতর্ক করা হয়েছে। প্রয়োজনমতো প্রস্তুতি রাখতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া অধিদপ্তর থেকেও তদারকির ব্যবস্থা করা হয়েছে।’ 

‘কিছু বোঝার আগেই গুলি লাগে কোমরে’

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৪:২০ পিএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৩:৫৪ পিএম
‘কিছু বোঝার আগেই গুলি লাগে কোমরে’
গুলিতে আহত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসারত কয়েকজন। ছবি : খবরের কাগজ

২০ জুলাই শনিবার, তখন কারফিউ জারি হয়েছে, অবস্থা শান্ত দেখে মিলন বেগম তার চৌদ্দ বছরের ছেলে মিরাজকে ঘরের পাশের সবজির দোকানে পাঠান কাঁচা মরিচ আর ধনেপাতা কিনতে। ঘর থেকে বের হয় মিরাজ। কিন্তু কিছুদূর যেতেই গুলি লাগে তার শরীরে। ঠিক বুঝতে পারে না মিরাজ কী হলো, অচেতন হয়ে পড়ে যায় রাস্তায়। পরে রাতে তাকে আনা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। দ্রুত রক্ত বন্ধ করে ভর্তি করা হয়। রবিবার অস্ত্রোপচারের পর এখন সার্জারি ওয়ার্ডে আছে সে। তবে আন্দোলনে না গিয়েও এমন আঘাতে এখনো আতঙ্কিত মিরাজ। তাই স্তব্ধ হয়ে শুয়ে আছে হাসপাতালের বেডে।

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সকালে সরেজমিনে ঢামেক হাসপাতালে গিয়ে দেখা পাই মিরাজের। হাসপাতালের বেডে ছেলের শিহরে উদ্বিগ্ন মুখে বসে ছিলেন মা মিলন বেগম। তার কাছ থেকেই জানতে পারি মিরাজের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাটি।

মিরাজের মতো কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গুলিতে আহত আরও অনেকেই এখনো চিকিৎসা নিচ্ছেন ঢামেক হাসপাতালে। এদের একজন জিহাদ। গত শুক্রবার সে জুমার নামাজ পড়ে মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল বন্ধুদের সঙ্গে। হঠাৎ একটি গুলি এসে লাগে তার কোমরে। এরপর বেরিয়ে যায় পেট দিয়ে। রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে জিহাদ। তার বড় ভাই জাহিদ জানান, জিহাদের অবস্থা এখনো শঙ্কামুক্ত নয়। তবে চিকিৎসকরা আশা করছেন আর কয়েক দিন পরে পুরোপুরি শঙ্কামুক্ত হবে জিহাদ।

সার্জারি বিভাগের একই ওয়ার্ডে মিরাজের পাশের বেডে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন নার্গিস। তার পিকআপচালক স্বামী কাজল গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। নার্গিস বলেন, পিঠ দিয়ে ঢুকে গুলি পেট দিয়ে বেরিয়ে গেছে। অবস্থা অনেক খারাপ ছিল। এখন একটু ভালো, আল্লাহই বাঁচাইছে...।

তিনি জানান, ফকিরাপুল থেকে যাত্রাবাড়ী দিয়ে যাচ্ছিলেন কাজল। রাস্তায় গোলমাল দেখে গাড়ি থামিয়ে একটু এগিয়ে দেখতে গিয়েছিলেন যে সামনে আর যাওয়া ঠিক হবে কি না। কিন্তু সামনে এগোনোর আগেই গুলি লাগে কাজলের শরীরে। কে বা কারা গুলি করেছে তা বলতে পারেননি কাজল।

ঢামেক হাসপাতালের কেবল সার্জারি বিভাগের ৬টি ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায় প্রতি ওয়ার্ডে গড়ে ৫ থেকে ৭ জন রোগী ভর্তি আছে গুলিবিদ্ধ হয়ে।

বৃহস্পতিবারের প্রতি ওয়ার্ডের হিসাব বলছে, বেলা ১১টা পর্যন্ত ২১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ২৭টি সিটের বিপরীতে আছে ৫৬ জন রোগী, ২১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ২৮টি সিটের বিপরীতে রোগী আছেন ৫০ জন, ২১৭ নম্বর ওয়ার্ডে ৩০ সিটে রোগী আছেন ৪১ জন, ২১৮ নম্বর ওয়ার্ডে ৩০ সিটে রোগী আছেন ৩৪ জন, ২১৯ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৫টি সিটের বিপরীতে রোগী ৪৬ জন, ২২০ নম্বর ওয়ার্ডে ৩১টি সিটের বিপরীতে রোগী আছেন ৪৩ জন। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একজন নার্স খবরের কাগজকে বলেন, আমরা প্রতি সিটের বিপরীতে ৪ জন করে রোগীকে সেবা দিচ্ছি। পরিস্থিতির কারণে রোগী বেশি। সুতরাং সবাইকে সেবা তো দিতেই হবে। এখন আমাদের নতুন রোগী ভর্তি নেওয়ার সময় তাই কিছুক্ষণ পর রোগীর সংখ্যা আরও বাড়বে।

সব নথি পুড়ে ছাই, লুণ্ঠিত ৪৬ অস্ত্র নিয়ে উৎকণ্ঠা

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ১২:১০ পিএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ১২:১০ পিএম
সব নথি পুড়ে ছাই, লুণ্ঠিত ৪৬ অস্ত্র নিয়ে উৎকণ্ঠা
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলা, ভাঙচুর, ফটক ভেঙে বন্দি পালানো ও লুটপাটের ঘটনায় দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পুড়ে ছাই কারাগারের সব নথি। গত চার দিনে পলাতক ৮২৬ বন্দির মধ্যে ৪৬৮ জন আত্মসমর্পন করেছেন বা থানাপুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছেন। লুট হওয়া ৮৫ অস্ত্রের মধ্যে ৩৯টি, ১ হাজার গুলি ও অনেক হাতকড়া উদ্ধার করা হয়েছে। নাশকতার ঘটনায় কারাগারের ১১ কোটি ২১ লাখ ৫০ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কারা অধিদপ্তর সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। 

সূত্র অনুসারে, দেশের ইতিহাসে এর আগে এমনভাবে কোনো কারাগার থেকে সব আসামি পালানো ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেনি।

এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঠেকাতে দেশের সব কারাগারে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ র‌্যাব ও বিজিবির পাশাপাশি কারাগারগুলোতে সেনা টহল  অব্যাহত রয়েছে। 

কারা সূত্র জানায়, এ ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে বিচার বিভাগীয় দুটি তদন্ত কমিটি। এর মধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে যুগ্ম সচিব ফারুখ আহম্মেদকে প্রধান করে ৬ সদস্যের কমিটি ও কারা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল শেখ সুজাউর রহমানকে প্রধান করে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া নরসিংদী কারাগারের জেল সুপার, জেলারসহ সেখানে দায়িত্বরত সবাইকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ওই কারাগারে এখন দায়িত্ব পালন করছেন নতুন একজন জেল সুপার ও দুজন ডেপুটি জেলার। অগ্নিকাণ্ডের ফলে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে নরসিংদীর কারাগারটি। সেখানে সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। 

সূত্র আরও জানায়, ১৫ হাজার সন্ত্রাসী হামলা চালায় কারাগারে। পালিয়ে যাওয়া ৮২৬ জন কয়েদির মধ্যে ছিল ৯ জন জঙ্গি ও হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন মামলার আসামি। এদের অনেকে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত। কারাগারে হামলার প্রাথমিক কারণ হিসেবে জানা গেছে, কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশে যে নাশকতা চলছিল তাতে অস্ত্র ও বন্দিদের ব্যবহার করা।

এ ঘটনায় ২৩ জুলাই নরসিংদী জেলা কারাগার পরিদর্শন শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়া দেশকে বিপর্যস্ত করতে এ আক্রমণ হয়েছে। নরসিংদী জেলা কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া জঙ্গিদের ধরে আইনের আওতায় আনতে যা যা করা দরকার সরকার সবই করবে। নরসিংদী কারাগারের যে জায়গাকে আমরা সেফ জোন মনে করি, সেখানে তারা ভাঙচুর তো করেছেই, অগ্নিসংযোগও করেছে। অস্ত্রাগার লুট করেছে। যেসব জঙ্গি আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল, আমাদের পুলিশ বাহিনী যাদেরকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে আটক করেছিল, এখান থেকে তাদেরকে সন্ত্রাসীরা মুক্ত করে নিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘তাদের উদ্দেশ্য দেশকে একটা বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে নিয়ে যাওয়া। তাদেরকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কেন এই ঘটনা ঘটল, কারও গাফিলতি আছে কি না, কেউ এখানে সহযোগিতা করেছে কি না, এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানতে দুটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। তিন সদস্যের কমিটি করেছেন আইজি প্রিজন। আর ৬ সদস্যের কমিটি করেছে সুরক্ষা সেবা বিভাগ। যদি কারও গাফিলতি থাকে, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।’

এ বিষয়ে গতকাল দুপুরে কারা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল শেখ সুজাউর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘কারাগারের ফটক ভেঙে বন্দি ও অস্ত্র লুটের ঘটনা দেশের ইতিহাসে নেই। বিষয়টি নিয়ে আমরা বিব্রত। এখনো উদ্ধার হয়নি ৪৬টি অস্ত্র। এ নিয়ে আমরা উৎকণ্ঠায় রয়েছি। এ ধরনের ঘটনা আর যেন না ঘটে সে জন্য দেশের কারাগারগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির পাশাপাশি সেনা টহল অব্যাহত রয়েছে।’

নথি পুড়ে যাওয়ার ঘটনায় তিনি বলেন, ‘আগুন দেওয়ায় কারাগারের সব নথি পুড়ে গেছে। এখন আসামিদের ডিজিটাল যে ডেটাবেজ তৈরি করা হয়েছে সেই তথ্যের ভিত্তিতে মামলা ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’ 

তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় মামলা হয়েছে ও বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত চলছে, এই সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে তাদের বিষদাঁত ভেঙে দেওয়া হবে। অপরাধ করে কেউ পার পাবে না।’ 

কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে ১৯ জুলাই নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় কারাগারে অগ্নিসংযোগ ও সেলের তালা ভেঙে ৯ জঙ্গিসহ ৮২৬ কয়েদি পালিয়ে যান। পাশাপাশি অস্ত্র-গোলাবারুদ ও খাদ্যপণ্য লুট এবং ব্যাপক ভাঙচুর করেন হামলাকারীরা। এতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় নরসিংদী জেলা কারাগার। 

‘বাবা তুই বেঁচে আছিস এটাই বড় পাওয়া’

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১:৫০ এএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৫:২৬ পিএম
‘বাবা তুই বেঁচে আছিস এটাই বড় পাওয়া’
বাড্ডা এলাকায় সহিংসতায় পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থী রিফাতের একটি পা কেটে ফেলতে হয়েছে। ছবি: খবরের কাগজ

গুলি লাগায় মো. রিফাত হাওলাদারের ডান পা কেটে ফেলতে হয়েছে। হঠাৎ এক পা হারিয়ে এখন রাজ্যের দুশ্চিন্তা পেয়ে বসেছে তাকে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কথা বলতে বলতেই গলা জড়িয়ে আসে তার। দুই চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকে পানি।

রাজধানীর বাড্ডা এলাকার আলাতুন্নেছা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এই ছাত্র বলছিল, ‘এখন আমার বন্ধুদের সঙ্গে খেলার মাঠে থাকার কথা। কিন্তু এক গুলিতেই আমার সব স্বপ্ন শেষ।’

ক্ষোভ ঝেড়ে বলে, ‘একদিন আমার এই পা সাক্ষী দেবে কত বড় অন্যায় হয়েছে আমার সঙ্গে। বড় হয়ে অফিসার কি আর হতে পারব?’ পাশে থাকা এই কিশোরের বাবা ট্রাভেলস ব্যবসায়ী মো. রিয়াজ ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে যারপরনাই দুর্ভাবনায় পড়েছেন। তবু সন্তানকে সাহস দিয়েছেন এই বলে যে, ‘কতজনের তো প্রাণ-ই চলে গেছে। তুই বেঁচে আছিস এটাই বড় পাওয়া।’

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর রামপুরা ও বাড্ডা রোডে সংঘর্ষের সময় গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রিফাতের পায়ে গুলি লাগে। পরে রিকশায় করে তাকে মেরুল বৌদ্ধ মন্দিরের কাছে এক হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে নিয়ে যাওয়া হয় এএমজেড হাসপাতালে। কিন্তু সেখানকার চিকিৎসকদের পরামর্শে ভর্তি করা হয় জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) ক্যাজুয়ালটি-২ বিভাগে। 

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সরেজমিন এই হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, ক্যাজুয়ালটি-২ বিভাগে গুলিবিদ্ধ ৩৬ জন ভর্তি রয়েছেন। এখানেই বেশির ভাগ আহতের চিকিৎসা চলছে। তাদের সবার শরীরের কোনো না কোনো অংশে গুলি লেগেছে। কমপক্ষে চারজনের পা অস্ত্রোপচার করে কেটে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন চিকিৎসকরা। এ ছাড়া আরও কয়েকজনের পা-হাত কেটে ফেলতে হতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা। বাকিরা অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। ক্যাজুয়ালটি-১, ক্যাজুয়ালটি-৩ বিভাগ ও নতুন ভবনেও কয়েকজন আহত ভর্তি আছেন বলে একজন নার্স জানান। 

ক্যাজুয়ালটি-২ বিভাগের ১৯ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন ১৬ বছরের মো. নাদিমও এক পা হারিয়েছে। নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে একটি এমব্রয়ডারি কারখানায় কাজ করা নাদিম কাজ শেষ করে শনিবার বিকেলে বাসায় ফেরার পথে চিটাগাং রোডে তার পায়ে গুলি লাগে। পরে তিনটি হাসপাতাল ঘুরে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। তার মা মরিয়ম জানান, একটা গুলি ছেলের হাঁটুর মধ্য দিয়ে ঢুকে যায়। পুরো পায়ের মাংস কালো হয়ে পচন ধরায় সোমবার চিকিৎসকরা তার পা কেটে ফেলেন। এই কিশোরের মা আরও জানান, তার স্বামী অটোরিকশাচালক। তাদের তিন সন্তানের মধ্যে নাদিম সবার বড়। মাসে ৭ হাজার টাকা আয় করত। দরিদ্র এই পরিবারের এখন চিকিৎসার খরচ চালানোই দায় হয়ে পড়েছে।

কাঁদতে কাঁদতে মরিয়ম বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেটা এখন বেঁচে থেকেও মরার মতো। ওর জীবনের কোনো দাম আর নেই।’ 

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৫ জুলাই থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে এই হাসপাতালে এসেছে গুরুতর আহতরা। বিশেষ করে চিটাগাং রোড, কুড়িল, রামপুরা, বাড্ডা, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, উত্তরা, নারায়ণগঞ্জ এলাকা থেকে আহতদের নিয়ে আসা হয়। আহতদের মধ্যে শিক্ষার্থী ছাড়াও সিএনজিচালক, গাড়িচালক, দিনমজুরসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ রয়েছেন।

চিটাগাং রোড এলাকায় গত শনিবার (২০ জুলাই) সন্ধ্যায় গুলিবিদ্ধ হন সেলুনে কাজ করা রাকিব। এই কিশোরেরও বাম পা কাটতে বাধ্য হয়েছেন চিকিৎসকরা। অন্যদিকে পঙ্গুতে চিকিৎসাধীন ডেমরার দনিয়া এলাকার সিএনজিচালক মো. আমিরুল ইসলামের ডান পায়ে গত শনিবার গুলি লাগে। কোথা থেকে কীভাবে গুলি লাগল বুঝতেই পারেননি তিনি। ইয়াসিন নামের ১১ বছরের এক শিশু কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়। বাড্ডা-নতুনবাজার এলাকা থেকে ডান হাতে গুলি লেগে পঙ্গুতে ভর্তি আছেন মো. সজিব খান।

তিনি দাবি করেন, ‘পুলিশ আমাদের বলল এখন রাস্তা পার হতে পারেন, কোনো সমস্যা নেই। এমন অবস্থায় কোথা থেকে গুলি এসে আমার হাতে লাগল, জানি না। তবে এটুকু বলতে পারি, এমন এলোপাতাড়ি গুলি করা হয়েছে যে রাস্তার পাগল, এমনকি কুকুরের মতো অবুঝ প্রাণীরাও এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করেছে। আমি হাসপাতালে থাকায় আমার সাত বছরের সন্তানের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেছে।’

ডান পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে ক্যাজুয়ালটি বিভাগ-১-এ ভর্তি টঙ্গীর মো. রাজুর মা জানান, ব্যথায় দিনরাত চিৎকার করছে তার ছেলে। এই প্রতিবেদককে উদ্দেশ করে প্রশ্ন রাখেন, ওর স্ত্রী, দুই বাচ্চার কী হবে এখন?

এদিকে কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি আহতদের তথ্য নিতে গতকাল দুপুরে হাসপাতালে যান পুলিশ সদস্যরা। তারা বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত, হাতের ছাপ নেওয়ায় আতঙ্ক দেখা দেয় আহত ব্যক্তি ও তাদের স্বজনদের মাঝে। 

নিটোরের অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে এ পর্যন্ত আড়াই শর বেশি রোগী এসেছেন সহিংসতার ঘটনায় আহত হয়ে। এর মধ্যে বেশির ভাগই গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তবে সবাই এখন শঙ্কামুক্ত। ছয়জনের পা কেটে ফেলতে হয়েছে।’

তিনি জানান, গুলিবিদ্ধ যারা এসেছেন তাদের মধ্যে ১৮ জুলাই আসা ১৭ জন শিক্ষার্থী। পরে যারা এসেছেন তাদের মধ্যে কোনো শিক্ষার্থী নেই।

কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়াতে ইসির ৩০ কোটি টাকার নতুন প্রকল্প

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৪, ০১:৩৩ পিএম
আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৪, ০৬:১৭ পিএম
কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়াতে ইসির ৩০ কোটি টাকার নতুন প্রকল্প
নির্বাচন কমিশন (ইসি)

নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সক্ষমতা ও কর্মদক্ষতা বাড়াতে ২৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকার নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে ইসি। পাঁচ বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের নাম এনহেন্সিং ইফিসিয়েন্সি অব এপ্লয়িজ অব ইলেকশন কমিশন সেক্রেটারিয়েট (ইইইইসিএস)। এর মূল লক্ষ্য- প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ইসির বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মদক্ষতা বাড়ানো। প্রকল্পের মেয়াদকাল নির্ধারণ করা হয়েছে চলতি ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৯ সালের জুন পর্যন্ত।

ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ খবরের কাগজকে জানিয়েছেন, নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (ইটিআই) মাধ্যমে যেসব প্রশিক্ষণ নেওয়া সম্ভব হয় না, সে ধরনের প্রশিক্ষণ আয়োজন করাই এই প্রকল্পের লক্ষ্য। বিশেষ করে তাদের ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা বাড়ানো, যাতে বিদেশে গিয়ে কমিউনিকেশন ও নেগোসিয়েশনের দক্ষতা বাড়ে। এ ছাড়া বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়ানোর নানা উদ্যোগ রয়েছে প্রকল্পে। ইসির প্রস্তাবিত নতুন প্রকল্পটি বর্তমানে অনুমোদনের অপেক্ষায় অর্থ মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। চলতি মাসে এটি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাস হওয়ার কথা রয়েছে।

প্রকল্পের জনশক্তি কেমন হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই প্রকল্প পরিচালনায় ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে না। মোট জনবল থাকবে মাত্র ছয়জন। তার মধ্যে নতুন করে একজন হিসাবরক্ষক, একজন গাড়িচালক ও একজন অফিস সহকারী নিয়োগ দেওয়া হবে। বাকি পদগুলোতে কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তারাই অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করবেন এবং এই কাজের জন্য তাদের বাড়তি সম্মানীও থাকবে না। 

এর আগে গত ৩০ জুন শেষ হয় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও শক্তিশালীকরণ (এসসিডিইসিএস) প্রকল্পের কার্যক্রম। ২০১৮ সালের ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ওই প্রকল্পেরও মেয়াদ ছিল পাঁচ বছর। লক্ষ্য ছিল- প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সেবার মান বাড়াতে কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়ানো এবং জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা পেতে সাধারণ নাগরিকদের ভোগান্তি কমানো। প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ওই প্রকল্পের আওতায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সক্ষমতা বাড়াতে বিদেশে প্রশিক্ষণের ৫০ শতাংশই বাস্তবায়ন হয়নি। 

ওই প্রকল্পের অর্জন সম্পর্কে জানতে চাইলে অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘প্রকল্পের ৯৮ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা আমরা পূরণ করতে পেরেছি। তবে প্রকল্প চলাকালে বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতিসহ নানা কারণে ১০০ জন কর্মকর্তাকে বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানোর কথা থাকলেও সেখানে ৫০ জনকে পাঠানো সম্ভব হয়েছে। আর নির্ধারিত বাজেটের তুলনায় ব্যয় সাশ্রয় হওয়ায় ১০ শতাংশ অর্থ উদ্ধৃত হয়েছে, যা ফেরত দেওয়া হয়েছে।’ ওই প্রকল্পের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবারের নতুন প্রকল্প আরও বেশি কার্যকর ও সফল হবে, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন অতিরিক্ত সচিব। 

এ ছাড়া ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়াতে ‘নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় আইসিটি ব্যবহারে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক প্রকল্প হাতে নেয় ইসি। গত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ২০২৩ সালের নভেম্বরে শুরু হওয়া প্রকল্পটির পরিচালক করা হয়েছে সংস্থার প্রশাসন ও অর্থ শাখার যুগ্ম সচিব মো. মনিরুজ্জামান তালুকদারকে। এ ছাড়া পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও প্রকাশনা শাখার উপপ্রধান মুহাম্মদ মোস্তফা হাসানকে উপপ্রকল্প পরিচালক এবং সিনিয়র সহকারী প্রধান মো. রাজীব আহসানকে সহকারী প্রকল্প পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০২৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তিন বছর মেয়াদি ৩৭ কোটি ৫ লাখ ৩৮ হাজার টাকার এই প্রকল্পের ব্যয়ের ৪০টি খাত নির্ধারণ করা হয়। খাতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে প্রশিক্ষণে- ১৯ কোটি ৮৬ লাখ ১৭ হাজার টাকা। এরপর রয়েছে সেমিনার, আউটসোর্সিং এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি খাতের ব্যয়। প্রকল্পের অধীনে বর্তমানে নির্বাচন কমিশন কার্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, ফলাফল ব্যবস্থাপনা সিস্টেম, স্মার্ট নির্বাচনি ব্যবস্থাপনা অ্যাপ, অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের সিস্টেম, ইলেকট্রনিক ভোটিং সিস্টেম, এনআইডি সার্ভার প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে সেবা ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের চেষ্টা করছে।

রোগীতে ঠাসাঠাসি জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৪, ০১:২৫ পিএম
আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৪, ০৪:২৯ পিএম
রোগীতে ঠাসাঠাসি জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল

জালাল উদ্দীন বোন ক্যানসারের রোগী, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কথা বলছিলেন কেমোথেরাপি কবে দিতে পারবেন তা নিয়ে। তার কেমো দেওয়ার তারিখ ছিল গত ২০ ও ২১ জুলাই। কিন্তু চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের জেরে গত ২০ জুলাই শনিবার থেকে কারফিউ ও রবি-সোম-মঙ্গলবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় বন্ধ থাকে কেমোথেরাপি দেওয়ার কার্যক্রম। কারণ স্বাভাবিক সময়েও সাধারণ ছুটিতে এখানে কেমো দেওয়া বন্ধ থাকে। ফলে জালালের কেমো দেওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। কিন্তু বুধবার (২৪ জুলাই) পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় তিনি এসেছেন কেমো নিতে।

খবরের কাগজকে তিনি বলেন, ‘আমার নিয়মিত কেমো চলছে। তাই হাসপাতালের পাশেই বাসা নিয়ে থাকি। এ জন্য আমার এখানে পৌঁছতে কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু কারফিউ ও সাধারণ ছুটি থাকায় কেমো দেওয়া হয়নি।’ গতকাল দুপুরে রাজধানীর জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চলমান আন্দোলনের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জালালের মতো অনেকেই পড়েছেন নানা ভোগান্তিতে। কেউ সেবা নিতে ঢাকার বাইরে থেকে হাসপাতালে আসতে পারেননি সময়মতো, আবার কারও চিকিৎসা শেষ হলেও বাড়ি ফিরতে পারেননি।

তেমনই একজন ফরিদপুরের বাসিন্দা কাদের মোল্লা, আক্রান্ত ফুসফুসের ক্যানসারে। চিকিৎসা নিতে ভর্তি ছিলেন এই হাসপাতালে, দুই দিন আগে ছুটি দিলেও চলমান পরিস্থিতির কারণে তিনি যেতে পারেননি বাড়িতে। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘শুনলাম এখন বাস চলছে, এখন বাড়ি যাব।’ 

অন্যদিকে পায়ের টিউমার থেকে ক্যানসার হয়েছে সিলেটের কিশোর সালমান খানের। অবরোধ, কারফিউ আর সাধারণ ছুটির কারণে গতকাল রাতে এই হাসপাতালে এসে পৌঁছলেও এখনো তার চিকিৎসা ঘুরপাক খাচ্ছে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায়। আর পরীক্ষা চলার সময় তাকে ভর্তিও করা হচ্ছে না। তাই হাসপাতালের কোরিডরে ঠাঁই নিয়েছে সে ও তার পরিবার। 

হাসপাতালটির জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক ডা. আশফিকা জিনি বলেন, ‘আমাদের জরুরি বিভাগে আজ (বুধবার) সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ৪৮ ঘণ্টা একজন ডাক্তারই ডিউটি করেছেন। কারণ তিনি বাসায় ফিরতে পারছিলেন না। আবার অন্য কেউ ডিউটিতে আসতেও পারছিলেন না। তবে এখন সব স্বাভাবিক।’ তিনি জানান, বুধবার (২৪ জুলাই) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ২২ জন রোগী এসেছেন জরুরি বিভাগে।

হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সাতটি অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে। ফলে সাতজন আছেন পোস্ট-অপারেটিভে। মহিলা ওয়ার্ডগুলোতে পেইড-আনপেইড মোট ১২১টি সিটে রোগী আছেন ১১৬ জন। অন্যদিকে পুরুষ ওয়ার্ডগুলোতে মোট ১২২টি সিটের বিপরীতে ভর্তি আছেন ১০৬ জন। জানা গেছে, সাধারণ ছুটিতে তিন দিন বন্ধ ছিল ডে-কেয়ার কেমোথেরাপি ও আউটডোর। গতকাল থেকে আবার সব কার্যক্রম চালু হয়েছে।