![৯৯৯-এ বাড়ছে আস্থা](uploads/2024/04/18/1713418304.999.jpg)
বাংলাদেশ পুলিশের একটি জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯। এই সেবায় নিয়োজিত সাহসী ও নিষ্ঠাবান পুলিশ সদস্যদের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
২৪ ঘণ্টা দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে বিপদগ্রস্ত মানুষ ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলেই ছুটে যান পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। যার কারণে সহায়তা পান বিপন্ন মানুষ। এ ছাড়া সন্ত্রাস, দুর্ঘটনা, বাল্যবিবাহ-আত্মহত্যা ঠেকানো, ধর্ষণ, অগ্নিকাণ্ড, শিশু উদ্ধার, পাচার হওয়া নারী-পুরুষ উদ্ধার প্রভৃতি কাজে ভরসা এখন ৯৯৯।
২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এর যাত্রা শুরু হয়। সেই থেকে ২০২৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৭ বছর ২ মাসে ফোন এসেছে ৪ কোটি ৯৪ লাখ ৯ হাজার। ৯৯৯ দেশের যেকোনো স্থানে ২৪ ঘণ্টা নাগরিকের জরুরি মুহূর্তে ও প্রয়োজনে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স সেবা দিতে প্রস্তুত থাকে। এ জন্য ২৪ ঘণ্টায় তিন শিফটে কাজ করছেন ৪৫০ জন কর্মী। একসঙ্গে ১০০টি ফোন গ্রহণ করতে পারে ৯৯৯।
সূত্র জানায়, ওই নম্বরে সবচেয়ে বেশি ফোন আসে ভুক্তভোগী নারী ও শিশুদের। গত পাঁচ বছরে ৯৯৯-এ কল দিয়ে সেবা নিয়েছেন ৫২ হাজারের বেশি ধর্ষণ-নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশু। অপহরণ, ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন, যৌতুকের জন্য নির্যাতন, যানবাহনে হয়রানিসহ অসংখ্য অভিযোগ আসছে প্রতিদিন।
এই সেবায় নিয়োজিত সংশ্লিষ্টরা জানান, অনেক সময় অপরিচিত জায়গা থেকে অনেকেই ফোন দিয়ে নির্দিষ্ট করে স্থান না বলতে পারায় সেবা পেতে বিলম্ব হয়েছে। কারণ জাতীয় জরুরি সেবায় ‘অটো কলার লোকেশন’ প্রযুক্তি এখনো যুক্ত হয়নি। বর্তমানে জনবলসংকট ও আলাদা ইউনিট না হওয়ায় জাতীয় জরুরি সেবা অনেকাংশে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া এর মধ্যে এই সেবায় এখনো এএলআই প্রযুক্তি যুক্ত হয়নি। যার কারণে তাৎক্ষণিকভাবে অপরাধীদের শনাক্ত করতে পারেন না কর্মকর্তারা।
তারা বলেন, ‘জরুরি সেবায় মানুষের আস্থা বাড়ছে। বাড়ছে সেবার মানও। ট্রিপল নাইনে কল করার সঙ্গে সঙ্গে মিলছে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স সেবাসহ বিভিন্ন সেবা। কল পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা দ্রুত সেবাটি নিশ্চিত করতে চেষ্টা করি। শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশেই এই সেবা পুলিশকে অসহায় মানুষের কাছে জনবান্ধব করে তুলছে।’
গত ১০ ফেব্রুয়ারি এক তরুণীর কল পেয়ে পাচারের শিকার হওয়া তিন নারীকে ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। ওই তিন নারী ঢাকার ডেমরায় বসবাসকালে তাদের ভারতে কাজ দেওয়ার কথা বলে মুন্নী নামের এক নারী ঝিনাইদহের মহেশপুর থানার সীমান্তবর্তী যাদবপুর ইউনিয়নের জলুলী গ্রামে নিয়ে যান। এরপর একটি বাড়িতে তিন দিন ধরে তাদের বন্দি করে রাখা হয়।
ভুক্তভোগী এক তরুণী বলেন, ‘আমরা পাচারের শিকার হয়েছি বুঝতে পেরে থানা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। কিন্তু পুলিশের মোবাইল নাম্বার আমরা জোগাড় করতে পারিনি। হঠাৎ পত্রিকা ও টেলিভিশনের বিজ্ঞাপনের কথা মনে করে ৯৯৯-এ আমি কল করি। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করে। এই সেবা আমাদের জীবন বাঁচিয়ে দিয়েছে।’
২৬ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবনের করমজলে পথ হারানো ৩১ কিশোর পর্যটককে ৩ ঘণ্টা পর জাতীয় জরুরি সেবার হটলাইন নাম্বার ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে উদ্ধার করে মোংলা থানা পুলিশ।
মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কে এম আজিজুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘জরুরি সেবার ফোন পাওয়ার পর তাদের উদ্ধারের জন্য কাজ করি। বিপদগ্রস্তরা পথ হারিয়ে প্রায় ৩ ঘণ্টা সুন্দরবনের ভেতর ঘুরছিল।’
এর আগে ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে দক্ষিণ মাতুয়াইলে রুমের দরজা লক করে আটকে পড়ে এক শিশু। পরে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে দরজা খুলে সুস্থ অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স।
এ ছাড়া ২০২৩ সালের ৬ ডিসেম্বর গাজীপুরের কোনাবাড়ী থানাধীন পূর্ব পাড়া এলাকা থেকে ধর্ষণের শিকার হওয়া এক শিশুকে হাজি ভিলা এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। তাকে উদ্ধার করতে সহযোগিতা করেন একজন গৃহকর্ত্রী। তিনি জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ নম্বরে ফোন করে ঘটনাটি জানান।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সুমন বলেন, ‘৯৯৯-তে কলের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয়েছে। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে আমরা সত্যতা পাই এবং অপরাধীকে আইনের আওতায় আনি। সেই মামলা এখনো চলছে। নিয়তিম হাজিরাও দেওয়া হচ্ছে।’
জরুরি সেবার সীমাবদ্ধতা, সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে খবরের কাগজকে বিভিন্ন তথ্য জানিয়েছেন ৯৯৯-এর গণমাধ্যম ও জনসংযোগ কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ার সাত্তার। তিনি বলেন, নারী নির্যাতনের অনেকগুলো সাব-ইভেন্ট আছে। তার মধ্যে ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, ইভ টিজিংয়ের অভিযোগ ৯৯৯-এ বেশি আসে। ধর্ষণের শিকার প্রতিবন্ধী বা বাকপ্রতিবন্ধীদের নিরাপত্তা বাড়াতে অ্যাপস চালু করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘২৪ ঘণ্টায় প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার সেবাগ্রহীতার ফোন আসে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক কল অযোগ্য। প্রতিদিন অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। অনেক সময় ফোনদাতার দেওয়া ঠিকানায় গিয়ে কিছুই পাওয়া যায় না। তা ছাড়া প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০ ব্ল্যাঙ্ক কল আসে। আমাদের বিভাগের কাজকর্ম একেবারে আলাদা। এখানে সাহায্য নিতে, সাহায্য চাইতে কেউ দ্বিধাবোধ করে না। সব সময় চেষ্টা করি সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জরুরি সেবা ইউনিটের প্রধান ও পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি তাবারাক উল্লাহ বলেন, ‘আগে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সেবা নিতে ফোন দিলে আমরা প্রথমেই কলারের ঠিকানা সম্পর্কে জানতে চাইতাম। এতে সময় অপচয় হতো। এখন প্রতিটি কলের দ্রুত রেসপন্স করার জন্য কল করার সঙ্গে সঙ্গে সেই ব্যক্তির আইডেন্টিফিকেশন, লোকেশন এবং অবস্থান চলে আসে। তবে লোকবলসংকট থাকায় অনেক সময় সেবা দিতে কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়।’
তিনি বলেন, ‘জরুরি সার্ভিসের জন্য আরও সহজ হতো, যদি থানার টহল গাড়ির সংখ্যা, থানার জনবল বাড়ানো যেত। অর্থাৎ লজিস্টিক সাপোর্টের দরকার। যে লজিস্টিক সাপোর্ট রয়েছে, এসব দিয়ে কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়া আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।’