![বাজারে আসছে টিএমএসএস এলপিজি](uploads/2024/05/18/lpj-1716010032.jpg)
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বার্ক) থেকে ছাড়পত্র পেলেই বাজারে আসবে টিএমএসএস (ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ) এলপিজি (লিকুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস)। তবে স্থায়ী ছাড়পত্র নিতে হবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে। এর জন্য আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বাগেরহাটের মোংলা নৌ-বন্দর এলাকার শেলাবুনিয়া গ্রামে ইতোমধ্যে প্রায় ৩৫ একর জমির ওপর ৯০০ কোটি টাকায় টিএমএসএস এলপিজি প্লান্টের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। একই সঙ্গে প্রকল্প এলাকায় সিলিন্ডার তৈরির জন্য নেওয়া হয়েছে ১০০ কোটি টাকার আরেকটি প্রকল্প।
প্লান্ট ম্যানেজার মো. ইমরান মল্লিক বলেন, ‘চায়নিজ জিংমে হন্টু স্পেশার এয়ারক্রাফট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড ও মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠান কোসেল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এলপিজি প্লান্টে সব ধরনের যন্ত্রপাতি স্থাপন করেছে। ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে ১২, ৩৫ ও ৪৫ কিলোগ্রাম (কেজি) এলপিজি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন সিলিন্ডার রিফিলিং করা হয়েছে। ২০১৮ সালে এ প্রতিষ্ঠানটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। তবে করোনাসহ বিভিন্ন কারণে নির্মাণকাজ শেষ হতে প্রায় দুই বছর সময় বেশি লেগেছে। প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সিলিন্ডার কিনে বাজারজাত করা হবে টিএমএসএস এলপিজি। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে টিএমএসএস এলপিজি প্লান্টেই তৈরি হবে সিলিন্ডার।’
তিনি আরও জানান, এ কোম্পানিতে সব মিলিয়ে প্রায় ৩০০ মানুষের সরাসরি কর্মসংস্থান হবে। প্রতিষ্ঠানের ডলফিন জেটিতে একসঙ্গে ৯ হাজার মেট্রিক টন এলপিজি খালাসের সক্ষমতা থাকলেও চ্যানেলে গভীরতা কম থাকায় এখন জাহাজ থেকে এলপিজি খালাস করা সম্ভব হবে পাঁচ থেকে ছয় হাজার মেট্রিক টন। ২৪ ঘণ্টা উৎপাদনক্ষমতাসম্পন্ন এ প্লান্টে আট ঘণ্টায় ১২ কেজি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ৯ হাজার ৬০০টি সিলিন্ডার রিফিলিং করা সম্ভব হবে। তবে ৩৫ কেজি এলপিজি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন সিলিন্ডার রিফিলিং করা সম্ভব ৯৬০টি আর ৪৫ কেজি সিলিন্ডার রিফিল করা সম্ভব ৭২০টি।
ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশ থেকে জাহাজে এলপিজি আমদানি করা হবে। তিনটি স্টোরেজ ট্যাংকে ছয় হাজার মেট্রিক টন এলপিজি রাখার ব্যবস্থা থাকলেও আরও দুই হাজার টন ক্ষমতাসম্পন্ন স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সুযোগ রাখা হয়েছে। প্লান্টে জাহাজ থেকে এলপিজি নামানোর যেমন সুযোগ আছে, তেমনি লাইটার জাহাজে এলপিজি লোড করারও সুযোগ রয়েছে। বছরে উৎপাদনের গড় ক্ষমতা ১ লাখ ৩৬ হাজার ২৮১ মেট্রিক টনের বেশি।
বিক্রয় বিভাগের প্রধান মো. শাহরিয়ার চৌধুরী জানান, বগুড়ার এই প্রতিষ্ঠানটি দেশের এলপিজি খাতে ৩১তম প্লান্ট। খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি গোপালগঞ্জসহ দেশের ১১টি জেলায় প্রাথমিকভাবে গৃহস্থালি ও শিল্প-কারখানাসহ বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে বিক্রির জন্য ডিলার ও এজেন্ট নিয়োগ করা হবে। প্রথম দিন চার লাখ সিলিন্ডার দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বাজারে এলেও প্রতিদিনই চাহিদা অনুযায়ী ধীরে ধীরে সিলিন্ডারের সংখ্যা বাড়ানো হবে।
গৃহস্থালি কাজের জন্য সাধারণত যে ধরনের সিলিন্ডার ব্যবহার করা হয়, তার দাম কেমন হবে- এ প্রশ্নের জবাবে মো. শাহরিয়ার চৌধুরী বলেন, ‘সরকারনির্ধারিত দরের চেয়ে কোনোভাবেই বেশি দামে খুচরা বাজারে কেনাবেচা হবে না। এখন দেশের বাজারে এলপিজির মাসে গড় চাহিদা দেড় লাখ মেট্রিক টনের বেশি। নতুন প্রতিষ্ঠান হলেও চাহিদা আনুযায়ী বিভিন্ন জেলায় ধীরে ধীরে এজেন্ট ও ডিলারদের সংখ্যা বাড়ানো হবে।’
বিসিএল গ্রুপের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অপারেশন) মো. মেজবাউল বারী শুভ্র বলেন, ‘টিএমএসএস এলপিজি প্লান্টের চাহিদা অনুযায়ী প্রকল্প এলাকার ভেতরেই তৈরি করা হবে ১২ কেজি, ৩৫ কেজি ও ৪৫ কেজি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন সিলিন্ডার। আট ঘণ্টায় প্রায় ১ হাজার ১২ কেজির সিলিন্ডার তৈরি হবে। একই সঙ্গে চাহিদা অনুযায়ী তৈরি হবে ৩৫ কেজি ও ৪৫ কেজির সিলিন্ডার। সিলিন্ডার তৈরির কারখানা নির্মাণে আরও অন্তত ১০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কারখানাটির নির্মাণকাজ শেষ হলে সিলিন্ডার খাতে ব্যয় অনেকাংশে কমবে।
মো. মেজবাউল বারী শুভ্র দাবি করেন, ডিলার ও এজেন্টদের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাক্রমে ১ কোটি সিলিন্ডার বাজারে দেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে তাদের। জেলা ও উপজেলার সদরের পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলেও পরিবেশবান্ধব এ জ্বালানি সাধারণ ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানোর উদ্যোগ নিয়েছে টিএমএসএস এলপিজি কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সঠিক মাপের নিশ্চয়তা রয়েছে শতভাগ।
তিনি আরও জানান, দেশের বিভিন্ন স্থানে রোড ট্যাংকার ও বক টেইলের মাধ্যমেও টিএমএসএস এলপিজি পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ। প্রথম দিন বিভিন্ন স্থানে পণ্য নিতে প্রস্তুত করা হয়েছে ১০টি রোড ট্যাংকার ও বক টেইলার। বড় বড় শিল্পকারখানা ও ফিলিং স্টেশনে এলপিজি পৌঁছানোর জন্য রোড ট্যাংকার ও বক টেইলার তৈরি করবে টিএমএমএস এলপিজি কর্তৃপক্ষ। টিএমএসএস এলপিজি বাজারে আসার আগেই শুধু খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে এজেন্ট ও ডিলারশিপ পাওয়ার জন্য প্রায় ৭০টি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে।