![ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি ১০ বছরেও](uploads/2024/05/20/high-court-1716186925.jpg)
ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ করার জন্য ২০১৪ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সাত বছরে মোট তিন দফা নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিগত ১০ বছরেও এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি। মাঝেমধ্যে কিছু পুলিশি তৎপরতা দেখা গেলেও তদারকির অভাবে ক্রমান্বয়ে সড়ক-মহাসড়ক চলে গেছে তাদের দখলে।
ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে এ ধরনের সব রিকশা বন্ধ করতে ২০১৪ সালে প্রথমবার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ২০১৭ সালে এসব পরিবহন বন্ধে আরেক দফা নির্দেশনা দেওয়া হয় হাইকোর্ট থেকে। এরপর ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ থ্রি-হুইলার ও ইজিবাইক বন্ধ করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। আদেশে অটোরিকশার আমদানিও নিষিদ্ধ করা হয়। এ আদেশের সংশোধন চেয়ে বাংলাদেশ ইলেকট্রিক থ্রি-হুইলার ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যান্ড মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন আপিল বিভাগে আবেদন করে। আবেদনের শুনানি শেষে মহাসড়কে সব ধরনের থ্রি-হুইলার ও ইজিবাইক চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ।
আদেশে ব্যাটারিচালিত রিকশা সর্বত্র বন্ধের আদেশ বহাল রাখেন সর্বোচ্চ আদালত। আদেশের ফলে ইজিবাইক ও থ্রি-হুইলার গ্রামাঞ্চলের সাধারণ রাস্তায় চলাচলের সুযোগ পায়। সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ অনুযায়ী ২০১৫ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে সারা দেশে সব মহাসড়কে তিন চাকার ব্যাটারিচালিত রিকশা, থ্রি-হুইলার, ইজিবাইক, নছিমন, করিমন, ভটভটি চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে কয়েক দফা বিজ্ঞপ্তি জারি করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।
বিজ্ঞপ্তি জারি করা হলেও প্রয়োজনীয় তদারকির অভাবে সড়কে আজও কোনো শৃঙ্খলা ফেরেনি বলে অভিমত ব্যক্ত করেন আইনজীবীরা। এ ব্যাপারে রিটের শুনানিতে অংশগ্রহণকারী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত খবরের কাগজকে বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা কমানো, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো, বিদ্যুতের অপচয় রোধসহ বিভিন্ন কারণে ওই রিট দায়ের করা হয়েছিল। আদালতের নির্দেশনা প্রতিপালনের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। শুনেছি নির্দেশনার আলোকে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। তবে প্রত্যেকটি পদক্ষেপ বাস্তবায়নে তদারকির প্রয়োজন, যা এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান নয়।’
রিটকারীর আইনজীবী আতিক তৌহিদুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের রায় অনুযায়ী ব্যাটারিচালিত রিকশা কোনো অবস্থাতেই দেশের কোথাও চলাচল করতে পারবে না। এ ছাড়া থ্রি-হুইলার, ইজিবাইকসহ এ ধরনের কোনো যানবাহন দেশের কোনো মহাসড়কে উঠতে পারবে না। কিন্তু অদ্যাবধি এ রায় বাস্তবায়ন করা হয়নি। কর্তৃপক্ষ রায় বাস্তবায়ন না করায় মূলত সর্বোচ্চ আদালতকে অবজ্ঞা করা হয়েছে।’
ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ সারা দেশে সড়ক-মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা, থ্রি-হুইলার, ইজিবাইকসহ এ ধরনের যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ চেয়ে ২০২১ সালে ১৩ ডিসেম্বর হাইকোর্টে রিট করেছিলেন বাঘ ইকো মোটরস লিমিটেডের সভাপতি কাজী জসিমুল ইসলাম। এতে শিল্পসচিব, সড়ক পরিবহনসচিব, পরিবেশসচিবসহ সাতজনকে বিবাদী করা হয়েছিল। রিটে বলা হয়, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক এবং এ ধরনের যানবাহনে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে ব্যাটারি চার্জ দেওয়া হয়। এ জন্য বিদ্যুৎ খাত থেকে সরকার প্রয়োজনীয় রাজস্ব হারাচ্ছে। এগুলো পরিবেশ ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। রুট পারমিট ছাড়াই রাস্তায় বেপরোয়া চলাচল করে। এতে দুর্ঘটনা বেড়েছে। মানুষের প্রাণহানির ঘটনা বেড়েই চলেছে। তাই এ ধরনের যানবাহন বন্ধ করা জরুরি।
রিটের শুনানি শেষে ১৫ ডিসেম্বর এক আদেশে ব্যাটারিচালিত রিকশা, থ্রি-হুইলার, ইজিবাইকসহ এ ধরনের যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন হাইকোর্টের বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খন্দকার দিলীরুজ্জামানের বেঞ্চ। একই সঙ্গে ব্যাটারিচালিত রিকশা, থ্রি-হুইলার, ইজিবাইকসহ এ ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, মর্মে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। শুনানিতে রিটের পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করেন অ্যাডভোকেট আতিক তৌহিদুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত।
এর আগে ২০১৪ এবং ২০১৭ সালে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরসহ দেশের সব মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা, থ্রি-হুইলার, ইজিবাইক, নছিমন, করিমন, ভটভটি চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এসব নির্দেশনার আলোকে প্রথম দিকে পুলিশি তৎপরতায় মহাসড়কে এসব যান চলাচল কমে গিয়েছিল। এ সময় সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যাও কমতে থাকে। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই মহাসড়ক আবার তিন চাকার গাড়ির দখলে চলে যায়। এর ফলে সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর হার আবার উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে।