![দ্বিতীয় ধাপেও থামানো গেল না মন্ত্রী-এমপিদের](uploads/2024/05/20/Awamileague-logo-1716188137.jpg)
দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনেও থামানো গেল না মন্ত্রী-এমপিদের। আওয়ামী লীগের নির্দেশ অমান্য করে তাদের (মন্ত্রী-এমপির) পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ নিয়ে দলটির হাইকমান্ড উদ্বিগ্ন। এদিকে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন প্রভাবমুক্ত ও সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি।
মঙ্গলবার (২১ মে) দ্বিতীয় এবং ২৯ মে তৃতীয় ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। টিআইবি জানিয়েছে, দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির পরিবারের ১৭ সদস্য ও স্বজনরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। খবরের কাগজে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে এই সংখ্যা ছিল ১৭ জন। এর মধ্যে ১২ জন নির্বাচিত এবং ৫ জন পরাজিত হয়েছেন। তৃতীয় ধাপের নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মন্ত্রী-এমপির পরিবারের বিপুলসংখ্যক সদস্য ও স্বজন। গত ১২ মে এই নির্বাচনে (তৃতীয় ধাপ) প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় অতিবাহিত হয়েছে। এ অবস্থায় সরকারি দলের একাধিক নীতি-নির্ধারক খবরের কাগজকে বলেছেন, মন্ত্রী-এমপিদের এই ভূমিকার কারণে নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রাখার আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত হোঁচট খাচ্ছে।
টিআইবি রবিবার (১৯ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠেয় উপজেলা নির্বাচনে লড়ছেন মন্ত্রী-এমপিদের ভাই, চাচাতো ভাই, পিতা, ভগ্নিপতি, শ্যালক, চাচাশ্বশুর ও খালু। বিভিন্ন উদ্যোগ ও হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির এই স্বজনদের থামাতে পারেনি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘যারা দলের নির্দেশ অমান্য করে নির্বাচন করছেন, সময় হলেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য যেকোনো শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে তাদের। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে কেউ পার পাবে না। এ বিষয়ে আগামীতে দলীয় ফোরামে আলোচনা হবে বলেও জানান তিনি।’
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের আগামী বৈঠকে দলের নির্দেশ অমান্যকারীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে। তিনি জানান, নির্দেশ অমান্য করে যারা প্রার্থী হয়েছেন, তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করানোর চেষ্টা চলছে। প্রত্যাহার না করলে কী করবেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেক্ষেত্রে ঘোষণা দিয়ে প্রার্থী যাতে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান, সে চেষ্টা করা হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি মন্ত্রী-এমপি এবং তাদের স্বজনদের নাম প্রকাশ করেছে। তারা হলেন- নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলায় শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ হুমায়ুনের ছোট ভাই নজরুল মজিদ মাহবুব, লালমনিরহাটের কালিগঞ্জ উপজেলায় সাবেক মন্ত্রী ও এ আসনের এমপি নুরুজ্জামান আহমেদের ছোট ভাই মাহবুবুজ্জামান আহমেদ এবং ছেলে রাকিবুজ্জামান, কুমিল্লা সদরে সাবেক অর্থমন্ত্রী ও এ আসনের এমপি আ হ ম মুস্তফা কামাল লোটাসের ছোট ভাই গোলাম সারওয়ার, জামালপুরের বকশীগঞ্জে এমপি নূর মোহাম্মদের ভাই নজরুল ইসলাম, রাজবাড়ির বালিয়াকান্দি উপজেলায় রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিমের চাচাতো ভাই এহসানুল হাকিম সাধন, কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে এমপি রেজাউল হক চৌধুরীর ভাই বুলবুল আহমেদ টোকন, নড়াইলের লোহাগড়ায় এমপি মাশরাফি বিন মুর্তজার চাচাশ্বশুর ফয়জুল হক রোম, চুয়াডাঙ্গা সদরে এমপি সোলায়মান হক জোয়ার্দারের ভাতিজা নঈম হাসান জোয়ার্দার, শরীয়তপুর সদরে এমপি ইকবাল হোসেন অপুর চাচাতো ভাই বিল্লাল হোসেন দিপু মিয়া, বগুড়ার আদমদীঘিতে এমপি খান মুহাম্মদ সাঈফুল্লাহ আল মেহেদীর পিতা সিরাজুল ইসলাম খান, নোয়াখালীর সেনবাগে এমপি মোর্শেদ আলমের পুত্র সাইফুল ইসলাম দীপু, ভোলার বোরহানউদ্দিনে এমপি আলী আজম মুকুলের ভগ্নিপতি মো. জাফর উল্লাহ, গাজীপুরের শ্রীপুরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলীর বড় ভাই জামিল হাসান দুর্জয়, হবিগঞ্জের বাহুবলে এমপি আবু জাহিরের শ্যালক আক্তারুজ্জামান, পাবনার ভাঙ্গুড়ায় এমপি মকবুল হোসেনের ছেলে গোলাম হাসনায়েন এবং লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে এমপি নূর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের ভগ্নিপতি মামুনুর রশিদ। তারা প্রত্যেকেই উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
পাবনার ভাঙ্গুড়ায় ছেলে হাসনাইন রাসেলের প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘সারা দেশের চিত্র আপনারা জানেন। এর আগে আমার ছেলে দুইবার পৌর মেয়র ছিল। সে পৌরসভাকে গুছিয়ে দিয়েছে। তাই স্থানীয় জনগণ জোর করে তাকে (ছেলেকে) প্রার্থী বানিয়েছে। তবে আমি বলেছি, ছেলের জন্য ভোট চাইতে পারব না। এমপি মকবুল হোসেন দাবি করেন, তার পরিবার ৮০ বছর ধরে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এরই ধারাবাহিকতায় ছেলে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে।’
অবশ্য এর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান বাকী বিল্লাহ অভিযোগ করে বলেন, এমপি মকবুল হোসেন এবং তার ছেলে রাসেলের নির্দেশে দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের নির্যাতন করা হচ্ছে। থানায় অভিযোগ করেও লাভ হয়নি। তাই নেতা-কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে তার পক্ষে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে তৃতীয় ধাপে (২৯ মে) নোয়াখালী সদর, কোম্পানীগঞ্জ ও বেগমগঞ্জে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কোম্পানীগঞ্জে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই শাহাদাত হোসেন লড়ছেন। এখানে ওবায়দুল কাদেরের আরেক ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা সাবেক ছাত্রনেতা গোলাম শরীফ চৌধুরী পিপুলকে প্রার্থী দিয়ে মাঠে আছেন।
নরসংদী-৩ আসনের সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লার স্ত্রী ফেরদৌসী ইসলাম শিবপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আরেক এমপি ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলামের ভাতিজা আমিনুল ইসলাম তুষার। কক্সবাজারের রামু উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের বড় ভাই সোহেল সরওয়ার কাজল। উখিয়া উপজেলায় মাঠে আছেন স্থানীয় এমপি শাহীন আক্তারের ভাই জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী।’
জাতীয় সংসদের হুইপ ও কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল খবরের কাগজকে বলেন, ‘নির্বাচনে বড় ভাইয়ের প্রার্থী হওয়া নিয়ে আমার কোনো ভূমিকা নেই। আমি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে চাই না। দল ও নেত্রী যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে, তা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত না মেনে সে (সোহেল সরওয়ার কাজল) নির্বাচন করলে দল তাকে বহিষ্কার করতে পারে।’
নরসিংদীর শিবপুরে চেয়ারম্যান পদে স্ত্রী ফেরদৌসী ইসলামের প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা খবরের কাগজকে বলেন, ‘জনগণের আগ্রহের কারণে তার স্ত্রী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। তিনি বলেন, এটা ঠিক চেয়ারম্যান প্রার্থী তার স্ত্রী, তবে জনগণ ভোট দিলে জনপ্রতিনিধি হতে তো আর বাধা নেই।’