আগামী ১ জুন (বাংলাদেশ সময় ২ জুন ভোর সাড়ে ৬টা) পর্দা উঠবে ২০২৪ মেন্স টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের। টুর্নামেন্টের নবম সংস্করণের যৌথ আয়োজক ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং প্রথমবারের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ছোট ফরম্যাটের বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো অংশ নেবে সর্বোচ্চ ২০ দল। সরাসরি খেলবে ১২ দল। এ ছাড়া বাছাইয়ের বাধা টপকে বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে আফ্রিকার নামিবিয়া, উগান্ডা; এশিয়ার নেপাল, ওমান; ইউরোপের আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড; আমেরিকার কানাডা এবং পূর্ব এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের পাপুয়া নিউগিনি। টুর্নামেন্টে অংশ নিতে যাওয়া দলগুলোর বিশ্লেষণ নিয়ে খবরের কাগজের বিশ্বকাপের বিশেষ আয়োজন। আজকে থাকছে পাপুয়া নিউগিনি দল।
পাপুয়া নিউগিনিকে বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকদের খুব ভালোভাবেই মনে থাকার কথা। ২০২১ সালে নিজেদের অভিষেক টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের গ্রুপেই ছিল দলটি। শুধু তাই নয়, টাইগারদের জন্য ব্যর্থতার গ্লানিতে ভরা ওই আসরে যা একটু স্বত্বি, তা দিতে পেরেছিল ওশানিয়া মহাদেশের দেশটিই। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে অপ্রত্যাশিত ও প্রবল ঝাঁকুনি খাওয়া এক হারে ওই আসরটা শুরু করেছিল বাংলাদেশ। তাতে করে তাদের প্রতিযোগিতার সুপার টুয়েলভ খেলা নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়। তবে ওমানের পর ওই গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে রেকর্ডগড়া জয়ে সব শঙ্কা দূর করেছিল বাংলাদেশ।
ম্যাচটার আগে সমীকরণ এমন ছিল, বাংলাদেশকে শুধু জিতলেই হবে না। স্কটল্যান্ড ও ওমানের মধ্যকার পরের ম্যাচের ফলও পক্ষে আসতে হবে। কিন্তু ওমানের অল আমেরাত ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত ম্যাচটি বাংলাদেশ জিতে নেয় ৮৪ রানের বড় ব্যবধানে। নেট রানরেট এগিয়ে নেওয়ায় পরের ম্যাচের দিকে আর তাকাতেই হয়নি বাংলাদেশকে। আর এখন পর্যন্ত পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে ওই জয়টাই টি-টোয়েন্টিতে রানের হিসাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়। ১৮২ রানের লক্ষ্যে ৯৭ রানে অলরাউট হয়েছিল পাপুয়া নিউগিনি। যা টি-টোয়েন্টিতে দলটির যৌথভাবে সবচেয়ে কম রানে অলআউট হওয়ার রেকর্ড।
তাই বলে তুচ্ছ নয়
পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে সব ফরম্যাট মিলিয়েই বাংলাদেশ ওই একটি ম্যাচই খেলেছে। এমন কি আইসিসির পূর্ণ সদস্য অন্য দলগুলোর মধ্যে খুব কমদের বিপক্ষেই খেলার সুযোগ হয়েছে তাদের। আইসিসির সহযোগী সদস্য দেশটির যা খেলার সুযোগ মেলে, সেটা ছোট দলগুলোর বিপক্ষেই। সেই সব দলগুলোর বিপক্ষে পাপুয়া নিউগিনির সাফল্য একেবারে খারাপ নয়। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে দলটির জয়ের হার ৫৭.৩৮ শতাংশ। ২০৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জয়ের রেকর্ডও আছে দলটির। ২০২২ সালে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ওই জয়টি পায় দলটি। ২০১৫ সালে প্রথম টি-টোয়েন্টি খেলে পাপুয়া নিউগিনি। এরপর এখন পর্যন্ত ৬১ ম্যাচের মধ্যে পাঁচবার দলটি দুই শর বেশি সংগ্রহ গড়েছে। গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইয়ে ফিলিপাইনের বিপক্ষে ৬ উইকেটে ২২৯ রানের সংগ্রহটি টি-টোয়েন্টিতে তাদের সর্বোচ্চ।
বাছাই পর্বে সেরা
প্রথমবারের মতো এবার ২০ দল নিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে। র্যাঙ্কিংয়ে ২০তম স্থানে থাকা পাপুয়া নিউগিনির তো বিশ্বকাপে থাকা উচিতই! হ্যাঁ, দলটি বিশ্বকাপে থাকছে। তবে এজন্য বাছাই পর্ব পেরিয়ে আসতে হয়েছে তাদের। এবার ২০ দলের মধ্যে ১২ দলের বিশ্বকাপ টিকিট নিশ্চিত হয়েছিল ২০২২ বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার মধ্যে দিয়েই। বাকি ৮টি দল বাছাই পেরিয়ে এসেছে। পাপুয়া নিউগিনি পূর্ব এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করে। এই অঞ্চল থেকে একটি দলই বিশ্বকাপের ছাড়পত্র পায়। পাপুয়া নিউগিনি যা নিশ্চিত করেছিল একম্যাচ হাতে রেখেই। পরে শতভাগ জয়ে বাছাই শেষ করে দলটি। অবশ্য এ অঞ্চলের বাছাইয়ে অংশ নেওয়া ৭ দলের মধ্যে ক্রিকেটে প্রতিষ্ঠিত বা পরিচিত শক্তি কেউ ছিল না। পাপুয়া নিউগিনিই ছিল ফেভারিট।
বিশ্বসেরাদের কাতারে ভালা
আসাদ ভালার নেতৃত্বে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলবে পাপুয়া নিউগিনি। ৩৭ ছুঁই ছুঁই ভালা একটা জায়গায় রয়েছেন বিশ্বসেরাদের কাতারে। বাঁহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে অফব্রেক বল করেন। ওয়ানডেতে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, মোহাম্মদ নবি, সিকান্দার রাজা, রশিদ খান, গ্লেন ম্যাক্সওয়েলদের পাশে নাম তার। র্যাঙ্কিংয়ে তার অবস্থান চতুর্থ। অবশ্য টি-টোয়েন্টিতে অলরাউন্ডার র্যাঙ্কিংয়ে সেরা বিশেও নেই তিনি।
এমনিতে দলটির সেরা তারকাদের তালিকা করলে ভালার পরই টনি উরার নামটা বলতে হবে। ৩৪ বছর বয়সী এই ওপেনার টি-টোয়েন্টি দেশটির হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। এখন পর্যন্ত ৫৬ ম্যাচে তার রান ১৬১৮। ৫৯ ম্যাচে ১২৪৪ রান করে তার ঠিক পরের স্থানেই ভালা। ওয়ানডেতে আবার ভালা সবার ওপরে, দ্বিতীয় স্থানে টনি উরা। তবে শুধু টি-টোয়েন্টির কথা বললে টনি উরারই জয়-জয়কার। দলটির পক্ষে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস (১০৭), কমপক্ষে ২৫ ইনিংস খেলা ব্যাটারদের পক্ষে সবচেয়ে বেশি গড়ও (৩৪.৪৩) তার। টি-টোয়েন্টিতে দলটির পক্ষে একমাত্র সেঞ্চুরিও টনি উরার।
বোলিংয়ে দলটির পক্ষে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ৩০ বছর বয়সী নরম্যান ভানুয়া (৬৩)। কমপক্ষে ৫০ উইকেট নেওয়া বোলারদের মধ্যে গড়ও সবচেয়ে ভালো তার (১৯.২৪)। তবে ম্যাচে সেরা বোলিংয়ের কীর্তিটা কাবুয়া মোরিয়ার। গত বছর ফিলিপাইনের বিপক্ষে ৯ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। এদের সবাই যাচ্ছেন বিশ্বকাপে। ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলা ১৫ জনের ১০ জনকে রেখে স্কোয়াড সাজিয়েছে দেশটি।
বিশ্বকাপে প্রথম জয়ের হাতছানি
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে একবার অংশ নিয়ে কোনো জয়ের স্বাদ পায়নি পাপুয়া নিউগিনি। এমনকি ২০২২ সালের আসরেও তাদের সুযোগ মেলেনি। তবে এবার ফের বিশ্বমঞ্চে পা রাখেছে দলটি। ‘সি’ গ্রুপে তাদের সঙ্গী আফগানিস্তান, নিউজিল্যান্ড, উগান্ডা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। র্যাঙ্কিং অনুযায়ী উগান্ডা তাদের সমশক্তির দলই। ২২তম স্থানে থাকা উগান্ডার অবস্থান তাদের থেকে দুই ধাপ পিছিয়েই। অর্থাৎ এবারের বিশ্বকাপে প্রথম জয় তুলে নেওয়ার হাতছানিও থাকছে পাপুয়া নিউগিনির সামনে। আসরের প্রথম দিনই দ্বিতীয় ম্যাচে উইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে তাদের পথচলা।
টি-টোয়েন্টিতে পাপুয়া নিউগিনির অভিষেক ১৫ জুলাই ২০১৫
ম্যাচ: ৬১
জয়: ৩৫
হার: ২৫
পরিত্যক্ত: ১
আসাদ ভালা, অধিনায়ক
আমাদের দলটির শক্তি দুর্দান্ত। কিছু ছেলে আছে যারা গত বিশ্বকাপেও ছিল (২০২১ সালে)। এবার অনুভূতি অন্যরকম কারণ সবশেষ বার কোভিডের সময় ছিল এবং প্রস্তুতি তেমন ভালো ছিল না। এখন আমরা ভালো অবস্থানে আছি। ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য অপেক্ষা করছি কারণ আমি জানি আমরা ভালো করতে যাচ্ছি।
দল
আসাদ ভালা (অধিনায়ক), চার্লস আমিনি (সহ অধিনায়ক), আলেই নাও, চ্যাড সোপার, হিলা ভারে, হিরি হিরি, জ্যাক গার্ডেনার, জন কারিকো, কাবুয়া মোরেয়া, কিপ্লিং ডোরিগা, লেগা সিয়াকা, নরম্যান ভানুয়া, সেমা কামেয়া, সেসে বাউ ও টনি উরা।