‘সোমালিয়ার জলদস্যুরা যখন আমাদের জিম্মি করে তখন থেকেই জীবনে অন্য এক ভয় নেমে আসে। স্বাভাবিক সময়ে আমরা জাহাজে ডিউটি করতাম। ডিউটি শেষে ভাত খেতাম, গোসল করতাম, বিশ্রাম নিতাম, পরিবারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলতাম। অথবা জরুরি কোনো কাজ থাকলে সেগুলো সেরে নিতাম। কিন্তু জলদস্যুরা আমাদের এই স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত করেছিল। সবকিছুতে স্থবিরতা নেমে আসে। জীবনটা অস্ত্রময় হয়ে ওঠে। সবসময় অস্ত্রের মুখে থাকতে হতো। এক মুহূর্ত জীবনের কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। মনে হতো, আজই মনে হয় মেরে ফেলা হবে।’
মঙ্গলবার (১৪ মে) খবরের কাগজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এভাবেই জিম্মিদশার বর্ণনা দেন এমভি আবদুল্লাহর জাহাজের সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার রফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘সমুদ্রের জীবনটা হচ্ছে সামরিক বাহিনীর মতো। যুদ্ধে গেলে আসলে আর থেমে থাকার সুযোগ নেই। মরণপণ লড়াই তখন করতেই হবে। বুকে সাহস ছিল, তাই হয়তো সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছি।’
রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাড়ি ময়মনসিংহে। চট্টগ্রাম থেকে অনেক দূরে। তাই তারা (স্বজনরা) এখানে আসতে পারেনি। আমার সন্তানরা টেলিভিশনে আমাকে দেখে ফোন করে। তারা আমাকে প্রশ্ন করেছে, এখানে নেই কেন? তারাতো জানে না যাদের বাড়ি কাছে তারাই আসতে পেরেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখানে এই অনুষ্ঠানের জন্যই আসা। এখন আমাদের ইমিগ্রেশন আছে। কিছু দাপ্তরিক কাজ আছে। সেগুলো সেরে নিয়ে বাড়ির পথে রওয়ানা হব। বাড়ি যাওয়ার জন্য মুখিয়ে আছি।’
জিম্মিদশার বর্ণনা দিয়ে নাবিক শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘৩৩ দিন আমার কাছে ৩৩ বছর মনে হয়েছে। কীভাবে দিন কাটতো সেটি আমরাই টের পেয়েছি। মনে হচ্ছিল প্রাণ যায় যায় অবস্থা। সারাক্ষণ জলদস্যুরা অস্ত্র ধরে রাখতো। ঈদের দিনও অস্ত্রের মুখে নামাজ পড়ি। কখনো ভাবিনি জীবনে এমন দিন আসবে। এখন নিজ দেশে ফিরে আসতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। আল্লাহর কাছে কোটি কোটি শুকরিয়া।’
বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির ৫৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও এমভি আবদুল্লাহর ডেক ক্যাডেট টাঙ্গাইলের সাব্বির হোসেন বলেন, ‘ভেবেই নিয়েছিলাম মারা যাব। আমাদের ভাগ্যে কী ছিল আমরাও জানতাম না। পুরো ৩৩টি দিন এক ধরনের শঙ্কায় ছিলাম। দিনগুলো চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। গোসল করতে পারিনি, ভালো মতো খেতে পারিনি। অবশেষে আমরা সুস্থ অবস্থায় ফিরে এসেছি। এটাই শুকরিয়া।’
> মৃত্যুর মুখ থেকে স্বজনদের কাছে, আনন্দ উচ্ছ্বাস
> ‘আমাদের দিয়ে রান্না করিয়ে দস্যুরা খেয়ে ফেলত’
> মেহেদিরাঙা হাতে ফুল ও কেক নিয়ে নুরকে বরণ করলেন স্ত্রী
> ‘মায়ের ছেলে মায়ের বুকে ফিরেছে’
> মৃত্যুর হুমকি ছিল, কিন্তু সাহস রেখেছি : এমভি আবদুল্লাহর ক্যাপ্টেন
> বাবাকে ছাড়তেই চাইছিল না দুই মেয়ে, বুকে জড়িয়ে থাকে বহুক্ষণ
> ছেলের জন্য গরুর মাংস, শুঁটকি ও শিমের বিচি রান্না করে এনেছি