যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন জো বাইডেন। তার স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন কমলা হ্যারিস। আগামী মাসে শিকাগোতে ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনভেনশনে তার দলীয় মনোনয়নের বিষয়টি পাকাপোক্ত হবে। তবে তার আগেই গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ করতে হবে হ্যারিসকে, বেছে নিতে হবে রানিং মেট।
কমলা হ্যারিসের হাতে এ কাজ করার জন্য সময় খুব কম। এরই মধ্যে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এরিক হোল্ডারকে তিনি নিয়োগ দিয়েছেন একটি টিমের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য। ওই টিম কমলা হ্যারিসের জন্য উপযুক্ত রানিং মেট যাচাই-বাছাই করছে, পারিবারিক ইতিহাস থেকে শুরু করে আর্থিক ইতিহাস সবই আমলে নেওয়া হচ্ছে। কিছু নাম এরই মধ্যে সামনে এসেছে।
জশ শাপিরো, পেনসিলভানিয়ার গভর্নর
পেনসিলভানিয়া যুক্তরাষ্ট্রের ছয় ব্যাটলগ্রাউন্ড অঙ্গরাজ্যের একটি। তিনি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির উদীয়মান তারকা। শাপিরোর জন্ম মিজৌরির ক্যানসাস সিটিতে। তবে তিনি বড় হয়েছেন পেনসিলভানিয়াতেই। আইনজীবী হিসেবে ২০১৭ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত ওই অঙ্গরাজ্যের কৌঁসুলি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ক্যাথলিক চার্চের যৌন হয়রানির মামলা সামাল দেওয়া থেকে শুরু করে মুসলিম দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে মানুষকে ঢুকতে না দেওয়ার যে চেষ্টা ডোনাল্ড ট্রাম্প চালিয়েছিলেন- সেটির বিরোধিতাও করতে দেখা গেছে শাপিরোকে।
৫১ বছর বয়সী শাপিরো গত বছর পেনসিলভানিয়ার গভর্নর হয়েছেন। হামাসকে নির্মূলে ইসরায়েলের যে সিদ্ধান্ত, সেটির কট্টর সমর্থক তিনি।
মার্ক কেলি, অ্যারিজোনার সিনেটর
সাবেক নভোচারী ও যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন মার্ক কেলি অভিবাসন ইস্যুতে মধ্যপন্থা অবলম্বন করেন। তার জন্ম নিউ জার্সিতে, বাবা ও মা দুজনেই ছিলেন পুলিশ। ৬০ বছর বয়সী কেলি নাসা ও নেভি থেকে অবসরের পর টাকসনে থাকছেন। তার স্ত্রী সাবেক কংগ্রেসওম্যান গ্যাব্রিয়েল গিফোর্ডস বন্দুকধারীদের হাতে মারা যান ২০১১ সালে। এর পর থেকেই অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনের পক্ষে সরব কেলি।
রয় কুপার, নর্থ ক্যারোলাইনার গভর্নর
কুপারের সঙ্গে হ্যারিসের পরিচয় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে। অঙ্গরাজ্যটির অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে কাজ করার সময় থেকে তিনি হ্যারিসের সঙ্গে কাজ করছেন। বর্তমানে কুপারের বয়স ৬৭। তিনি ব্যাটলগ্রাউন্ড অঙ্গরাজ্য নর্থ ক্যারোলাইনার গভর্নর হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদপূর্ণ করেছেন। ওই অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্প ২০১৬ সালে ও ২০২০ সালে জয়ী হয়েছিলেন।
অ্যান্ডি বেশার, কেন্টাকির গভর্নর
কেন্টাকিতে ২০২০ সালে ভালো পরিমাণে ভোট পেয়ে বিজয়ী হন ট্রাম্প। তবে ওই অঙ্গরাজ্যেরই বেশ জনপ্রিয় ডেমোক্র্যাট গভর্নর অ্যান্ডি বেশের। ২০১৯ সালে তিনি কেন্টাকি গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেন। দুই দলের সঙ্গেই ভালোভাবে কাজ করতে পারার রেকর্ড রয়েছে তার। তিনি কেন্টাকিতে কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রবেশাধিকারের ব্যবস্থা করেছেন। ৪৬ বছর বয়সী এ ডেমোক্র্যাট মনে করেন, মার্কিনিদের দৈনন্দিন উদ্বেগের বিষয়গুলোতে মনোযোগ দিলেই ডেমোক্র্যাটিক পার্টি বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারবে।
গ্রেচেন হুইটমার, মিশিগানের গভর্নর
২০১৯ সালে মিশিগানের গভর্নরের দায়িত্ব পান হুইটমার। ওই অঞ্চলে তিনি সোজাসাপ্টা ক্ষুরধার স্লোগান ব্যবহার করে শক্তিশালী অনুসারী দল গড়ে তুলেছেন। কোভিড-১৯ চলাকালে কেন্দ্রীয় প্রশাসনের সমালোচনাও করেছেন তিনি। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ নিয়ে তার ওপর বিরক্ত হয়েছিলেন এবং তাকে ‘মিশিগানের ওই নারী’ বলে ডেকেছিলেন।
জেবি প্রিটজকের, ইলিনয়ের গভর্নর
শতকোটিপতি জেবি প্রিটজকের দলের অন্যতম প্রধান শক্তি। তার আর্থিক সম্পদের অন্যতম উৎস পারিবারিক হোটেল ব্যবসা- হায়াত হোটেলস। তিনি নিজ সম্পদ বাইডেনের প্রচারণায় ব্যয় করেছিলেন। কয়েক দশকের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা রয়েছে এ আইনজীবীর। এর আগে হিলারি ক্লিনটনের ২০০৮ সালের প্রেসিডেনশিয়াল ক্যাম্পেইনে সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
পিট বুটিগিয়েগ, যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহন মন্ত্রী
যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহনমন্ত্রী পিট বুটিগিয়েগ ডেমোক্র্যাটিক দলের ভোটারদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। ২০২০ সালের প্রাইমারিতে তিনি বাইডেন ও হ্যারিস- দুজনের বিরুদ্ধেই লড়েছিলেন। ৪২ বছর বয়সী বুটিগিয়েগ পরবর্তীতে বাইডেনকে সমর্থন দিয়েছিলেন ও ২০২১ সালে তার প্রশাসনে যোগ দেন। যুক্তরাষ্ট্রের মন্ত্রিসভায় পদ পাওয়া প্রথম সমকামী পুরুষ তিনি।
টিম ওয়ালজ, মিনেসোটার গভর্নর
মিনেসোটার ডেমোক্র্যাটিক গভর্নর টিম ওয়ালজ ২০১৮ সালে মিনেসোটার গভর্নর নির্বাচিত হন। পরে ২০২২ সালে তিনি পুনরায় গভর্নর হিসেবে নির্বাচিত হন। ৬০ বছর বয়সী এ ব্যক্তি ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনভেনশনের নীতিবিষয়ক কমিটির সহ-সভাপতি। গভর্নর হিসেবে তিনি অঙ্গরাজ্যে গর্ভপাতের অধিকার অনুমোদনের পক্ষে কাজ করেছেন। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে খাবারের ব্যবস্থা করেছেন।
ওয়েস মুর, ম্যারিল্যান্ডের গভর্নর
ম্যারিল্যান্ডের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ গভর্নর ওয়েস মুর। বর্তমানে ৪৫ বছর বয়সী মুর যখন খুব ছোট, তখন তার বাবা মারা যান। সংক্রমণ থাকা সত্ত্বেও তার বাবাকে হাসপাতাল থেকে বেশি আগে ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুর বেশ শক্তিশালী বক্তা, তিনি শিশু দারিদ্র্য দূর করতে কাজ করেছেন। তিনি সবকিছু শতভাগ নবায়নযোগ্য শক্তিতে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে। সূত্র: আল-জাজিরা