![ইবলিস কে?](uploads/2024/04/17/1713347652.iblis_icon_by_coldgloom_dgb76wv-fullview.jpg)
মানুষ সৃষ্টির আগে আল্লাহর সৃষ্টিতে ফেরেশতা ও জিন ছিল। ইবলিস ও ফেরেশতাদের উদ্দেশ্যে আল্লাহতায়ালা বলেন, “যখন আমি ফেরেশতাদের আদেশ করলাম, ‘আদমকে সেজদা করো’; সবাই সেজদা করল, কিন্তু ইবলিস দম্ভভরে প্রত্যাখ্যান করল; ফলে সে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হলো।” (সুরা বাকারা, আয়াত: ৩৪)
কে এই ইবলিস? যে মহান আল্লাহর হুকুম অমান্য করল। আল্লাহ তার পরিচয় দিয়ে বলেছেন, ‘সে ছিল জিনদের একজন।’ (সুরা কাহফ, আয়াত: ৫০)
ইবলিস ছিল জিন জাতির সদস্য। আগুনে তৈরি। থাকত ফেরেশতাদের সঙ্গে। একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করত। জিনদের আদি পিতা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘ইবলিস জিনজাতির পিতা।’ (আল-মুজামুল আওসাত, তাবরানি: ৬১৭৪)
ইবলিসকে কোরআন ও হাদিসের অধিকাংশ স্থানে উল্লেখ করা হয়েছে শয়তান বলে। তবে কখনো কখনো তার অনুসারী মানুষ ও জিনদেরও শয়তান বলা হয়েছে। ইবলিসের আসল নাম ছিল ‘আজাজিল’। অহংকার ও সীমালঙ্ঘন করে আল্লাহর আদেশ অমান্য করায় সে আল্লাহতায়ালার দয়া ও রহমত থেকে বঞ্চিত হয়ে চিরদিনের জন্য অভিশপ্ত হয়ে যায়। তাই তাকে ইবলিস নাম দেওয়া হয়। কারণ অধিকাংশ মুসলিম ভাষাবিদের মতে, ইবলিস শব্দটি আরবি। আল-ইবলাস শব্দ থেকে এর উৎপত্তি; অর্থ নিরাশা, ভ্রষ্টতা, গোমরাহি। (লিসানুল আরব, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৩৪৩)
অমুসলিম ভাষাবিদরা মনে করেন, ইবলিস গ্রিক শব্দ ডিয়াবুলুস থেকে এসেছে। এই শব্দ থেকেই ফরাসি ভাষায় Diable এবং ইংরেজিতে Devil শব্দের উৎপত্তি। গ্রিক ভাষায় এর মৌলিক অর্থ কুৎসা রটনাকারী, বিশ্বাসঘাতক। ইবলিস শব্দটি কোরআনে ১১ বার এসেছে। অহংকার ও আদম (আ.)-কে সেজদা না করার বিষয়ে এসেছে ৯ বার।
ইবলিসের আরও কিছু উপনাম আছে, হারিস, আবু লুবাইনা, আবু মুররা, আবু কুরদুস, নায়িল, আবুল জান। ইবলিস আল্লাহ ও ফেরেশতাদের কথা গোপনে শুনতে গেলে, ফেরেশতারা আগুনের গোলা নিক্ষেপ করে তাকে বিতাড়িত করে দেয়। ইবরাহিম (আ.) মিনা প্রান্তরে ইবলিসকে প্রতিহত করতে পাথর নিক্ষেপ করেছিলেন, এই জন্য তাকে রজিম বা প্রস্তরনিক্ষিপ্ত বা বিতাড়িত শয়তান বলা হয়।
প্রখ্যাত তাবেয়ি ইবনে ইসহাক (রহ.) ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, “পাপে লিপ্ত হওয়ার আগে ইবলিস শয়তানের নাম ছিল ‘আজাজিল’। সে ছিল পৃথিবীর বাসিন্দা। অধ্যবসায় ও জ্ঞানের দিক থেকে সেই ছিল সবার সেরা।” (আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ১৪২)
লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক