![থ্রি লায়ন্সদের মুকুট ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ](uploads/2024/05/28/England-Cricket--Chanchal=o-1716871458.jpg)
ক্রিকেটের জনক বলা হয় ইংল্যান্ডকে। অথচ দীর্ঘ একটা সময় বৈশ্বিক আসরগুলোতে শিরোপার জন্য অনেক হাপিত্যেশ করতে হয়েছে তাদের। ১৯৭৫ সালে প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড থামে সেমিফাইনালে। পরের আসরে ফাইনালে উঠেও শিরোপা থাকে অস্পর্শ। ১৯৮৩ বিশ্বকাপে আবার সেমি থেকে বিদায়। ১৯৮৭ ও ১৯৯২ বিশ্বকাপে টানা দুবার ফাইনালে উঠেও শিরোপা জেতা হয়নি থ্রি লায়ন্সদের।
এরপর দীর্ঘ অপেক্ষা। খেলা হচ্ছিল না কোনো ফাইনালই। তবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আসার পর কপাল খোলে ইংলিশদের। পল কলিংউডের নেতৃত্বে আর কেভিন পিটারসেনের আগুনে ফর্মে ২০১০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতে বৈশ্বিক আসরে ট্রফি জয়ের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটায় থ্রি লায়ন্সরা। তবে ওয়ানডে ফরম্যাটে এই শিরোপার জন্য তাদের অপেক্ষা করতে হয় আরও কয়েক বছর। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের ৯ বছর পর মরগানের নেতৃত্বে ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতে দুই ফরম্যাটেই মুকুট জয়ের কৃতিত্ব দেখায় ক্রিকেটের কুলীন সদস্য। এর আগে ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠলেও দেখা মেলেনি দ্বিতীয় ট্রফি। ২০২১ আসরে সেমি থেকে বিদায় নিলেও সর্বশেষ ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ঠিকই নিজেদের করে নেয় ইংলিশ বি গ্রেড। তার মানে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। মুকুট ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ নিয়েই যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপে পা রাখবে জস বাটলার শিবির।
বেন স্টোকসহীন স্কোয়াড
ইংল্যান্ডের ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতার অগ্রনায়ক ছিলেন তুখোড় অলরাউন্ডার বেন স্টোকস। যিনি নিজের নামের সুবিচার করেছিলেন ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ফাইনালে স্টোকস খেলেছিলেন ৫২ রানের কার্যকরী ইনিংস। ৫ উইকেটের জয়ে ইংল্যান্ড করায়ত্ত করেছিল দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ট্রফি। তবে সেই বেন স্টোকস নেই এবার ইংল্যান্ড দলে। তারকা এই অলরাউন্ডার আগেই নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন স্কোয়াড থেকে। গতবারের মতো এবারও ইংল্যান্ড দলকে নেতৃত্ব দেবেন জস বাটলার।
দলে ফেরানো হয়েছে আগুনে পেসার জফরা আর্চারকে। এক বছরের বেশি সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে ছিলেন তিনি। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে ইংল্যান্ডের সর্বশেষ হয়ে খেলেছিলেন আর্চার। তার পর থেকেই কনুইয়ের চোট নিয়ে ভুগছিলেন তিনি।
ক্রিস জর্ডান ফর্মে নেই। কিন্তু তাকে দলে রাখা হয়েছে। তিনি শেষ বার ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেছিলেন ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে। বাটলারের সঙ্গে ইংল্যান্ড দলের টপ অর্ডারে থাকছেন উইল জ্যাকস, ফিল সল্ট এবং জনি বেয়ারস্টো। প্রত্যেকেই আইপিএলে দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন। এদিকে বেন ডাকেটও বিশ্বকাপের দলে জায়গা পেয়েছেন। সেই সঙ্গে বাঁহাতি স্পিনার টম হার্টলির নামও এসেছে স্কোয়াডে। ফলে কপাল পুড়ছে রেহান আহমেদের। হার্টলি দ্বিতীয় স্পিনার হিসেবে আদিল রশিদের সঙ্গে জুটি বাঁধবেন।
অন্যদিকে জর্ডান এখন পর্যন্ত ইংল্যান্ডের হয়ে পাঁচটি বিশ্বকাপ খেলেছেন। এ ছাড়া গত দুই মৌসুমে কাউন্টি দল সারের টি-টোয়েন্টি অধিনায়কের দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি। ২০২২ সালের বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের হয়ে দুটি ম্যাচ খেলেন। ক্যারিবিয়ানে এবারের বিশ্বকাপেও তাকে মাঝে মধ্যে একাদশে রাখতে পারে ইংলিশরা। তবে তার ফিল্ডিং স্কিল ও ডেথ বোলিংয়ে চাতুর্য ইংল্যান্ডের জন্য দরকারি হতে পারে।
হ্যারি ব্রুক, লিয়াম লিভিংস্টোন, স্যাম কুরানের মতো ক্রিকেটাররা আস্থা জোগাচ্ছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের। গত বিশ্বকাপে স্যাম কুরান ছিলেন টগবগে ফর্মে। সর্বোচ্চ ১৫ উইকেট নিয়ে জিতেছিলেন টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার। গেল আইপিএলে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের হয়ে ১৩ ম্যাচে ১৬ উইকেট নিয়েছিলেন স্যামুয়েল ম্যাথিউ কুরান।
ক্যারিবিয়ানে বিশ্বকাপ অভিযান
আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের অবস্থান ‘বি’ গ্রুপে। গ্রুপে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের একমাত্র শক্ত প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। বাকি তিন দল নামিবিয়া, ওমান ও স্কটল্যান্ড খুব বেশি ঝামেলার মনে করছে না ইংলিশ শিবির। গ্রুপের সব ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ক্যারিবীয় দ্বীপে। ২ জুন ওমান ও নামিবিয়ার মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে গ্রুপ পর্বের লড়াই। ইংল্যান্ডের মিশন শুরু হবে দুই দিন পর ৪ জুন থেকে। বার্বাডোজের ব্রিজটাউনে ইংল্যান্ড মুখোমুখি হবে স্কটল্যান্ডের। একই ভেন্যুতে ৮ জুন ইংল্যান্ড লড়বে গ্রুপের সবচেয়ে শক্ত প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। ১৩ জুন ওমান ও ১৫ জুন নামিবিয়ার বিরুদ্ধে মাঠে নামবে বাটলার শিবির।
প্রথম টি-টোয়েন্টি ১৩ জুন ২০০৫, প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া
ম্যাচ: ১৮৩
জয়: ৯৫
পরাজয়: ৮০
টাই: ২
পরিত্যক্ত: ৬
র্যাঙ্কিং: ৩
জস বাটলার, অধিনায়ক
বিশ্বকাপ মানেই বাড়তি চাপ। সে চাপ সামলে এগোতে চাই। গতবারের চ্যাম্পিয়ন আমরা। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের প্রতি দেশের মানুষের প্রত্যাশা থাকবে বেশি। আমাদের লক্ষ্য চ্যাম্পিয়নশিপ ধরে রাখা। স্কোয়াডে বেন স্টোকসকে মিস করব। তবে দলে যারা আছেন সবাইকে নিয়েই এক লক্ষ্যে মিশন আমাদের। স্কোয়াড নিয়ে আমি খুশি। এখন কাজ মাঠের খেলায় নিজেদের উজার করে দেওয়া।
ম্যাথু মট, সাদা বলের কোচ
দল নিয়ে আমি আশাবাদী। যদিও এবার বিশ্বকাপটা হচ্ছে দুই দেশে। যেখানে আবহাওয়া ও পরিবেশগত কিছু পার্থক্য থাকবে। সবকিছু মানিয়ে পারফর্ম করাটাই ক্রিকেটারদের কাজ। সে লক্ষ্যেই আমাদের পথচলা। ভালো কিছুরই প্রত্যাশা থাকছে এই বিশ্বকাপে। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে চাপ যেমন থাকবে, তেমনি থাকবে প্রেরণাও। নিজেদের সর্বোচ্চটা দিতে পারলে আমরাই হব সেরা।
দল : জস বাটলার (অধিনায়ক), মঈন আলী, জফরা আর্চার, জনি বেয়ারস্টো, হ্যারি ব্রুক, স্যাম কুরান, বেন ডাকেট, টম হার্টলি, উইল জ্যাকস, ক্রিস জর্ডান, লিয়াম লিভিংস্টোন, আদিল রশিদ, ফিল সল্ট, রিচি টপলে ও মার্ক উড।