আত্মহত্যা বা আত্মহনন হচ্ছে কোনো ব্যক্তি কর্তৃক ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের জীবন বিসর্জন দেওয়া বা স্বেচ্ছায় নিজের প্রাণনাশের প্রক্রিয়াবিশেষ। লাটিন ভাষায় সুই সেইডেয়ার থেকে আত্মহত্যা শব্দটি এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে নিজেকে হত্যা করা। যখন কেউ আত্মহত্যা করেন, তখন মানুষ এ প্রক্রিয়াকে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করে।
আত্মহত্যা চেষ্টাকারী বিশজনের মধ্যে প্রতি তিন সেকেন্ডে প্রায় একজন প্রাণঘাতী হন। এমনকি প্রতি ৪০ সেকেন্ডে বিশ্বে একজন মানুষ আত্মহত্যা করেন। প্রতিবছর ১০ লাখের বেশি মানুষ মারা যান আত্মহত্যা করে, যা হত্যা ও যুদ্ধের চেয়েও বেশি। এমনই তথ্য প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটির তথ্যমতে, ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী মানুষের মৃত্যুর সবচেয়ে সাধারণ কারণ হচ্ছে আত্মহত্যা।
আত্মহত্যা বা নিজের জীবন বিসর্জন দেওয়া কখনোই কোনো সমস্যার সমাধান হতে পারে না। অনেকে আছেন খুব অল্পতেই ভেঙে পড়েন, হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এসব মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডব্লিউএইচওর তথ্যমতে, প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার মানুষ মারা যায় এই পদ্ধতিতে। এমনকি পুরুষের তুলনায় নারীদের আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি, এমন তথ্যই জানা যায় বিভিন্ন গবেষণা থেকে।
তবে এই আত্মহত্যা বা আত্মহনন কিন্তু আধুনিক যুগের কোনো ট্রেন্ড নয়। প্রায় সব শতাব্দীতে, সব সভ্যতায় মানুষের মধ্যে এই প্রবণতা দেখা গেছে। ইতিহাস সাক্ষী হয়ে আছে এমন অনেক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনার, যারা আত্মহত্যা করেছিলেন। তবে কখনোই আত্মহত্যাকে সমর্থন করা হয়নি।
প্রাচীন অ্যাথেন্সে যদি কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রের অনুমোদন ব্যতীত আত্মহত্যা করত, তা হলে তাকে সাধারণ কবরস্থানে সমাহিত করা হতো না। তাকে কবরস্থ করা হতো শহরের বাইরে অবস্থিত কোনো জায়গায়। শুধু তাই নয়, তার জন্য কোনো স্মৃতিফলকও ব্যবহার করতে দেওয়া হতো না।
আত্মহত্যাকে ইউরোপে একটি পাপ হিসেবে গণ্য করা হয়েছিল এবং ৪৫২ সালে এরলেসের কাউন্সিলে তাকে শয়তানের কাজ হিসেবে নিন্দা করা হয়েছিল। রেনেসাঁর সময় থেকে আত্মহত্যার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি ধীরে ধীরে পরিবর্তন শুরু হয়েছিল। ১৮৭৯ সালের মধ্যে ইংরেজরা আত্মহত্যা ও হত্যাকাণ্ডের মধ্যে পার্থক্য করতে শুরু করেছিল, যদিও আত্মহত্যার ফলে সম্পত্তি জব্দ করা হতো।
১৮৮২ সালে মৃত ব্যক্তিদের ইংল্যান্ডে দিনের বেলা দাফন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল এবং বিংশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে পশ্চিমা বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে আত্মহত্যা বৈধ হয়ে উঠেছিল। আত্মহত্যা শব্দটি প্রথম আত্মত্যাগের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিল ১৭০০ সালের পূর্বেই।
তবে আত্মহত্যা নিয়ে সচেতনতা সব যুগেই প্রচলিত ছিল। সেটা হোক ধর্মানুসারে কিংবা সামাজিকভাবে। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর সুইসাইড প্রিভেনশন (আইএএসপি) ২০০৩ সালে বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবসের সূচনা করে। দিনটি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য বিশ্ব ফেডারেশন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দ্বারা সহ-স্পন্সর করা হয়। দিবসটির উদ্দেশ্য হলো- আত্মহত্যার আচরণের ওপর গবেষণা ও তথ্য সংগ্রহ করা, বিভিন্ন কারণ এবং কেন এর লক্ষণগুলো অলক্ষিত হয় তা নির্ধারণ করা এবং আত্মহত্যা প্রতিরোধের জন্য সঠিক অনুশীলন ও নীতিগুলো তৈরি করা।
আত্মহত্যা নিতান্তই কাপুরুষোচিত ও জঘন্যতম কাজ। কোনো কারণই আত্মহত্যার জন্য যথেষ্ট নয়। জীবন অমূল্য সম্পদ। কোনো হতাশা, দুঃখ-কষ্ট, বেদনা, হতাশা, ব্যর্থতা প্রভৃতির বশবর্তী হয়ে আত্মহত্যা করাটা নিতান্তই বোকামি। আত্মহত্যা কোনোভাবেই কোনো সমস্যার সমাধান নয়। উপরন্তু আত্মহত্যা অনেক সমস্যার সৃষ্টি করে। আত্মহত্যাকারী নিজেই বেছে নেয় অবর্ণনীয় যন্ত্রণার অন্তহীন পথ।
তারেক