ঢাকা ২৮ আষাঢ় ১৪৩২, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫
English

পৃথিবীর কিছু অদ্ভুত জিনিস

প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২৫, ১২:১৯ পিএম
আপডেট: ১৮ জুন ২০২৫, ১২:২১ পিএম
পৃথিবীর কিছু অদ্ভুত জিনিস
গবলিন হাঙর। ছবি: সংগৃহীত

এ পৃথিবীতে নানা অদ্ভুত জিনিস, প্রাণী ও স্থান আছে। সেসবের খবরাখবর নিয়েই এবারের আয়োজন। জানাচ্ছেন- গাজী তাহির

সবচেয়ে কুৎসিত হাঙর

সাধারণত হাঙর দেখতে খুব ভয়ংকর হয়। তবে পৃথিবীতে এমন এক প্রজাতির হাঙর রয়েছে যা দেখতে অত্যন্ত কুৎসিত ও খুবই ভয়ংকর। এদের বলা হয় ‘গবলিন হাঙর’। গবলিন হাঙর দেখতে অনেকটা ‘জীবন্ত ফসিল’-এর মতো।

নীল লাভা

লাল বা হলুদ লাভার কথা সবাই কমবেশি জানেন। কিন্তু কখনো কি নীল লাভার কথা শুনেছেন? আপনি জানলে অবাক হবেন যে, ইন্দোনেশিয়ার কাওয়াহ ইজেন আগ্নেয়গিরিটি খুবই অনন্য। কারণ, এটি নীল লাভা উৎপন্ন করে। এ আগ্নেয়গিরিতে সালফিউরিক গ্যাস নির্গত হওয়ায় নীল রঙের সৃষ্টি হয়। এ গ্যাস আগুনের সংস্পর্শে এলে নীল রঙের শিখা বের হয়। যার কারণে লাভার রং নীল দেখায়।

সবচেয়ে দুর্গম স্থান

আমরা অ্যামাজন জঙ্গলকে পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্গম স্থান মনে করি। কিন্তু এ অ্যামাজনের চেয়েও দুর্গম স্থান পৃথিবীতে রয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্গম স্থানটি অ্যান্টার্কটিকার দুসি দ্বীপ, মোতু নুই এবং মাহের দ্বীপের মধ্যে অবস্থিত। জায়গাটি ‘পয়েন্ট নিমো’ নামে বিখ্যাত। দুর্গম এ জায়গা থেকে মানুষের বসতি ২ হাজার ৬০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

ভ্যানটাব্ল্যাক

এখন পর্যন্ত জানা বিশ্বের সবচেয়ে কালো উপাদান হচ্ছে ভ্যানটাব্ল্যাক। এটি পৃথিবীর যেকোনো কালো জিনিসের চেয়েও বেশি কালো। ভ্যানটাব্ল্যাক কার্বন ন্যানোটিউবের তৈরি। এটি দৃশ্যমান আলোর ৯৯.৯৬৫% পর্যন্ত শোষণ করতে পারে।

ব্লু অ্যাঞ্জেল সি স্লাগ

সমুদ্রে এমন অনেক অজানা রহস্য লুকিয়ে রয়েছে, যা এখনো আবিষ্কার করতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। আর তাই সমুদ্র নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিজ্ঞানীদেরও কৌতূহলের শেষ নেই। সমুদ্রের এমনই এক রহস্যময় প্রাণী ব্লু  অ্যাঞ্জেল সি স্লাগ। 

দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার উপকূলীয় এলাকায় পাওয়া এ সি স্লাগ অত্যন্ত বিষাক্ত একটি প্রাণী। এটি অন্যান্য ছোট বিষাক্ত জীবকেও খেয়ে ফেলে। শুধু তাই নয়, খেয়ে নেওয়া ছোট বিষাক্ত জীবের বিষ সি স্লাগ নিজের মধ্যে সংরক্ষণ করে রাখে। পরবর্তী সময়ে শিকারে এ বিষ ব্যবহার করে সে।

হাতে ধরা মেঘ

পৃথিবীর অন্যতম একটি রহস্যময় জিনিস হলো অ্যারোজেল। জেল ও গ্যাসের তৈরি এ অ্যারোজেল একটি আলট্রালাইট পদার্থ। এ পদার্থ দেখতে অনেকটা মেঘের মতো। এটি হাত দিয়েও ধরে রাখা যায়। অনেকে একে হিমায়িত ধোঁয়াও বলে থাকে। অ্যারোজেলের ৯৯ শতাংশ অংশই বাতাস দিয়ে গঠিত।

লবণের তৈরি চার্চ

‘সল্ট ক্যাথেড্রাল অব জিপাকুইরা’ একটি রোমান ক্যাথলিক গির্জা। এটি কলম্বিয়ায় অবস্থিত। এ গির্জা মাটির ১৮০ মিটার নিচে অবস্থিত। এর গির্জার অন্যতম বিশেষত্ব হলো, এটি সম্পূর্ণ লবণ দিয়ে তৈরি। লবণের তৈরি একটি ক্রুশও রয়েছে এ গির্জায়। এ গির্জায় একসঙ্গে প্রায় ১০ হাজার মানুষ প্রবেশ করতে পারে।

ভয়নিচ পাণ্ডুলিপি

বর্তমান পৃথিবীতে এমন একটি পাণ্ডুলিপি রয়েছে যার ভাষা এখনো কোনো বিজ্ঞানী আবিষ্কার করতে পারেননি। ২৪০ পৃষ্ঠার এ পাণ্ডুলিপির নাম ভয়নিচ পাণ্ডুলিপি। 
১৪০৪ থেকে ১৪৩৮ সালের মধ্যে এটি লেখা হয়েছিল। যার ফলে এ পাণ্ডুলিপিতে কী লেখা আছে তা আজও মানুষের অজানা রয়ে গেছে। এ পাণ্ডুলিপিতে গাছপালা ও নারী সম্পর্কিত কিছু অদ্ভুত ছবিও আঁকা রয়েছে।

ভিনগ্রহের দেশ

পৃথিবীতে এমন একটি অদ্ভুত জায়গা রয়েছে, যা দেখলে মনে হবে সেখানে এলিয়েনরা থাকে। এটি ইথিওপিয়ার ডানাকিল ডিপ্রেশনে অবস্থিত। লাভাতে ভরা পুল ও উষ্ণ প্রস্রবণ ইত্যাদির জন্য এ জায়গাটিকে দেখলে অন্য জগতের বলে মনে হয়। এ জায়গায় প্রচুর বিষাক্ত গ্যাস এবং পুকুরের পানিতে অ্যাসিড থাকে।

 

তারেক

যে অনুষ্ঠানে হবু দম্পতিরা জঞ্জাল সাফ করেন

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৫, ০২:১৮ পিএম
যে অনুষ্ঠানে হবু দম্পতিরা জঞ্জাল সাফ করেন
ছবি: সংগৃহীত

কল্পনা করুন, কোনো এক সুনসান শান্ত শুক্রবার সন্ধ্যায় জার্মানির একটি উঠোনে এসে দাঁড়িয়েছেন। খলবলিয়ে হাসি-ঠাট্টার শব্দ শোনা যাচ্ছে। হবু বর ও কনে একসঙ্গে হাঁটু গেড়ে ঝাড় দিয়ে সাফসুতরো করছে উঠোনময় চীনামাটির ভাঙা থালাবাসনের জঞ্জাল। না, এটি কোনো দুর্ঘটনা নয়। এটি হচ্ছে পোল্টেরাবেন্ড, জার্মানির সবচেয়ে প্রাণবন্ত প্রতীকী ঐতিহ্যবাহী বিয়েপূর্ব আচারানুষ্ঠান। 

শুধু হুল্লুড়েপনার নিছক এক আনন্দময় বিয়ের অনুষ্ঠান নয়, পোল্টেরাবেন্ড আরও অনেক বেশি কিছু। এ অনুষ্ঠানে পুরো সম্প্রদায়কে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং এটি সহযোগিতা, সমস্যা সমাধান ও হাস্যরসের এক ঐকতানে পরিণত হয়।

পোল্টেরাবেন্ড কী? 

পোল্টেরাবেন্ড (পোল্টার্ন, যার অর্থ ‘শব্দ করা’ এবং অ্যাবেন্ড, অর্থ ‘সন্ধ্যা’) হলো একটি বিয়েপূর্ব অনুষ্ঠান, যা সাধারণত নাগরিক অনুষ্ঠানের আগের রাতে অনুষ্ঠিত হয়। এটি বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশী, সহকর্মী এবং সম্প্রদায়ের সব পরিবারের জন্য উন্মুক্ত। অতিথিরা পুরোনো চীনামাটির বাসনকোসন নিয়ে আসেন এবং হবু দম্পতির সামনে আছড়ে আছড়ে সেসব ভেঙে ফেলেন। মহা আনন্দের এক ধুন্ধুমার হই-হট্টগোল শুরু হয়ে যায়। ভাঙা চীনামাটির বাসনকোসনে সয়লাব হয়ে যায় পুরো উঠোন। হবু বর ও কনেকে তখন একসঙ্গে সেসব জঞ্জাল সাফ করতে হয়। নতুন দম্পতি হিসেবে এটি তাদের প্রথম যৌথ কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা।

পোল্টেরাবেন্ডের উৎপত্তি এবং সাংস্কৃতিক শিকড়

পোল্টেরাবেন্ডের ঐতিহ্য শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে আসছে এবং ইতিহাসবিদদের বিশ্বাস, এর শেকড় রয়েছে খ্রিষ্টপূর্বাব্দে, যা হুল্লুড়ে শব্দের মাধ্যমে মন্দ আত্মাদের তাড়ানোর বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পর্কিত। চীনামাটির বাসনকোসন ভাঙার রয়েছে গভীর তাৎপর্য। যেমন-ক) অতীতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা, খ) দুর্ভাগ্য দূর করা এবং গ) জীবনের অনিবার্য বিপর্যয়ের জন্য হবু দম্পতিকে প্রস্তুত করা। এর উদ্দেশ্য কখনোই ধ্বংসাত্মক ছিল না। বরং এর উদ্দেশ্য ছিল স্থিতিস্থাপকতা অর্জন, নবজীবন বিনির্মাণ এবং একাত্মতার চর্চা।

কী কী ভাঙা হয় আর কী কী একেবারেই ভাঙা হয় না

একটি যথার্থ পোল্টেরাবেন্ডে অতিথিরা ভাঙার জন্য আনেন পুরোনো চীনামাটির বাসনকোসন, সিরামিকের মগ বা ফুলদানি, মাটির পাত্র, মাটির ফুলদানি, টয়লেটের বাটি (হ্যাঁ, সত্যিই! তবে যদি পরিষ্কার থাকে)। কাচ, আয়না এবং স্ফটিক ভাঙা নিষিদ্ধ। কেন? জার্মান লোককাহিনী অনুযায়ী কাচ ভাঙা দুর্ভাগ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। অন্যদিকে চীনামাটির বাসনকে ইতিবাচক প্রতীকী শক্তির পাত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাসনকোসন ভাঙা জঞ্জালের স্তূপ যত পুরু হয় পোল্টেরাবেন্ডকে ততই সফল বলে বিবেচনা করা হয়। এর কোনো নির্ধারিত পোশাক থাকে না।

এই জঞ্জাল সাফসুতরো হচ্ছে হবু দম্পতির প্রথম যুগল পরীক্ষা। জঞ্জালের পরিমাণ খুব বেশি থাকে বলে এসব পরিষ্কার করা খুবই পরিশ্রমসাপেক্ষ। হবু বর ও কনের এই যৌথ পরিশ্রম যেসব তাৎপর্য তুলে ধরে তা হচ্ছে- একে অন্যের পাশে থেকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া; দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নেওয়া এবং বিশৃঙ্খলাকে সহযোগিতায় রূপান্তর করা। দম্পতির ধৈর্য এবং পারস্পরিক সমঝোতা পরীক্ষার জন্য অতিথিরা বেশি বেশি থালাবাসন ভেঙে এবং নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে তাদের নাজেহাল করার চেষ্টা করেন।

 

তারেক

জ্ঞানী প্রাণী গাধা

প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২৫, ০২:১০ পিএম
জ্ঞানী প্রাণী গাধা
ছবি: সংগৃহীত

একজন মানুষ যখন আরেকজনকে অপমান করতে চায় তখন তাকে ‘গাধা’ বলে সম্বোধন করে। অথচ এই গাধাই মানুষের বোঝা বইছে, মাটি টানছে, পাহাড় পেরোচ্ছে। বিপরীতে নেই কোনো প্রতিবাদ বা অভিযোগ। উল্টো গাধার মাঝে রয়েছে ধৈর্য, সহনশীলতা আর দায়িত্ববোধের এক অন্যান্য উদাহরণ।

মধ্য আফ্রিকার কোনো গ্রামে কিংবা দক্ষিণ এশিয়ার কোনো পাহাড়ি এলাকায় গেলে দেখা যাবে গাধাই যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। ইতিহাস বলে এই গাধারাই কিন্তু মিসরের পিরামিড তৈরির জন্য পাথর টেনেছে, সেনাদের যুদ্ধের রসদ বয়ে এনেছে। অথচ এই নিরীহ, কর্মঠ প্রাণীটি আজ বিলুপ্তির পথে।

গাধা সম্পর্কে আমাদের অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। আমরা তাকে ভাবি নির্বোধ, অথচ গাধা একবার কোনো পথ চিনলে তা বছরের পর বছর মনে রাখতে পারে। গবেষণা বলে, গাধা একবার কোনো পথ দেখলে তা ২৫ বছর পর্যন্ত মনে রাখতে পারে। শুধু তাই না, একটি গাধা মরু পরিবেশে ৬০ মাইল দূরে থেকে অন্য গাধার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারে।

বিপদের সময় কেউ যখন মাথা গরম করে সামনে এগিয়ে যায়, গাধা তখন দাঁড়িয়ে যায়। কেউ ভাবে, বোকা বলে এগোয় না- আসলে ও জানে, এই পথে গেলে মরবে। গাধা নেকড়ে, বাঘ বা অন্য বন্য জন্তুর উপস্থিতি বুঝতে পারে। তাদের হাত থেকে বাকি পশুদের রক্ষা করতে বিশেষ সংকেত দেয়। এ ছাড়া গাধা গবাদিপশু, ভেড়া ও ছাগলকে পাহারা দেয়। সুতরাং গাধা বোকা নয়, বরং জ্ঞানী একটি প্রাণী। তার ধৈর্য, কম খেয়ে বেশি কাজ করার ক্ষমতা, আরেকটি গাধার সঙ্গে আজীবন সঙ্গী হয়ে থাকার মতো আনুগত্য- এসব গুণ মানুষের মধ্যেই বিরল।

বিশ্বজুড়ে আজ এই গাধাদের সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে চীনে গাধার চামড়া দিয়ে ‘ইজিয়াও’ নামের এক ধরনের ওষুধ তৈরি হয়, যাকে বলা হয় ‘ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা পদ্ধতি’। আর এই কারণে আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলো থেকে গাধা এখন পাচারের শিকার হচ্ছে। কোটি কোটি গাধা আজ হুমকির মুখে। বিজ্ঞানী আর্ক রাজিক এই অবস্থা দেখে ২০১৮ সালে শুরু করেন বিশ্ব গাধা দিবস। প্রতি বছর ৮ মে পালিত হয় দিবসটি। উদ্দেশ্য এই নিরীহ প্রাণীর প্রতি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করা।

আমাদের দেশে ইটভাটা, পাহাড়ি এলাকা কিংবা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এখনো কিছু গাধা মানুষের জীবিকার ব্যবস্থা করে দেয়। আমাদের মনে রাখা দরকার গাধা মানেই বোকা নয়, বরং পরিশ্রমী, ধৈর্যশীল এবং আশ্চর্যরকম বুদ্ধিমান এক প্রাণী।

 

তারেক

পাঠকের লেখা : পত্রমিতালি

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ১২:৫১ পিএম
পাঠকের লেখা : পত্রমিতালি

নব্বই দশকের কথা। কিশোর বয়স। সবে মাত্র দাড়ি-গোঁফ উঠতে শুরু করেছে। অনেক দূরের কোনো সেলুনে গিয়ে শেভ করছি। মুখে লজ্জা লজ্জা একটা ভাব বিরাজ করছে। চারদিকে যা দেখি সবকিছুই সুন্দর লাগে। উঠতি বয়সে যা হয় আরকি। তবে ছোটবেলা থেকেই বই-ম্যাগাজিন পড়ার খুব ভালো নেশা হয়ে যায়। পত্রিকার স্টল থেকে তখন বিভিন্ন বই-ম্যাগাজিন কিনে কিনে পড়ছি।

তখনকার সময়ে মোবাইল ফোন ছিল না। যোগাযোগের মাধ্যম বলতে চিঠিপত্র। হঠাৎ করেই একটি ম্যাগাজিনের পাতা উল্টাতেই চোখে পড়ল পত্রমিতালি। সেখানে অনেক ছেলেমেয়ের নাম ও ঠিকানা রয়েছে। তাদের কাছে চিঠি আদান-প্রদান করে মনের ভাব প্রকাশ করা হয়। আমিও একটি মেয়ের নাম দেখে তাকে চিঠি লেখার জন্য প্যাড কিনে আনি। মেয়েটির নাম রোকসানা। বাড়ি নেত্রকোনার রূপপুর। মেয়েটিকে চিঠি লেখার পর মেয়েটিও আমাকে চিঠি লিখে। বিভিন্ন ম্যাগাজিন মেয়েটি আমাকে পাঠায়। আমিও ম্যাগাজিন পাঠাই। এমন অবস্থা বছর ধরে চলতে থাকল। যতই চিঠি পাই ততই মেয়েটিকে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়ি। 

এক সময় মনে হলো এ মেয়েকে না দেখলে আমার জীবনটা বৃথা। কিন্তু কীভাবে সেখানে যাওয়া যায় তা আমার জানা নেই। অনেক খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারলাম ঢাকার মহাখালী থেকে নেত্রকোনার বাস যায়। তাই একদিন বাসায় কাউকে না বলে রূপপুরের রোকসানাকে খোঁজার জন্য ঢাকা চলে গেলাম। মহাখালী থেকে সকাল ১০টায় গাড়িতে উঠেছি আর নেত্রকোনায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল। আমার পাশের সিটে ছিলেন একজন বয়স্ক মানুষ। তার সঙ্গে আমার খুব ভালো গল্প জমে উঠল।

বাস চলছে। চলার পথে দুজনের পরিচয় জেনে নিলাম। তা ছাড়া তার কাছ থেকে রূপপুর যাওয়ার ঠিকানাও জেনে নিলাম। তিনি নামবেন ঠাকুরাকোনা ব্রিজের কাছে। এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত নেমে আসছে। আমিও দিশেহারা হয়ে গেলাম। গন্তব্যে পৌঁছাতে এখনো আমার অনেকটা পথ বাকি। রাত হলে সেখানে কীভাবে পৌঁছাব। আর তখনই আমার পাশের বয়স্ক ভদ্রলোক বললেন, আপনি এখন রূপপুর বাজারে যেতে পারবেন না। আমার সঙ্গে আসুন। সকাল হলে সেখানে যাবেন। 

তার কথায় অনেক মায়া এবং আন্তরিকতা ছিল। তার এ কথায় আমার অজানা ভয় কিছুটা দূরীভূত হলো। আমি আমতা আমতা করে রাজি হয়ে গেলাম। আমি যার বাড়িতে এখন ঠাকুরাকোনায় নেমে যাচ্ছি তিনি হলেন একজন স্কুলশিক্ষক। তার নাম অতুল মাস্টার। বাড়ি সাহতা। বাড়ি পৌঁছাতে পৌঁছাতে অনেকটা রাত হয়ে গেল। অচেনা-অজানা একটা জায়গায় গিয়েছি, কেমন যেন একটু ভয় ভয় করছে। কিন্তু অতুল মাস্টারের আপ্যায়নে আমি অত্যন্ত মুগ্ধ। রাতের আহার করে তার বারান্দায় ঘুমালাম। 

অতুল মাস্টারের একটা ছেলে আর একটা মেয়ে রয়েছে। মেয়েটি বড়। নাম ইতি মনি। এসএসসি পাস করেছে। আর ছোট ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। 

পরের দিন সকাল বেলা খাবার খেয়ে মাস্টার সাহেবের বাড়িতেই আমার কাপড়ের ব্যাগটা রেখে রূপপুর বাজারে রওনা হলাম। প্রথমে রূপপুর বাজারে গিয়ে যে ঠিকানায় আমার কাছে চিঠি আসে সেটা পোস্ট মাস্টারকে দেখালাম। তিনি আমাকে সেখানে যাওয়ার লোকেশন বাতলে দিলেন। সেখান থেকে একটা রিকশা করে মাটির রাস্তা ধরে দুই পাশে ধানখেতের মধ্য দিয়ে রওনা দিলাম আমার পত্রমিতালি বন্ধুর বাড়ির দিকে। ভাবছি সেখানে গিয়ে রোকসানাকে চমকে দেব। বাড়ির সামনে নেমে রিকশা বিদায় করে বাড়িতে ঢুকে পড়লাম। ছনের ঘর। মাঠে বেশ বড় একটা উঠান বাড়ির চারদিকে আম, নারিকেল ও সুপারির গাছ দেখতে পেলাম। বাড়ির পিঁড়া মাটির লেপে সাদা চিক চিক করছে।

ভেতরে গিয়ে নিজের পরিচয় দিলাম। সে বাড়ির লোকজন আমার পরিচয় পেয়ে তাজ্জব বনে গেল। এটা তাদের চিন্তার মধ্যেই ছিল না। আমি মুন্সীগঞ্জ থেকে নেত্রকোনার রূপপুর যেতে পারব। তবে আমার মাথার ওপরই আকাশ ভেঙে পড়ল সেই মেয়েটিকে দেখে। যার সঙ্গে আমি পত্রমিতালি করেছি সেই রোকসানার বয়স ছয়। তার নামেই তার মা সব চিঠি পাঠাত। নাম গোপন করে শিশুর মেয়ের নামেই চিঠি আদান-প্রদান করত রোকসানার মা। ব্যাপারটা এমন হবে তা আমি কখনো কল্পনা করিনি।

রোকসানার মা আমাকে তাদের গাছের আম কেটে খাওয়াল। তারপর দুপুরে খেতে বলল। রোকসানাকে দেখেই আমার আক্কেল গুড়ুম। অগত্যা মন খারাপ করে আবার অতুল মাস্টারের বাড়িতে চলে এলাম। অতুল মাস্টারের সেখানে আরও দুদিন বেড়ালাম। কী আতিথেয়তা যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। এলাকাটা ঘুরে ঘুরে দেখালেন অতুল মাস্টারের মেয়ে ইতি। সেখানে সপ্তাহে হাট বসে। হাট বাড়ি থেকে অনেক দূরে, সেখানেও আমাকে নিয়ে গেলেন অতুল মাস্টার। আশপাশও ঘুরে দেখালেন এ দুদিন। সেখানে একটি মেয়ের সঙ্গে পরিচয় হলো, তার নাম নূপুর। তার বাবা একজন গ্রাম্য চিকিৎসক। তার চেম্বার ঠাকুরাকোনা ব্রিজের কাছে। 

অসম্ভব আনন্দ এবং বেদনা নিয়ে অবশেষে ফিরে এলাম বাড়িতে। এদিকে বাড়িতে লঙ্কাকাণ্ড বেঁধে গেছে। এ কদিন আমাকে না পেয়ে সব জায়গায় খোঁজ করা হয়েছে। এরপর আর কখনো অতুল মাস্টারের সঙ্গে আমার দেখা হয়নি। কিন্তু মন থেকে অতুল মাস্টার তার ছেলেমেয়ে ইতিমনি এবং পাশের বাসার ডাক্তারের মেয়ে নূপুরকে এখনো ভুলতে পারিনি।

নেত্রকোনার কোনো লোকের সঙ্গে যদি আমার দেখা হয় এখনো তাদের না খাইয়ে ছাড়ি না। সেখানকার মানুষের জন্য একটা মায়া তৈরি হয়েছে। 


মিরাপাড়া, রিকাবীবাজার, মুন্সীগঞ্জ

 

তারেক

পৃথিবীতে ভিনগ্রহের মতো স্থান

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৫, ১২:২২ পিএম
পৃথিবীতে ভিনগ্রহের মতো স্থান
ছবি: সংগৃহীত

ধরুন আপনি পৃথিবীতে থেকেই কোনো ভিনগ্রহে পা রাখলেন। যার পৃষ্ঠ বা ভূমি অন্যরকম। হয়তো ভাবছেন পৃথিবীতে থেকে কীভাবে ভিনগ্রহে পা রাখা যায়। হয়তো কৃত্রিমভাবে অথবা ভিনগ্রহের মাটি এনে তার ওপরে পা রাখলেই তা সম্ভব। কিন্তু বাস্তবে পৃথিবীতে এমনই এক জায়গা আছে যেখানে গেলে মনে হয় অন্য কোনো গ্রহ।

এটি এমন একটি জায়গা যেখানে সালফারযুক্ত বুদবুদ, নিয়ন রঙের বিশাল লবণাক্ত সমতল ভূমি অবিরাম সূর্যের নিচে ঝিকিমিকি করে। এটি কোনো কৃত্রিম দৃশ্য বা স্থান নয়। এটি আফ্রিকা মহাদেশের উত্তর-পূর্ব ইথিওপিয়ার ডানাকিল ডিপ্রেশন, যা পৃথিবীর সবচেয়ে অদ্ভুত এবং চরম প্রতিকূল জায়গাগুলোর মধ্যে একটি। 

ডানাকিল ডিপ্রেশন ইথিওপিয়ার এর্তা আলে পর্বতমালার উত্তর-পূর্বে, ইরিত্রিয়ার সীমান্তে এবং আফার (ডানাকিল) নিম্নচাপ নামক একটি ভূতাত্ত্বিক গঠনের ভেতরে অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৩০ মিটার নিচু এই অঞ্চলটি পৃথিবীর সর্বনিম্ন স্থান। আফ্রিকান এবং এশীয় টেকটোনিক প্লেটের মহাদেশীয় প্রবাহের ফলে ডানাকিলে নিম্নচাপ তৈরি হয়েছিল।

প্রতি বছর ১-২ সেন্টিমিটার হারে প্লেটগুলো পৃথক হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা একটি ভূতাত্ত্বিক নিম্নচাপ রেখে যায়, যা ডানাকিল নিম্নচাপ (বা আফার নিম্নচাপ) নামে পরিচিত। এটি তিনটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে আফার ট্রায়াঙ্গেলে অবস্থিত। এখানকার তাপমাত্রা প্রায়ই ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে চলে যায়। এখানে বৃষ্টিপাত প্রায় নেই বললেই চলে। তবুও এই ভূমি সবচেয়ে আশ্চর্যজনক এবং অদ্ভুত ভূতাত্ত্বিক গঠনের জন্য বিখ্যাত।

এই অপার্থিব ভূখণ্ডে আছে বেশ কিছু জায়গা। এর মধ্যে ডালল হাইড্রোথার্মাল ফিল্ডকে বলা হয় নরকের প্রবেশদ্বার। ডালল হলো অ্যাসিড পুল, সালফার চিমনি এবং নিয়ন সবুজ এবং হলুদ সোপানের ভূখণ্ড। অঞ্চলটি ধাতু দ্রবীভূত করার জন্য যথেষ্ট অ্যাসিডিক এবং আয়রন অক্সাইড এবং সালফারের মতো খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ, যা অন্য জগতের রঙের বৈপরীত্য তৈরি করে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন যে, এটি বৃহস্পতির চাঁদ আইও বা মঙ্গল গ্রহের পরিবেশের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। ডালল তার অনন্য ভূতাত্ত্বিক অবস্থার কারণে পৃথিবীর সবচেয়ে রঙিন ভূমিরূপগুলোর মধ্যে একটি। সাদা লবণাক্ত সমতলের মধ্য দিয়ে গাড়ি চালিয়ে অন্ধকার আগ্নেয়গিরির পাথরের ওপর দিয়ে কিছুক্ষণ হাঁটার পরে, আপনি যখন উপরে পৌঁছাবেন তখন রঙের এই ভিন্ন জগতের আলোকিত আভা আপনার সামনে আসবে। ‘ধূমপান পর্বত’ নামে পরিচিত, এর্তা আলে নামে একটি আগ্নেয়গিরিও রয়েছে ডানাকিলে। জলন্ত ক্ষতিকারক গ্যাস দিয়ে ভর্তি এই আগ্নেয়গিরি লাল ও কমলা লাভা দিয়ে ভর্তি। তা ছাড়া ডানাকিলে আছে সমতল লবণাক্ত ভূমি। 

ফাটল ধরা সাদা মরুভূমির মতো বিস্তৃত, ডানাকিলের লবণাক্ত সমতলগুলোর প্রাচীন কৌশল ব্যবহার করে আফার উপজাতির লোকরা প্রতিদিন মাটি খনন করে লবণের জন্য। লম্বা উটের কাফেলা মরুভূমি জুড়ে হাতে কাটা লবণের টুকরো বহন করে। যা সে দেশে ‘সাদা সোনা’ নামে পরিচিত।

জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং গ্রহ বিজ্ঞানীদের কাছে ডানাকিল রহস্যময় জায়গা। ২০১৯ সালে গবেষকরা আবিষ্কার করেন যে ডাললের কিছু অংশে কোনো পরিচিত জীব টিকে থাকতে পারেনি। অদ্ভুত সুন্দর এই জায়গা যদিও পর্যটকদের জন্য আদর্শ স্থান নয়। তবুও অসংখ্য রহস্যপ্রেমী ও প্রকৃতিপ্রেমী ডানাকিলে ঘুরতে আসেন।

 

তারেক

গাছ যখন বার্তাবাহক

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫, ০৪:০৮ পিএম
আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৫, ০৪:০৯ পিএম
গাছ যখন বার্তাবাহক
ছবি: সংগৃহীত

আচ্ছা গাছেরা কি একে অপরের সঙ্গে কথা বলে? একটি গাছেরও কি ভাষা থাকতে পারে? আর যদি কথা বলেই থাকে, তা হলে তারা ঠিক কী কী কথা বলে? বিপদের সময় কি এক গাছ অন্য গাছকে সাবধান করে দেয়?

ছেলেমানুষী মনে হলেও গবেষণার ফল বলছে— হ্যাঁ! পৃথিবীর কিছু গাছ সত্যিই একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। যা আমাদের মানুষদের রীতিমতো চমকে দেয়। 

আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলের কথাই ধরা যাক। সেখানকার অ্যাকাসিয়া (Acacia) গাছ যখন বিপদের সম্মুখীন হয় অর্থাৎ কোনো প্রাণী যেমন বন্য হরিণ বা জিরাফ যখন তার পাতা খেতে আসে, তখন গাছটি অবিশ্বাস্য এক কাজ করে বসে। সে তার পাতায় এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ তৈরি করে, যেটি অন্য প্রাণীর জন্য বিষাক্ত। একই সঙ্গে গাছটি বাতাসে ছেড়ে দেয় এক প্রকার গ্যাস, যার নাম ইথাইলিন। এই গ্যাস বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের গাছগুলোর কাছে এবং তখনই অন্য গাছগুলোও সতর্ক হয়ে যায় এবং আগেই নিজেদের পাতায় বিষাক্ত পদার্থ তৈরি করে মজুত করে রাখে।

এ যেন এক নিঃশব্দ সতর্কবার্তা- ‘সাবধান! শত্রু খুব নিকটে, প্রস্তুত হও আত্মরক্ষা কর।’ বিজ্ঞানীরা এই অনন্য যোগাযোগ প্রক্রিয়াকে নাম দিয়েছেন ‘Plant-Communication’ বা উদ্ভিদের আন্তঃযোগাযোগ। গাছেরা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলেও, তারা একে অপরের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করে খুব নীরবেই। এই কমিউনিকেশন ঠিক আমাদের কথা বলার মতো না। শ্রবণশক্তিতে তা বুঝতেও পারা যাবে না। কারণ গাছপালা শব্দ করে কথা বলতে পারে না। তারা রাসায়নিক সংকেত, বৈদ্যুতিক সিগন্যাল এবং শিকড়ের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান করে থাকে। এটি প্রমাণ করে যে গাছ কেবল নির্জীব, নীরব বস্তু নয়- তাদের আছে নিজস্ব প্রতিক্রিয়া, স্মৃতি, এমনকি শেখার ক্ষমতাও। 

বিশ্বের বিভিন্ন গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, গাছেরা কেবল বাতাসেই নয়, শিকড়ের নিচে মাটির গভীরেও এক ধরনের ‘ইন্টারনেট’ বা যোগাযোগ গড়ে তোলে। এটিকে বলা হয় ‘Wood Wide Web’। এখানে মাইক্রোফাঙ্গাসের মাধ্যমে এক গাছ অন্য গাছের সঙ্গে তথ্য ও পুষ্টি আদান-প্রদান করে। 

এক গাছ দুর্বল হলে, আশপাশের গাছরা তাকে সাহায্য পাঠায়। কানাডিয়ান বিজ্ঞানী সুজান সিমার্ডের মতে, গাছেরা একে অপরকে চেনে, মনে রাখে এবং প্রয়োজনে সাড়া দেয়। গাছেরা মায়া, বন্ধুত্ব, এমনকি আত্মত্যাগও করে থাকে প্রয়োজনসাপেক্ষে। এই তথ্যগুলো জানার পর প্রশ্ন জাগে, তা হলে কি গাছ কাটার আগে তারা একে অপরকে জানায়? সতর্ক করে দেয় যে সামনে খুব বিপদ? 

আজ সময় এসেছে প্রকৃতিকে নতুন করে শোনার, দেখার ও জানার মধ্য দিয়ে রহস্য উন্মোচন করার। প্রচুর গবেষণাই পারে এসবের সুস্পষ্ট ধারণা দিতে। তার জন্য হয়তো আরও কিছুদিন অপেক্ষা আমাদের করতেই হবে।

 

তারেক