মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম আপিলের রায়ে খালাসের প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ও চট্টগ্রাম মহানগরে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় সৃষ্ট পরিস্থিতির মধ্যে নতুন ফ্যাসিবাদীর আগমনধ্বনি শোনা যাচ্ছে এবং পুরো সমাজে একটি ফ্যাসিবাদী শক্তি নড়াচড়া করছে বলে মন্তব্য করেছেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
তিনি বলেন, ‘৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর বৈষম্যহীন ও স্বৈরাচারমুক্ত এই বাংলাদেশ কীভাবে দাঁড়াবে তা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা, বিতর্ক হচ্ছিল। কিন্তু আজকে প্রত্যাশা ভঙ্গের জায়গায় এসে আমরা দাঁড়িয়েছি। যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তার মধ্যে নতুন ফ্যাসিবাদীর আগমনধ্বনি শোনা যাচ্ছে এবং পুরো সমাজে একটি ফ্যাসিবাদী শক্তি নড়াচড়া করছে।’
শনিবার (৩১ মে) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক নাগরিক সংহতি সমাবেশে এসব কথা বলেন আনু মুহাম্মদ।
তিনি আরও বলেন, ‘শ্রমিকরা বকেয়া মজুরির জন্য আন্দোলন করলে তাদের ওপর হামলা হয়, শিক্ষার্থীরা গণতান্ত্রিক অধিকার বা ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানালে হামলার শিকার হয়, শিক্ষকরা তাদের অধিকারের জন্য সমবেত হলে তাদের ওপরও হামলা হয়, নারী তার অধিকারের জন্য কথা বললে কুৎসা রটানো হয়। সামাজিকভাবে আমরা দেখতে পাচ্ছি, একদিকে বলপ্রয়োগ করার একটি পক্ষ তৈরি হয়েছে; অন্যদিকে প্রচার ও মিথ্যা তথ্য, কুৎসা রটানো এবং ইতিহাস বিকৃত করে ফ্যাসিবাদী শক্তি তৈরির চেষ্টা চালানো হচ্ছে।’
আজহারুল ইসলামকে আপিলের রায়ে নির্দোষ ঘোষণা করাই ছিল সরকারের লক্ষ্য উল্লেখ করে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘আজহারুল ইসলাম যিনি যুদ্ধাপরাধ করেছেন, এমন চিহ্নিত ব্যক্তি কীভাবে নির্দোষ হিসেবে ঘোষিত হন। আওয়ামী লীগ আমলে যে মামলা হয়েছে তার মধ্যে ত্রুটি রয়েছে, আমরা শুনছি। এই আদালত তো ত্রুটি সংশোধন করতে পারত, মৃত্যুদণ্ড খারিজ করে দিতে পারতো; আমি নিজেও মৃত্যুদণ্ডকে সমর্থন করি না। কিন্তু যুদ্ধাপরাধী এটা তো আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত সত্য, এটিকে তো খারিজ করা যাবে না। আদালত ও সরকারের সমর্থন দেখে বোঝা যাচ্ছে, তাকে নির্দোষ ঘোষণা করাই ছিল লক্ষ্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘চিহ্নিত ব্যক্তিকে যদি নির্দোষ হিসেবে ঘোষণা করা হয়; তাহলে তো পুরো ইতিহাসই পাল্টে যায়। একাত্তর সালে লক্ষ-লক্ষ শহিদ, নির্যাতিত নারী এবং কোটি মানুষ যারা লড়াইয়ের সঙ্গে ছিলেন, তাদের সঙ্গে তো বেঈমানী করা হয়, তখন প্রতিবাদ হবে না? সেই প্রতিবাদ যারা করছেন তাদের উপর আবার হামলা চালানো হচ্ছে; এখানে সরকারের ভূমিকাও নীরব।’
বৈষম্যবাদী রাজনীতিকে পৃষ্ঠপোষকতা করা, এটি আমরা কোনভাবেই হতে দিতে পারি না। এ জন্য জনগণকে প্রতিবাদ জারির আহ্বান জানিয়ে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক বলেন, ‘যখন যুদ্ধাপরাধ-বিরোধী কথা হয় তখন সেটিকে ইসলাম-বিরোধী হিসেবে যারা চিত্রায়িত করতে চায়, তারা ভয়ংকর অপরাধী ও বিকৃতকারী। যারা ইসলামের অনুশাসন মানেন, তারাও তো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাইবেন। তাদের বেশিরভাগই তো ধার্মিক মুসলমান। যখন যুদ্ধাপরাধীর বিচার চাওয়া হয় ইসলামবিরোধী হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করা হয়। এই সব রাজনৈতিক অপদার্থ, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের দাঁড়াতে হবে এবং সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার পাশাপাশি প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব ছিল বৈষম্যহীন বাংলাদেশের দিকে যাত্রা করা, কিন্তু তাদের ভূমিকা দাঁড়িয়েছে বৈষম্যবাদী রাজনীতিকে পৃষ্ঠপোষকতা করা। এটি আমরা কোনভাবেই হতে দিতে পারি না।’
এতে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ জুবেলের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক অধ্যাপক ডা. হারুন-অর-রশীদ এবং গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট মানজুর আল মতিন।
সমাবেশের শুরুতে ১৯৮৮ সালে ইসলামী ছাত্র শিবির কর্তৃক নিহত সেই সময়ের ছাত্র মৈত্রী রাজশাহী মেডিকেল কলেজের সভাপতি ডা. জামিল আখতার রতনের ৩৭তম শহিদ দিবসে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন এবং শহিদ জামিলের অস্থায়ী প্রতীকী বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।