![চাকরিতে আবেদনের সময় যা যা খেয়াল রাখবেন](uploads/2023/11/27/1701061370.f.jpg)
ক্যারিয়ারের বিভিন্ন পর্যায়ে আমাদের ভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার অভিজ্ঞতা হয়। প্রতিটি ক্ষেত্রেই কিন্তু একটি পদের জন্য আবেদনকারী হিসেবে আমাদের প্রতিযোগিতা করতে হয় শত শত প্রার্থীর সঙ্গে। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ চাকরির বাজারে টিকে থাকতে হলে শুধু শিক্ষাগত যোগ্যতার ওপর ভিত্তি করলেই হবে না, আপনাকে যথেষ্ট কৌশলী এবং দূরদর্শিতার পরিচয়ও দিতে হবে। বিস্তারিত জানাচ্ছেন তারেক বিন ফিরোজ।
যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির পদে আবেদন
প্রথমত আপনি কোন ইন্ডাস্ট্রি বা কোন সেক্টরে কাজ করতে আগ্রহী তা বিবেচনা করতে হবে। আপনি কোন ধরনের বা কোন পদে চাকরি করতে চান তা নির্দিষ্ট করে ভাবুন। যেই পদে আবেদন করতে চাচ্ছেন তার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ভালোভাবে পড়ে দেখুন। সেখানে উল্লেখ করা কাজের বিবরণীর সঙ্গে আপনার দক্ষতা এবং যোগ্যতা মিলছে কি না সে বিষয় যাচাই করুন। কর্মঘণ্টা, লোকেশন, বেতন ইত্যাদি ক্ষেত্রে নিশ্চিত হয়ে তবেই আবেদন করুন।
সিভি এবং কভার লেটার আপডেট করুন
চাকরির আবেদনের ক্ষেত্রে সিভি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়োগকারীর সঙ্গে আপনার সর্বপ্রথম যোগসূত্রের মাধ্যম এই সিভি। সিভির মাধ্যমেই আপনাকে যাচাই করে তবেই পরবর্তী ধাপটির জন্য আপনাকে বিবেচনা করা হবে। তাই একটি নির্ভুল ও তথ্যবহুল সিভি লেখার ব্যাপারে বিশেষ লক্ষ রাখতে হবে। একটি সিভি দিয়ে ভিন্ন পদে আবেদন না করে একেক কোম্পানির চাকরিভেদে ভিন্ন ধরনের সিভি তৈরি করুন এবং সেই অনুযায়ী আপনার যোগ্যতা এবং দক্ষতাগুলো হাইলাইট করুন। সিভির পাশাপাশি আর একটি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট হলো কভার লেটার। আপনি কীভাবে কোম্পানির জন্য একটি সম্পদ হতে পারেন, এই পদে কাজ করে আপনি কী অর্জন করতে চাচ্ছেন, কেন উক্ত পদে অন্য প্রার্থীদের তুলনায় আপনাকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত ইত্যাদি কভার লেটারে লিখুন। প্রয়োজনে বিশ্বস্ত কাউকে দিয়ে সিভি এবং কভার লেটারটি পুনরায় চেক করিয়ে নিতে পারেন। একটি আকর্ষণীয় সিভি এবং কভার লেটার আপনাকে নিয়ে যাবে বহুদূর।
সিভিতে রেফারেন্স যুক্ত করুন
চাকরির ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো রেফারেন্স বা সুপারিশ। সিভিতে দুই থেকে তিনজন ব্যক্তির রেফারেন্স যোগ করে নিন। যাকে রেফারেন্স হিসেবে দিতে চান, তাকে এ সম্পর্কে অবগত করুন যাতে কোম্পানি থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি আপনার সম্পর্কে ভালো তথ্য দিতে পারেন। যাদের রেফারেন্স দিতে চান তাদের তথ্য নির্ভুল ও সঠিক কি না তা জেনে নিন।
অনলাইন প্রোফাইল আপডেটেড রাখুন
চাকরি খোঁজার প্রক্রিয়া এখন অনেকটাই অনলাইন নির্ভর হয়ে গিয়েছে। এক ক্লিকে আপনি যেমন ইন্টারনেট থেকে কোম্পানির ব্যাপারে জানতে পারবেন, তেমনি নিয়োগকারীও আপনার সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল ঘুরে জেনে নিতে পারবেন অনেক তথ্য। সুতরাং প্রফেশনাল প্ল্যাটফর্ম যেমন লিংকডইন প্রোফাইল এর তথ্য হালনাগাদ রাখুন। এ ছাড়া অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অর্থাৎ ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার ইত্যাদি প্রোফাইলে যেকোনো ধরনের তথ্য শেয়ার বা প্রচারে সচেতন হোন।
ইন্টারভিউয়ের প্রস্তুতি নিন
ইন্টারভিউ হচ্ছে প্রার্থী বাছাই করার সবচেয়ে জনপ্রিয় ও কার্যকরী মাধ্যম। ইন্টারভিউ মুখোমুখি, ফোন, বা অনলাইন- যেভাবেই হোক না কেন, এর জন্য চাই সঠিক প্রস্তুতি। বাসায় বসেই নিতে পারেন এই ইন্টারভিউ পূর্ববর্তী প্রস্তুতি। ওয়েবসাইট বা অন্যান্য সাইট থেকে প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে গবেষণা করে যান। এতে ইন্টারভিউয়ে আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে তা জেনে নিতে সুবিধা হবে আর এতে আপনার একাগ্রতাও প্রকাশ পাবে।
পরিচিতি পর্বে নিজের সম্পর্কে এমন কিছু বলতে চেষ্টা করুন যা সিভিতে লেখা নেই। প্রায়ই জিজ্ঞাসা করা হয় এমন সাধারণ কিছু প্রশ্নের উত্তর আগে থেকেই ঠিক করে যান। নিজেকে যোগ্য কেন দাবি করছেন, এর জন্য আপনার কাজের অভিজ্ঞতার আলোকে কয়েকটি বাস্তব উদাহরণও ঠিক করে রাখুন। নিয়োগকারীরা সাধারণত উত্তরের পাশাপাশি মুখভঙ্গি, বাচনভঙ্গি, বসার ধরন ইত্যাদি বিষয়েও লক্ষ করে থাকেন। তাই ইন্টারভিউ বোর্ডে নিজেকে আত্মবিশ্বাসী হিসেবে তুলে ধরুন।
পেশাদারিত্ব বজায় রাখুন
ইন্টারভিউ বোর্ডে আপনার নিয়মানুবর্তিতা আপনার পেশাদারিত্বের প্রথম প্রমাণ দিবে। তাই তাড়াহুড়ো করে নয়, লোকেশন বুঝে সময় নিয়ে ঘর থেকে বের হোন। লোকেশন বুঝতে অসুবিধা হলে গুগল ম্যাপ অথবা কোম্পানির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে আগে থেকেই জেনে রাখুন এলাকাটি এবং সেখানকার ট্রাফিক অবস্থা সম্পর্কে। পরিপাটি ও মার্জিত আউটলুক বেশ গুরুত্বপূর্ণ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, রুচিশীল এবং ফর্মাল পোশাক পরে যান। চুল, অলংকার এবং জুতার দিকেও মনোযোগ দিন। কী পরে যাবেন তা আগে থেকেই ঠিক করে রাখা ভালো।
দক্ষতা বৃদ্ধি করুন
নতুন নতুন দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে একজন মূল্যবান সম্পদে পরিণত হোন। বিভিন্ন অনলাইন ট্রেনিং, সেমিনার, ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করুন। সেখান থেকে আপনি ইন্টারভিউয়ের দক্ষতা বৃদ্ধি, নিজেকে সুন্দর করে উপস্থাপনের টিপস, নেটওয়ার্কিং এবং অনলাইন টুল ব্যবহার ইত্যাদি নানা বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন। যা আপনার পেশাগত উন্নয়নে সাহায্য করবে।
নেটওয়ার্কিং বাড়ান
চাকরি খোঁজা বেশ সময়সাপেক্ষ একটা ব্যাপার, তাই মানসিকভাবে আপনাকে শক্ত থাকতে হবে। কাছের বন্ধুবান্ধব, পরিবারের সদস্য, শিক্ষক, মেন্টর, পূর্বের অফিসের বস এবং সহকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখুন। তারা আপনার মনোবল দৃঢ় রাখতে সাহায্য করবে। তাদের কাছে চাকরি এবং ক্যারিয়ার বিষয়ে পরামর্শ চান।
আবেদন করা থেকে শুরু করে নতুন চাকরিতে যোগদান পর্যন্ত পদে পদে রয়েছে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ। আপনাকে সব সময় আশাবাদী থাকতে হবে এবং কোনো জায়গায় চাকরি না হলেও ভেঙে পড়বেন না। এ থেকে নতুন কী শিখলেন তা নিয়েই সামনে এগিয়ে যেতে হবে। ভালো-মন্দ প্রতিটি অভিজ্ঞতাই আপনাকে পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সহায়তা করবে।
জাহ্নবী