![ওশানোগ্রাফি পড়ে গড়ুন ক্যারিয়ার](uploads/2024/02/05/1707116706.c2.jpg)
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সময় একজন শিক্ষার্থী কোন বিষয় পড়বেন সেটা পছন্দ করতে অনেক সময় সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন। যে বিষয় পড়বে তার ভবিষ্যৎ কী, ক্যারিয়ার কোথায়- এসব জানা থাকলে তার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়ে যায়। ২০১২ এবং ২০১৪ সালে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আদালতের মায়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে সমুদ্রসীমা বৃদ্ধি পাওয়ার পর বাংলাদেশে ওশানোগ্রাফি অর্থাৎ সমুদ্রবিজ্ঞান বিষয়টি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আজকে জানাব ওশানোগ্রাফিতে ক্যারিয়ার কী, কোথায় পড়বেন সেই সম্পর্কে।
ওশানোগ্রাফি কী
বিজ্ঞানের যে শাখায় সমুদ্র নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে সমুদ্রবিজ্ঞান বা ওশানোগ্রাফি বলে। পৃথিবীর বড় একটি অংশ জুড়ে আছে সমুদ্র।আয়তনের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রায় ৭০ শতাংশের বেশি সম্পদ সমুদ্রপথে বহন করা হয়। এর বাইরে সমুদ্রে আছে বিপুল প্রজাতির প্রাণ। এত কিছুর জন্য সমুদ্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তাই সেটি নিয়ে প্রয়োজন বিস্তর পড়াশোনা। আর এজন্যই পড়ানো হয় সমুদ্রবিজ্ঞান।
এই প্রোগ্রামের অধীনে মূলত তাত্ত্বিক, ভৌত, রাসায়নিক, ভূতাত্ত্বিক সমুদ্রবিজ্ঞানের বিষয়সমূহ মানে সামুদ্রিক জীবজগৎ, সমুদ্রের কোন অংশ থেকে রাসায়নিক উপাদান উৎপন্ন হয় সেগুলোর বিন্যাস ও বিক্রিয়া কেমন, সমুদ্রস্রোত, জোয়ার-ভাটা, তাপমাত্রা, ঘনত্ব, সমুদ্রের তলদেশের ভূতত্ত্বের আলোচ্য বিষয়গুলো এখানে পড়ানো হয়। সমুদ্রবিজ্ঞানে পড়ালেখার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সমুদ্র সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন, ভূ-ভাগ ও সাগরের আন্তসম্পর্ক, সমুদ্র সম্পদ আহরণের উপায় ও সুষ্ঠু ব্যবহার সম্পর্কে জানা।
এই বিষয়গুলোকে মাথায় রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্সগুলো সাজানো হয়। এ ছাড়া একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি পরীক্ষাগারে কাজ এবং ফিল্ড ট্রিপ, ফিল্ড ওয়ার্ক এখানে বাধ্যতামূলক। তাই পড়ার মাঝে ঘোরাঘুরির জন্যও সমুদ্রবিজ্ঞান বেশ মজার একটি বিষয়।
কোথায় পড়ানো হয়
বাংলাদেশে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমুদ্রবিজ্ঞান বা ওশানোগ্রাফি বিভাগটি চালু হয়েছে। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ে ওশানোগ্রাফি পড়ানো হয়। এ ছাড়া পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএসসি ইন মেরিন ফিশারিজ অ্যান্ড ওশানোগ্রাফি নামে স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম চলমান আছে।
ওশানোগ্রাফি ছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক আর্থ অ্যান্ড ওশান সায়েন্স অনুষদের অধীনে মেরিন ফিশারিজ, ফিশারিজ, ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সসহ অনেক প্রোগ্রাম পরিচালিত হয়।
উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা
বাংলাদেশের সমুদ্রের অংশ এখন ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার। উক্ত সমুদ্রসীমায় আমাদের কোনো গবেষণা জরিপ না হওয়ায় কোন প্রজাতির কী পরিমাণ আহরণযোগ্য বায়োলজিক্যাল ও নন-বায়োলজিক্যাল সম্পদ রয়েছে এবং বঙ্গোপসাগর সম্পর্কিত বহু বিষয় এখনো অজানা।
কাজেই বাংলাদেশে সমুদ্রবিজ্ঞানে প্রচুর গবেষণার ক্ষেত্র রয়েছে। সামুদ্রিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে সমুদ্র সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা, সমুদ্রদূষণ, জলবায়ুর প্রভাব ও অন্যান্য বিরূপ অবস্থা প্রতিরোধ ও প্রতিকারের জন্য সমুদ্র সম্পর্কিত সব ধরনের তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজন। কিন্তু দেশে সমুদ্র গবেষণার ক্ষেত্রে দক্ষ জনশক্তির অভাব রয়েছে। দক্ষ জনবলের বিজ্ঞানবিষয়ক গবেষণাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের সমুদ্র সম্পদ আহরণের একটা বিশাল সম্ভাবনা তৈরি হবে।
তাই স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের পর খুব সহজেই জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস, চীন, জাপান ছাড়াও পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে।
ক্যারিয়ার
বর্তমানে সমগ্র পৃথিবীতে ব্লু ইকোনমি বা সমুদ্রনির্ভর অর্থনীতি বেশ সম্ভাবনাময়। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিতে বেশির ভাগ দেশ এখন ঝুঁকছে সমুদ্র সম্পদের দিকে। তাই সমুদ্রবিজ্ঞান সম্পর্কিত কাজের ক্ষেত্র ব্যাপক ও বিস্তৃত।
এ বিষয়ে পড়াশোনা করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, গবেষক, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কাজের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ এটমিক এনার্জি কমিশনে, বাংলাদেশ ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউটে, বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট, স্পারসো ও আবহাওয়া অধিদপ্তরের চাকরির সুযোগসহ বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের পরিবেশ সম্পর্কিত গবেষণা প্রতিষ্ঠান অথবা বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী প্রতিষ্ঠানগুলোতে সমুদ্রবিজ্ঞান বিষয়ে কাজের সুযোগ রয়েছে। বর্তমান সময়ে অনেকেই সমুদ্রবিজ্ঞান পড়তে উৎসাহিত হচ্ছেন।
সমুদ্রবিজ্ঞান বা ওশানোগ্রাফি পড়ার মাধ্যমে নিজের অর্থনৈতিক অবস্থান শক্তিশালী করার পাশাপাশি দেশের উন্নয়নেও ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে।
কলি