![স্থপতি হিসেবে গড়ুন নান্দনিক ক্যারিয়ার](uploads/2024/04/08/1712563570.kor-jabe4.jpg)
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একজন স্থপতি এবং স্থাপত্যবিদ্যার গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা, একজন স্থপতি অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে শুধু ভবন ও এর পারিপার্শ্বিক গঠন কাঠামোর মধ্যকার সমন্বয়ই ঘটান না; বরং তিনি পরিবেশগত দিক এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা পরিবর্তন থেকে রক্ষা পাওয়ার বাস্তবমুখী দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাসহ অনেক মৌলিক বিষয়ে কাজ করেন।
দেশের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন, বাস্তবমুখী পরিবেশচর্চা ও অর্থনৈতিক কাঠামোগত বৈশিষ্ট্যের প্রতিফলনের জন্য স্থপতি এবং স্থাপত্যবিদ্যার ভূমিকা অপরিহার্য। তাই দেশে-বিদেশে এখন স্থপতিদের ব্যাপক চাহিদা। যদিও একটা সময় ছিল যখন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে স্থপতিদের কাজ করানো হতো; কিন্তু সময় বদলেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো এখন বাংলাদেশেও স্থপতিরা ভবনের ভেতর-বাইরের নকশা থেকে শুরু করে পুরো কাজের নেতৃত্ব দেন।
পড়াশোনা
স্থাপত্য একই সঙ্গে কলা এবং বিজ্ঞানের সম্মিলিত রূপ। স্থাপত্য বিষয়টি অধিকাংশই প্রযুক্তি, নকশা ও নির্মাণের সঙ্গে সম্পর্কিত হলেও এটি একটি সৃজনশীল ও সাংস্কৃতিক বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়। বর্তমানে বুয়েট, রুয়েট, চুয়েট, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, শাবিপ্রবি, চবি, আহ্ছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি, এশিয়া প্যাসিফিক, নর্থসাউথ, এআইইউবি, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটিসহ সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে অন্তত ২৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্য পড়ানো হচ্ছে।
এগুলোর মধ্যে আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি আইএবির অ্যাক্রিডিটেড। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের প্রথমেই খোঁজ নিয়ে দেখা উচিত যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাচ্ছে সেটির আইএবির অ্যাক্রিডিটেশন আছে কি না। এটি একটি পেশাগত ডিগ্রি এবং উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হওয়ায় বর্তমানে এ বিষয়ে উচ্চশিক্ষার চাহিদাও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদেশে স্থাপত্য বিষয়ে উচ্চশিক্ষা অন্য যেকোনো বিষয়ের চেয়ে অনেক বেশি ব্যয়বহুল। তবে এ বিষয়ে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী মেধাবীদের সহায়তা করার জন্য বিশ্বের সব দেশের বিশ্ববিদ্যালয়েই রয়েছে কিছু স্কলারশিপ প্রোগ্রাম। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রফেসরদের গবেষণা ফান্ড থেকেও অনেক সময় বিভিন্ন দায়িত্বসাপেক্ষে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার খরচ বহন করা হয়।
সফল স্থপতি
একজন ভালো এবং সফল স্থপতি হওয়ার প্রধান শর্ত হচ্ছে সৃজনশীল হওয়া। তাকে অবশ্যই দেশ-বিদেশের বড় বড় স্থাপনার নকশা সম্পর্কে খোঁজখবর রাখতে হবে। ক্লায়েন্টের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বুঝে তার সম্পদ ও সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় রেখে অত্যাধুনিক প্ল্যান দিতে হবে- যেন তার সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার হয়। ক্লায়েন্টকে কনভিন্স করতে থাকতে হবে ভালো যোগাযোগ দক্ষতা। মনে রাখবেন, উদ্যমী হতে না পারলে এ পেশায় সফল হওয়াটা খুব কঠিন। কাজের মাধ্যমে নিজের প্রতিভাকে ফুটিয়ে তুলতে হবে। প্রতিনিয়ত সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণে পারদর্শী হলে তবেই ক্যারিয়ারে সফলতা ধরা দেবে।
কর্মক্ষেত্র
সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে স্থাপত্যকে পেশা হিসেবে নেওয়ার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। বলা যায়, বতর্মানে স্থপতিদের কর্মক্ষেত্র অবারিত। আর্কিটেক্ট ফার্ম, রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলোতেও তাদের কাজের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। গেমিং ইন্ডাস্ট্রি-থ্রি ডি ভিজুয়ালের ক্ষেত্রে স্থপতিরা সহায়তা করতে পারেন। অ্যানিমেশন ইন্ডাস্ট্রিতেও আর্কিটেক্টদের কাজের সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে আর্কিটেক্ট পাস করার পর গ্র্যাজুয়েটরা সৃজনশীল কাজ যেমন- ফিল্ম মেকিং, ফটোগ্রাফি, সিনেমাটোগ্রাফি, অ্যাডভারটাইজিং, ইন্টেরিওর ডিজাইনের কাজেও যুক্ত হচ্ছেন।
এক কথায়, বর্তমানে বিভিন্ন পেশার মধ্যে শীর্ষস্থানীয় হলো স্থাপত্য। এ পেশার সুবিধা হলো কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করার পাশাপাশি চাইলে নিজেও একটি প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়ে কাজ করা সম্ভব। তবে কোনো স্থপতি যদি নিজের প্রতিষ্ঠান চালু করতে চায়, তাহলে তাকে প্রথমেই ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্ট বাংলাদেশ (আইএবি) থেকে নিবন্ধন করিয়ে নিতে হবে।
তাছাড়া ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার অর্থাৎ, স্থাপত্য বিষয়ে স্নাতক শেষে দুটি পথ সরাসরিই খোলা থাকে- ১. স্থাপত্য বিষয়ে শিক্ষকতা করা; ও ২. পেশাগতভাবে স্থপতি হিসেবে চর্চা শুরু করা। শিক্ষকতার ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সব জায়গাতেই সুযোগ আছে। যেহেতু এখন বাংলাদেশে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই স্থাপত্য বিভাগ চালু হয়েছে আর সেখানে শিক্ষকের প্রয়োজন, তাই শিক্ষকতার সুযোগও অনেক। তবে এ ক্ষেত্রে একটা পূর্বশর্ত হচ্ছে স্নাতক পর্যায়ের ফলাফল যথেষ্ট ভালো হতে হবে।
আর যারা স্থাপত্য চর্চার দিকে যেতে চায়, তাদের জন্যও সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে অনেক প্রতিষ্ঠানে সুযোগ আছে। এ ছাড়া সরকারের আরও কিছু সংস্থা আছে, যেমন- রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), এডিএ, সিডিএ, আরডিএ, একইভাবে সিটি করপোরেশন, হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। এসব প্রতিষ্ঠানে স্থপতিদের প্রয়োজন এবং কাজের বেশ সুযোগ রয়েছে।
আয়-রোজগার
একজন আর্কিটেক্ট বা স্থপতি চাকরির শুরুতে ২৫-৩০ হাজার টাকা বেতন পেয়ে থাকেন। তবে ছয় মাসের মধ্যে তিনি যদি তার কাজের দক্ষতা দেখাতে সক্ষম হন তাহলে তার আয়ের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পেতে পারে। একজন দক্ষ আর্কিটেক্ট মাসে আনুমানিক দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় করেন। তাছাড়া স্থাপত্য পেশায় চাকরির বাইরে ফ্রিল্যান্স কাজ করেও বাড়তি আয়ের সুযোগ থাকে।
কলি