নৃবিজ্ঞান (Anthropology) আক্ষরিক অর্থে মানুষবিষয়ক বিজ্ঞান। বিভিন্ন দেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে নৃবিজ্ঞানের। এর যাত্রা বাংলাদেশে খুব বেশিদিনের না হলেও, এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নৃবিজ্ঞান মানুষের বিজ্ঞানভিত্তিক অধ্যয়ন। বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা মানুষের সমাজ-সংস্কৃতি নিয়ে এই বিজ্ঞান খুবই গভীরভাবে গবেষণা করে। ভিন্ন ভিন্ন সমাজের মানুষ ও তাদের সব রকমের অভিজ্ঞতা নৃবিজ্ঞানীদের গবেষণার বিষয়।
বাংলাদেশে নৃবিজ্ঞান বিভাগের যাত্রা
বাংলাদেশে নৃবিজ্ঞানের অধ্যয়ন ও গবেষণার এক দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। ১৯৮৫ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম নৃবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশে নৃবিজ্ঞান অধ্যয়নের যাত্রা শুরু হয়েছে। এরপর ধীরে ধীরে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগ চালু করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নৃবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করে।
যা পড়ানো হয়
নৃবিজ্ঞান কেবল একটি বিষয় নয়, বরং এটি বৈচিত্র্যময় জ্ঞানের এক অসাধারণ বিশ্ব। মানুষ সম্পর্কিত সবকিছু নৃবিজ্ঞানে পড়ানো হয়। নৃবিজ্ঞানের মূল বিষয় দৈহিক নৃবিজ্ঞান, সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞান, প্রত্নতাত্ত্বিক নৃবিজ্ঞান ও ভাষাতাত্ত্বিক নৃবিজ্ঞান। এ ছাড়া আইন, উন্নয়ন, বাস্তুসংস্থান, সাহিত্য, বিশ্বায়ন, আইসিটি, এসডিজিসহ মানবসংশ্লিষ্ট সবকিছুই নৃবিজ্ঞানে পড়ানো হয়। সামাজিক বৈষম্য, লৈঙ্গিক বৈষম্য থেকে বেদে সম্প্রদায়, হিজড়া সম্প্রদায়, এমন বিষয়ও বিভাগটির আলোচ্য বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত।
বিদেশে উচ্চশিক্ষা
উচ্চশিক্ষায় এ বিভাগে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের একটা বড় সুযোগ রয়েছে। বিগত ১০০ বছর, বিশেষত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই বিশ্বব্যাপী বহুল চর্চিত একটি বিষয় হচ্ছে নৃবিজ্ঞান। সামাজিক বিজ্ঞান পড়ানো হয়, বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে থাকা এমন প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়েই নৃবিজ্ঞান পড়ানো হয়। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে, টরন্টো ইউনিভার্সিটি, উপসালা ইউনিভার্সিটি, হেলসিংকি ইউনিভার্সিটি উল্লেখযোগ্য।
কাজের সুযোগ
সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা ও গবেষণা সংস্থা আর আন্তর্জাতিক সংস্থার চাকরিতে নৃবিজ্ঞানীদের প্রাধান্য দেওয়া হয়। নৃবিজ্ঞানীরা সাধারণত শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্যসেবা, পরিবার পরিকল্পনা, মা ও শিশুর টিকাদান, মাদকাসক্তি নিরাময়, শারীরিক ও মানসিক অক্ষমতা, নারী উন্নয়ন, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, ক্ষুদ্র ঋণ ও দারিদ্র্যবিমোচন, গ্রামীণ উন্নয়ন, নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন, ত্রাণ ও পুনর্বাসন, শ্রম ও কর্মসংস্থান, কৃষি উন্নয়ন, সামাজিক বনায়ন, পরিবেশ রক্ষা, দুর্যোগব্যবস্থাপনা, মানবাধিকার এবং সুশাসন ও গণতন্ত্র; এসব বিষয় নিয়ে কাজ করে থাকেন।
এ ছাড়া নৃবিজ্ঞানীরা প্রকল্প প্রণয়ন, প্রকল্প পরিচালনা, গবেষণা বিষয়ে পরামর্শ ও নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রগুলোতে কাজ করতে পারেন। আপনি যদি শারীরিক নৃবিজ্ঞান, প্রত্নতাত্ত্বিক নৃবিজ্ঞান কিংবা ভাষাতাত্ত্বিক নৃবিজ্ঞান নিয়ে পড়েন, তাহলে কাজের পরিসর স্বাস্থ্য, ভাষা, প্রত্নতত্ত্ব ও জাদুঘর থেকে শুরু করে ফরেন্সিক বিভাগ, মনোবিদ্যা, জৈবপ্রযুক্তি, রোগতত্ত্বসহ বিভিন্ন ক্ষেত্র পর্যন্ত। এর বাইরে আপনি চাইলে শিক্ষকতায় প্রবেশ করতে পারেন। তবে এর জন্য উচ্চতর ডিগ্রি (যেমন, পিএইচডি)
থাকা প্রয়োজন।
বেতন
একজন নৃবিজ্ঞানীর বেতন নির্ভর করে তার অভিজ্ঞতা ও প্রতিষ্ঠানের ওপর। ক্যারিয়ারের শুরুতে সাধারণত ২৫-৩০ হাজার টাকা বেতন পাওয়া গেলেও অভিজ্ঞতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেতন বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলে দেশের চেয়েও বেশি আয় করা সম্ভব।
নৃবিজ্ঞানের ভবিষ্যৎ
প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল সমাজে পরিণত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নৃবিজ্ঞানের গুরুত্ব কমবে না বরং আরও বৃদ্ধি পাবে। কারণ জটিল প্রযুক্তিগত সমস্যা সমাধানে মানুষের আচরণ ও সংস্কৃতি বোঝার প্রয়োজনীয়তা আরও বেশি হবে। নৃবিজ্ঞান কেবল একটি একাডেমিক বিষয় নয়, বরং এটি মানবজাতির অতীত বোঝার, বর্তমানের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার এবং ভবিষ্যতের জন্য ভালো পৃথিবী গড়ে তোলার একটি অপরিহার্য হাতিয়ার।
কলি