ঢাকা ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

নারীর মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন

প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:২৮ এএম
আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:২৮ এএম
নারীর মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন

কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের মানসিক স্বাস্থ্য ক্রমাগত খারাপের দিকে যাচ্ছে। দেশের ৬০ শতাংশের বেশি নারী বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। এখনই সচেতন না হলে ভয়াবহ রূপ নিতে  পারে নারীর বিষণ্নতা। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার কারণ ও সমাধান খুঁজতে চেষ্টা করেছেন মারজান ইমু।

নানা রকম হরমোনের প্রভাবে নারীর মানসিক স্বাস্থ্য বিভিন্ন সময় নাজুক অবস্থায় থাকে। বয়ঃসন্ধি থেকে শুরু হয়ে প্রতি মাসের ঋতুচক্র, গর্ভাবস্থা, সন্তান প্রসবের পর কিংবা মেনোপজের সময় নারীদের মন-মেজাজ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কমে যায়। পাশাপাশি আধুনিক জীবন ব্যবস্থায় সঠিক খাদ্যাভ্যাস, শরীরচর্চার অভাব এবং সফল হওয়ার ইঁদুর দৌড়ে ক্লান্ত হওয়ার কারণে মেয়েরা মানসিকভাবে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছেন। শহুরে একক পরিবারের একা হাতে সন্তান পালন, সংসার সামলানো, কর্মজীবী নারীদের ক্ষেত্রে বাড়তি যোগ হয় কর্মস্থলের মানসিক চাপ ও ক্লান্তি। এসব কারণে সহজেই তৈরি হয় মানসিক চাপ ও অবসাদ। ক্রমাগত হরমোনের ভারসাম্যহীনতা হতে থাকলে তা থেকে তৈরি হয় উদ্বেগ, স্থায়ী বিষণ্নতা, প্যানিক ডিজঅর্ডার, স্ট্রেস ডিজঅর্ডার, পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার, আত্মহত্যার প্রবণতার মতো কঠিন সমস্যা।

ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট জিয়ানুর কবির নারীর বিষণ্নতা নিয়ে জানান, প্রাকৃতিক কারণেই নারীরা পুরুষদের চেয়ে বেশি মানসিক জটিলতায় ভোগেন। বাংলাদেশের সর্বশেষ মানসিক স্বাস্থ্য জরিপে (২০১৮-১৯) শুধু নারীদের মধ্যে মানসিক সমস্যার হার পাওয়া গিয়েছিল ১৭ শতাংশ, যেখানে পুরুষদের মধ্যে এ হার ছিল ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ। এই গবেষণায় ৬ দশমিক ৫ শতাংশ নারীর মধ্যে ডিপ্রেশন পাওয়া যায়। করোনা-পরবর্তী সময়ে এই সংখ্যা আরও বেড়েছে।

ডিপ্রেশনের ক্ষেত্রে নারীদের ঝুঁকির কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- কন্যাসন্তান হিসেবে জন্ম নেওয়া, নারীদের পিরিয়ড, গর্ভধারণ প্রসবোত্তর অবস্থা ও মাতৃত্ব ইত্যাদি কারণে খুব বেশি হরমোনাল পরিবর্তন, বাচ্চাদের ও পরিবারের অন্য সদস্যদের যত্ন নিতে গিয়ে নিজের প্রতি উদাসীন থাকেন। নারীরা পুরুষদের তুলনায় কম আয় করেন, যৌতুক, পারিবারিক নির্যাতন ও অবহেলা।

প্রায় তিনজনের মধ্যে একজন নারী যৌনসহিংসতা, শারীরিক সহিংসতা এমনকি তাদের জীবদ্দশায় অন্তরঙ্গ সঙ্গীর দ্বারা সহিংসতার শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতা থাকে। নারীরা সঙ্গীর ভালো পরিচর্যা করলেও পুরুষদের কাছ থেকে কম যত্ন পান। সমাজ ও পরিবারের সদস্যরা নারীদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি নিচু মনোভাব পোষণ করেন। এমনকি বিভিন্ন শারীরিক রোগ থাইরয়েড সমস্যা, স্থূলতা ও ভিটামিন ‘ডি’ এর ঘাটতি ইত্যাদি কারণে মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। বিষণ্নতা ছাড়াও স্ট্রেস ডিজঅর্ডার, প্রসবোত্তর বিষণ্নতা, উদ্বেগ, প্যানিক অ্যাটাক, অহেতুক ভীতি, সামাজিক ভীতি, অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডার, আত্মহত্যা প্রবণতা ইত্যাদি সমস্যাগুলোও নারীদের বেশি হয়।

পরিসংখ্যান বলছে, ৭৫ শতাংশ নারীর মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয় ২৪ বছর বয়সের আগেই। প্রতি পাঁচজনে একজন নারী মানসিক অস্থিরতা কিংবা বিষণ্নতায় ভুগছেন। ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টারের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে যারা একবার হলেও নিজের ক্ষতি করার চেষ্টা করেছেন তাদের ৭৩ শতাংশ নারী। বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে নিজের ক্ষতি করার প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ২০১৮ সালের জরিপ অনুযায়ী ১০ থেকে ২৪ বছর বয়সী মানুষের প্রায় ৫ শতাংশ মানুষ একবার হলেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন এবং ১ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ একবার হলেও আত্মহত্যার পরিকল্পনা করেছেন। এই পরিসংখ্যানে আরও দেখা গেছে, নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা পুরুষদের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি। দেশের ২৬ শতাংশ তরুণী উদ্বেগ ও বিষণ্নতার মতো মানসিক অসুখ নিয়ে দিনপাত করেন।

পুরুষের তুলনায় নারীর মানসিক সমস্যা এত বেশি কেন এ প্রসঙ্গে সিলেট মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক এবং ব্রেইন ও স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সাঈদ এনাম বলেন, ‘মেয়েদের মানসিক অস্থিরতা শুরু হয় কিশোরী বয়স থেকেই। তখন থেকেই মেয়েদের শরীরে হরমোনের নানা প্রভাব শুরু হয়। এই হরমোনজনিত কারণে মেয়েদের মানসিক সমস্যার সূচনা হয়। বিশেষ করে মেয়েদের মাসিক ঋতুচক্রের আগে হরমোনাল কারণে মানসিক অবস্থা বেশি নাজুক থাকে। যাকে আমরা বলি মুড সুইং অর্থাৎ আবেগের অসামঞ্জস্যতা। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বেশির ভাগ কিশোরী এই সময় আবেগের ওঠানামা সামলাতে পরিবার থেকে কোনো সাহায্য পায় না।

বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যরা কিশোরীর আবেগ না বুঝে তাকে বকাঝকা এমনকি মারধর করে মানসিক চাপ আরও বাড়িয়ে দেয়। তখন সে নিজেকে খুব একা ও অসহায় ভাবতে শুরু করে। নিজের আবেগের সঙ্গে নিজেই তাল মেলাতে না পেরে দিন দিন বিষণ্নতার দিকে এগিয়ে চলে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেয়েদের ব্যক্তিগত জীবনের বোঝাপড়া, সম্পর্কের জটিলতা আরও বাড়তে থাকে। ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের জীবন ঘরকেন্দ্রিক হওয়ায় তাদের স্ট্রেস রিলিজ বা মানসিক চাপ মুক্তির জায়গাও কম থাকে। মানসিক ক্লান্তি ধীরে ধীরে শারীরিক ক্লান্তিতে পরিণত হয়। গর্ভকালীনও শরীরে দেখা দেয় নানা পরিবর্তন। এ সময় শরীরে ঘন ঘন হরমোন পরিবর্তন ঘটে ফলে বারবার মুড চেঞ্জ হয়। ফলে শারীরিক ও মানসিক নানা সমস্যা দেখা দেয়।

সমস্যা থাকলে তার সমাধানও আছে। সাইকো থেরাপিস্ট ডা. জারিন আররোজ বলেন, জীবনে দুঃখ-হতাশা থাকবেই। আমাদের মেয়েদের প্রথম থেকেই খারাপ সময় বা কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার মতো মানসিকভাবে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে। পরিবারের সবাইকে কিশোরীর মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি সতর্ক ও যত্নবান থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের পরিবারের একটি সাধারণ সমস্যা হচ্ছে তারা মেয়েদের যাবতীয় সমস্যা থেকে দূরে রাখতে ঘরবন্দি করে। অথচ এতে হিতে বিপরীতটাই বেশি হয়। মেয়েদের স্বাধীন ও স্বনির্ভর করে গড়ে তুলতে হবে। তাদের শেখাতে হবে জীবনে ভুল হবে, সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। তুমি ভুল করলেও মা-বাবা কিংবা পরিবার তোমার পাশে থাকবে। নিজের দুর্বলতাগুলো মেনে নিয়ে নিজের ক্ষমতার ওপর বিশ্বাস রাখলে জীবনে এগিয়ে চলার সাহস পাওয়া যায়।

সর্বোপরি মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে নারীদের আরও বেশি স্বনির্ভর হতে হবে। ঘরবন্দি না থেকে ইতিবাচক দৃষ্টি ভঙ্গিতে মুক্ত পৃথিবীর স্বাদ নিতে হবে। নিজের মতো করে জীবন উপভোগ করতে হবে। নিজের যত্ন নেওয়া খুব জরুরি। নিজের জন্য কিছুটা সময় আলাদা রাখা যেতে পারে। নিজের মনের কথা শোনা, বই পড়া, গান শোনা। তবেই মনের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। আর অবশ্যই যেকোনো মানসিক চাপ বা বিষণ্নতার মতো সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

কলি

শতাধিক বাল্যবিবাহ রোধ করেছেন ছোঁয়া

প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২৪, ১২:২২ পিএম
আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৪, ১২:৩৩ পিএম
শতাধিক বাল্যবিবাহ রোধ করেছেন ছোঁয়া
সানজিদা ইসলাম ছোঁয়া

এখন পর্যন্ত শতাধিক বাল্যবিবাহ রোধ করেছেন তিনি। তার এই অভাবনীয় কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতি হিসেবে ২০২২ সালে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির ১০০ উদীয়মান ও প্রভাবশালী নারীর তালিকায় স্থান দিয়েছে তাকে। সানজিদা ইসলাম ছোঁয়া ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার ঝাউগড়া গ্রামের মো. আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া ও খাদিজা আক্তার দম্পতির মেয়ে। এখন কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকারি কলেজে ব্যবস্থাপনা বিভাগের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছোঁয়া।

খুব অল্প বয়সেই বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। তার মায়ের বাল্যবিবাহ হয়েছিল। তিনি সবসময় দেখে এসেছেন, বাল্যবিবাহ হলে তার পরিণতি কেমন হয়। তার বাবা সামান্য চাকরিজীবী। তার একার সীমিত আয়ে সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকত। একদিকে সংসারের খরচ, অন্যদিকে তাদের দুই ভাইবোনের লেখাপড়ার খরচ। খরচ সামলাতে হিমশিম খেতে হতো। তার মা তখন আক্ষেপ করে বলতেন, অল্প বয়সে বিয়ে না হয়ে যদি লেখাপড়া শিখে স্বাবলম্বী হতাম, তাহলে সংসারে সহযোগিতা করতে পারতাম। মায়ের এসব কথা সানজিদাকে খুব ভাবাত। স্বাবলম্বী হতে না পারা ছাড়াও বাল্যবিবাহর শারীরিক ক্ষতিও অনেক। এদিকে তার স্কুলের অনেক সহপাঠীরও একের পর এক বাল্যবিবাহ হচ্ছিল। একদিন স্কুলে বাল্যবিবাহর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে একটা প্রেজেন্টেশন দেখার সুযোগ হয় তার। তখন তিনি ভাবতে থাকেন, কীভাবে এই সমস্যা রোধ করা যায়।

২০১৪ সালের কথা। তখন ছোঁয়া অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। একটা বাল্যবিবাহর খবর এসে পৌঁছাল তার কাছে। তখনই তিনি ভাবলেন, যেভাবেই হোক বিয়েটা ভাঙতে হবে। তার এই কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন আরও কিছু মানুষ। প্রথম উদ্যোগেই তারা সফল হন। এর পর যারা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে গড়ে তোলেন ‘ঘাসফড়িং’ নামে একটি সংগঠন। যারা এসব সামাজিক কাজে বেশি আগ্রহী ছিলেন, তাদের নিয়েই সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়। শুরুতে তাদের সদস্য সংখ্যা ছিল সাতজন।

সংগঠনের নাম ‘ঘাসফড়িং’ কেন, জানতে চাইলে খবরের কাগজকে ছোঁয়া বলেন, ‘আমাদের এলাকায়  মা ও শিশুদের নিয়ে কাজ করা ওয়ার্ল্ড ভিশন সংস্থাটির একটি শাখা রয়েছে। ওখানকার শিশু ফোরামের সঙ্গে আমরা যুক্ত ছিলাম। শিশু ফোরামের নাম ছিল ঘাসফুল। আমরা তিনজন যারা শিশু ফোরামের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম, তাদের সঙ্গে আমাদের স্কুলের চারজন যুক্ত হয় বাল্যবিবাহ রোধের কাজে। কিন্তু তারা চারজন শিশু ফোরামের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। তখন আমাদের সাতজনকে আলাদাভাবে চেনার জন্য দৈনিক কালের কণ্ঠের আঞ্চলিক প্রতিনিধি আলম ফরাজী ঘাসফড়িং নাম দেন। এই নামকরণের পেছনে অন্য কারণও রয়েছে। এই যে আমরা নান্দাইল উপজেলার কোথাও বাল্যবিবাহর খবর পেলেই যেকোনো সময় ছুটে যাই তা রোধ করতে, ফড়িংয়ের মতো এভাবে ছুটে যাওয়ার কারণে আমাদের ঘাসফড়িং নাম দেওয়া হয়’।

কোনো বাল্যবিবাহর ঘটনা শুনলেই তিনি তার সহযোগী ও শিক্ষকদের নিয়ে ছুটে যান সেখানে। প্রথমে অভিভাবকদের বাল্যবিবাহর নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেন। অনেক অভিভাবক তা বুঝতে পেরে বিয়ে ভেঙে দেন। কিন্তু অনেকে তাদের কথা শুনতে চান না, কিছুতেই বুঝতে চান না। সে ক্ষেত্রে তারা প্রশাসনের সহযোগিতা নিতে বাধ্য হন। এভাবে ছোঁয়া ও তার সংগঠন ‘ঘাসফড়িং’-এর পরিচিতি বাড়তে থাকলে কোথাও কেউ বাল্যবিবাহর খবর জানতে পারলেই ফোন করে তাদের জানিয়ে দেন। বেশির ভাগ সময়ই ছোঁয়া নিজে উপস্থিত থেকে এর সমাধান করেন। কখনো যদি তিনি সশরীরে উপস্থিত থাকতে না পারেন, সে ক্ষেত্রে দূর থেকেই শিক্ষক, প্রশাসন, সহযোগী সবার সঙ্গে কথা বলে এর প্রতিরোধের ব্যবস্থা করেন।

শুধু কি নিজ জেলার ভেতরই এ কার্যক্রম সীমাবদ্ধ নাকি আরও বিস্তৃত পরিসরে কাজ করছেন? এ প্রশ্নের উত্তরে ছোঁয়া খবরের কাগজকে বলেন, ‘এখন আমরা ময়মনসিংহ জেলার ভেতরই কার্যক্রম চালাচ্ছি। এ ছাড়া অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অ্যাডভোকেসির কাজ করছি। এককভাবে আমি আমাদের জেলার ভেতরেই কাজ করছি। কিন্তু আমি বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছি। যেমন, ওয়ার্ল্ড ভিশনের ইয়ুথ ফোরামের সঙ্গে কাজ করছি। প্রতিটি জেলা, উপজেলায় এ সংস্থার একটি ফোরাম সংগঠন রয়েছে। বাংলাদেশের সব প্রান্তেই আমাদের ইয়ুথরা কাজ করছেন’।

বাল্যবিবাহ রোধ ছাড়া আর কী কী সামাজিক কাজ করছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাল্যবিবাহ ছাড়া আমরা বৃক্ষরোপণ, ত্রাণ বিতরণ, ঝরে পড়া শিশুদের পুনরায় স্কুলে ভর্তি করা এবং  তাদের উপবৃত্তির ব্যবস্থা করে দেওয়ার কাজ করি। যেসব শিশু কখনো স্কুলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়নি, তাদের স্কুলে ভর্তি করিয়ে বই, স্কুল ড্রেস কিনে দেওয়া থেকে শুরু করে সবকিছুর ব্যবস্থা করে দিই। এ ছাড়া যখন দেশে যে দুর্যোগ সংঘটিত হয়, আমরা সেখানে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিই। গত শীতে আমরা ৫০০ কম্বল বিতরণ করেছি দরিদ্র মানুষদের মাঝে’।

প্রতিবন্ধকতার প্রশ্ন আসতেই তিনি বলেন, ‘কাজ করতে গেলে প্রতিবন্ধকতা আসবেই। যখন প্রথম প্রথম বাল্যবিবাহ রোধ করার কাজ শুরু করি, মানুষ দা, বাঁশ এসব নিয়ে ধাওয়া করত। মা-বাবাকে ফোন করে আমার প্রাণনাশের হুমকি দিত। আমাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাওয়ার কথা বলত। বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকত দল বেঁধে। এও বলত, আমাকে কিছু টাকা দেওয়া হবে। আমি যেন এসব কার্যক্রম বন্ধ করে দিই। আরেকটা ইস্যু যেটা হয়, বিয়ে দেওয়ার জন্য ভুয়া জন্মসনদ বানিয়ে বয়স বাড়ানো হয়। কাজি, চেয়ারম্যান এদের সহযোগিতা নিয়ে এসব বন্ধ করার চেষ্টা করি। এই যাত্রাপথ অতটা সহজ ছিল না আসলে। তবে এখন নান্দাইল উপজেলায় আর কোনো বাল্যবিবাহ হয় না’।

এই যাত্রাপথে শুরু থেকেই সাহস জুগিয়ে পাশে থেকেছেন তার মা। বাবা প্রথমে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। পরবর্তীতে তিনি ধীরে ধীরে বুঝতে পেরেছেন, ছোঁয়া ঠিক কাজই করছে। এর পর তিনিও আর বাধা দেননি। সমাজের মানুষও একসময় বিষয়টিকে ভালোভাবে গ্রহণ করে। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। ক্রমশই তার শুভাকাঙ্ক্ষী বাড়তে থাকে। সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। ছোঁয়া ও তার সংগঠনের কল্যাণে ঝাউগড়াকে বাল্যবিবাহমুক্ত গ্রাম হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ছোঁয়া চান, পুরো দেশটাকেই একদিন বাল্যবিবাহমুক্ত দেশ হিসেবে ঘোষণা করা হোক।

আপনার এই যাত্রাপথে মা ছাড়াও সবসময় আপনাকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে, এমন কারও কথা কি বলতে চান? এই প্রশ্নের জবাবে ছোঁয়া খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা যখন এই প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতাম, তখন আমাদের প্রশাসন এবং সাংবাদিকরা অনেক সহযোগিতা করতেন। বিশেষ করে কালের কণ্ঠের প্রতিনিধি আলম ফরাজী সহযোদ্ধার মতো সঙ্গে থেকেছেন। এ ছাড়া প্রথম আলো, আজকের পত্রিকার প্রতিনিধি, নান্দাইলের ওসি, যখন যিনি থাকতেন তারা অনেক সাপোর্ট করতেন। প্রথমদিকে যখন আমরা কাজটা শুরু করি, আমাদের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন হাফিজুর রহমান স্যার এবং মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা ছিলেন রোমানা আক্তার, তারা খুব সহযোগিতা করেছেন। এ ছাড়া বড় কোনো সমস্যা হলে আমাদের সাবেক এমপি আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন নিজে তা সমাধান করেন। আর আমাদের সব আর্থিক সহায়তা দেন কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন স্যার’।

সানজিদা তার সংগঠনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে খবরের কাগজকে বলেন, ‘পড়াশোনার পাশাপাশি সামাজিক কাজটা চালিয়ে যেতে চাই। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আমাদের কাজগুলো ছড়িয়ে দিতে চাই। আমাদের দেখে যদি কেউ ভালো কাজে অনুপ্রাণিত হয়, সেটাই আমাদের সার্থকতা। আমরা ‘ড্রিমার ইয়ুথ অর্গানাইজেশন’ নামে নতুন একটি নাম ক্রিয়েট করেছি। এই সংগঠনটি নিয়েই আমরা সামনে এগিয়ে যেতে চাই। এর পাশাপাশি আমার একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র রয়েছে। এখানে দরিদ্র নারীদের বিনামূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। প্রশিক্ষণ শেষে কীভাবে তারা স্বাবলম্বী হতে পারে, সে ব্যাপারে সহযোগিতা করি। এভাবে আমাদের এলাকায় উদ্যোক্তা তৈরি করছি। গত বছর বসুন্ধরার পক্ষ থেকে এই প্রশিক্ষণকেন্দ্রের ২০ জন নারীকে সেলাই মেশিন উপহার দেওয়া হয়েছে। এসব কাজই আরও ভালোভাবে করে যেতে চাই’।

জাহ্নবী

ঐতিহ্যের ধারক অপো হুয়াং ওড

প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২৪, ১২:২০ পিএম
আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৪, ১২:২০ পিএম
ঐতিহ্যের ধারক অপো হুয়াং ওড

তাকে ফিলিপিন্সের সবচেয়ে বয়স্ক কালিঙ্গা ট্যাটু অঙ্কনকারী হিসেবে ধরা হয়। ১০৭ বছরের এই বৃদ্ধা ট্যাটু আঁকায় এখনো প্রাচীন রীতিটি ধরে রেখেছেন। বলছিলাম, অপো হুয়াং ওড-এর কথা; যিনি ‘মারিয়া ওগে’ নামেও পরিচিত। ফিলিপিন্সের রাজধানী ম্যানিলা থেকে ১৫ ঘণ্টা দূরের পাহাড়ি এলাকা কালিঙ্গা প্রদেশের বুসকালানে বসবাস করেন তিনি। বাঁশের একটি কঞ্চি, লেবুগাছের কাঁটা, কয়লা এবং পানির মাধ্যমে মানুষের শরীরে ট্যাটু ফুটিয়ে তোলেন এই বৃদ্ধা।

অপো হুয়াং কৈশোরকাল থেকেই শরীরে হাত দিয়ে ট্যাটু আঁকার কাজটি করছেন। যখন তিনি এ কাজটি শুরু করেন, তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১০ বছর। এই ট্যাটু আঁকার কাজটি তিনি তার বাবার কাছ থেকে শিখেছিলেন। এখন তার বয়স ১০৭ বছর। শরীরে ট্যাটু আঁকার প্রাচীন পন্থাটি এখনো তিনি ধরে রেখেছেন।

এ কারণে গত বছর তিনি জায়গা করে নিয়েছিলেন বিশ্বের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ভোগ ফিলিন্সের কভারে। বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ‘ভোগ’। এটি মূলত মার্কিন লাইফস্টাইল ও ফ্যাশনবিষয়ক ম্যাগাজিন, যার যাত্রা শুরু হয় ১৮৯২ সালে। বিভিন্ন দেশ থেকে এই ম্যাগাজিনের একাধিক সংস্করণ প্রকাশিত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নামি-দামি মডেল, খেলোয়াড়, অভিনেতা, অভিনেত্রী এই ম্যাগাজিনের কভার পেজে জায়গা করে নিয়েছেন। তবে সবচেয়ে বড় চমক ছিল গত বছরের এপ্রিল মাসের সংস্করণের ফিলিপিন্স ভার্সনে। এই সংস্করণের কভার পেজে জায়গা করে নিয়েছিল ১০৬ বছরের বৃদ্ধা অপো হুয়াং ওড। লাইফস্টাইল-বিষয়ক ম্যাগাজিনটির ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বয়সী কভার তারকা তিনি। এত বছর ধরে ট্যাটুর সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে এভাবে নিজের ভেতর লালন করছেন বলে ভোগ ফিলিপিন্সের কভারে তিনি জায়গা করে নিয়েছেন।

এক সময় এসব ট্যাটু শুধু আদিবাসী বুটবুট যোদ্ধাদের গায়ে আঁকা হতো। কিন্তু বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ ট্যাটু আঁকতে এই বৃদ্ধার কাছে যান। অপো হুয়াং এখন বৃদ্ধ হয়ে যাওয়ায় নিজের দুই নাতিকে এই বিদ্যা শেখাচ্ছেন, যারা পরবর্তী সময়ে তার এ কর্ম ধরে রাখবে। ভোগকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অপো হুয়াং বলেন, ‘আমিই একমাত্র বেঁচে আছি, যে এখনো এই ট্যাটু করতে পারে। কিন্তু ঐতিহ্যটি শেষ হয়ে যাবে ভেবে আমি ভীত নই। কারণ, আমি প্রশিক্ষণ দিচ্ছি পরবর্তী ট্যাটু মাস্টারদের। যতদিন মানুষ ট্যাটু করতে আসবেন, ততদিন এই ঐতিহ্য অব্যাহত থাকবে।’ অপো হুয়াং আরও জানিয়েছেন, যতদিন বেঁচে থাকবেন এবং চোখের দৃষ্টি ভালো থাকবে ততদিন তিনি এ কাজ চালিয়ে যাবেন।

এখন পর্যন্ত বুসকালানে এসেছেন এমন হাজার হাজার মানুষের শরীরে তিনি কালিঙ্গা উপজাতির শক্তি, সাহসিকতা ও সৌন্দর্যের প্রতীক এঁকেছেন। এভাবে তিনি ফিলিপিন্সের সংস্কৃতি ও আদর্শের প্রতিনিধিত্ব করছেন।

জাহ্নবী

বহুজাতিক কোম্পানির প্রথম নারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী চৌধুরী

প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২৪, ১২:১৪ পিএম
আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৪, ১২:১৪ পিএম
বহুজাতিক কোম্পানির প্রথম নারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী চৌধুরী

সময়টা গত শতকের আশির দশক। লেখাপড়া করলেও ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ে মেয়েরা খুব একটা পড়ালেখা করত না। কিন্তু সেই সময়েই স্রোতের বিপরীতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএতে ভর্তি হন রূপালী চৌধুরী। পড়াশোনা শেষ করে সবাই যখন সরকারি চাকরিতে ঢোকার চেষ্টায় ব্যস্ত, সেই সময়েও রূপালী চৌধুরীর যাত্রা ছিল স্রোতের বিপরীতে। যুক্ত হন করপোরেট প্রতিষ্ঠানে।

রূপালী চৌধুরীর জন্ম চট্টগ্রামের পটিয়ায়। তার বাবা প্রিয়দর্শন চৌধুরী ছিলেন একজন চিকিৎসক। মা-বাবার পাঁচ সন্তানের মধ্যে রূপালী চতুর্থ। তার স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হবেন। তবে এইচএসসি পাসের পর মেডিকেল কলেজে ভর্তির পরীক্ষা দেন। কিন্তু সুযোগ পাননি তিনি। মেডিকেল কলেজে চান্স না পাওয়া ও জীবনে পেছনে না তাকানোর মানসিকতাই তাকে শীর্ষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। একজন সাধারণ কর্মী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করে নিজ দক্ষতায় এখন তিনি শীর্ষস্থানীয় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি বার্জার পেইন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। বাংলাদেশের নারীদের মধ্যে তিনিই প্রথম কোনো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির এমডি। নেতৃত্ব দিয়েছেন বিদেশি ব্যবসায়ীদের সংগঠন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিসহ (এফআইসিসিআই) ব্যবসায়ীদের বড় বড় সংগঠনেরও।

রূপালী চৌধুরী প্রথমে সিবা গেইগি কোম্পানিতে চাকরিরত ছিলেন। নব্বইয়ের দশকে সিবা গেইগি প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি ছিল। কাজের দক্ষতার কারণে তার অবস্থানও বেশ শক্ত ছিল। তবে পারিবারিক কারণে চট্টগ্রাম যাওয়ায় তাকে বার্জারে যোগ দিতে হয়। চট্টগ্রামে থাকার জন্য একটি চাকরি খুঁজছিলেন রূপালী চৌধুরী। পত্রিকায় বার্জারের একটি পদে লোক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেখে সেখানে আবেদন করেন তিনি। তারা বেশ কয়েক দফা সাক্ষাৎকার নেওয়ার পর তাকে নিয়োগ দেন। তবে পরিকল্পনা ব্যবস্থাপক পদে একটি মেয়ে কাজ করতে পারবে কি না, এটা নিয়ে তারা বেশ দ্বিধায় ছিলেন। নারীদের নিয়ে বার্জারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ভয়কে ভুল প্রমাণ করতে সক্ষম হন রূপালী চৌধুরী। বিভিন্ন বিভাগে কাজ করার পর ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে অধিষ্ঠিত হন। তিনি বলেন, ‘আমি নারী, এই ভেবে নিজে থেকে কখনো গুটিয়ে যাইনি।’

দায়িত্ববোধ এবং উদ্ভাবনী মানসিকতা তাকে বার্জারের মতো কোম্পানির এমডি পর্যায়ে নিয়ে গেছে বলে মনে করেন তিনি। এক গণমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘ম্যানুয়াল থেকে কম্পিউটারাইজড করার কাজটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। প্ল্যানিং ম্যানেজার থাকার সময়ই সেলস বিভাগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজও আমি করে দিয়েছি। কয়েক বছর পর হঠাৎ করে বার্জারের মার্কেটিং ম্যানেজার চলে গেলেন। তখন কোম্পানি আমাকে এক প্রকার জোর করে এ দায়িত্ব দিল। প্রথম দিকে একটু ভয়ে ছিলাম। ছেলেমেয়ে দুজনই ছোট। পরিবারকে সময় দিয়ে কাজ করা খুব কঠিন ছিল।’

পরে ২০০৪ সালে তাকে ডিরেক্টর অপারেশনস বানানো হলো। এরপর ২০০৮ সালে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান রূপালী চৌধুরী।

ব্যবস্থাপনা পরিচালক হওয়ার পর রূপালী চৌধুরী নিজেকে যে বিষয়টিতে এগিয়ে রেখেছেন বলে মনে করছেন তা হলো সততা, কাজের প্রতি একাগ্রতা, প্রতিশ্রুতি এবং কঠোর পরিশ্রম।

জাহ্নবী

 

কারমেন হিখোসার চামড়ার বিকল্প উদ্ভাবন

প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২৪, ১২:১৩ পিএম
আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৪, ১২:৩২ পিএম
কারমেন হিখোসার চামড়ার বিকল্প উদ্ভাবন

কারমেন হিখোসা। অধ্যবসায়, মেধা আর অসাধারণ ধৈর্য তাকে পৌঁছে দিয়েছেন তার স্বপ্নের উজ্জ্বল জগতে। ৭১ বছর বয়সী স্পেনের এই নাগরিক একজন গবেষক, ডিজাইনার ও সফল উদ্যোক্তা। হিখোসা আনারসের পাতা থেকে চামড়ার চমৎকার বিকল্প উদ্ভাবন করেছেন, যা চামড়াশিল্পে এক যুগান্তকারী বিপ্লব সৃষ্টি করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

আনারসের লম্বা পাতায় আছে তাপ এবং আর্দ্রতা প্রতিরোধী খুব মিহি টেকসই আঁশ। এই আঁশ দিয়ে তৈরি উদ্ভিজ্জ চামড়ার গুণগত মান আসল চামড়া থেকে কোনো অংশে কম নয়। উদ্ভিজ্জ এ চামড়ার নাম দেওয়া হয়েছে ‘পিনিয়াটেক্স’। গত শতকের নব্বইয়ের দশকে হিখোসা ফিলিপিন্সে অবস্থান করেন। তখন তিনি একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে বিশ্বব্যাংকের হয়ে চামড়ার বিকল্পের কথা ভাবতে শুরু করেন। কারণ চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে যেসব রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, সেগুলো যেমন পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর, তেমনি শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের জন্যও বিপজ্জনক। এ ছাড়া স্থানীয়রা আনারস পাতার মিহি এবং টেকসই আঁশে তৈরি ঐতিহ্যবাহী পোশাক ‘তাগালগ বারং’ পরেন। এটি দেখেও তিনি উদ্ভিজ্জ চামড়া উদ্ভাবনে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত হন। কারমেন হিখোসা আয়ারল্যান্ডের টেক্সটাইল ন্যাশনাল কলেজ অব আর্ট অ্যান্ড ডিজাইন থেকে ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তী সময়ে পেশাগত কাজে চামড়াশিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। নিজেকে আরও শানিত করার জন্য ৬০ বছর বয়সের পরে টেক্সটাইলে পিএইচডি করেন কারমেন হিখোসা। তিনি মনে করেন ৬০ বছর বয়সে নতুন করে জীবন শুরু করেছেন। এক যুগের বেশি সময় একাগ্র সাধনার পর ২০১১ সালে কারমেন হিখোসা উদ্ভিজ্জ চামড়া ‘পিনিয়াটেক্স’-এর কৃতিস্বত্ব লাভ করেন। আনারসের পাতা দিয়ে চামড়াশিল্পের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় ২০১৬ সাল থেকে। বর্তমানে শ্যানেল, হুগোবস, এইচঅ্যান্ডএম, পলস্মিথসহ পৃথিবীব্যাপী ৮০টি দেশের প্রায় ৩০০০ ব্র্যান্ড এই উদ্ভিজ্জ চামড়া পিনিয়াটেক্স ব্যবহার শুরু করেছে। তাই বলা যায় যে, অচিরেই প্রাণীর চামড়া ব্যবহার অত্যন্ত সীমিত হবে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, পিনিয়াটেক্স টেকসই, পরিবেশবান্ধব এবং দামেও সস্তা। 

প্রতিবছর সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর ফল আনারসের সঙ্গে বিশ্বে প্রায় তিন কোটি টন আনারসের পাতা উৎপন্ন হয়। কৃষকরা এই বিপুল পরিমাণ কৃষিবর্জ্য প্রায় সময় খেতেই পুড়িয়ে ফেলেন। ফলে বাতাসে প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইডের নিঃসরণ ঘটে। ড. হিখোসা জানিয়েছেন, এক বর্গমিটার উদ্ভিজ্জ চামড়া অর্থাৎ পিনাটেক্স তৈরির জন্য ৪৮০টি আনারসের পাতার প্রয়োজন হয়। ২০২০ সালে তিনি পিনাটেক্স উৎপাদনে ব্যবহার করেছেন ৮২৫ টন পাতা। ফলে ২৬৪ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড কম উৎপন্ন হয়েছে। পিনিয়াটেক্স উৎপাদনে আনারসের পাতা ব্যবহার পরিবেশের জন্য যেমন ইতিবাচক, তেমনি কৃষকদের জন্য বাড়তি আয়ের উৎস। অন্যদিকে প্রাণীর চামড়া প্রক্রিয়াজাত একটি শ্রমসাধ্য, জটিল, দীর্ঘ এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর প্রক্রিয়া। এ ছাড়া চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। এক কেজি চামড়া ট্যান করতে ৩৫ লিটার পানির প্রয়োজন হয়। উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে বিশ্ববাজারে প্রায় ৮০ শতাংশ চামড়ার সরবরাহ আসে। এসব দেশে প্রায়ই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বাড়তি খরচ এড়াতে ক্ষতিকর এবং বিষাক্ত রাসায়নিক বর্জ্য সরাসরি নদী-নালাতে ফেলে দেওয়া হয়। যা পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। এ ছাড়া প্রাণীর চামড়া সংগ্রহ একটি নিষ্ঠুর এবং অমানবিক প্রক্রিয়া। প্রতিবছর এ জন্য প্রায় ১৪০ কোটি পশুর প্রাণ প্রয়োজন হয়। আমাদের বর্তমান প্রজন্মের পশুর প্রতি সহানুভূতি বাড়ছে। আর এ কারণেই পরিবেশবাদীদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে আরও অনেকেই পশুজাত চামড়া পরিহার করে উদ্ভিজ্জ চামড়ার প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। আর তাই উদ্ভিজ্জ চামড়ার জনপ্রিয়তা ও চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই চমৎকার উদ্ভাবনের জন্য কারমেন হিখোসা ইউরোপিয়ান ইনভেন্টর অ্যাওয়ার্ড ২০২১ অর্জন করেন।

আজ যখন জলবায়ু পৃথিবীর আয়ুর জন্য হুমকিস্বরূপ, পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে লাখ লাখ প্রাণী, তখন একজন কারমেন হিখোসা যেন আমাদের আশার আলো দেখাচ্ছেন। তিনি তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে পৃথিবীর আয়ু যেন বাড়িয়ে দিয়েছেন আরও কয়েক যুগ।

জাহ্নবী

পাহাড়িকন্যাদের ব্যান্ড এফ মাইনর

প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০২৪, ১২:২৯ পিএম
আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২৪, ১২:২৯ পিএম
পাহাড়িকন্যাদের ব্যান্ড এফ মাইনর
'এফ মাইনর' ব্যান্ডের পাঁচ সদস্য

আমি নিশি রাইতের জংলা ফুল
ভাঙা নদীর ভাঙা কূল
মইধ্যেখানে জাইগা থাকা চর।
আমি গহীন বনে...
আমি গহীন বনের উদাস পাখি
সুখের আশায় চাইয়া থাকি সারাজনম ভর।

২০১৯ সালে এ গানটি বেশ জনপ্রিয়তা পায়। পথে-ঘাটে, স্কুল-কলেজে তরুণ-তরুণীদের কণ্ঠে শোনা যেত আশ্চর্য সুন্দর ছন্দের এই গান। এ গানের নেপথ্যে যারা ছিলেন তারা সবাই পাহাড়িকন্যা। কেউই পেশাদার শিল্পী ছিলেন না। গানের ওপর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ ছিল না তাদের। শুধু নিজেদের অদম্য আগ্রহ থেকে অন্যদের কাছে টুকটাক গান শিখতে যেতেন আর নিজেরাই চর্চা করতেন। তারা ‘এফ মাইনর’ নামের একটি গানের ব্যান্ডের সদস্য। শুরুর গল্প জানতে চাইলে ব্যান্ডের প্রধান ভোকালিস্ট পিংকি চিরান খবরের কাগজকে বলেন, ‘২০১৬ সালের ২৮ অক্টোবর শুরু হয় আমাদের যাত্রা। শুরুতে আমরা তিনজন ছিলাম। আমি, নাদিয়া রিছিল আর ঐশ্বর্য চাকমা। যাদু রিছিল দাদা এবং অন্তর স্কু আমাদের তিনজনকে এক করেন। আমরা পাঁচজন মিলেই ব্যান্ডের নাম ঠিক করি। আমাদের পরিকল্পনা ছিল আদিবাসী নারীদের নিয়ে গানের ব্যান্ড তৈরি করা। এখন আমরা পাঁচজন মেয়ে আছি।’

‘এফ মাইনর’ ব্যান্ডের অন্যতম বিশেষত্ব হচ্ছে, এটাই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারীদের দ্বারা গঠিত প্রথম কোনো গানের দল। নৃ-গোষ্ঠীর পুরুষদের দ্বারা গঠিত একাধিক ব্যান্ডদল থাকলেও এর আগে নারীদের কোনো ব্যান্ডদল ছিল না। ব্যান্ড গঠিত হওয়ার পর তাদের বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক আচার অনুষ্ঠানে তারা গান গাওয়ার আমন্ত্রণ পেতে শুরু করেন।

গিটারের একটি কর্ডের নাম ‘এফ মাইনর’। কিন্তু ব্যান্ডের এমন নামকরণের পেছনে রয়েছে আরও নিগূঢ় কারণ। প্রধান ভোকালিস্ট পিংকি চিরানের ভাষ্যমতে, ‘এফ’ অক্ষরটি ‘ফিমেল’, ‘ফ্রিডম’, ‘ফাইটার’ এই শব্দগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে। আর ‘মাইনর’ দ্বারা বোঝানো হয়েছে ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী’। যেহেতু গানের দল, তাই গিটারের কর্ডের সঙ্গেও মিলিয়ে নামটা আরও পাকাপোক্ত করা হয়েছে। ‘এফ মাইনর’-এর পাঁচ সদস্যের ভেতর প্রধান ভোকালিস্ট পিংকি চিরান। সাইড ভোকালিস্ট নাদিয়া রিছিল। তিনি গিটার এবং ইউকেলিলি বাজান। লিড গিটারিস্ট হিসেবে আছেন সর্বকনিষ্ঠ সদস্য গ্লোরিয়া মান্দা। কিবোর্ডে একিউ মারমা। আর ড্রাম বাজান দিবা চিছাম। তারা কেউ কেউ চাকরি করছেন, কেউ আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। কাজের প্রতি ভালোবাসা আর একাগ্রতা থাকলে যে তা ভালো ফলাফল বয়ে আনে, তার অনন্য উদাহরণ যেন পাঁচ সদস্যের এই ব্যান্ডদল। প্রথমদিকে দলের সদস্যরা বাদ্যযন্ত্রের ওপর খুব একটা দক্ষ ছিলেন না। ধীরে ধীরে তারা নিজেদের আগ্রহ থেকে সেগুলো আয়ত্ত করে নেন।

২০১৬ সালে তাদের যাত্রা শুরু হলেও ২০১৯ এ তারা ‘জংলা ফুল’ গানটি দিয়ে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পান। ওই বছরই তারা প্রথমবারের মতো ঢাকার মঞ্চে সংগীত পরিবেশন করার সুযোগ পান বনানী মাঠে ওয়ানগালা অনুষ্ঠানে। জলবায়ু বাঁচাতে নদীরক্ষার জন্য আয়োজিত ‘নদী রক্স’ কনসার্টেও তারা অংশগ্রহণ করেছিলেন। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বিভিন্ন অনুষ্ঠান ছাড়াও স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, মে দিবস, সম্প্রীতিমূলক অনুষ্ঠান কিংবা নারী দিবসে আয়োজিত অনুষ্ঠানগুলোয় এফ মাইনরের নারীরা পারফর্ম করে থাকেন।

‘নিশি রাইতের জংলা ফুল’ গানটি যখন আপনারা করেন, তখন কি আশা করেছিলেন গানটি এত জনপ্রিয়তা পাবে? এ প্রশ্নের জবাবে পিংকি বলেন, ‘২০১৮ সালে আমরা গানটা করি। গানটার লেখক বাবুল ডি নকরেক। সুর করেছেন যাদু রিছিল। তিনিই আমাদের দিয়ে গানটা করিয়েছিলেন। গানটি রেকর্ড করে বিভিন্ন শোতে গাইতে থাকি। কিন্তু জনপ্রিয়তা পায় মূলত ২০১৯-এ। আমরা আসলে ভাবতে পারিনি, গানটা সবাই এতটা ভালোবেসে গ্রহণ করবে।’

গান গাওয়ার ক্ষেত্রে পরিবার ও সমাজের সাপোর্ট কেমন ছিল? যেকোনো স্বপ্ন পূরণেই কমবেশি বাধার সম্মুখীন হতে হয়। আপনাদের প্রতিবন্ধকতা কী ছিল? এসব প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমাদের সমাজে এসব প্রাধান্য পায়। আমার মা-বাবা দুজনই গান করেন। আমাদের ব্যান্ডের সব সদস্যের পরিবারই খুব গান পছন্দ করেন। এ ছাড়া সমাজের মানুষেরাও বেশ উৎসাহ দেয় বলেই আমরা এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি। আর প্রতিবন্ধকতার কথা যদি বলতে হয়, মেয়ে হিসেবেই সবচেয়ে বেশি প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হই। এতটুকু মেয়ে, এরা আবার কী গান করবে- এসব কথা শুনতে হয়। মেয়েদের সমানভাবে দেখা হয় না। এজন্য একটু ভোগান্তি পোহাতে হয়। এ ছাড়া অর্থ খুব বড় একটা সমস্যা। আমরা হয়তো গান তুলে ফেলছি, কিন্তু রেকর্ড করতে পারছি না, ভিডিও করতে পারছি না স্পন্সরের অভাবে। এটা দুঃখজনক।’

এখন পর্যন্ত তাদের মৌলিক গানের সংখ্যা ১৩টি। চাকমা, মারমা, গারো, ত্রিপুরা, হাজং, তঞ্চঙ্গ্যা এমন বিভিন্ন ভাষায় গান করেছেন তারা। নিজস্ব ভাষার গানগুলো করেছেন সংস্কৃতি, কৃষ্টি-কালচার, উৎসব এগুলো নিয়ে। বাংলা ভাষায় কিছু গান করেছেন নারীদের নিয়ে, গৃহকর্মী এবং সম্প্রীতি নিয়ে। এ ছাড়া আরও অনেক গান কভার করেছেন তারা। অন্য ভাষায় গান করার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অন্য ভাষায় গান করার ক্ষেত্রে উচ্চারণগত সমস্যাটা হয় বেশি। যারা সেই ভাষায় গান করেন, তাদের সঙ্গে কথা বলি। সম্ভব হলে সুরকার, গীতিকারদের সঙ্গে কথা বলে উচ্চারণটা ঠিকভাবে শিখে নিই। মারমা ভাষার গান সবচেয়ে বেশি কঠিন লাগে।’

অন্য ভাষায়ও কিছু মৌলিক গান করেছেন তারা। সামনে আরও কিছু গান করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান পিংকি চিরান। তিনি বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব ভাষা ব্যতীত বাংলা ভাষায় গান করার প্রতি আগ্রহ বেশি কাজ করে। এটা তো আসলে সর্বজনীন আমাদের দেশের জন্য।’

‘নিশি রাইতের জংলা ফুল’ গানটি ছাড়া আর কোন কোন গানকে আপনারা আপনাদের ব্যক্তিগত ও শ্রোতাদের পছন্দের তালিকায় এগিয়ে রাখবেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘পরাণ প্রিয়’ আমাদের ভিডিও করা প্রথম গান। সেই গানটার মাধ্যমে মানুষ আমাদের চিনতে শুরু করে। এরপর ‘জংলা ফুল’ করার পর আরেকটু জনপ্রিয়তা বাড়ে। এ ছাড়া ‘নদী রক্স’ এর ‘ডাহুক’, নারীদের নিয়ে গান ‘মুক্তি’, ‘আমিই সেই মেয়ে’ গানগুলোও বেশ সাড়া পায়।

শিগগিরই শ্রোতারা আপনাদের কাছ থেকে কোনো গান উপহার পাচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কিছু গানের কাজ আমরা এগিয়ে রেখেছি। যদি স্পন্সর পাই, তাহলে এ বছরই তিনটি গান রিলিজ করতে পারব। আসলে আমরা ভালোভাবে ভিডিও তৈরি করে প্রতিটি গান প্রেজেন্ট করতে চাচ্ছি। তাই একটু সময় নিচ্ছি।’

সবশেষে ‘এফ মাইনর ব্যান্ড’ নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে পিংকি খবরের কাগজকে বলেন, ‘অ্যালবাম করব। গান নিয়ে আরও আগাব। আরও ভালো কাজ করার ইচ্ছে আছে। ব্যান্ডকে নিয়ে যতদূর যাওয়া যায়, ততদূর যাওয়ার চেষ্টা থাকবে। আমরা নারীদের নিয়ে গান করার জন্য সেরা অনন্যা অ্যাওয়ার্ড পাই এবং সানসিল্ক থেকে স্পেশাল রিকগনিশন অ্যাওয়ার্ড পাই। এসব অ্যাওয়ার্ড আমাদের আরও ভালো কাজ করার অনুপ্রেরণা জোগায়।’

জাহ্নবী