![‘নীতি সহায়তার অভাবে বিকশিত হচ্ছে না দেশীয় কসমেটিকস শিল্প’](uploads/2024/05/21/cosmaticskk-1716300839.jpg)
আমদানির বিকল্প ও ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকার পরও দেশীয় কসমেটিকস শিল্পে উল্টো নীতি গ্রহণ রহস্যজনক। কসমেটিকস শিল্পখাতে নীতি সহায়তার পরিবর্তে বাড়তি শুল্ক ও ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এতে নতুন উদ্যোগগুলো আরও বেশি অসম প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়ছে বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা।
এদিকে কসমেটিকস শিল্প খাতের গুরুত্ব অনুধাবণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশন এই শিল্পের নীতি প্রণয়নে চার দফার জোরালো সুপারিশ করেছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে সহায়তার নীতি গ্রহণ করা হচ্ছে না। অথচ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই খাতকে ব্যাপক গুরুত্ব দিয়ে নীতি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের কোন মহলের ভূমিকা রহস্যজনক এবং দেশীয় শিল্প বিরোধী। যার কারণে স্থানীয় বিনিয়োগ প্রবল অসম প্রতিযোগিতা ও ঝুঁকির মুখোমুখি হয়েছে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, কোন কোন মহলের শিল্পায়ন বিরোধী মনোভাব কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে বর্তমান সরকারের যে অগ্রাধিকার নীতি রয়েছে তার পরিপন্থি।
এ খাতের বাণিজ্য সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব স্কিন কেয়ার এন্ড বিউটি প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স️ এন্ড এক্সপোর্ট️ার্স️ বাংলাদেশ (এএসবিএমইবি) এর কার্যকরী সদস্য মো. মনির হোসেন বলেন, এই খাতে এখনই লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। শুধু সরকারের নীতি সহায়তার অভাবে শিল্পের আকার ও ব্যাপকতা আটকে আছে। আমদানি বিকল্প দেশীয় শিল্পের বিকাশ ঘটলে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হয়। কর্ম️সংস্থান ছাড়াও রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জ️ন করা যায়। তাই নীতিনির্ধ️ারণে অগ্রাধিকার তালিকায় শীর্ষে️ থাকা উচিত স্থানীয় বিনিয়োগ সুরক্ষা।
তিনি বলেন, বর্ত️মানে কতিপয় মানহীন ও ভেজাল পণ্যের ছড়াছড়ির খবর প্রায়শই দেখা যায়। এসব ভেজাল পণ্য ব্যবহার করে ক্রেতারা প্রতারিত হচ্ছেন। পড়ছেন বড় ধরণের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। তাই স্থানীয় উৎপাদনকে নীতি সহায়তা দিয়ে মানসম্মত পণ্য ক্রেতাদের জন্য সুলভ করা জরুরি। দেশে গ্লোবাল ব্র্যান্ডের উৎপাদন কার্যক্রম সম্প্রচারণে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানি সহজলভ্য করা গেলে এবং সরাসরি কসমেটিকস পণ্যের শুল্কহার বাড়ানো হলে দেশীয় উৎপাদন ও উদ্যোগকে এগিয়ে নেওয়া সহজ হবে মন্তব্য করেন বিশেষজ্ঞরা।
ট্যারিফ কমিশন তাদের সুপারিশে উল্লেখ করেছে যে, একজন স্থানীয় উৎপাদনকারীকে প্রতি পিসের একক মূল্যের উপর ১০ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক প্রদান করতে হয়। যার ফলে স্থানীয় উৎপাদনকারীর উপর সম্পূরক শুল্কের প্রভাব অনেক বেশি। কারণ আমদানিকৃত পণ্যের শুল্কায়ন মূল্যের চেয়ে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের সম্পূরক শুল্ক আরোপযোগ্য মূল্য অনেক বেশি। ভোক্তা বাজার সবার জন্য এক হওয়ায় প্রতিযোগিতামূলক বাজার ব্যবস্থায় স্থানীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের বিনিয়োগ হুমকির সম্মুখীন।
বিশিষ্ট অর্থ️নীতিবিদ ও এনবিইআর এর চেয়ারম্যান প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ বলেন, প্রায় তিনশ কোটি ডলারের কসমেটিকস বাজারের শিল্পে বিদ্যমান সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট স্থানীয় উদ্যোক্তাদের জন্য বৈষম্যের কারণ হবে। কারণ এই শিল্পের বার্ষি️ক গড় প্রবৃদ্ধির হার সাড়ে ১২ শতাংশ। তাই দেশীয় শিল্পে বিনিয়োগ আকর্ষ️ণে নীতি সহায়তা জরুরি।
বাংলাদেশে কসমেটিকস ও স্কিনকেয়ার সামগ্রীর বার্ষিক বাজার ২১ হাজার কোটি টাকার ওপরে। এই খাত দেশের সম্ভাবনাময় একটি খাত হলেও আমদানিনির্ভর বিদেশি পণ্যের ভিড়ে দেশি কম্পানির পণ্যগুলো অনেকটা চ্যালেঞ্জের মুখে।
সরকারের পক্ষে দেশীয় এসব পণ্য জনপ্রিয় করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও সম্পূরক ভ্যাট, অতিরিক্ত শুল্ক আরোপকে বলা যায় এ খাতে অন্যতম বাধা। বর্ত️মানে স্থানীয় উৎপাদন পর্য️ায়ে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আরোপযোগ্য পণ্যের তালিকায় রয়েছে ওষ্ঠাধার প্রসাধন, চক্ষু প্রসাধন, হাত, নখ বা পায়ের প্রসাধন, পাউডার, সুগন্ধিযুক্ত বাথ সল্ট এবং অন্যান্য গোসল সামগ্রীসহ সংশ্লিষ্ট প্রসাধন সামগ্রী।
এই খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, কসমেটিকস ও স্কিন কেয়ার পণ্যের কাঁচামাল আমদানির শুল্ক কমালে দেশীয় বাজার আরও সম্প্রসারিত হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কেননা এসব কাঁচামালের প্রায় ৯০ শতাংশই বিদেশ থেকে উচ্চমূল্যে আমদানি করতে হয়।
দেশীয় পণ্য উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামালের শুল্ক হ্রাস, বিদেশি পণ্য আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধি, অবৈধ পথে বাজারে আসা পণ্য ঠেকানো, নকল পণ্য রোধ ইত্যাদি বিষয়ে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিলে বাংলাদেশে কসমেটিকস শিল্পের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
লাইট ক্যাসেল পার্ট️নারস এবং অ্যালাইড মার্কে️ট রিসার্চে️র মতো গবেষণা সংস্থাগুলোর ভাষ্যমতে, বাংলাদেশের স্কিন কেয়ার বা পারসোনাল কেয়ার শিল্পের আনুমানিক বাজারের আকার ২০২০ সালে ছিল ১ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার। ২০২৭ সালের মধ্যে এর আকার ২ দশমিক ১২ বিলিয়নে পৌঁছাবে বলে আশা করছে তারা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২১ থেকে ২০২৭ সাল পর্য️ন্ত ৮ দশমিক ৫ শতাংশ হারে এই শিল্প বৃদ্ধি পাবে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি