![সিলেটে ‘স্প্রকেট’ মহড়ার সেই ওয়ার্ড কাউন্সিলর কারাগারে](uploads/2024/02/12/1707734984.Arif-Pic.jpg)
এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে অনুগতদের দিয়ে নতুন অস্ত্র ‘স্প্রকেট’ (চাকতির মতো ভারী অস্ত্র) নিয়ে মহড়া দেওয়া সিলেট সিটি করপোরেশনের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হিরণ মাহমুদ নিপুকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকালে নিপু সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করলে বিচারক কিউ এম নাছির উদদীন তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে খবরের কাগজকে বলেন, ‘আদালতের নির্দেশ পেয়ে তাকে জেল হাজতে পাঠানো হচ্ছে।’
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিরন মাহমুদ নিপু তার এলাকায় ছাত্রলীগ কর্মী আরিফ আহমদ (১৯) হত্যা মামলার প্রধান আসামি। নিম্ন আদালতে হাজির হওয়ার শর্তে তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিনে ছিলেন।
২০২৩ সালের ২০ নভেম্বর রাত ১২টার দিকে সিলেট নগরীর বালুচরের টিবি গেট এলাকায় হিরন মাহমুদ নিপুর স্প্রকেট অস্ত্রধারীদের হামলায় নিহত হন আরিফ। আরিফ ওই এলাকার ফটিক মিয়ার ছেলে।
সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম গ্রুপের সক্রিয় কর্মী আরিফ স্থানীয় একটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। তার বাবা ফটিক মিয়া অটোরিকশা চালান, মা আঁখি বেগম বালুচর এলাকার রাজা মিয়ার কলোনিতে রান্নার কাজ করে সংসার চালান।
এ ঘটনায় ২২ নভেম্বর আঁখি বেগম বাদী হয়ে সিলেট এয়ারপোর্ট থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় হিরণ মাহমুদসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয় আরও ৫ জনকে। মামলার পর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
আরিফের ওপর স্প্রকেট নিয়ে হামলা হয়েছিল দাবি করে তার মা আঁখি বেগমের দাবি, হিরন মাহমুদ নিপুর নেতৃত্বে হামলা হয়। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে আরিফের শরীরের একাধিক স্থানে ধারালো অস্ত্রের জখম পাওয়া গেছে। এগুলো স্প্রকেটের জখম ছিল।
গত ২৮ অক্টোবর বালুচর এলাকায় ‘স্প্রকেট’ অস্ত্রের মহড়ার ভিডিও ফুটেজ নিয়ে খবরে কাগজে ‘ওয়ার্ড কাউন্সিলরের মহড়ায় স্প্রকেট’ শিরোনামে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এ ঘটনার প্রায় এক মাসের মাথায় আরিফ হত্যার ঘটনা ঘটে। এই অস্ত্র ব্যবহারের একাধিক ছবি ও এক মিনিট ২১ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, চাপাতি-রামদাসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র দেখিয়ে মহড়া চলার মধ্যে একজনকে চাকতির মতো একটি অস্ত্র টেনে টেনে বহন করতে দেখা যায়। সশস্ত্র মহড়ার ভিডিওচিত্র দেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র ওই চাকতির মতো দেখতে অস্ত্রটি স্প্রকেট বলে নিশ্চিত করে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র জানায়, পৌরাণিক যুদ্ধাস্ত্র চাকতির আদলে তৈরি ‘স্প্রকেট’ একটি ভয়ংকর ভারী অস্ত্র। বহন কষ্টসাধ্য বলে এটি ব্যবহারের প্রচলন খুব একটা নেই। মানুষের শরীরে যেখানে স্প্রকেটের আঘাত লাগে, সেই স্থানটি থেঁতলে যায়। মাথায় আঘাত লাগলে তাৎক্ষণিক মৃত্যুর শঙ্কা থাকে।
সশস্ত্র মহড়া ও স্প্রকেট ব্যবহারের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২১ জুন অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হিরন মাহমুদ নিপু। নির্বাচনে বালুচর এলাকায় তার পক্ষে কাজ করা একটি গ্রুপ ২২ অক্টোবর এক পক্ষের ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। একদিন পর ২৪ অক্টোবর পাল্টা আক্রমণ হলে দুই পক্ষে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এর জের ধরে গত দুদিন দিনে ও রাতে সশস্ত্র মহড়া চলে। এর মধ্যে কেবল ওয়ার্ড কাউন্সিলরের পক্ষে মহড়াতে স্প্রকেট ব্যবহার করা হয়। নতুন এই অস্ত্র ব্যবহার দেখে লোকজন ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, নিম্ন আদালতে হাজির হওয়ার শর্তে গত ২৮ নভেম্বর হাইকোর্ট থেকে হিরন মাহমুদ নিপু ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন নেন। শর্ত অনুযায়ী সোমবার নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের পর আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
উজ্জ্বল মেহেদী/অমিয়