![চট্টগ্রামে হকার-পুলিশ সংঘর্ষ, আহত ২০](uploads/2024/02/12/1707750601.ctg2.jpg)
চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানাধীন বটতলী নতুন রেলস্টেশন এলাকায় সিটি করপোরেশনের উচ্ছেদ অভিযানে হকার ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটেছে। এতে পুলিশসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়ছে। বর্তমানে ওই এলাকায় থমথমে পরিস্থিত বিরাজ করছে।
সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে এ ঘটনা ঘটে।
সরেজমিনে গিয়ে ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে চট্টগ্রাম নগরের পুরোনো রেলস্টেশন এলাকা পুনরায় দখল হয়ে যাওয়া ফুটপাতের দোকানপাট উচ্ছেদে যায় সিটি করপোরেশন। ওই অভিযানের নেতৃত্ব দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চৈতী সর্ববিদ্যা, চসিক মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেমসহ আরও দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এ সময় নগরের পুরোনো রেলস্টেশনের উভয় পাশের শতাধিক দোকানের সড়কে বর্ধিত অংশ ভাঙা হয় এবং বেশ কয়েকটি দোকানের আলমিরা, গ্যালারি ভেঙে দেওয়া হয়। কয়েকজনকে আটক করা হয়। জরিমানা করা হয় কয়েকজনকে। বিভিন্ন মেয়াদে কয়েকজনকে জেলও দেওয়া হয়। বিকেল ৩টা ৩৫ মিনিটে বুলডুজার দিয়ে একটি জেনারেটর চসিকের গাড়িতে তুলে ফেললে হকারদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়।
এ সময় বিভিন্ন দিক থেকে হকাররা জড়ো হয়ে মিছিল করতে থাকেন। কেউ কেউ সড়কে শুয়ে পড়েন এবং সড়ক অবরোধ করেন। পরে তারা চসিকের উচ্ছেদের বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশনের দালালরা হুঁশিয়ার সাবধান বলে নানা রকম স্লোগান দিতে থাকেন। ওই সময় সিটি করপোরেশনের মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেম ও ৩ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, চসিকের স্ট্রাইকিং ফোর্সের সদস্য এবং পুলিশের সদস্যরা অন্য একটি ভ্রাম্যমাণ দোকান উচ্ছেদ করছিলেন। ঠিক ওই মুহূর্তে হকাররা নিউ মার্কেট মোড় থেকে স্লোগান দিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। একপর্যায়ে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। ভাঙচুর করা হয় চসিকের গাড়ি।
হকারদের ধাওয়া খেয়ে পুলিশ সদস্যরা নতুন বটতলী রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় এসে থামেন। আর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পাশের একটি শৌচাগারে আশ্রয় নেন। পরে পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়লে হকাররা পাল্টা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। বেশ কিছুক্ষণ ধরে এ সংঘর্ষ চলতে থাকে। একপর্যায়ে হকাররা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পুলিশ দুটি টিমে ভাগ হয়ে নগরের নিউমার্কেট এলাকায় ও নতুন রেলস্টেশন এলাকায় অবস্থান নেয়। এ অবস্থার আরও ২৫ মিনিট পরে পুলিশ গিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট ও কর্মকর্তাদের উদ্ধার করে। এ ঘটনায় পুরো সড়কে যানজট দেখা দেয়।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম ফুটপাত হকার্স সমিতির সভাপতি নুরুল আলম লেদু খবরের কাগজকে বলেন, ‘নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে হকাররা বিভিন্ন স্থানে বসে ব্যবসা করছিলেন। কিন্তু এতে সিটি করপোরেশনের স্ট্রাইকিং ফোর্স এসে হকারদের এলোপাতাড়ি মারতে শুরু করে। এতে হকাররা ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের ওপরেও হামলা করেছেন। কিন্তু এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি উচ্ছেদের সময় হকাররা শান্ত ছিলেন। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেনি। কিন্তু আজ চসিকের লোকজন হামলা করায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের ৬ জন হকার আহত হয়েছেন। তাদেরকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে চসিক মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেম খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা জানতে পারি যে আমাদের উচ্ছেদের পরে আবারও ফুটপাত দখলে নিয়ে ফেলেছেন হকাররা। তাই আমরা আজ উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছি। আমরা কারও সঙ্গে বিরোধে যাইনি। আমরা চাচ্ছি নগরের ফুটপাত দখলুমক্ত হোক। কিন্তু একপর্যায়ে হকাররা আমাদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। আমরা এখনো জানতে পারিনি কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা জানার চেষ্টা করছি। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।’
চসিকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চৈতী সর্ববিদ্যা খবরের কাগজকে বলেন, ‘হকাররা সঙ্গবদ্ধভাবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও কর্মকর্তাদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে গুলি বর্ষণের আদেশ দেওয়া হয়েছে। আমাদের স্ট্রাইকিং ফোর্সের সদস্য, কর্মচারীরা আহত হয়েছেন। তাদেরকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের লক্ষ হচ্ছে ফুটপাত দখলমুক্ত করা এবং আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানার ওসি এস এম ওবায়দুল হক খবরের কাগজকে বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতি এখনি বলতে পারছি না। কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।
এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি ওই এলাকায় বড় ধরনের অভিযান পরিচালনা করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। ওই অভিযানে প্রায় ৬ হাজার হকার উচ্ছেদ করা হয়।