নিহত আব্দুল গণি। ছবি: খবরের কাগজ
‘আমার স্বামী গুলশান-২ এলাকার আবাসিক হোটেল সিক্সসিজনে কাজ করতেন। তিনি কোনো রাজনীতি করতেন না। তিনি মারা যাওয়ায় আমি দুটি সন্তান নিয়ে এখন মাঝ সমুদ্রে পড়েছি। এলাকায় এনজিও থেকে ঋণ নেওয়া আছে। এখন কিস্তি দেব কী করে, খেয়ে বাঁচব কীভাবে? আর আমার স্বামীর হত্যার বিচার চাইব কার কাছে।’
রাজধানীর গুলশানে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়া আব্দুল গণির (৪৫) স্ত্রী লাকী আক্তার শুক্রবার (২৭ জুলাই) এসব কথা বলেন। কথাগুলো বলতে গিয়ে তিনি বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন। আব্দুল গণি রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের রহিমপুর গ্রামের মজিদ শেখের ছেলে। তবে কিছুদিন আগে আব্দুল গণি সদর উপজেলার খানখানাপুর ইউনিয়নের নতুন বাজার এলাকায় বাড়ি করেছেন। গতকাল শুক্রবার রহিমপুরের বাড়িতে আব্দুল গণির আত্মার মাগফিরাত কামনায় মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
লাকী আক্তার আরও বলেন, ‘আমার স্বামী ২০ বছর ধরে ঢাকায় চাকরি করেন। আগে আমিও ঢাকায় ছিলাম। চার বছর আগে দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম হয়। এরপর সন্তানদের নিয়ে আমি গ্রামে চলে আসি। গত ১৯ জুলাই সকাল ৯টার দিকে আব্দুল গণি উত্তর বাড্ডার বাসা থেকে বের হয়ে গুলশানে তার কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন। গুলশানের শাহজাদপুর-বাঁশতলায় গেলে তিনি কোটা সংস্কারের আন্দোলনের মধ্যে পড়ে যান। সেখানে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। ১০টার দিকে আমার শ্বশুর ফোন করে জানান, গনির মাথায় গুলি লাগছে। তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেছে।’
আব্দুল গণির ছেলে আলামিন শেখ বলেন, ‘এসএসসি পাসের পর বাবা আমাকে ঢাকায় নিয়ে যান। আমি শেফের কাজ শিখছি। বাবার সঙ্গে একই বাসায় থাকতাম। আমার ওই দিন নাইট ছিল। সকালে এসে ঘুমিয়ে ছিলাম। সকাল ১০টার দিকে মা ফোন দিয়ে বলে তোর বাবার খবর নে। মাথায় গুলি লেগেছে। পরে হাসপাতালে গিয়ে লাশ পেয়েছি বাবার। আমি এখনো বেকার। বাড়িতে মা আর চার বছরের বোন জান্নাত থাকে। বাবাকে হারিয়ে আমরা বড় অসহায় হয়ে পড়েছি।’
আব্দুল গণির বড় ভাই আব্দুল রাজ্জাক শেখ বলেন, ‘গত ২১ জুলাই বিকেলে ভাইয়ের লাশ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। ওই দিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে স্থানীয় কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।’