নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ার জেরে অপহরণের শিকার দেলোয়ার হোসেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে ওই ঘোষণা দেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ শেখ। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দেলোয়ার এ খবর শুনে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ শেখ জানান, আগামী ৮ মে নাটোর সদর, নলডাঙ্গা ও সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। মঙ্গলবার প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, নাটোর সদর উপজেলায় ৫ জন, নলডাঙ্গা উপজেলায় ৯ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর সিংড়া উপজেলায় দেলোয়ার হোসেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
দেলোয়ারের ভাই এবাদুল হোসেন জানান, ফলাফল ঘোষণার সময় তিনি নির্বাচন অফিসে ছিলেন। তৎক্ষণাৎ বিষয়টি তিনি দেলোয়ারকে ফোনে জানান। খবরটি শুনে দেলোয়ার আবেগাপ্লুত হয়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন। পুরোপুরি সুস্থ না হলেও দ্রুতই তিনি এলাকায় আসার জন্য ব্যস্ত হয়ে তাদের বারবার তাগাদা দিচ্ছেন।
জেলা নির্বাচন অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সিংড়া উপজেলার শেরকোল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের পদ থেকে গত ৩ এপ্রিল পদত্যাগ করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক লুৎফুর হাবিব রুবেল। এরপর ৮ এপ্রিল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেন। গত ১৫ এপ্রিল জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনের ভাই এবাদুল ও আলাউদ্দিন মুন্সি নামে দুজনকে মাইক্রোবাসে তুলে অপহরণ করা হয়। একই দিন বিকেলে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে বের হতেই দেলোয়ারকেও অপহরণ করা হয়। পরে বেদম মারপিট করে জখম ও অজ্ঞান দেলোয়ারকে তার বাড়ির পাশে ফেলে দেওয়া হয়। ওই ঘটনার পর দেলোয়ারকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পাশাপাশি তার আরেক ভাই মজিবর রহমান অজ্ঞাত ১৫-২০ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়। এদের ম্যধ্যে একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এ ছাড়া পুলিশ অভিযান চালিয়ে অপহরণের কাজে ব্যবহৃত রুবেলের মাইক্রোবাসসহ বেশ কিছু দেশীয় অস্ত্র জব্দ করে। অপহরণের ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে ইতোমধ্যেই একজনকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করেছে উপজেলা যুবলীগ।
এদিকে দেলোয়ারকে অপহরণের ঘটনা জানাহানি হলে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ঘোষণা করে এমপি-মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা উপজেলায় প্রার্থী হতে পারবেন না। অন্যদিকে বিদেশ থেকে ফিরে গত ১৯ এপ্রিল দেলোয়ারকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেখতে যান ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। ওই সময় তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে প্রশাসনের প্রতি নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি রুবেলকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। উপজেলা আওয়ামী লীগও রুবেলকে একই আহ্বান জানালে তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। ফলে দেলোয়ারকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সিংড়া উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হলো।