![তীব্র দাবদাহ : বৃষ্টির জন্য রাজশাহীতে ইস্তিস্কার নামাজ](uploads/2024/04/23/1713889196.Istesker-Namazkk.jpg)
তীব্র দাবদাহ ও প্রখোর রোদ রাজশাহী অঞ্চলে দিনভর ছড়াচ্ছে আগুনের হল্কা। ঠাঁঠা রোদে তপ্ত কড়াইয়ের মতো তেঁতে উঠেছে পথ-ঘাট। দুপুর গড়াতেই তাপমাত্রার পারদ গিয়ে ঠেকেছে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও ওপরে। গেল কয়েকদিন ধরেই রাজশাহীজুড়ে হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। টানা দাবদাহের কারণে ভুট্টা ও পাটসহ নানা ধরনের ফসল ঝলসে গেছে। এমন পরিস্থিতি থেকে রক্ষায় বৃষ্টির ফরিয়াদ জানিয়ে পুঠিয়ায় ইস্তিস্কার নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) পি এন মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ নামাজ আদায় করা হয়।
পুঠিয়া উপজেলার ওলামা পরিষদের আয়োজনে এই নামাজে ইমামতি করেন আলহাজ্ব মাওলানা মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম। সেখানে দুই রাকাত নামাজ শেষে রাজশাহীসহ সারা দেশেই বৃষ্টির জন্য বিশেষ দোয়া করা হয়। এছাড়া মোনাজাত থেকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষায় দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করা হয়।
গত ১৭ এপ্রিল রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সবশেষ মঙ্গলবার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা সাধারণত ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়। তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বলা হয়। এছাড়া ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে ধরা হয়। আর তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর উঠলেই তাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এদিকে, তীব্র খরার কবলে পড়ে হু হু করে নেমে যাচ্ছে রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলের ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর। অবর্ণনীয় এক নিদারুণ কষ্টে একেকটি দিন-রাত পার করছেন এ অঞ্চলে খেটে খাওয়া দিনমজুর মানুষ। মানুষের পাশাপাশি পশু-পাখিও গরমে হাঁসফাঁস করছে। অচল হয়ে পড়েছে এই অঞ্চলের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বৃষ্টির জন্য চারিদিকে হাহাকার পড়ে গেছে। দুর্বিষহ গরমে খা খা করছে মহানগরীর বিভিন্ন প্রধান সড়ক। বাড়ছে হিটস্ট্রোক ও ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগবালাই। গেল শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে অধিকাংশ মসজিদেই চলমান তাপপ্রবাহ থেকে মুক্তি পেতে আল্লাহর কাছে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গেল দুই দিন থেকে রাজশাহীতে তাপপ্রবাহ নিয়ে সতর্ক থাকতে মাইকিং করেছে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি। তারা এই গরমে হিটস্ট্রোকসহ গরমজনিত বিভিন্ন রোগ থেকে বাঁচতে সতর্কতামূলক পরামর্শ দিচ্ছেন।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা উম্মে ছালমা জানান, তীব্র খরার কবলে পড়েছে কৃষি ফসলও। এরমধ্যে বিশেষ করে ভুট্টা ও পাটের খেত পুড়ে যাচ্ছে। তবে পরিস্থিতি মোকাবেলায় কৃষকদের জমিতে সেচ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি ছিল দীর্ঘ ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে এর আগে ২০১৪ সালের ২৫ এপ্রিল রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।