সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ । খবরের কাগজ
ঢাকা ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, বুধবার, ১৫ মে ২০২৪

সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:২৫ পিএম
সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ
ছবি : সংগৃহীত

হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড়ে রেললাইনে গাছ পড়ে সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

রবিবার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জে তীব্র কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যায়। ঝড়ে কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর রেললাইনে গাছ পড়ে সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার সাখাওয়াত হোসেন খবরের কাগজকে জানান, তীব্র ঝড়ে লাউয়াছড়া বনে গাছ পড়ে রেল যোগাযোগ বন্ধ আছে। ঢাকা থেকে সিলেটগামী আন্তনগর জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনে এবং সিলেট থেকে ঢাকাগামী আন্তনগর পারাবত এক্সপ্রেস ভানুগাছ স্টেশনে আটকা পড়েছে। রেললাইন থেকে গাছ সরিয়ে তারপর রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক করা হবে।

এদিকে শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিসুর রহমান জানান, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটির গতিবেগে কালবৈশাখী ঝড়টি আঘাত হানে।

হৃদয় শুভ/সালমান/

বঙ্গোপসাগরে ১২ ডাকাত আটক

প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৪, ১০:৫৪ পিএম
বঙ্গোপসাগরে ১২ ডাকাত আটক
ছবি : সংগৃহীত

চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর থেকে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ১২ ডাকাতকে আটক করেছে কোস্টগার্ড। কোস্টগার্ডের বিসিজি বেইস চট্টগ্রামের একটি দল ছদ্মবেশে কয়েকটি বোটে বহির্নোঙর এলাকায় অবস্থান নিয়ে ডাকাতদের আটক করে। কোস্টগার্ড জানায়, বিভিন্ন সময় বিদেশি জাহাজে ডাকাতি করে এই দল। কোস্টগার্ডের মিডিয়া অফিসার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সোয়াইব বিকাশ এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। 

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কোস্টগার্ড জানতে পারে, একদল ডাকাত চট্টগ্রাম বহির্নোঙর এলাকায় বিদেশি জাহাজে ডাকাতির উদ্দেশ্যে অবস্থান করছে। রাত ৩টায় বিসিজি বেইস চট্টগ্রামের একটি দল ছদ্মবেশে কয়েকটি বোটে বহির্নোঙর এলাকায় অবস্থান নেয়। ২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে একটি ইঞ্জিনচালিত কাঠের বোটের গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় কোস্টগার্ডের আভিযানিক দল বোটটিকে থামার সংকেত দেয়। কিন্তু বোটে থাকা ডাকাতরা কোস্টগার্ডের উপস্থিতি বুঝতে পেরে দ্রুত পালানোর চেষ্টা করে। পরে সমুদ্রে প্রায় ১ ঘণ্টা ধাওয়া করে বোটটি আটক করা হয়। বোটে তল্লাশি চালিয়ে ১২ ডাকাত আটকসহ ১১টি রামদা, ১টি করাত, ১টি শাবল, ১টি প্লায়ার, ১টি স্পেনার এবং ১২টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। 

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, দলের মূল হোতা মো. আকবরের নির্দেশে এবং মো. সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে ডাকাত দল চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানাধীন ইছানগর নতুন ব্রিজঘাট থেকে বোটে করে গত ১৩ মে রাতে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে যায়। ডাকাত দল দীর্ঘদিন ধরেই এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। 

আটক ডাকাতরা হলো মো. সালাউদ্দিন (২৬), মো. আনোয়ার হোসেন (২৩), কামাল হোসেন (২৩), মো. ইমন (১৯), মো. আবু তাহের (৩২), মো. ইসলাম (২৭), মো. ফয়সাল (২০), মো. রাজু (৩৭), সিরাতুল মুসতাকিম (১৭), পিয়াস মণ্ডল (২৩), মো. আলমগীর (৩০) ও আরিফ (৩০)। আটক ডাকাত দল এবং জব্দ মালামাল পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পতেঙ্গা মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

‘আমাদের দিয়ে রান্না করিয়ে দস্যুরা খেয়ে ফেলত’

প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৪, ১০:৩০ পিএম
‘আমাদের দিয়ে রান্না করিয়ে দস্যুরা খেয়ে ফেলত’
চট্টগ্রামের বন্দর জেটিতে এমভি আবদুল্লাহর নাবিকরা। ছবি : খবরের কাগজ

‘জলদস্যুরা জাহাজে দুম্বা নিয়ে এসেছিল। তারা আমাদের দিয়েই দুম্বা জবাই করিয়েছিল। আমরা রান্না করতাম, কিন্তু তারা সবটুকু খেয়ে ফেলত। আবার আমাদের মজুত থাকা খাবারেও ভাগ বসাত।’ 

মঙ্গলবার (১৪ মে) বিকেলে এভাবেই নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানান জাহাজের নাবিক অয়েলার আইনুল হক অভি। 

সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়া ‘এমভি আবদুল্লাহ’ জাহাজের নাবিকরা দেশে ফেরার পর জানিয়েছেন তাদের অভিজ্ঞতার কথা। ভয় আর দুশ্চিন্তায় প্রতিটি সময় কাটানো, ঈদ উদযাপন, জলদস্যুদের কাজ করে দেওয়া, ঠিকমতো ঘুমাতে না পারাসহ বিভিন্ন সংকট আর অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন তারা।

জাহাজের নাবিক অয়েলার আইনুল হক অভি খবরের কাগজকে বলেন, ‘সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ার পর এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। আমরা ফ্লোরে ঘুমাতাম। মশা-মাছি থাকার কারণে রাতে ঠিকমতো ঘুম হতো না। জাহাজে সাধারণত কয়েক মাসের খাবার মজুত থাকে। জলদস্যুরা আমাদের ওই খাবারও খেয়েছে।’

চিফ কুক শফিকুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের জাহাজ জলদস্যুদের কবলে পড়ার খবর জানার পর আমার পরিবারের সদস্যরা খুবই কষ্ট পেয়েছে। তবে জলদস্যুরা আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেননি। ঈদের দিন নামাজ পড়েছিলাম। তখন পরিবারের কথা খুব মনে পড়েছিল। এর চেয়ে আর বেশি কিছু বলতে চাই না। বলতে গেলে কান্না চলে আসবে।’

ওএস পদের নাজমুল হক বলেন, ‘জলদস্যুরা আমাদের কোনো ধরনের ক্ষতি করেনি। খারাপ আচরণ করেনি। তবে সব সময় অস্ত্রের মুখে জিম্মি ছিলাম। জলদস্যুদের কাছে আমরা ৩৩ দিন জিম্মি ছিলাম। এই ৩৩ দিনকে ৩৩ বছরের মতো মনে হয়েছে। অনেক কষ্টে আমাদের সময় কেটেছে। অস্ত্রের মুখে ঈদের নামাজ পড়েছিলাম। এখন পরিবারের সবাইকে দেখে চোখে আনন্দের অশ্রু চলে এসেছে।’

সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার রফিকুল জীবনটা অস্ত্রময় হয়ে উঠেছিল

প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৪, ০৯:৪৯ পিএম
জীবনটা অস্ত্রময় হয়ে উঠেছিল
এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার রফিকুল ইসলাম। ছবি : খবরের কাগজ

‘সোমালিয়ার জলদস্যুরা যখন আমাদের জিম্মি করে তখন থেকেই জীবনে অন্য এক ভয় নেমে আসে। স্বাভাবিক সময়ে আমরা জাহাজে ডিউটি করতাম। ডিউটি শেষে ভাত খেতাম, গোসল করতাম, বিশ্রাম নিতাম, পরিবারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলতাম। অথবা জরুরি কোনো কাজ থাকলে সেগুলো সেরে নিতাম। কিন্তু জলদস্যুরা আমাদের এই স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত করেছিল। সবকিছুতে স্থবিরতা নেমে আসে। জীবনটা অস্ত্রময় হয়ে ওঠে। সবসময় অস্ত্রের মুখে থাকতে হতো। এক মুহূর্ত জীবনের কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। মনে হতো, আজই মনে হয় মেরে ফেলা হবে।’ 

মঙ্গলবার (১৪ মে) খবরের কাগজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এভাবেই জিম্মিদশার বর্ণনা দেন এমভি আবদুল্লাহর জাহাজের সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার রফিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘সমুদ্রের জীবনটা হচ্ছে সামরিক বাহিনীর মতো। যুদ্ধে গেলে আসলে আর থেমে থাকার সুযোগ নেই। মরণপণ লড়াই তখন করতেই হবে। বুকে সাহস ছিল, তাই হয়তো সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছি।’

রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাড়ি ময়মনসিংহে। চট্টগ্রাম থেকে অনেক দূরে। তাই তারা (স্বজনরা) এখানে আসতে পারেনি। আমার সন্তানরা টেলিভিশনে আমাকে দেখে ফোন করে। তারা আমাকে প্রশ্ন করেছে, এখানে নেই কেন? তারাতো জানে না যাদের বাড়ি কাছে তারাই আসতে পেরেছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এখানে এই অনুষ্ঠানের জন্যই আসা। এখন আমাদের ইমিগ্রেশন আছে। কিছু দাপ্তরিক কাজ আছে। সেগুলো সেরে নিয়ে বাড়ির পথে রওয়ানা হব। বাড়ি যাওয়ার জন্য মুখিয়ে আছি।’

জিম্মিদশার বর্ণনা দিয়ে নাবিক শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘৩৩ দিন আমার কাছে ৩৩ বছর মনে হয়েছে। কীভাবে দিন কাটতো সেটি আমরাই টের পেয়েছি। মনে হচ্ছিল প্রাণ যায় যায় অবস্থা। সারাক্ষণ জলদস্যুরা অস্ত্র ধরে রাখতো। ঈদের দিনও অস্ত্রের মুখে নামাজ পড়ি। কখনো ভাবিনি জীবনে এমন দিন আসবে। এখন নিজ দেশে ফিরে আসতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। আল্লাহর কাছে কোটি কোটি শুকরিয়া।’ 

বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির ৫৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও এমভি আবদুল্লাহর ডেক ক্যাডেট টাঙ্গাইলের সাব্বির হোসেন বলেন, ‘ভেবেই নিয়েছিলাম মারা যাব। আমাদের ভাগ্যে কী ছিল আমরাও জানতাম না। পুরো ৩৩টি দিন এক ধরনের শঙ্কায় ছিলাম। দিনগুলো চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। গোসল করতে পারিনি, ভালো মতো খেতে পারিনি। অবশেষে আমরা সুস্থ অবস্থায় ফিরে এসেছি। এটাই শুকরিয়া।’  

মেহেদিরাঙা হাতে ফুল ও কেক নিয়ে নুরকে বরণ করলেন স্ত্রী

প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৪, ০৯:৪৪ পিএম
মেহেদিরাঙা হাতে ফুল ও কেক নিয়ে নুরকে বরণ করলেন স্ত্রী
এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের জেনারেল স্টুয়ার্ট (জিএস) নুর উদ্দিনের সঙ্গে তার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস। ছবি : খবরের কাগজ

নববধূর মতো দুহাত মেহেদি রঙে রাঙিয়েছেন। এক হাতে নিয়েছেন ফুলের তোড়া এবং অন্য হাতে নিজের বানানো কেক। কবির গ্রুপের বাসে করে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে অন্য স্বজনদের সঙ্গে আসা বোরকা ও নেকাব পরা এই নারীর মেহেদির রং সবার দৃষ্টি কেড়েছিল। তিনি এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের জেনারেল স্টুয়ার্ট (জিএস) নুর উদ্দিনের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস।

খবরের কাগজের সঙ্গে আলাপে জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, এবারের ঈদে তিনি হাতে মেহেদি দেননি। এমনকি গত ৮ মে তাদের বিবাহবার্ষিকীতেও কোনো আনন্দ-উচ্ছ্বাসও করেননি। পণ করেছিলেন জিম্মিদশা থেকে স্বামী ফিরে এলেই সব আনন্দ একসঙ্গে উদযাপন করবেন। তাই গতকাল সোমবার (১৩ মে) রাতে নিজের দুই হাতকে মেহেদি রঙে রাঙিয়েছেন।

স্বামীকে ফিরে পাওয়ার অনুভূতি জানতে চাইলে জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘অনুভূতি প্রকাশ করার মতো ভাষা জানা নেই। জাহাজ যখন বাংলাদেশ জলসীমায় প্রবেশ করে এবং বাংলাদেশের মোবাইল নেটওয়ার্কে চলে আসে। ওই সময় আমার স্বামী আমাকে দেশীয় মোবাইল নম্বর থেকে ফোন করেন। ওই ফোন পাওয়ার পর চোখের জল আর ধরে রাখতে পারেনি। এটা ছিল আনন্দঅশ্রু।’

কথার প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘সোমালিয়া দস্যুদের কাছ থেকে মুক্ত হওয়ার আগে এবং মুক্ত হওয়ার পরেও জাহাজের ওয়াইফাই থেকে নুর উদ্দিন তার সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু তার স্বামীর দেশের জলসীমায় প্রবেশের বিষয়টি তার কাছে ছিল অন্যরকম।’ 

জান্নাতুল ফেরদৌস আরও জানান, কুতুবদিয়া থেকে তার স্বামী গতকাল মঙ্গলবার ফিরছেন এটা জানার পর থেকেই প্রতিটি মিনিট, সেকেন্ড গুনে গুনে পার করেছেন। সোমবার রাত ২টা পর্যন্ত রান্না করেছেন। স্বামীর সব পছন্দের খাবার তৈরির পাশাপাশি কেকও বানিয়েছেন। হাতে মেহেদি দিয়েছেন। রাত ২টায় ঘুমানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু রাত ৪টায় আবার ঘুম ভেঙে যায়। এক কথায় বলতে গেলে পুরো সময়টা অস্থিরতায় কেটেছে। পরে মঙ্গলবার (১৪ মে) বিকেল ৪টার দিকে নুর উদ্দিন যখন জাহাজ থেকে নেমেছেন, ওই সময় সব অস্থিরতা কেটে গেছে। স্বামীকে বরণ করার জন্য সঙ্গে নিয়ে এসেছেন তাদের আড়াই বছরের ছেলে সাদ বিন নুর। সঙ্গে আছেন তার ছোট ভাই অন্য একটি জাহাজের ডেক ক্যাডেট সুফিয়ান।

জানতে চাইলে এমভি আবদুল্লাহর জি এস নুর উদ্দিন বলেন, ‘আল্লাহর অসীম রহমত এবং বাংলাদেশ সরকার ও কবির গ্রুপের আন্তরিক প্রচেষ্টায় আজ পরিবারের মাঝে ফিরে আসতে পেরেছি। এর চেয়ে আনন্দের আর কিছুই হতে পারে না। আমার স্ত্রী, ছেলে এবং পরিবার আমার জন্য চিন্তিত ছিল। আমিও তাদের সেভাবে অনুভব করেছি।’ 

কান্নাজড়িত কণ্ঠে জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘আমাদের বিয়ে হয়েছে ৪ বছর। জাহাজের নাবিকরা দূর-দূরান্তে যায়। পাঁচ ছয় মাস পর ফিরে আসে। এটা জানা ছিল। কিন্তু দস্যুদের কবলে পড়বে এটা কখনো ভাবিনি। তাকে জাহাজে যেতে বাধা দেব না। কারণ এটা তার পেশা। তবে আমি চাই আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচল নিরাপদ হোক।’

অভিমানে এলাকা ছাড়ল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া ফারজিনা

প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৪, ০৯:২৭ পিএম
অভিমানে এলাকা ছাড়ল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া ফারজিনা
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত ফারজিনা আক্তার। ছবি : খবরের কাগজ

সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওরের দুর্গম এক গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে ফারজিনা আক্তার (৯)। তার পরিবারের কোনো জমি নেই, ঘর নেই। শিশুশিল্পী ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার পর ফারজিনা স্বপ্ন দেখে, পুরস্কারের টাকায় হাওরপাড়ে ঘর বানানোর। শিশুটির স্বপ্নপূরণে কিছু জমি দেওয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। সেখানে ঘর করার জন্য অর্থও বরাদ্দ হয়। কিন্তু ছয় মাস হতে চললেও মাথা গোঁজার ঘর আর হয়নি। এ জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে ঘুরতে ঘুরতে অতিষ্ঠ ফারজিনার বাবা মো. সায়েম। ক্ষোভ-অভিমানে শেষ পর্যন্ত পুরো পরিবার নিয়ে এলাকা ছেড়েছেন তিনি।

মো. সায়েমের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বালা নাই। নিজের ঘর না থাখায় উরা বাইন্দা (চলে) আইলাম। ঘর ফাইমু ফাইমু (পাব) আশায় আইলাম, কিন্তু শেষমেশ আশাহত অইয়া নিজের এলাকা ছাইরা পরিবার লইয়া জীবিকার আশায় সিলেট আইচ্ছি (আসছি)। নিজের বসতবাড়ি নাই, ভাবছিলাম সরকারের দেওয়া জমিত ঘর বানাইয়া নিজের এলাকাত থাকমু, কিন্তু গত কয়েকটা মাস, এই অফিস তিকি (থেকে) হেই অফিস দৌড়তে দৌড়তে জানের খাম (জীবন) শেষ, কুনতাই (কিছুই) অইলো না।’ এভাবে নিজের অভিমান আর হতাশার কথা বলছিলেন তিনি। 

নিজ এলাকায় না থেকে সিলেট কেন থাকছেন প্রশ্ন করলে ফারজিনার বাবা বলেন, ‘আমাদের এলাকায় অন্যের জায়গায় থাকতে দেয় না, ভাড়াও দেয় না। তাই সিলেট চলে এসেছি, যাতে থাকার জায়গা হয়। আবার শ্রমিকের কাজও করতে পারি। ঘর না থাকলে থাকব কোথায়? ঘরের জন্য ঘুরতে ঘুরতে হয়রান হয়ে গেছি। কী করমু, এলাকা থেকে চলে আসা ছাড়া তো কোনো উপায় নাই।’

সায়েমের মা সিলেটে থাকেন। তিনি শ্রমিকের কাজ করেন। আপাতত মায়ের কাছে উঠবেন। পরিবার চালাতে যে কাজ পাবেন, সেটাই করার ইচ্ছা তার। গতকাল সোমবার (১৩ মে) সকালে সুনামগঞ্জ থেকে সিলেটের গোলাপগঞ্জ থানার ঢাকা দক্ষিণ এলাকায় পাড়ি দেন তিনি।

জানা যায়, এর আগে সুনামগঞ্জের তৎকালীন জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরীর সঙ্গে ফারজিনাসহ তার পরিবারের সবাই দেখা করেন। জেলা প্রশাসক তাদের মিষ্টি খাওয়ান। পরিবারের আর্থিক অবস্থার খোঁজখবর নেন। ফারজিনার লেখাপড়ার জন্য ২০ হাজার টাকাও দেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তাদের একটি ঘর করে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে সব সময় তার পরিবারের খোঁজখবর নেওয়ার জন্য তাহিরপুর উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেন তিনি।

সায়েম এরপর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি ঘরের জন্য আবেদন করেন। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গত ডিসেম্বর মাসে ফারজিনার পরিবারকে একটি ঘর দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সময়ে ফারজিনার বাবা ও মায়ের নামে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনায় ১০ লাখ টাকার একটি পারিবারিক সঞ্চয়পত্রের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।

তাহিরপুর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলার সীমান্তবর্তী বড়ছড়া মৌজায় ফারজিনার পরিবারকে ১৭ শতক জমি দেওয়া হয়। ওই জমিতে একটি ঘর করে দেওয়ার জন্য সমাজসেবা কার্যালয়ের অনুকূলে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দও দেওয়া হয়। কিন্তু সমাজসেবা কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি। ৭ মাস পার হয়ে গেলেও ঘর আর হয়নি। ফলে জমিটিও বেদখল অবস্থায় পড়ে আছে। এ জন্য উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে একাধিকবার যোগাযোগ করেছেন সায়েম। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কার্যালয়ে গিয়ে কোনো সহযোগিতা পাননি তিনি।

এ বিষয়ে সোমবার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিজন কুমার সিংহ বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে জমি বন্দোবস্ত দিয়ে তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঘরের বরাদ্দটি এসেছে সমাজসেবা কার্যালয়ের অনুকূলে। আমি এ বিষয়ে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালকের সঙ্গে দুবার কথা বলেছি। দ্রুত কাজটি করার অনুরোধ করেছি। কিন্তু কেন তারা এটি করছে না, সেটি বুঝতে পারছি না।’

জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক সুচিত্রা সরকার বলেন, ‘আমরা উপজেলা কমিটির কাছে টাকা দিয়ে দিয়েছি। তিন দিন আগেও তাদের তাগাদা দিয়েছি দ্রুত ঘরটি করে দেওয়ার জন্য।’