চট্টগ্রাম নগরের লালখানবাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৫৪ ফুট প্রস্থের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ অনেকটাই শেষের দিকে। ঈদুল আজহার আগেই এক্সপ্রেসওয়ে চালু করার আশা প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের। ইতোমধ্যে এই সড়কের ওপর যান চলাচলের জন্য টোলও নির্ধারণ করে দিয়েছে মন্ত্রণালয়। তবে এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সড়কের ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল, ট্রেইলার (৬ চাকা) ও সিএনজি অটোরিকশা চলতে দেওয়া হবে না। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নগরবাসী।
জানা গেছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে মোটরসাইকেল (দুই চাকা), সিএনজিচালিত অটোরিকশা (তিন চাকা), কার, জিপ, মাইক্রোবাস, পিকআপ, মিনিবাস, বাস, ট্রাক (৪ চাকা), ট্রাক (৬ চাকা), কাভার্ডভ্যান এবং ট্রেইলার গাড়ি চলাচলের জন্য গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এ বিষয়ে গত ১২ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয়ে পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মোটরসাইকেল, ট্রেইলার ও সিএনজি অটোরিকশা এই তিন ধরনের গাড়ি বাদ দিয়ে টোলের হার চূড়ান্ত করা হয়। সিডিএ সূত্র জানায়, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলাচল করতে মন্ত্রণালয় কারপ্রতি ১০০ টাকা, জিপ ১০০ টাকা, মাইক্রোবাস ১০০ টাকা, মিনিবাস ২০০ টাকা, বাস ৩০০ টাকা, ট্রাক (চার চাকা) ২০০ টাকা ও কাভার্ডভ্যানের জন্য ৫০০ টাকা টোল নির্ধারণ করে।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া খবরের কাগজকে বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে মোটরসাইকেল, ট্রেইলার ও সিএনজি অটোরিকশা চলতে না দেওয়াই ভালো বলে আমি সমীচীন মনে করি। কারণ এই সড়কের ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার বা এর চেয়ে বেশি গতিতে কার বা উচ্চ গতিসম্পন্ন যান চলাচল করবে। সে তুলনায় মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা- এসব গাড়ির গতি কম। তখন এসব ছোট গাড়ি সড়কে ঝুঁকিতে পড়বে। তাই জননিরাপত্তার স্বার্থে, দুর্ঘটনা এড়াতে এ সিদ্ধান্তটি ঠিক বলে আমি মনে করি।’
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘প্রকল্পটির কাজ শেষের দিকে। লাইট বসানোর কাজ বাকি আছে। দেশের বাইরে থেকে আনা হচ্ছে লাইটগুলো। আশা করছি এ মাসের মধ্যেই লাইটগুলো চলে আসবে। পাশাপাশি কোরবানির আগে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালুর চিন্তা-ভাবনা রয়েছে।’
এদিকে মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করছে নগরবাসী। নগরের পতেঙ্গা এলাকার বাসিন্দা মো. শাহজাহান বলেন, ‘নগরের কাঠগড়, ইপিজেড এলাকায় যানজট বেশি থাকে। তাই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নিয়ে আমরা অনেক আশাবাদী ছিলাম। ভেবেছিলাম ভালো ডাক্তার দেখাতে বা বাচ্চাদের ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াতে কম সময়ে আসা-যাওয়া করা যাবে। কিন্তু সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল চলতে দেওয়া না হলে এ সড়ক বানিয়ে লাভটা কী হবে? সবার তো প্রাইভেট কারে করে রোগী আনা নেওয়া করা সম্ভব না। আশা করি সরকার বিষয়টি ভেবে দেখবে।’
চট্টগ্রাম নগরীর বাসিন্দা মো. মনির হোসাইন বলেন, ‘টানেলে বাইক চালাতে নিষেধাজ্ঞা, এখন শুনছি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতেও মোটরসাইকেল চালাতে দেওয়া হবে না। এটা খুবই দুঃখজনক।’
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম নগরীর যানজট নিরসনে ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেক সভায় চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ’ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হয় ৪ হাজার ৩৬৯ কোটি ৭ লাখ ১০ হাজার ৮১৯ টাকা। চউকের এই প্রকল্প যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স-র্যাংকিন। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে সর্বোচ্চ গতিসীমা ৬০ কিলোমিটার। যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে স্পিড ক্যামেরা এবং নিরাপত্তার জন্য বসানো হচ্ছে সিসিটিভি ক্যামেরা।