ঢাকা ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

উপকূলের বেড়িবাঁধে ভাঙন আতঙ্ক

প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৪, ০৯:১৬ এএম
আপডেট: ২৫ মে ২০২৪, ০৯:১৬ এএম
উপকূলের বেড়িবাঁধে ভাঙন আতঙ্ক
খুলনার কয়রার উত্তর বেদকাশিতে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ

খুলনার কয়রার শাকবাড়ীয়া নদীর তীরে গাববুনিয়া বেড়িবাঁধ। গত ৩০ বছর ধরেই দুর্যোগে কিংবা জোয়ারে পানির চাপে ভাঙছে সেটি। যেনতেনভাবে সংস্কার হয়। কিন্তু টেকসই বাঁধ নির্মাণ হয় না। ফলে কিছুদিনের মধ্যেই আবারও বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় বাড়িঘর, কৃষিজমি।

কয়রার উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নে গাববুনিয়া বেড়িবাঁধের মতো মদিনাবাদ লঞ্চঘাট থেকে গোবরা, হরিণখোলা-ঘাটাখালী, মহারাজপুর, কাশিয়াবাদ, দশহালিয়া এলাকায় বেড়িবাঁধ নাজুক অবস্থায় রয়েছে। 

কয়রার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাওনেওয়াজ শিকারী জানান, সারা বছর ধরেই ঠিকাদারের মাধ্যমে বাঁধের সংস্কারকাজ হয়। কিছু যেনতেনভাবে সংস্কারকাজে সরকারি বরাদ্দের লুটপাট ছাড়া সাধারণ মানুষের লাভ হয় না। আগে বাঁধের নিচে ৬০ ফুট চওড়া ছিল। ঢালের মতো বাঁধের উপরের অংশে ছিল ১০-১২ ফুট। এখন ঠিকাদার-ওয়াপদা (পানি উন্নয়ন বোর্ড) কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বাঁধের নিচের মাটি এস্কাভেটর দিয়ে কেটে ওপরে সংস্কার করা হয়। এতে বাঁধের উপরে ১০-১২ ফুট ঠিক থাকলেও নিচের দিকে মাটি কমে যাওয়ায় বাঁধ দুর্বল হয়ে গেছে। ফলে বাঁধ সংস্কারের কিছুদিনের মধ্যেই পানির তোড়ে সহজে বাঁধ ভেঙে যায়।  

জানা যায়, মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নে কালীবাড়ি, গিলাবাড়ি সিংহের কোনা, হড্ডা চৌকিদারপাড়া, আলোর কোলসহ ১০-১২ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে। বাঁধ ভাঙলে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়ে চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি হবে।

এদিকে বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সুস্পষ্ট লঘুচাপ তৈরি হওয়ায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে উপকূলে। আবহাওয়া অফিস বলছে, সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে নিম্নচাপে রূপ নিয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের উপপরিচালক শামীম হাসান বলেন, নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে তা বাংলাদেশের সুন্দরবন, খুলনা এবং তৎসংলগ্ন কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ অঞ্চল দিয়ে অতিক্রম করতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে ২৬-২৭ মে ঝড়টি হতে পারে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে।

অপরদিকে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে কাজ শুরু করেছেন সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকরা। খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছার ৬০৪টি আশ্রয় কেন্দ্র ও ৩টি মুজিবকেল্লা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় বিভিন্ন উপজেলায় ৫ হাজার ২৮০ জন স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত থাকতে প্রয়োজনীয় নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে।

৫১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ : ঘূর্ণিঝড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধে ভাঙন আতঙ্কে রয়েছেন খুলনাসহ উপকূলীয় এলাকার হাজার হাজার মানুষ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনা, বাগেরহাট সাতক্ষীরার প্রায় ৫১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। নদ-নদীতে পানির চাপ বাড়লে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) খুলনা পওর বিভাগ-২-এর আওতায় কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা, বটিয়াঘাটায় ১২ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। কয়রার মদিনাবাদ লঞ্চঘাট থেকে গোবরা ও হরিণখোলা-ঘাটাখালী এলাকায় দুই কিলোমিটার বাঁধ জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। মহারাজপুর, কাশিয়াবাদ, মঠেরকোনা মঠবাড়ি দশহালিয়ায় দুই কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে। দাকোপে সুতারখালি, কালাবগী, চেয়ারম্যানবাড়ি, বটিয়াঘাটা বুজবুনিয়ায় বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সাতক্ষীরা পওর বিভাগ-১ ও ২ আওতায় ১৩ কিলোমিটার ও বাগেরহাটে আরও ১৫ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

বরাদ্দের টাকা নয়ছয়, টেকসই বাঁধ হয় না: খুলনার দাকোপ উপজেলার ৩২ নম্বর পোল্ডারের ৫০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সংস্কার ও দুই কিলোমিটার নদীশাসন কাজে গত কয়েক বছরে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এখন একই বাঁধ সংস্কারে আরও ১৫২ কোটি টাকার একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে পাউবোর পক্ষ থেকে।

কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পটি সার্ভে হয়েছে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে নদীর গতি-প্রকৃতির পরিবর্তন হয়েছে। ফলে আরও ছয় কিলোমিটার জায়গা নদীশাসনে আনা প্রয়োজন। এতে প্রায় ১৫২ কোটি টাকা ব্যয় হবে।

একইভাবে ১০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০০৪-২০১১ পর্যন্ত সমন্বিত টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৯৯৮-২০০৫ সালে উপকূলীয় বাঁধ প্রকল্প পোল্ডার নং-৩৪/২ (অংশ) (আমিরপুর-ভাণ্ডারকোট-বালিয়াডাংগা) সংস্কারকাজ বাস্তবায়িত হয়।

বর্তমানে কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা ও বটিয়াঘাটার বিভিন্ন অংশে বাঁধ মেরামত কাজ চলছে। খুলনা পওর বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম জানান, উপকূলীয় এলাকায় বন্যা ব্যবস্থাপনায় বাঁধ মেরামত ও টেকসই করতে নিয়মিত সংস্কারকাজ চলছে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো চিহ্নিত করে মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোথাও বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হলে জরুরি ভিত্তিতে মেরামতের জন্য জিও ব্যাগ, সিনথেটিক ব্যাগ মজুত রাখা হয়েছে।   

টেকসই বেড়িবাঁধের দাবি স্থানীয়দের: বেড়িবাঁধ নিয়ে সমন্বয় সভায় আসেন না পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। ঠিকাদারদের মাধ্যমে যেনতেনভাবে বাঁধ সংস্কার করা হয়। স্থানীয়দের বাঁধ নির্মাণকাজে সম্পৃক্ত করা হয় না। কেউ টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি তুললে ঠিকাদারের কাছে চাঁদা চাওয়া হয়েছে বলে তাকে হয়রানি করা হয়। 

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পরপর কয়েক বছরের দুর্যোগ ও নদীভাঙনে বসতবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেকে। বিলীন হয়েছে বাজার, চলাচলের রাস্তাসহ একাধিক স্থাপনা। আর এ ভাঙন মোকাবিলায় পাউবোর জরুরি সংস্কারের নামে গা ছাড়া কাজ চলছে সারা বছর ধরেই। বেড়িবাঁধ রক্ষায় এলাকায় মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানানো হলেও কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়ায় ভাঙনে বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে যায়।

চট্টগ্রামে সংঘর্ষে নিহত ফারুকের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১:২৬ এএম
আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১:২৬ এএম
চট্টগ্রামে সংঘর্ষে নিহত ফারুকের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা
চট্টগ্রামে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী ফারুকের স্ত্রীর আহাজারি। ছবি: খবরের কাগজ

চট্টগ্রাম নগরীর মুরাদপুরে কোটা আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী ফারুকের পরিবারকে অর্থ সহায়তা দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) সন্ধ্যায় চসিকের জনসংযোগ ও প্রটোকল কর্মকর্তা আজিজ আহমদ খবরের কাগজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 
এ সময় ফারুকের সন্তানের লেখাপড়ায় সহযোগিতার আশ্বাস দেন মেয়র।

তিনি জানান, শুক্রবার সকালে মেয়রের বাসভবনে দেখা করতে যান নিহত ফারুকের পরিবার। তখন মেয়র অর্থ সহায়তার পাশাপাশি ফারুকের সন্তানদের লেখাপড়ায় ও বিপদে আপদে সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।

গত ১৬ জুলাই দুপুরে নগরের মুরাদপুর এলাকায় কোটার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ফারুকসহ তিনজনের মৃত্যু হয়। ফারুকের বাড়ি নোয়াখালীতে। তিনি ফার্নিচারের দোকানে চাকরি করতেন।

পরে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) রাত সাড়ে ৩টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে তার মরদেহ স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এরপর পুলিশি পাহারায় তার স্বজনরা লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যায়।

সাদিয়া নাহার/অমিয়/

চার মেয়াদেও শেষ হয়নি রাজবাড়ী ২৫০ শয্যা হাসপাতালের কাজ

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১০:০৬ এএম
আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১০:০৬ এএম
চার মেয়াদেও শেষ হয়নি রাজবাড়ী ২৫০ শয্যা হাসপাতালের কাজ
ছবি : খবরের কাগজ

চারবার মেয়াদ বাড়িয়েও শেষ হয়নি রাজবাড়ী ২৫০ শয্যার আধুনিক হাসপাতালের নির্মাণকাজ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, বারবার গণপূর্ত বিভাগকে তাগাদা দিয়েও কোনো লাভ হয়নি। নতুন ভবনের নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় পুরাতন ভবনে চিকি‍ৎসা নিতে আসা রোগীদের বিড়ম্বনা ও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নতুন আটতলা ভবনের বেজমেন্ট ফ্লোরে থাকবে গাড়ি পার্কিং, স্টোর রুম, মরচুয়ারি, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, ফার্নিচার রুম ইত্যাদি। এ ছাড়া আইসিইউ, সিসিইউ, সিটি স্ক্যান, মেমোগ্রাফির ব্যবস্থা থাকবে।

রাজবাড়ী গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন আটতলা ভবন নির্মাণের কাজ করছে জিকেবিপিএল ও এসসিএল নামে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২১ সালের জুন মাসে নতুন ভবনের নির্মাণকাজ শেষ করার কথা থাকলেও পর পর তিনবার মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ সময় বাড়িয়ে চলতি বছরের জুন মাসে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু এবারেও ভবন নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। এ কারণে আগস্ট মাস পর্যন্ত কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, নির্মাণাধীন ৮ তলা ভবনটির সামনে রড, সিমেন্ট, বালু, ইট, পাথরসহ নির্মাণসামগ্রীর স্তূপ। শ্রমিকরা কাজ করছেন। ভেতরে বাইরে অনেক কাজ বাকি। লিফটের কাজ শুরুই হয়নি। বাকি রয়েছে বৈদ্যুতিক কাজও। 

নির্মাণকাজের তদারকি করছিলেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী স্বজন সাহা। তিনি জানান, হাসপাতালের কাজে তাদের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কোনো গাফিলতি নেই। কাজ প্রায় শেষের পথে। রং, বিদ্যুৎ, টাইলসসহ আনুষঙ্গিক কাজ চলছে। 
কাজ পরিদর্শনে আসা রাজবাড়ী গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম জানান, হাসপাতালের ৯৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। ভেতরে কিছু কাজ বাকি আছে। রাস্তা, ড্রেন নির্মাণকাজ চলছে।

কাজ সম্পন্ন হতে দেরি হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে কিছু দিন কাজ বন্ধ ছিল। এ ছাড়া প্রথমে ছয়তলা ভবন করার কথা থাকলেও পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আটতলা ভবন করার চাহিদা দেয়। এ কারণে নকশা পরিবর্তন করতে হয়েছে। সময় মতো নির্মাণসামগ্রী না পাওয়াও দেরি হওয়ার একটি কারণ ছিল।’ 

রাজবাড়ী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এ এম ইফতেখার মজিদ জানান, কিছু সমস্যার কারণে সময়মতো হাসপাতালের কাজ সম্পন্ন করা যায়নি। আগামী আগস্ট মাসের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হবে। 

এদিকে পুরনো ভবনের অভ্যন্তরে গিয়ে দেখা গেছে, বহির্বিভাগে শত শত রোগী চিকিৎসার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। কেউ ওষুধ নিচ্ছেন। ভিড়ের কারণে হাঁটার জায়গাই নেই। আন্তবিভাগে ভেতরে রোগীতে পরিপূর্ণ। অনেক রোগীর ঠাঁই হয়েছে বারান্দার মেঝেতে। দ্বিতীয়তলায় পুরুষ ওয়ার্ডের বারান্দার মেঝেতে একজন রোগী ঘুমিয়ে ছিলেন। তার মাথার কাছে হাতে স্যালাইন লাগিয়ে বসেছিলেন এক ব্যক্তি। যে কেউ ধরে নেবে তারা একই পরিবারের।

রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের গোপালবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা মিঠু সরদার নামে ওই ব্যক্তির কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, যে ঘুমিয়ে আছেন, তিনি তার কেউ নন। পেটে ব্যথা নিয়ে সকালে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু এখনো সিট পাননি। জায়গা না পেয়ে তার মাথার কাছে বসেছেন।

হাপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা শহীদ মোল্লা জানান, ঘাড়ব্যথা নিয়ে সকালে ভর্তি হয়েছেন। শয্যা পাননি। তাই বারান্দায় বিছানা পেতে দিয়েছে। মানুষ হাঁটাচলা করলে ধুলো উড়ে আসে। মাঝে মধ্যে দুর্গন্ধও আসে। 

রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এসএমএ হান্নান বলেন, ১০০ শয্যার হাসপাতালে রোগীদের প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হতে হয়। আন্তবিভাগ ও বহির্বিভাগে রোগীদের অনেক কষ্ট করতে হয়। জায়গার অভাবে রোগীদের গরমে কষ্ট করতে হয়। নতুন ভবনের কাজ শেষ হলে রোগীরা খোলামেলা জায়গা পাবেন। তারাও লোকবল বেশি পাবেন। রোগীদের বেশি বেশি সেবা দিতে পারবেন। মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন। 

পাঁচটি উপজেলা, তিনটি পৌরসভা আর ৪২টি ইউনিয়ন নিয়ে রাজবাড়ী জেলার জনসংখ্যা প্রায় ১২ লাখ। এ জেলার বেশির ভাগ মানুষই দরিদ্র। এদের অসুখ বিসুখে রাজবাড়ীর বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই। সদর হাসপাতালটি তাদের ভরসাস্থল। ১০০ শয্যার এ হাসপাতালটিতে প্রতিদিন রোগীদের ভিড় লেগেই থাকে। কিন্তু চিকিৎসার সব সুবিধা না থাকায় একটু জটিল রোগীকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ঢাকা অথবা ফরিদপুর। জেলার মানুষের চিকিৎসাসুবিধা বাড়ানোর কথা ভেবে ২০১৮ সালের ৮ সেপ্টেম্বর হাসপাতালটিকে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের ঘোষণা দেওয়া হয়। এ জন্য হাসপাতালের পূর্বদিকে আটতলা ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। এটি বাস্তবায়ন করছে রাজবাড়ী গণপূর্ত বিভাগ। ২০২০ সালে এর নির্মাণকাজ শুরু করা হয়।

গাইবান্ধায় দুর্গত এলাকার পানি নেমেছে, ঘরে ফিরছেন বন্যার্তরা

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১০:০১ এএম
আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১০:০১ এএম
গাইবান্ধায় দুর্গত এলাকার পানি নেমেছে, ঘরে ফিরছেন বন্যার্তরা
ছবি : খবরের কাগজ

গাইবান্ধার চার উপজেলায় বন্যাকবলিত এলাকা থেকে পানি নেমে যাচ্ছে। জলমগ্ন এলাকাগুলোয় দেখা যাচ্ছে ক্ষতচিহ্ন। নদী-তীরবর্তী এলাকার তলিয়ে যাওয়া ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি আবার জেগে উঠছে। পানি নেমে যাওয়ায় ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন বানভাসি মানুষ।

তবে বন্যাকবলিত ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামাঞ্চলে এখনো খাবারের সংকট রয়েছে। বাড়িঘরে পয়োনিষ্কাশনের দুরবস্থায় ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। বিশেষ করে পানিবাহিত রোগে ভোগান্তিতে নারী-শিশু ও কিশোরীরা। ত্রাণের চাল ও শুকনো খাবার ঠিকমতো না পাওয়ার অভিযোগ স্থানীয় লোকজনের। বন্যায় যুদ্ধ করা ক্লান্ত মানুষগুলো ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন সর্বোচ্চ শ্রম দিয়ে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উজানের ঢল আর ভারী বর্ষণে জেলার সুন্দরগঞ্জ, সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ২৭টি ইউনিয়নের ৭০ হাজারেরও বেশি পরিবার পানিতে বন্দি হয়ে পড়েছিল। এসব এলাকার রাস্তাঘাট, হাটবাজার, ফসলি জমি, মৎস্য খামার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। তাদের মাঝে ৩৮৫ টন চাল ও ৩ হাজার ২৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

সরেজমিন বালাসীঘাট এলাকার ভাষারপাড়া, সৈয়দপুর, কাউয়ারহাটে দেখা গেছে, বসতবাড়ি থেকে সদ্য বন্যার পানি নেমে গেছে। উঠানে এখনো কাদা।

ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলোর অনেক ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে, নষ্ট হয়েছে টয়লেট। ঘরের মেঝে স্যাঁতসেঁতে। ঘরের পিড়ালি ভেঙে গেছে। লোকালয় থেকে পানি নদীতে নেমে গেছে। নদীর পানি দক্ষিণের দিকে প্রবাহিত হচ্ছে।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক জানান, জেলার প্রধান সব নদ-নদীর পানি এক সপ্তাহ থেকে কমতে শুরু করেছে। অনেক চর জেগে উঠেছে। কিছু চরাঞ্চল থেকে পানি নামতে সময় লাগবে। সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাচ্ছে। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দুর্গত এলাকার সব পানি নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। জেলায় আপাতত আর পানি বাড়ার আশঙ্কা নেই। 

এর আগে ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ৩ জুলাই থেকে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ঘাঘট ও করতোয়ার পানি বেড়ে যাওয়ায় জেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে তিস্তা, ঘাঘট ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়। 

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. জুয়েল মিয়া জানান, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। চার উপজেলার দুর্গত এলাকায় প্রতিদিন পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। বন্যাদুর্গত একটি মানুষেরও না খেয়ে থাকার সুযোগ নেই। কারণ প্রতিটি এলাকায় ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

শনিবার শনিবার চট্টগ্রামে কারফিউ বিরতি ১৪ ঘণ্টা

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:৪৩ এএম
আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১০:২২ এএম
শনিবার চট্টগ্রামে কারফিউ বিরতি ১৪ ঘণ্টা
ছবি: খবরের কাগজ

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে আজ (শনিবার) কারফিউ বিরতি থাকবে ১৪ ঘণ্টা। সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বিরতি দিয়ে পরবর্তী ১০ ঘণ্টা কারফিউ বলবৎ থাকবে।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নগর পুলিশের মুখপাত্র কাজী তারেক আজিজ। 

তিনি খবরের কাগজকে বলেন, শনিবার নগরীতে ১৪ ঘণ্টা কারফিউ বিরতি থাকবে। এরপর থেকে পুনরায় কারফিউ চলবে। পরের দিনের সিদ্ধান্ত শনিবার সন্ধ্যায় জানানো হবে।’

এর আগে শুক্রবার (২৬ জুলাই) সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত কারফিউ বিরতি ছিল। তার আগের দুইদিন সকাল ছয়টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বিরতি ছিল। 

চট্টগ্রামে শুরুতে ১৯ জুলাই থেকে তিন দিন কারফিউতে কড়াকড়ি ছিল। এই তিন দিন বিরতি ছিল মাত্র দুই ঘণ্টা। পরে ধীরে ধীরে বিরতি বাড়ানো হয়।

মনির/ইসরাত চৈতী/অমিয়/

সোনাহাট স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তনি চালু হলেও স্বাভাবিক হয়নি কার্যক্রম

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:১৮ এএম
আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:১৮ এএম
আমদানি-রপ্তনি চালু হলেও স্বাভাবিক হয়নি কার্যক্রম
ছবি : খবরের কাগজ

কারফিউ জারি এবং ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্নে চার দিন বন্ধ থাকার পর গত বুধবার কুড়িগ্রামের সোনাহাট স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি শুরু হয়েছে। তবে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক না হওয়ায় পণ্য বেচাকেনা হচ্ছে না। ফলে বেকার হয়ে পড়েছেন পাঁচ হাজার শ্রমিক। আর্থিক ক্ষতিতে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। 

বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, চার দিনে প্রায় ২৫ লাখ টাকার রাজস্ব হারিয়েছে সরকার। ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা বলছেন, বেচাকেনা বন্ধ ও ভারত থেকে পণ্যবাহী ট্রাক এলেও ইন্টারনেট না থাকায় পণ্য খালাস করা যায়নি। ফলে খরচ বেড়েছে। ছিল না ব্যাংকিং সুবিধা। সব মিলে রাজস্বের সমপরিমাণ ক্ষতি হয়েছে ব্যবসায়ীদেরও। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলে পরিবহনব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। আন্দোলনের পরিস্থিত খারাপ হওয়া সঙ্গে সঙ্গে বেচাকেনা কমে যায়। একপর্যায়ে কারফিউ জারি করে সরকার। তার আগে বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট। ফলে গত শনিবার বন্দরের সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশ ও ভারতের ব্যাংকে আর্থিক লেনদেন করতে না পারায় নতুন করে এলসি খুলতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে আগের করা এলসির পণ্য (পাথর) এলেও ইন্টারনেটের অভাবে তথ্য নিশ্চিত হতে না পারায় সেসব পণ্য খালাস করা যায়নি। ফলে দীর্ঘসময় চালক-শ্রমিকসহ পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলো অবস্থান করতে হয়।

বুধবার বন্দর চালু হলেও সড়ক যোগাযোগও নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সুবিধা না থাকায় এখন পুরোদমে কার্যক্রম শুরু হয়নি। ফলে কিছু শ্রমিক কাজ পেলেও বেশির ভাগ এখনো বেকার সময় পার করছেন। বন্দরের শ্রমিক শাহজালাল মিয়া বলেন, ‘শ্রমিকরা দিন আয় করে দিন চালায়। কাজ ছিল না আয় ছিল না। ঋণ, ধারকর্জ ছাড়া বাঁচার উপায় নাই।’ 

সোনাহাট স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি আবু তাহের ফরাজী বলেন, বন্দরসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বড় সমস্যায় পড়েছেন। একদিকে ইন্টারনেট নাই। পণ্য খালাস করা যাচ্ছে না। ব্যাংকিং করার সুযোগ নেই। অন্যদিকে সড়কে ট্রাক চলাচল করতে না পারায় কেনাবেচা বন্ধ ছিল। সব মিলে আর্থিক ক্ষতিতে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।

স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সরকার রাকীব আহমেদ জুয়েল বলেন, ‘যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, তাতে বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার সুযোগ ছিল না। ফলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট শ্রমিকরাও কর্মহীন হয়ে পড়েন। তবে আমদানি-রপ্তানিসহ বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।’ 

সোনাহাট স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) মো. আতিকুল ইসলাম ইসলাম বলেন, ‘কারফিউর কারণে গত শনিবার থেকে মঙ্গলবার বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় প্রায় ২৫ লাখ রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বুধবার থেকে বন্দরের কার্যক্রম চালু হয়েছে। তবে এখনো পুরোদমে বা স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়নি। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করছি। সড়ক যোগাযোগ ভালো থাকলে এ অবস্থা কেটে যাবে।’