![চলতি বছরে কমোডিটি এক্সচেঞ্জের যাত্রা শুরু](uploads/2024/02/12/1707731413.CSE.jpg)
চলতি বছরের শেষ দিকে দেশের প্রথম কমোডিটি এক্সচেঞ্জের যাত্রা শুরু হবে। এর ফলে দেশি-বিদেশি ক্রেতারা ডিজিটিাল ফ্ল্যাট ফর্মে পণ্য কেনা-বেচার সুযোগ পাবেন। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গত শনিবার এ বিষয়ে বিএসইসি ও চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসির (সিএসই) মধ্যে দুই দিনব্যাপী নলেজ শেয়ারিং কর্মশালা শুরু হয়েছে।
কমোডিটি এক্সচেঞ্জ কী
কমোডিটি এক্সচেঞ্জ পণ্য কেনাবেচার ডিজিটাল প্ল্যাটফরম, যেখানে বিভিন্ন পণ্য কাগুজে বা ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে কেনাবেচা হয়ে থাকে। মূল পণ্যটি কোনো গুদামে বা মাঠে থাকে। সেখান থেকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর এটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু হলে দেশি-বিদেশি সব ক্রেতা-বিক্রেতা ডিজিটাল প্ল্যাটফরম ব্যবহার করে পণ্য কেনাবেচার সুযোগ পাবেন। এতে পণ্য কেনাবেচায় স্বচ্ছতার পাশাপাশি ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত হবে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু হলে পণ্যের উৎপাদক ও ভোক্তা সঠিক দামে পণ্য কেনাবেচা করতে পারবেন। অর্থনীতিতে নতুন গতি আসবে। বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য কমে আসবে।
সূত্র জানায়, গম, তুলা ও সোনা কেনাবেচার সুযোগ রেখে দেশে প্রথম পণ্য বিপণনের এই মাধ্যম চালু করতে কাজ করছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের আর্থিক বাজারের জন্য কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্ল্যাটফরমের ধারণাটি নতুন এবং বাংলাদেশের মতো বৃহৎ বাজার বিবেচনায় এ দেশে কমোডিটি এক্সচেঞ্জের সম্ভাবনা অনেক। কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালুর মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে উন্নয়নের এক নতুন মাত্রা যোগ হবে।
কমোডিটি এক্সচেঞ্জের পণ্য কী
কমোডিটি এক্সচেঞ্জের পণ্যগুলো কৃষি পণ্য ও অকৃষি পণ্য- দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। কৃষি পণ্যের মধ্যে রয়েছে নিত্য পণ্য, যেমন চাল, ডাল, গম, পেঁয়াজ, আলু, ভোজ্যতেল, ফল, চা ইত্যাদি। অকৃষি পণ্যের মধ্যে রয়েছে জ্বালানি তেল, গ্যাস, স্বর্ণ, লোহা, কয়লা ইত্যাদি। বিশ্বব্যাপী কমোডিটি এক্সচেঞ্জে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া ১০টি পণ্য হলো অপরিশোধিত জ্বালানি তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, স্বর্ণ, রুপা, কপার, গম, তুলা, ভুট্টা, চিনি ও কফি।
ব্রোকারেজ হাউস হিসেবে যুক্ত হতে পারবে কারা
আইনে বলা হয়েছে, লেনদেনের জন্য অনুমোদিত ‘ট্রেক হোল্ডার’ বা ব্রোকারেজ হাউস ছাড়া অন্য কেউ কমোডিটি এক্সচেঞ্জে লেনদেন করতে পারবে না। ব্রোকার হিসেবে নিবন্ধনের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউসের ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন হতে হবে ১০ কোটি টাকা। ব্রোকারেজ হাউসের পরিচালনা পর্ষদের কোনো সদস্য যদি অপরাধ, প্রতারণা ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকেন বা ঋণখেলাপি হন, তবে ওই ব্রোকারেজ হাউস নিবন্ধনের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
গত বছরের অক্টোবরে ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (কমোডিটি এক্সচেঞ্জ) বিধিমালা-২০২৩ তৈরি করে গেজেট আকারে প্রকাশ করে।
কমোডিটি এক্সচেঞ্জ বিধিমালায় উল্লেখ রয়েছে, কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠায় ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন ৪০০ কোটি টাকা হওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
পরিশোধিত মূলধনের নিট সম্পদ হিসেবে সব সময় ৭৫ শতাংশ রাখতে হবে। কম্পানি আইন ১৯৯৪ মোতাবেক কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার জন্য অবশ্যই পাবলিক লিমিটেড কম্পানি হতে হবে।
কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠায় ১৩ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদের মধ্যে সাতজন থাকবেন স্বতন্ত্র পরিচালক। আর ওই স্বতন্ত্র পরিচালকদের মধ্যে থেকে চেয়ারম্যান হিসেবে একজনকে নির্বাচিত করা হবে বাংলাদেশে ১৭ কোটি মানুষের বিশাল এক বাজার থাকলেও এখানে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ ছিল না। দেশে একটি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ গড়ে তুলতে ২০০৭ সালের ১৬ এপ্রিল সরকারের পক্ষ থেকে ‘কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্যতা যাচাই’ শীর্ষক একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই উদ্যোগ চাপা পড়ে যায়। পরে ২০১৭ সালে চিটাগাং স্টক এক্সচেঞ্জ কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠে। ওই বছরের আগস্টে চিটাগাং স্টক এক্সচেঞ্জ অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে চিঠি দিয়ে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার আগ্রহ জানায়।
অর্থ মন্ত্রণালয় ওই চিঠি দেশের পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিতে পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানায়। পরবর্তী সময়ে চিটাগাং স্টক এক্সচেঞ্জ কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ভারতের মুম্বাইভিত্তিক মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জের (এমসিএক্স) সাথে চুক্তি করে।
চিটাগাং স্টক এক্সচেঞ্জ নিজেদের আওতায় কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার তোড়জোড় করলেও ঢাকা স্টক একচেঞ্জও একপর্যায়ে আগ্রহী হয়ে ওঠে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের আওতায় কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করার চেষ্টা শুরু হয় কিছুদিন পরে। কিন্তু সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে অবশেষে চট্টগ্রামেই কমোডিটি স্টক এক্সচেঞ্জের কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। গম, তুলা ও সোনা কেনাবেচার সুযোগ রেখে দেশে প্রথম পণ্য বিপণনের এই মাধ্যম চালু করতে কাজ করছে (সিএসই)।