![লুব-রেফের মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব](uploads/2024/02/22/1708585800.lub-rref_lubricant_factory.jpg)
ডলারসংকটের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের প্রতিষ্ঠান লুব-রেফ বাংলাদেশ লিমিটেডের। ডলারের অভাবে এলসি খুলতে না পারায় কাঁচামাল আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। ফলে চাহিদামতো উৎপাদন করতে পারছে না কোম্পানি। এতে করে মুনাফা কমে গেছে।
লুব-রেফ বাংলাদেশ লিমিটেডের চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর) আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয়ের পাশাপাশি মুনাফাও কমেছে।
তথ্যে দেখা যায়, কোম্পানিটি চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে শেয়ারপ্রতি আয় কমেছে শূন্য দশমিক ২৫ পয়সা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ১ টাকা ৫ পয়সা। এক বছরের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি আয় কম হয়েছে শূন্য দশমিক ৮০ পয়সা বা ৭৬ শতাংশ।
প্রতিষ্ঠনটির আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে কোম্পানি পরিচালনায় শেয়ারপ্রতি নগদ অর্থ প্রবাহ দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ৪০ পয়সা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে কোম্পানি পরিচালনায় শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহ ছিল ১ টাকা ৮০ পয়সা।
লুব-রেফ বাংলাদেশ লিমিটেডের কোম্পানি সেক্রেটারি কবির হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, অর্থনৈতিক মন্দার কারণে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে কোম্পানির আয় কমেছে ব্যাপকভাবে। ডলারসংকটের কারণে পণ্যের চাহিদা এবং পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, ডলারসংকটে কাঁচামাল আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারছে না তাদের প্রতিষ্ঠান। এতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে মুনাফায়। কারণ লুব্রিক্যান্ট রিসাইক্লার এবং ব্লেন্ডার লুব্রিক্যান্ট পুরোটাই আমদানিনির্ভর।
ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় এবং বিদেশি উৎস থেকে উচ্চমূল্যে কাঁচামাল সংগ্রহ করতে হয়েছে। এতে তাদের পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে কোম্পানির পণ্যগুলোকে প্রতিযোগিতায় পড়তে হয়, যা তাদের ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বলে তিনি জানান।
তথ্যে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে বিক্রি কমেছে ৫৭ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানটি প্রথম ৬ মাসে মোট বিক্রি করেছে ৩৮ কোটি ৪ লাখ টাকার পণ্য। গত বছরের একই সময় ছিল ৯২ কোটি ৩ লাখ টাকা। চট্টগ্রামে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য কোম্পানিটি ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রাথমিক ঘন প্রস্তাবের মাধ্যমে ১৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানি লুব-রেফ (বাংলাদেশ) মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। ঘাটতি পূরণে কোনো ব্যাংক থেকেই ঋণ নিতে পারছে না কোম্পানিটি। ইতোমধ্যে কোম্পানিটির সব স্থায়ী সম্পদ বন্ধক রেখে বিভিন্ন ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে।
এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নীতিগত সহায়তা চেয়েছে লুব-রেফ। সম্প্রতি সময়ে কমিশনের কাছে চিঠি পাঠিয়ে সার্বিক অবস্থা তুলে ধরে নীতি-সহায়তা চেয়ে আবেদন করে চিঠি দিয়েছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, উদ্যোক্তা এবং আইপিওর মাধ্যমে বর্তমানে কোম্পানির ইক্যুইটি শেয়ারের পরিমাণ ১৪৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা। কোম্পানির দীর্ঘ এবং স্বল্পমেয়াদি ঋণ আছে যথাক্রমে ৫২ কোটি ৯৭ লাখ এবং ৭৪ কোটি ২১ লাখ টাকা। এই দায় পরিশোধ করতে কোম্পানির কমপক্ষে ১৪০ কোটি টাকার ব্যবসায়িক মূলধন প্রয়োজন, যেখানে কোম্পানির এখন অর্থায়ন এবং অর্থায়ন ছাড়া উভয়ভাবেই ৭০ কোটি টাকার ব্যবসায়িক মূলধন আছে।
জ্বালানি খাতের কোম্পানি লুব-রেফ (বাংলাদেশ) লিমিটেড পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০২১ সালে। প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে কোম্পানিটি পুঁজিবাজার থেকে ১৫০ কোটি টাকার তহবিল সংগ্রহ করে। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কোম্পানিটি এ তহবিলের প্রায় ৬৫ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছে। কোম্পানিটির আইপিও তহবিল ব্যয়সংক্রান্ত প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তথ্যানুসারে আইপিওর মাধ্যমে সংগৃহীত ১৫০ কোটি টাকার মধ্যে যন্ত্রপাতি আমদানি ও স্থাপন বাবদ ৯৮ কোটি, ব্যাংকঋণ পরিশোধ বাবদ ৪৬ কোটি ৪ লাখ ৩০ হাজার ২৮২ ও আইপিও প্রক্রিয়ার খরচ বাবদ ৫ কোটি ৯৫ লাখ ৬৯ হাজার ৭১৮ টাকা ব্যয় করার কথা ছিল। এর মধ্যে যন্ত্রপাতি আমদানি বাবদ গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কোম্পানিটি ৪৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৭ হাজার ১০৭ টাকা ব্যয় করেছে, যা এ খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের ৪৬ দশমিক ১০ শতাংশ। ব্যাংকঋণের জন্য বরাদ্দ করা পুরো অর্থই কোম্পানিটি ব্যয় করেছে। অবশ্য আইপিওর খরচ বাবদ এখনো কোম্পানিটির ১৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩১২ টাকা অব্যবহৃত রয়েছে, যা এ খাতে বরাদ্দ করা অর্থের ২ দশমিক ৬৮ শতাংশ। আইপিও প্রসপেক্টাস অনুসারে যন্ত্রপাতি বাবদ বরাদ্দ করা অর্থ গত ফেব্রুয়ারির মধ্যে ব্যয় করার সময়সীমা নির্ধারিত ছিল। সব মিলিয়ে গত ফেব্রুয়ারি শেষে কোম্পানিটি আইপিও তহবিল থেকে ৯৭ কোটি ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৯৫ টাকা ব্যয় করেছে। অব্যবহৃত রয়েছে ৫২ কোটি ৯৮ লাখ ৮ হাজার ২০৫ টাকা।
২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের সুপারিশ করেছিল কোম্পানিটি। এ সময় কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ২ টাকা ১৩ পয়সা, আগের অর্থবছরে যা ছিল ৩ টাকা ৪১ পয়সা। ২০২১-২২ অর্থবছরে কোম্পানিটির এনএভিপিএস ছিল ৩৩ টাকা ৯০ পয়সা। প্রতিষ্ঠানটি ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে এনএভিপিএস ছিল ৩২ টাকা ৩৭ পয়সা।
২০২১ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত লুব-রেফের অনুমোদিত মূলধন ২৫০ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ১৪৫ কোটি ২৪ লাখ ৩০ হাজার। রিজার্ভে ছিল ২৬১ কোটি ৫ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১৪ কোটি ৫২ লাখ ৪৩ হাজার ১৪৪। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে রয়েছে ৩৫ দশমিক ৭০ শতাংশ শেয়ার। এ ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৩ দশমিক শূন্য ৪, বিদেশি দশমিক শূন্য ৬ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে বাকি ৪১ দশমিক ২০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।