![কলা চাষে দেলোয়ারের আয় বছরে ৪০ লাখ টাকা](uploads/2024/02/28/1709099450.laxmipur.jpg)
দেশি জাতের বিষমুক্ত কলা চাষের সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে মিষ্টিকুমড়া ও পেঁপে চাষ করে সাড়া ফেলেছেন লক্ষ্মীপুরের দেলোয়ার হোসেন সবুজ।
১০ একর জমি বর্গা নিয়ে কলা চাষ করে সবুজ প্রথম বছরে বিক্রি করেন ৩৭ লাখ টাকার। চাষের দ্বিতীয় বছর অর্থাৎ এ বছর তিনি ৪০ লাখ টাকার কলা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদী।
সবুজই একমাত্র চাষি যিনি লক্ষ্মীপুরে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে কলা চাষ শুরু করেছেন। কলা চাষের পাশাপাশি এ মৌসুমে ৩ একর জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের পেঁপে চাষ করেছেন। সাথি ফসল হিসেবে জমিতে মিষ্টিকুমড়া লাগিয়েছেন। মিষ্টিকুমড়ার ফলনও ভালো হয়েছে। ইতোমধ্যে মিষ্টিকুমড়া বাজারে বিক্রি করতে শুরু করেছেন। কুমড়া বিক্রি থেকে এক লাখ টাকা আয় করতে পারবেন বলে ধারণা করছেন। অপরদিকে আগামী দুই মাসের মধ্যে তার পেঁপেগাছ ফলন দিতে শুরু করবে। ফলন ভালো হলে ১২ মাসি এই পেঁপে থেকে প্রতি মাসে লাখ টাকার ওপরে আয় করতে পারবেন বলে জানান সবুজ।
সবুজের কলা ও পেপে চাষ জেলার বেকার যুবকদের আগ্রহী করে তুলেছে। তার অনুপ্রেরণায় অনেকেই কলা চাষের জন্য আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। সবুজের কাছ থেকে চারা ও পরামর্শ নিচ্ছেন।
সদর উপজেলার নলডগি গ্রামের বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন সবুজ পেশায় একজন দর্জি ছিলেন। কিন্তু সে পেশায় সুবিধা করতে না পেরে নতুন কিছু করার চিন্তা করতে থাকেন। একসময় ইউটিউবের এক ভিডিওতে কলা চাষের ধারণা পান।
জমি বর্গা নিয়ে এবং নড়াইল থেকে কলার বীজ এনে শুরু করেন কলা চাষ। গাছের পরিচর্যা বিষয়ে আগে থেকে প্রশিক্ষণ না থাকায় তার পক্ষে সঠিক পদ্ধতিতে চাষ করা কঠিন হয়ে পড়ে। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারাও তাকে সহযোগিতা করতে পারেননি।
ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিও দেখে নিজের অভিজ্ঞতা বাড়াতে থাকেন। চালিয়ে যেতে থাকেন বাগানের পরিচর্যা। একসময় সবুজের কলা বাগান স্থানীয় বাসিন্দাদের অবাক করে তোলে। গাছে গাছে দেখা যায় শত শত কলার ছড়ি। সবুজের কলার বাগানের সুনাম পৌঁছে যায় জেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের কাছে। কলার বাগান দেখতে আসেন জেলা কৃষি কর্মকর্তা জাকির হোসেন। তিনি পরামর্শ ও সার দিয়ে সহযোগিতা করেন।
সবুজ জানান, ইতোমধ্যে কলা বিক্রির আয় দিয়ে জমির মালিকের বর্গার টাকা, বাবার রেখে যাওয়া ঋণ শোধ করেছেন।
কলাচাষি সবুজ জানান, কলা ও পেঁপে ১২ মাসি ফসল। একবার চাষ করলে ১২ মাসই ফলন পাওয়া যায়। প্রতি সপ্তাহে উৎপাদিত ফসল বিক্রি করা যায়। কলা চাষে তিনি কোনো ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করেন না। বেশির ভাগ সময় গাছে পাকা কলা বিক্রির চেষ্টা করেন। বর্তমানে তার বাগানে ৫ থেকে ৬ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করছেন। এখন তিনি নতুন চাষিদের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করতে পারছেন।
লক্ষ্মীপুর জেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. জাকির হোসেন বলেন, ‘আমরা সবুজের কলা চাষের তথ্য পেয়ে তার বাগান পরিদর্শনে গিয়েছি। তাকে সারসহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। তার হাত ধরে বাণিজ্যিকভাবে লক্ষ্মীপুরে নতুন করে কলা চাষ শুরু হয়েছে। তার কলাবাগান লক্ষ্মীপুরের বেকার যুবকদের প্রেরণা হিসেবে কাজ করছে। সবুজের মতো যুবকরা স্থানীয়ভাবে কলা চাষে এগিয়ে এলে এ জেলার কলার চাহিদা পূরণ হবে। বর্তমানে এ জেলার চাহিদা পূরণ করতে নরসিংদী ও নড়াইল থেকে কলা নিয়ে আসেন ব্যবসায়ীরা। এতে দামও বেশি পড়ে এবং বিষমুক্ত কলাও পাওয়া যায় না।