![২ হাজার কোটি টাকার লেনদেন চলে এসেছে ৫০০ কোটির ঘরে](uploads/2024/04/04/1712213684.dhaka-exchange.jpg)
ধারাবাহিকভাবে দেশের পুঁজিবাজারে লেনদেন কমেছে। জানুয়ারি মাসে পুঁজিাবাজারে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পর প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন বেড়ে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি চলে আসে। সূচক বেড়ে ২২ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে চলে যায়।
অথচ চলতি সপ্তাহের চার দিনে দৈনিক গড়ে ৪৩৩ কোটি লেনদেনে হয়েছে। গত সপ্তাহে এর পরিমাণ ছিল ৪৯৩ কোটি টাকা। এর আগের সপ্তাহে ডিএসইতে দৈনিক গড় লেনদেন হয় ৪৯৬ কোটি টাকা। সে হিসাবে তিন সপ্তাহ ধরে পুঁজিবাজারে ৫০০ কোটি টাকার নিচে লেনদেন হচ্ছে।
বাজারসংশ্লিষ্টদের মতে, সুদের হার বৃদ্ধি, কারসাজি এবং পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার ঘন ঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের ফলে বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
বর্তমান বাজার পরিস্থিতি
বুধবার (৩ এপ্রিল) ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৩৭ পয়েন্ট বাড়লেও এখনো প্রায় তিন বছরের মধ্যে এটিই ডিএসইএক্সের সর্বনিম্ন অবস্থান। এর আগে সর্বশেষ ২০২১ সালের ১২ মে এ সূচক ৫ হাজার ৭৫০ পয়েন্টে ছিল। গতকাল এটি অবস্থান করছিল ৫ হাজার ৭৭৬ পয়েন্টে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার ঘন ঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন, ব্যাংকের সুদের হার বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে রয়েছে কারসাজি চক্রের দৌরাত্ম্য- সব মিলিয়ে পুঁজিবাজারে এমন দশা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, ডিএসইতে গতকাল ৪৩৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়। এর আগের দিন এ বাজারে ৩৬৭ কোটি ৬৫ লাখ ৯৬ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এরও আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৪৬৮ কোটি ৮২ লাখ ১২ হাজার টাকার শেয়ার।
পুঁজিবাজারে টানা দরপতনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম হতাশা লক্ষ করা গেছে। বাজারের এ পতন শুরু হয়েছে শেয়ারের দামের সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বা ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পর থেকে। গত ২১ জানুয়ারি থেকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কয়েক ধাপে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়। এরপর কিছুদিন বাজারে শেয়ারের দাম বাড়লেও ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে মোটামুটি একটানা দরপতন শুরু হয়।
পুঁজিবাজারের পতন ঠেকাতেই ২০২২ সালের জুলাই থেকে সর্বশেষ দফায় ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা হয়েছিল। এর মাধ্যমেই দেড় বছরের বেশি সময় কৃত্রিমভাবে বাজারকে একটি সীমার মধ্যে ধরে রেখেছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা। কিন্তু ফ্লোর প্রাইস উঠে যাওয়ার পর বাজার আর বেঁধে রাখা যায়নি। থেমে থেমে দরপতন চলছেই।
কেন দরপতন
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ফ্লোর প্রাইস দিয়ে বাজারকে দীর্ঘদিন কৃত্রিমভাবে ধরে রেখে যে ক্ষতি করা হয়েছে, তারই ফলাফল এখনকার এ দরপতন। ফ্লোর প্রাইস যে দীর্ঘ মেয়াদে বাজারের জন্য নানামুখী সংকট তৈরি করেছে, তা এখন পরিষ্কার হয়েছে। পাশাপাশি ব্যাংক খাতে নগদ টাকার যে সংকট রয়েছে, তাতে সেখান থেকে পুঁজিবাজারে খুব বেশি অর্থ আসার সুযোগ নেই। এসব কারণে বাজারে টানা দরপতন চলছে।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘ফ্লোর প্রাইসের কারণে দেশের পুঁজিাবাজরে কিছু সংকট তৈরি হয়েছিল। এসব সংকটর ফলাফল এখন দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া আমানতের বিপরীতে সুদের হার বেড়েছে, সুদের হার বাড়লে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ প্রবণতা কমে।
তাই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বিষয়ে খুব বেশি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণেও দেশের পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রবণতা বিদ্যমান। তবে এ নেতিবাচক প্রবণতা থেকে শিগগিরই দেশের পুঁজিবাজার শিগগিরই ইতিবাচক হবে বলেও মনে করেন তিনি।
বাজারে সাপোর্ট দেওয়ার দায়িত্বে থাকা ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) টাকার অভাবে পড়েছে। ব্যাংক, মার্চেন্ট ব্যাংক, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলো শেয়ার কেনার বদলে বিক্রির চাপ বাড়াচ্ছে। আবার কিছু খাতের প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। সবকিছু মিলিয়েই বাজারে টানা দরপতন চলছে।
বিশ্লেষকদের মতে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। ঘন ঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুঁজিবাজার নিয়ে ছড়ানো হচ্ছে নানা গুজব। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) দায়িত্বশীলদের নিয়ে নানা কটু কথা বলা হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে বাজারে এখন চরম আস্থার সংকট।
এমন পরিস্থিতিতে ‘জেড’ গ্রুপ নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সিদ্ধান্তহীনতা পুঁজিবাজার আবার অস্থিতিশীল করে তোলে। কীসের ভিত্তিতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ‘জেড’ গ্রুপে যাবে, সে বিষয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এক নির্দেশনা জারি করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। ওই নির্দেশনার শেষ পয়েন্টে বলা হয়, ইস্যুয়ার কোম্পানির পরবর্তী লভ্যাংশ-সংক্রান্ত ঘোষণা অথবা বার্ষিক/অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ-সংক্রান্ত ঘোষণার দিন থেকে এ নির্দেশনা কার্যকর হবে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন নির্দেশনা থাকলেও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে হুট করে ১৮ ফেব্রুয়ারি ২২ কোম্পানিকে ‘জেড’ গ্রুপে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ঘোষণা আসে নতুন করে আর কোনো কোম্পানিকে ‘জেড’ গ্রুপে নেওয়া হবে না। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আরও কয়েকটি কোম্পানিকে ‘জেড’ গ্রুপে নিয়ে যাওয়া হয়।
এভাবে কিছু কোম্পানিকে ‘জেড’ গ্রুপে নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই দরপতনের মধ্যে পড়ে পুঁজিবাজার। প্রায় এক মাস ধরে ধারাবাহিক দরপতনের মধ্যে রয়েছে পুঁজিবাজার।