কিশোরগঞ্জের হাওরে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রচণ্ড দাবদাহ ও রোদের মধ্যে হাওরের কৃষকরা ধান শুকিয়ে ঘরে তুলছেন। বিভিন্ন এলাকার ৩০ হাজারের বেশি শ্রমিক ধান কাটার কাজ করছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আগামী সোমবারের মধ্যে কিশোরগঞ্জের শতভাগ বোরো ধান কাটা শেষ হবে। ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম, বাজিতপুর, নিকলি ও তাড়াইলের বড় বড় হাওরের ৮৫ শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়েছে।
এখন হাওরে চলছে ধান শুকিয়ে ঘরে তোলার কাজ। ধান শুকানোর পাশাপাশি দিন-রাত হাওরের প্রত্যেক বাড়িতে চলছে ধান সেদ্ধ দেওয়ার কাজ।
ধান মাড়াইয়ের পর ধান সেদ্ধ দেওয়ার কাজ করেন বাড়ির নারীরা। বড় তেলের ড্রামে পরিমাণমতো পানি দিয়ে ধানের চিটা অথবা শক্ত লাকড়ি দিয়ে ধান সেদ্ধ দেওয়া হয়। এরপর পুনরায় শুকিয়ে চাল তৈরির উপযোগী করা হয়। ধান থেকে চাল করার যে প্রক্রিয়া সেটি একমাত্র হাওরের বিভিন্ন গ্রামে গেলেই চোখে পড়বে।
সরেজমিনে হাওরে গিয়ে দেখা গেছে, হাওরের বেশির ভাগ এলাকার ধান কাটা শেষ। এখন চলছে ধান শুকিয়ে ঘরে তোলার প্রস্তুতি। এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় কৃষকরা স্বস্তিতে ঘরে ধান তুলতে পেরেছেন। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও হাওরের বোরো ফসল কাটতে আসা শ্রমিকরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
টাঙ্গাইলের নাগরপুর থেকে ধান কাটার শ্রমিকের কাজ করতে এসেছেন রাকিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা নাগরপুর থেকে একসঙ্গে ১৮ জন এসেছি কিশোরগঞ্জের হাওরে। ১৯ দিন ধরে কাজ করছি। সারা দিন দুই দলে বিভক্ত হয়ে কাজ করি। পারিশ্রমিক হিসেবে ১০০ মণের বেশি ধান পেয়েছি।’
সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থেকে ধান কাটার কাজ করতে এসেছেন মো. রুবেল। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিবছর এই হাওরাঞ্চলে ধান কাটার কাজ করতে আসি। আগে ধান কাটার শ্রমিকদের চাহিদা ছিল কিন্তু বর্তমানে হারভেস্টার মেশিনে ধান কাটায় আমাদের কাজ কমে যাচ্ছে। গতবারের তুলনায় এবার অনেক কম ধান পেয়েছি। ধান কাটার বিনিময়ে অনেক কৃষক টাকা দেন, আবার অনেকেই ধান দেন।’
সিরাজগঞ্জের চৌহালী থেকে ধান কাটতে আসা আবু সুফিয়ান বলেন, ‘আমাদের বাড়ি নেই। নদী সব ভেঙে নিয়ে যায়। ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষ আমি, অনেক কষ্টে কাটবে এই বর্ষাকাল। তাই ভবিষ্যৎ চিন্তা করে এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে ধান কাটতে এসেছি। ৪০ শতাংশ (১ কানি) জমির ধান কেটে দিলে আমরা এক মণ ধান পাই। যারা ধান কম পান তাদের থেকে কম ধান নিই। যারা টাকা দেন টাকা নিই। তবে বেশির ভাগ কৃষক টাকার বদলে ধান দিচ্ছেন। যে ধান পেয়েছি বর্ষাকাল চলে যাবে। তিন দিনের মধ্যে হাওরের কাজ শেষ হয়ে যাবে। এরপর বাড়ির ফিরে যাব।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্যমতে, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক ধান কাটার কাজ করতে কিশোরগঞ্জে এসেছেন। তার মধ্যে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক হাওরাঞ্চলে ধান কাটতে এসেছেন। বর্তমানে ৬৩৭টি হারভেস্টার মেশিন, ৪৭টি রিপার মেশিন ধান কাটার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবদুস সাত্তার খবরের কাগজকে বলেন, ‘এ বছর হাওরে হাইব্রিড ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় স্বাচ্ছন্দ্যে কৃষকরা ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সোমবারের মধ্যে হাওরের সব জমির ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করছি। এ ছাড়া যাদের ধান ৮০ শতাংশ পাকাপোক্ত হয়েছে, তাদের ধান কেটে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য কৃষি বিভাগ থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’