লোকসান থেকে বের হতে পারছে না দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিষ্ঠান ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো)। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে প্রতিষ্ঠানটির লোকসান হয়েছে ২৭০ কোটি ৮১ লাখ টাকা। ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন এবং বেশি দরে কিনে কম দামে বিদ্যুৎ বিক্রি করার কারণে লোকসান অব্যাহত রয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির লোকসান হয়েছিল ৫৪১ কোটি টাকা। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার ক্ষতি এবং ঋণের সুদের কারণে লোকসান হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে গত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে নিট লোকসান ছিল ১৩৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। তবে গত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে প্রতিষ্ঠানটির লেনদেন ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪ হাজার ৬৪৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা হয়েছে।
এদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চে) লোকসান হয়েছে ৭৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে নিট লোকসান ছিল ১৪৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
ডেসকোর এক কর্মকর্তা খবরের কাগজকে বলেন, ‘এই অর্থবছরে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বিদ্যুতের পাইকারি মূল্য বাড়িয়েছিল ২৮ শতাংশ। কিন্তু আমরা খুচরায় বাড়াতে পেরেছি ১৫ শতাংশ। দামের এই পার্থক্য আমাদের লোকসানে নিয়ে গেছে।’ তবে লোকসানের সিংহভাগই হয়েছে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে বলে তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, ‘বিদেশি সংস্থাগুলো থেকে যেসব ঋণ নেওয়া আছে সেগুলো তো ডলারে পরিশোধ করতে হচ্ছে। ডলারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে ঋণ পরিশোধের খরচও বেড়ে গেছে। আমরা টাকায় আয় করি আর ডলারে ঋণ পরিশোধ করি। এখানেও একটা পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে।’
‘যখন ঋণ নেওয়া হয়েছিল তখন ডলারের দাম ছিল ৮২ টাকা। এখন পরিশোধ করতে হচ্ছে এক ডলার সমান ১০৯ থেকে ১১০ টাকায়। কেবল ডলারের বাড়তি দরের জন্য বাড়তি ৪২৮ কোটি টাকা খরচ করতে হয়েছে।’
বিদ্যুৎ বিতরণ পদ্ধতি পরিচালন ও আর্থিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ও গুণগত মান পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে ১৯৯৬ সালের ৩ নভেম্বর থেকে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি ডেসকোর যাত্রা শুরু। ১৯৯৮ সালের সেপ্টেম্বরে ৫০০ কোটি টাকার অনুমোদিত মূলধন নিয়ে মিরপুর অঞ্চলের বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা অধিগ্রহণের মাধ্যমে শুরু হয় বাণিজ্যিক কার্যক্রম।
বর্তমানে মিরপুর, পল্লবী, কাফরুল, কল্যাণপুর, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, গুলশান, বনানী, মহাখালী, উত্তরা, উত্তরখান, দক্ষিণখান, বারিধারা, বাড্ডা, টঙ্গী এবং পূর্বাচলসহ ৪০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা এর আওতাভুক্ত। ডেসকোর সংযোগ এখন ১২ লাখ ৪০ হাজার ১৪০টি।
২০০৬ সালে কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। বর্তমানে এর শেয়ারের ৭৫ শতাংশ সরকারের মালিকানায় আছে। বাকি ২৫ শতাংশের মধ্যে ১৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে, ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে এবং ০ দশমিক ০৬ শতাংশ আছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে।
২০২১-২২ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিল ডেসকোর পর্ষদ। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ৫৯ পয়সা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ১ টাকা ৮৬ পয়সা। ২০২০-২১ হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল ডেসকো। আলোচ্য সময়ে ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ৮৬ পয়সা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ১ টাকা ১৫ পয়সা।
২০১৯-২০ হিসাব বছরেও কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। আগের হিসাব বছরে ১২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় কোম্পানিটি। তার আগের দুই বছরে ১০ শতাংশ হারে নগদ লভ্যাংশ পেয়েছিলেন কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডাররা।
ডেসকো লিমিটেডের অনুমোদিত মূলধন ২ হাজার কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ৩৯৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ২ হাজার ২২১ কোটি ১০ লাখ টাকা। মোট শেয়ার সংখ্যা ৩৯ কোটি ৭৫ লাখ ৬৯ হাজার ৮০৪। এর মধ্যে সরকারের হাতে রয়েছে ৬৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ শেয়ার। এ ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ২৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারী দশমিক শূন্য ৪ ও বাকি ৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে।