প্রায় সব দেশেই অ্যাপলের বিক্রি কমেছে। প্রযুক্তি খাতের অন্যতম শীর্ষ কোম্পানিটির সবশেষ আর্থিক পরিসংখ্যানে এই তথ্য জানানো হয়েছে। খবর বিবিসির।
অ্যাপলের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সম্প্রচার মাধ্যমটির খবরে বলা হয়, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে কোম্পানিটির স্মার্টফোনের চাহিদা ১০ শতাংশেরও বেশি কমেছে। অন্যদিকে একমাত্র ইউরোপ ছাড়া বাকি সব অঞ্চলে অ্যাপলের বিক্রি কমে গেছে।
অ্যাপল বলেছে, সব মিলিয়ে কোম্পানির রাজস্ব আয় ৪ শতাংশ কমে মোট ৯ হাজার ৮০ কোটি (৯০ দশমিক ৮০ বিলিয়ন) মার্কিন ডলারে (৭২ দশমিক ৫০ বিলিয়ন পাউন্ড) দাঁড়িয়েছে। গত এক বছরেরও বেশি সময় পরে এটিই হলো কোম্পানিটির রাজস্ব আয়ের সবচেয়ে বড় পতন।
তা সত্ত্বেও এর ফল প্রত্যাশার চেয়েও খারাপ ছিল না এবং নিউইয়র্কে বাণিজ্য শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অ্যাপলের শেয়ারের দাম বেড়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, কোভিডসংক্রান্ত সরবরাহ বিঘ্নের কারণে অ্যাপলের বিক্রি ও রাজস্ব আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে গত বছরের একই সময়ে বিক্রি খুব ভালো ছিল।
অ্যাপল বলেছে, তারা আশা করছে সামনের মাসগুলোতে তাদের বিক্রি বাড়বে। তবে এই সময়ে নতুন করে কোনো পণ্য বাজারে আনা হবে না এবং একই সময়ের মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) খাতেও নতুন করে কোনো বিনিয়োগ করা হবে না।
খবরে বলা হয়, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে চীনের জটিল ও বৃহত্তর বাজারে অ্যাপলের বিক্রি কমেছে ৮ শতাংশ। এ কারণে অ্যাপলের প্রধান টিম কুক বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনে বিনিয়োগের জন্য চাপ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি বলেছেন, চীনের প্রধান বাজারগুলোতে আইফোনের বিক্রি মূলত বাড়ছে। টিম কুক বলেন, ‘আমি দীর্ঘ মেয়াদে চীন সম্পর্কে একটি দুর্দান্ত দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখি।’
স্থানীয় প্রতিদ্বন্দ্বী হুয়াওয়ের কাছ থেকে চীনের বাজারে তীব্রতর প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হচ্ছে অ্যাপল।
বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ডিএ ডেভিডসনের জ্যেষ্ঠ সফ্টওয়্যার বিশ্লেষক গিল লুরিয়া বলেন, হুয়াওয়ের মতো কোম্পানিগুলো চীনে ভালো করে কারণ, এটি তাদের স্বদেশি ব্র্যান্ড। বিবিসির টুডে প্রোগ্রামকে দেওয়া বক্তব্যে গিল লুরিয়া বলেন, তবে বৈশিষ্ট্য, কার্যকারিতা ও প্রতিপত্তির দিক থেকে, আইফোনে এখনো অন্য যেকোনো হ্যান্ডসেটের তুলনায় বাড়তি সুবিধা রয়েছে। সুতরাং ভোক্তারা যেকোনো সময় পছন্দ করে এবং তাদের কাছে আইফোন কেনার জন্য প্রয়োজনীয় রিসোর্স থাকে- এটি চীনেও আলাদা কোনো বিষয় নয়।
গত ছয় প্রান্তিকের মধ্যে পাঁচটিতেই বিক্রি হ্রাসের মুখোমুখি হওয়া এই কোম্পানিটির লড়াই বিশ্বব্যাপী বাজারের চিত্রের সঙ্গে সম্পূর্ণ বিপরীত। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যানালাইজের তথ্য অনুযায়ী, দীর্ঘ মন্দার পর বছরের প্রথম তিন মাসে বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোনের চালান ১০ শতাংশ বেড়েছে।
লুরিয়া বলেন, প্রায় চার বছর আগে ‘আইফোন ১২’ বাজারে আনার পর থেকে অ্যাপলের হ্যান্ডসেটে গুরুত্বপূর্ণ কোনো উন্নতি দেখা যায়নি। সেই সময় অ্যাপল ৫জি সংযোগের প্রবর্তন করেছিল, যা অনেক গ্রাহককে ফোন আপগ্রেড করতে বাধ্য করেছিল।
লুরিয়া আরও বলেন, তারা (অ্যাপল) আশা করছে যে, এই বছরের শেষের দিকে বাজারে আসবে এমন আইফোন ১৬-তে যথেষ্ট নতুন এআই বৈশিষ্ট্য সংযোজন করে তারা অবশেষে একটি বড় আইফোন আপগ্রেড কার্যক্রম চালু করতে পারবে।
বিবিসি বলছে, অ্যাপল তার অ্যাপ স্টোর ফি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে আইনি লড়াইয়ের মুখোমুখি হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে গুগলের বিরুদ্ধে আরেকটি জরুরি মামলা অ্যাপলের আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসকে হুমকির মুখে ফেলেছে। অ্যাপলের ইন্টারনেট ব্রাউজার সাফারিতে ডিফল্ট সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে গুগলকে স্থাপন করার জন্য অ্যাপল যে অর্থ পায়, তা এই মামলার ফলে হুমকির মুখে পড়েছে।
আদালতের নথিপত্র অনুসারে, এই অর্থ প্রদানের পরিমাণ ২০২২ সালে ছিল প্রায় ২০ বিলিয়ন, যা অ্যাপলকে বাজার থেকে বড় মুনাফা তুলে আনতে সাহায্য করেছিল।
তিন মাসের জন্য কর-পরবর্তী মুনাফা ছিল ২৮ বিলিয়ন ডলার এবং কোম্পানি ঘোষণা করেছে যে, তারা শেয়ার কেনার জন্য ১১০ বিলিয়ন ডলার আলাদা করে রাখছে।
কোম্পানির আর্থিক বিভাগের প্রধান লুকা মায়েস্ত্রি বলেছেন, জুন থেকে আগামী তিন মাসে অ্যাপলের বিক্রি বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।