অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেছেন, সময়ের ব্যবধানে দারিদ্র্যের হার কমেছে। এটা ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। কিন্তু স্বল্প আয়ের মানুষের সংখ্যা কমছে না। যারা ধনী তারা কর দেয় না। কর-জিডিপির অনুপাত বাড়ছে না।
বুধবার (৮ মে) সিরডাপ মিলনায়নে বাংলাদেশ দারিদ্র্য পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন-২০২৩ প্রকাশনার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ড. কাজী খলিকুজ্জমান আহমদ এসব কথা বলেন। ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লিউসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইএনএম) ও সেন্টার ফর ইনক্লিউসিভ ডেভেলপমেন্ট ডায়ালগ (সিআইডিডি) যৌথভাবে এই প্রকাশনার আয়োজন করে। ড. কাজী খলিকুজ্জমান আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এ সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন।
পল্লি কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) সাবেক সভাপতি ড. কাজী খলিকুজ্জমান আহমদ বলেন, বাজার অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যার যত সম্পদ তার সম্পদ আরও বাড়ছে। করোনাকালে ধনীরা আরও ধনী হয়েছে। যার বেশি সম্পদ সে আরও অর্জন করছে।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, জাতীয় আয়ের ২ শতাংশ খরচ করলে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা চলে আসবে। সারা বিশ্বে বৈশ্বিক সমস্যা হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণ। যারা দরিদ্র তারা আরও দরিদ্র হচ্ছে। উপকূলীয় অঞ্চলের লোকেরা বেশি অভিঘাতে পড়েছে। সমন্বয়ের অভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে। দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ২৬টি নীতি পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়েরও কাজ রয়েছে।
ড. কাজী খলিকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘যারা ধনী তারা কর দেয় না। এ জন্য আমাদের দেশে কর-জিডিপির অনুপাত খুবই কম। মাত্র ৮ শতাংশ। তবে ঋণের বোঝা অনেকে বেশি বললেও আমি বলব এটা ঠিক না। আমাদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ঋণ জিডিপির মাত্র ৪২ শতাংশ। যেখানে মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের ১২৯ শতাংশ, জাপানে ২৬৩ শতাংশ। কিন্তু সমস্যা হলো ঋণের সঠিক ব্যবহার হয় না। চুরি চামারি হয়ে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে হবে। কিন্তু এখনো আমাদের দেশে পিছিয়ে থাকারা বের হতে পারছে না। পিছিয়ে পড়ারাও বের হতে পারছে না। আবার ক্ষমতাবানরা পিছিয়ে রাখতে অন্যদের ঠেলে দিচ্ছে।’
সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, ‘দারিদ্র্য পরিচিত বিষয়। এটা সব সময় মানুষের আলোচনায় থাকে। দারিদ্র্য বিমোচনের উদ্দেশ্য ভালো। কিন্তু আমরা অনেকে ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে জিইয়ে রাখি। সরকারের নির্বাচনের ইশতেহারে দারিদ্র্য বিমোচনের কথা বলা হয়েছে। উপোস না থেকে যাতে মানুষ পানি খেতে পারে সরকার সেই ব্যবস্থা করছে। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘরে না থাকলেও বারান্দায় থেকে এটা দেখেছি।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সারা দেশে ৩০০টি খানার তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। তিনটি প্রান্তিক ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য, দারিদ্র্যের গতিশীলতা এবং সামাজিক বর্জনের বহুমাত্রিক বঞ্চনার চিত্র উদঘাটন করেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসকারী ১৭টি সমতল ভূমির জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠী, নদীতে বসবাসকারী যাযাবর (বেদে) ও যৌনকর্মীদের প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়গুলোর মৌলিক সমস্যা মূলত স্থানীয় সরকার ও স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন কাজের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পর্কিত।