![নারী তুমি অনন্যা](uploads/2024/03/02/1709373718.ler-jabe.jpg)
আগামী ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবস। এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য হলো ‘নারীর সমঅধিকার, সমসুযোগ এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ’। এই দিনটিতে যেন নারীর ব্যক্তিত্ব ও স্বকীয়তা ফুটে ওঠে, সেই পরামর্শ নিয়ে এবারের আয়োজন। জানাচ্ছেন মেরিনা আহমেদ।
কথায় আছে, ‘যে রাঁধতে জানে, সে চুলও বাঁধতে জানে।’ যাদের ঘর ও বাহির- দুটিই সামলাতে হয়, তারা সবকিছু কীভাবে সামলান বলুন তো? কিন্তু সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষের রুচি, চাহিদা, প্রয়োজন, পছন্দ সবকিছুতেই এসেছে পরিবর্তন। আগে যেখানে অনেক বেশি কারুকাজ করা আসবাব, ভারী কাঠের আলমারি, লোহার সিন্দুকের প্রচলন ছিল; এখন আধুনিক কোনো ঘরে এসবের স্থান হয় না। এখন আর ঘরে শাড়ি পেঁচিয়ে বসে থাকাটা খুব বেশি অর্থবোধক হয় না। সবাই চায় ঘরের জীবনের মতো বাইরেও যেন কাটানো যায় পরিপাটি সময়। এই পরিপাটি জীবনযাপনকেই বলে ‘টোটাল স্মার্টনেস’। তাই এবার স্মার্টনেস বজায় রাখার জন্য কিছু আলোচনা।
প্রথমেই বাচনভঙ্গি ও সাবলীল ভাষা
স্মার্টনেস ও ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটাতে সবার আগে যে বিষয়টির প্রতি খেয়াল রাখতে হবে, তা হলো কথাবার্তার ধরন। সুন্দর কথাবার্তা দিয়ে সহজেই অন্যকে আকৃষ্ট করা যায়। কথা বলার সময় অবশ্যই কিছু বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।
কথা অবশ্যই গুছিয়ে সুন্দর করে সাবলীলভাবে উপস্থাপন করতে হবে।
সব সময় হাসিমুখে কথা বলুন এবং কথা বলার সময় কখনোই মুখে ও কপালে বিরক্তির ছাপ রাখবেন না।
অবশ্যই শুদ্ধ উচ্চারণের দিকে এবং কখনো আঞ্চলিক টান যেন না আসে সেদিকে খেয়াল হবে।
চিৎকার করে কথা না বলা, যতটা সম্ভব নরম ও কোমল কণ্ঠে কথা বলুন।
কথা বলার সময় অবশ্যই স্পষ্ট উচ্চারণ করতে হবে এবং মুদ্রাদোষগত শব্দ উচ্চারণ থেকে বিরত থাকতে হবে।
আচরণে নমনীয় হোন
নিজেকে স্মার্টভাবে অন্যের কাছে প্রকাশ করার জন্য আচার-ব্যবহারের দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। নম্র, ভদ্র ও অমায়িক আচার-আচরণ দিয়ে একজন ব্যক্তি তার শত্রুকেও বন্ধুতে পরিণত করতে পারে।
বিনা কারণে কখনোই কারও সঙ্গে ধমকের সুরে কথা না বলাই ভালো।
যে যা-ই প্রশ্ন করুক তার উত্তর দিন সুন্দর, মার্জিত ও অমায়িক ভাষায়।
যতটা সম্ভব চেষ্টা করুন মেজাজ ঠাণ্ডা রাখতে এবং উগ্র ও অভদ্র আচরণ পরিহার করতে।
কেউ আপনার সঙ্গে অভদ্র ভাষায় কথা বললেও আপনি মাথা ঠাণ্ডা রেখে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে তার উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করুন। এতে করে তার মধ্যেও ভালো হওয়ার অনুভূতি জন্ম নিতে পারে।
নিচু মানসিকতা পরিহার করে এবং দৃষ্টিভঙ্গি সব সময় ইতিবাচক রেখে সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করুন।
কথা বলার ক্ষেত্রে সব সময় হাসি মুখে কথা বলুন।
শরীর সুন্দর রাখতে
নিজের সৌন্দর্যের কথা কে না ভাবে? অন্যের কাছে নিজের ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করার ক্ষেত্রে শারীরিক সৌন্দর্যও বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। শারীরিক সৌন্দর্য বলতে শরীরের গঠন, ত্বক, হেয়ার স্টাইল, চলাফেরা ইত্যাদি বোঝায়। শারীরিক সৌন্দর্য দিয়ে সহজেই অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়।
অফিস বা বাইরে যাওয়ার আগে অবশ্যই ফেসওয়াশ দিয়ে নিয়মিত মুখ পরিষ্কার করতে হবে।
হাত-পায়ের নখ ছোট রাখুন এবং নিয়মিত সুন্দর করে পরিষ্কার করুন।
চেহারার সঙ্গে মিল রেখে হেয়ার কাট নিতে হবে। কারণ একেক কাট একেকজনের জন্য মানানসই।
বাইরে বের হওয়ার আগে চুল সুন্দর করে ব্রাশ করে নিন।
শরীর সুস্থ রাখতে প্রতিদিন ব্যায়ামের পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
মানানসই পোশাক পরুন
একজন ব্যক্তির রুচিবোধের পরিচয় পাওয়া যায় তার পোশাকের মাধ্যমে। শিক্ষা, কথাবার্তা, আচার-ব্যবহার যতই ভালো হোক না কেন, রুচিশীল পোশাক ব্যবহার না করার কারণে অনেক সময় বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। আপনি কোথায় যাচ্ছেন সেই অনুযায়ী পোশাক নির্বাচন করুন। আসুন জেনে নিই, কোথায় কোন পোশাকে আপনি হতে পারেন আরও বেশি আকর্ষণীয়-
অফিস
পোশাক: এখানে সুতির পোশাকের বিকল্প নেই। হালকা রঙের ঢিলেঢালা সুতির সালোয়ার-কামিজ, কুর্তা বা টপস পরুন। সঙ্গে চুড়িদার, কাবলি সালোয়ার বা প্যান্ট। বৃষ্টিতে হাফসিঙ্কের পোশাকও আরামদায়ক। রঙের ক্ষেত্রে শাড়ি পরতে চাইলে কোটা বা শিফন। চিকন পাড়ের সাদা, উজ্জ্বল নীল, গোলাপি বা হালকা সবুজ রংকে প্রাধান্য দিন। তাঁতের শাড়িও পরতে পারেন।
সাজ: অফিসের সাজ হালকা হবে। মুখে শুধু ফেস পাউডার লাগান। চোখে চিকন করে কাজল বা আইলাইনার ও ঠোঁটে ম্যাট লিপস্টিক দিন। সামনের চুল টেনে পাঞ্চ ক্লিপ দিয়ে আটকান বা পনিটেল করুন অথবা খোঁপা করে কাঁটা গুঁজে দিন। ছোট চুল হলে ব্লো ড্রাই করে ছেড়েও রাখতে পারেন। অবশ্যই হালকা সুগন্ধি ব্যবহার করুন।
বাসা
পোশাক: আরামদায়ক সালোয়ার-কামিজ, টি-শার্ট, ট্রাউজার, কুর্তা বা সালোয়ার পরুন। তাঁত, সুতি বা নিট কাপড়কে প্রাধান্য দিন। হাতাকাটা বা বেবি হাতার ফ্রকও পরতে পারেন।
সাজ: অনেকে ভাবেন, বাড়িতে থাকলে সাজতে হয় না। তবে ফ্রেশ মুডের জন্য। পরিপাটি থাকতে তো বাধা নেই। সবাই ঘুম থেকে ওঠে ফ্রেশ হয়ে প্রথম কাজ হবে চুল আঁচড়ে বাঁধা। রাতের কাপড়টা পাল্টে নিন।
অনুষ্ঠান
দিন: দিনে অনুষ্ঠান হলে হালকা রঙের পোশাক নিন। ওয়েস্টার্ন পোশাক বা সালোয়ার-কামিজ পরুন। সুতি ও হাফসিল্কের গর্জিয়াস পোশাকও পরতে পারেন। টপস ও জিন্স সবচেয়ে ভালো। মসলিন, কাতান, জামদানি শাড়িও দিনের অনুষ্ঠানে ভালো মানায়।
রাত: রাতের অনুষ্ঠানে গাঢ় রং বেছে নিন। স্লিভলেস-হাইনেকের কামিজ ও ব্লাউজ পরুন। কামিজ ও ব্লাউজে ভারী কাজ হলে ভালো মানাবে। শাড়ি পরলে এক রঙের আঁচল ও পাড়ে নকশা আছে এমন শাড়ি বেছে নিন। মানানসই গয়না পরুন। বেশি নকশার পোশাকের সঙ্গে হালকা গয়না পরুন। যদি কামিজের নেক লাইনে ভারী কাজ থাকে, তবে গলায় কিছু না পরে কানে ভারী দুল, আঙুলে একটু বড় আংটি পরতে পারেন। পোশাকের সঙ্গে মানানসই ব্যাগ নিন।
সাজ: পোশাকের মতো সাজও অনেকটা নির্ভর করে শরীর সুন্দর রাখতে অনুষ্ঠানের ধরনের ওপর। দিনের দাওয়াতে হালকা মেকআপ নিন। আর রাতের অনুষ্ঠানে দিনের চেয়ে একটু গাঢ় মেকআপ নিন। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ওয়াটার বেজ ফাউন্ডেশন ও শুদ্ধ ত্বকে ক্রিম বেজ ফাউন্ডেশন ব্যবহার করুন।
শুষ্ক ত্বকে ফাউন্ডেশন দেওয়ার আগে মুখে একট লোশন দিয়ে নিন। এবার কমপ্যাক্ট পাউডার লাগান। চোখ সাজাতে মেরুন, কফি, সবুজ, নীলচে শেড ব্যবহার করুন। চোখে অবশ্যই পানি নিরোধক মাশকারা এবং পেন্সিল আইলাইনার ও পাউডার ব্লাশঅন ব্যবহার করুন। রাতে দুই গালে খুব হালকা গোলাপি, পিচ অথবা ব্রোঞ্জ রঙের ব্লাশঅন লাগান।
ময়েশ্চারসমৃদ্ধ পিংক, কোরাল, ব্রেজ রঙের ম্যাট লিপস্টিক ব্যবহার করুন। লিপস্টিক যেন আপনার স্কিন টোনের সঙ্গে মানায়। চুল টেনে বাঁধুন অথবা ছোট হলে বো ড্রাই করে ছেড়ে রাখুন। পছন্দমতো খোঁপাও করতে পারেন।
কলি