গত কয়েক বছরের মধ্যে এ বছর অতিরিক্ত গরম অনুভূত হচ্ছে। যেসব বাড়িতে আগে ফ্যানের বাতাসে গোটা গ্রীষ্মকাল চলে যেত, সেসব বাড়ির মানুষ আজকাল শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এয়ার কন্ডিশনার, এয়ার কুলার ইত্যাদি) কেনার জন্য খোঁজখবর নিচ্ছেন। কিন্তু অনেকের জন্যই এসি বিলাসিতার নাম। প্রচণ্ড গরমে প্রাকৃতিকভাবে ঘর ঠাণ্ডা রাখার কিছু উপায় রয়েছে। এ নিয়ে লিখেছেন তামিম হাসান
দিনে ঘর আবছা অন্ধকার রাখুন
গরমের সময় দিনের বেলা ঘরের জানালাগুলোয় ভারী পর্দা টেনে রাখুন। রোদের তাপ কম প্রবেশ করলে ঘর ঠাণ্ডা থাকবে। দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকের দেয়ালে জানালা থাকলে অবশ্যই পর্দা টেনে রাখুন। তবে দিনে যদি ঘরের দরজা বন্ধ করে রাখেন, তা হলে বাতাস চলাচল করতে পারবে না। এতে রাতেও ঘর গুমোট হয়ে থাকবে। তাই বারান্দা বা বেলকনির দরজা খুলে রাখুন। এতে ঘরে বাতাস চলাচল করতে পারবে। দিনে ঘর অন্ধকার রাখুন, ঘরে আলোর পরিমাণ যত কম থাকে, ঘর তত বেশি ঠাণ্ডা থাকে। রাতে কাজ করলে চেষ্টা করবেন ঘর যতটা সম্ভব কম আলোকিত রাখতে। টিউবলাইটের পরিবর্তে এলইডি লাইট ব্যবহার করা গেলে ভালো। এতে করে ঘর তুলনামূলক ঠাণ্ডা থাকবে।
ভারী সুতির পর্দা ব্যবহার
জানালায় ভারী সুতি পর্দা ব্যবহার করুন। এ ধরনের পর্দা ঘরে আলো প্রবেশ করতে বাধা দেয়। এ ছাড়া হাল্কা রঙের বিছানার চাদর ও বালিশের কাভার ব্যবহার করুন। এতে করে বিছানাপত্র তাপ ধরে রাখবে না। ঘরও থাকবে তুলনামূলক ঠাণ্ডা।
দেয়ালে হালকা রঙের ব্যবহার
মনে রাখবেন, রং যত গাঢ় হবে তত আলো শোষিত হবে এবং যত হাল্কা হবে, তত আলো বেশি প্রতিফলিত হবে। ঘরে যত বেশি আলো শোষিত হয়, তত তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। তাই ঘরের ভেতরের দেয়ালে হাল্কা রং ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। এতে করে দিনের বেলা ঘরে তাপ ধরে রাখবে না। ফলে আলো চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘর ঠাণ্ডা হতে শুরু করবে।
ঘরে ও বারান্দায় ছোট গাছ রাখুন
ঘরের ভেতর ছোট একটি গাছ যেমন ঘরের সৌন্দর্য বাড়ায়, ঠিক তেমনি তাপমাত্রা কমাতেও সাহায্য করে। ঘরের ভেতর জমা হওয়া কার্বন ডাই-অক্সাইড গাছ শুষে নেয়। ফলে ঘরের তাপমাত্রা তুলনামূলক কম থাকে। মানিপ্ল্যান্ট, অ্যালোভেরা, অ্যারিকা পাম-জাতীয় গাছ ঘরের সৌন্দর্যবর্ধন ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ উভয় কাজেই বেশ উপকারী।
ভেজা ভেজা করে ঘর মুছুন
ঘরের তাপমাত্রা কম রাখতে একটু ভেজা ভেজা করে ঘর মুছুন। প্রয়োজন হলে একবারের পরিবর্তে বেশ কয়েকবার ঘর মুছতে পারেন। মেঝের পাশাপাশি জানালার কাচও পানি দিয়ে মুছুন।এতে বেশকিছু সময় ঘর ঠাণ্ডা থাকবে।
স্ট্যান্ড বা টেবিল ফ্যানের সামনে বরফ
ঘর ঠাণ্ডা করার অন্যতম কার্যকর উপায় হলো বরফ। টেবিল বা স্ট্যান্ড ফ্যানের সামনে এক বাটি বরফ রাখতে পারেন। এতে করে বরফের ঠাণ্ডা বাতাস ঘরজুড়ে ঠাণ্ডা অনুভূতির সৃষ্টি করে। বরফ গলে গেলেও ঘরজুড়ে অনেকক্ষণ ঠাণ্ডা অনুভূতি বজায় থাকে। তবে লক্ষ রাখবেন, এ সময় যেন ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ থাকে। গরমের সময়ে বিছানায় সাদা বা হাল্কা রঙের সুতির চাদর বিছালে বিছানা ঠাণ্ডা থাকবে। সেই সঙ্গে নিয়মিত বেডকভার ও বেডশিট পরিবর্তন করুন। এতে শুধু বিছানাই ঠাণ্ডা নয়, মানসিকভাবেও সতেজ থাকবেন।
রাতে সব জানালা খোলা রাখুন
রাতের বাতাস সব সময়ই দিনের তুলনায় ঠাণ্ডা। সূর্যের তাপ কমে গেলে বিকালের দিকে জানালা-দরজা খুলে দিন, যাতে পুরো বাসায় বাতাস প্রবাহিত হতে পারে। এসি, এয়ার কুলার বা অন্যান্য কৃত্রিম উপায়ে ঘর ঠাণ্ডা রাখা একদিকে যেমন ব্যয়বহুল, সেই সঙ্গে আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এসি বা এয়ার কুলার নিয়মিত ব্যবহারে সর্দি-কাশি, অ্যালার্জিসহ আরও অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়। তাই চেষ্টা করুন এই গরমে প্রাকৃতিকভাবে ঘর ঠাণ্ডা রাখার জন্য।
কলি