![যুদ্ধবিরতির পর আবার হামলা](uploads/2023/12/02/1701496872.gaza-soldier.jpg)
হামাসের বিরুদ্ধে গাজায় গতকাল শুক্রবার থেকে অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। তাদের অভিযোগ, ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে রকেট ছুড়েছে হামাস। এতে সাময়িক যুদ্ধবিরতি চুক্তির লঙ্ঘন হয়েছে।
গাজায় সাত দিনের বিরতি শুরু হয় ২৪ নভেম্বর থেকে। শুরুতে চার দিনের বিরতির কথা থাকলেও পরে মেয়াদ বাড়ানো হয় অন্তত দুবার। এ কয়দিনে দুই পক্ষ থেকেই প্রচুর জিম্মি ও বন্দি মুক্তি পান। অবরুদ্ধ উপত্যকায় ট্রাক ঢোকার সুযোগ পায়।
যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার কথা ছিল শুক্রবার সকাল ৭টায়। এর কয়েক ঘণ্টা আগেই ইসরায়েল জানায়, তারা গাজা থেকে ছোড়া একটি রকেট ঠেকিয়েছে। হামাসের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। হামলার দায়ও স্বীকার করেনি গোষ্ঠীটি।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘লড়াই আবার শুরু হওয়ায় আমরা গুরুত্ব দিয়ে জানাচ্ছি যে, ইসরায়েলি সরকার যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, সেগুলো হলো- আমাদের জিম্মি মুক্তি, হামাসকে নির্মূল এবং নিশ্চিত করা যে গাজা আর কোনো দিন ইসরায়েলের বাসিন্দাদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে না।’
হামাসের পক্ষ থেকেও কড়া জবাব দেওয়া হয়েছে। দলটির রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য ইজ্জাত এল রাশক বলেছেন, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির আগের ৫০ দিনে যা অর্জন করতে পারেনি, তা যুদ্ধবিরতির পরও নিজেদের আগ্রাসন আবার শুরু করে অর্জন করতে পারবে না।’
ফিলিস্তিনের গণমাধ্যম এবং গাজার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর ইসরায়েলে আবারও উপত্যকায় হামলা শুরু করেছে। মিসরের সীমান্তবর্তী রাফাহ এলাকাতেও হামলা হয়েছে। দক্ষিণ গাজা উপত্যকার খান ইউনিসে ভারী গোলাবর্ষণের আওয়াজ শোনা গেছে। শহরের পূর্ব অংশ থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। খান ইউনিসের পশ্চিমে অবস্থিত ক্যাম্পগুলো থেকে জীবন বাঁচাতে পালাতেও শুরু করেছিলেন মানুষ।
আল-জাজিরার প্রতিবেদন বলছে, ইসরায়েলি হামলায় বেশ কিছু মানুষ মারা গেছেন এবং আহত হয়েছেন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকেও নিশ্চিত করা হয়েছে যে তারা হামাসের লক্ষ্যবস্তুকে কেন্দ্র করে আক্রমণ চালাচ্ছে।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতেও গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের ওপর কালো ধোঁয়া দেখা গেছে। ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। ওই হামলায় মারা যান ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি। পাল্টা জবাবে গাজায় হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে প্রাণ হারান ১৫ হাজারেরও বেশি গাজাবাসী।
রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে, যুদ্ধবিরতির সময় বৃদ্ধি করতে ব্যাপক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কাতার ও মিসর। বৃহস্পতিবার হামাস আট জিম্মিকে মুক্তি দেয়। অন্যদিকে ইসরায়েলের হাত থেকে ফিলিস্তিনি মুক্তি পেয়েছেন ৩০ জন।
বৃহস্পতিবার মুক্তি পাওয়া ব্যক্তিদের হিসাবে ধরলে যুদ্ধবিরতির শুরু থেকে মোট ১০৫ জন জিম্মি মুক্তি পেয়েছেন। অন্যদিকে ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পেয়েছেন ২৪০ জন। বৃহস্পতিবার মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে ২১ থেকে ৪০ বছর বয়সী ছয় নারী রয়েছেন বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে একজনের দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে বলেও উল্লেখ করেছে রয়টার্স।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে তৃতীয়বারের মতো ইসরায়েল সফরে গেলেন। তিনি যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। গত বৃহস্পতিবার নিজ ইসরায়েল সফর নিয়ে ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলের চলমান পরিকল্পনার বিস্তারিত নিয়ে আলোচনা করেছি এবং উত্তর গাজার মতো ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি যে দক্ষিণে আবার করা যাবে না, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য যে বিষয়টি অপরিহার্য তা তুলে ধরেছি আমি।’ ইসরায়েলি সরকার তার সঙ্গে একমত হয়েছে বলেও জানান তিনি। সূত্র: রয়টার্স