![গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৭ সহায়তাকর্মী নিহত](uploads/2024/04/03/1712110727.gaza.jpg)
ইসরায়েলি বাহিনীর চালানো বিমান হামলায় গাজার দেইর আল-বালাহতে গত সোমবার খাদ্য সহায়তা সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের (ডব্লিউসিকে) সাত কর্মী নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন ও পোল্যান্ডের নাগরিক রয়েছেন। অলাভজনক সংস্থাটির পক্ষ থেকে সে তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
এ ছাড়া নিহত কর্মীদের মধ্যে ফিলিস্তিন ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার দ্বৈত নাগরিকত্বধারী ছিলেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স। তারা ডব্লিউসিকের লোগোসংবলিত দুটি সাজোয়াঁ গাড়িতে করে যাতায়াত করছিলেন।
ডব্লিউসিকের প্রধান নির্বাহী এরিন গোরে বলেন, ‘এটি শুধু ডব্লিউসিকের বিরুদ্ধে আক্রমণ নয়, এটি মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে চালানো আক্রমণ, যারা কঠিন পরিস্থিতিতে এমন স্থানগুলোতে উপস্থিত হচ্ছে- যেখানে খাদ্যকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি ক্ষমার অযোগ্য।’
ইসরায়েলি বাহিনী এ ঘটনাকে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা আখ্যা দিয়ে বলেছে, তারা এর নেপথ্যের কারণ খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছে।
ডব্লিউসিকের প্রতিষ্ঠাতা তারকা শেফ হোসে আন্দ্রেস। তিনি সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে লিখেছেন, ‘ইসরায়েলি সরকারের উচিত এই নির্বিচার হত্যা বন্ধ করা।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘ইসরায়েলের উচিত মানবিক সহায়তার পথরোধ না করা, বেসামরিক ও সহায়তাকর্মীদের হত্যা করা থেকে সরে আসা এবং খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার না করা। আর কোনো নির্দোষ প্রাণহানি চাই না। শান্তি প্রতিষ্ঠা হয় মানবিকতা শুরুর মধ্য দিয়ে। এটি এখনই শুরু হওয়া প্রয়োজন।’
এক বিবৃতিতে হামাস জানিয়েছে, ওই আক্রমণের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থার কর্মীদের ভেতর আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তারা যাতে নিজেদের লক্ষ্য থেকে সরে যায়, সে চেষ্টা করা হচ্ছে।
নিন্দা
এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে বিষয়টির নিন্দা জানানো শুরু হয়েছে। বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাজা লাহবিব বলেছেন, সহায়তাকর্মীরা জরুরি কাজ করছে এবং তাদের অবশ্যই বেসামরিকদের মতো সুরক্ষিত রাখা উচিত। যুদ্ধের ক্ষেত্রেও নিয়মকানুন আছে। সব পক্ষের তা অবশ্যেই মেনে চলতে হবে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড অগ্রহণযোগ্য।’
অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে গতকাল মঙ্গলবার অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালাবানিজ বলেন, ‘এটি একটি দুঃখজনক ঘটনা, যা কখনো হওয়ারই কথা ছিল না। এটি সম্পূর্ণ অগ্রহণযোহ্য এবং অস্ট্রেলিয়া পূর্ণ ও যথাযথ জবাবদিহিতা দাবি করবে।’
আল-জাজিরা নিষিদ্ধ
এদিকে, ইসরায়েলে আল-জাজিরা সংবাদমাধ্যমকে নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি গত সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে লিখেছেন, সন্ত্রাসী চ্যানেল আল-জাজিরা আর ইসরায়েল থেকে সম্প্রচারিত হবে না। আমি নতুন আইন অনুসারে চ্যানেলটির কার্যক্রম থামাতে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিতে চাইছি।’
গণমাধ্যম পর্যবেক্ষকরা ইসরায়েলের এ অবস্থান নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টের জোডি গিনসবার্গ বলেছেন, ‘আমরা নেতানিয়াহু ও ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এ ধরনের ভাষার প্রয়োগ এর আগেও দেখেছি, যেগুলোতে তারা সাংবাদিকদের সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করার চেষ্টা করেছে। এটি নতুন কিছু নয়। ইসরায়েলি সরকার মুক্ত গণমাধ্যমকে যেভাবে দাবিয়ে রাখতে চায় এটি তার আরেকটি উদাহরণ। এটি সরকারের নেওয়া অত্যন্ত উদ্বেগজনক একটি পদক্ষেপ।’
নেতানিয়াহু তার সামাজিক মাধ্যম পোস্টে দাবি করেছেন, আল-জাজিরা ইসরায়েলের সুরক্ষাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, সক্রিয়ভাবে ৭ অক্টোবরের হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছে এবং ইসরায়েলি সেনাদের বিরুদ্ধে ইন্ধন যুগিয়েছে।
সাত অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৩২ হাজার ৪৮৫ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে। অন্যদিকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় মারা গেছেন ৭৫ হাজার ৩৯২ জন। অন্যদিকে ইসরায়েলে হামাসের চালানো হামলায় মারা গিয়েছিলেন ১ হাজার ১৩৯ জন। এখনো হামাসের হাতে একশর বেশি ইসরায়েলি জিম্মি রয়েছে। তাদের মুক্তিতে চেষ্টা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। সূত্র : আল-জাজিরা, রয়টার্স