![ইরানের ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আসছে](uploads/2024/04/18/1713408564.israel-ghati.jpg)
ইসরায়েলের ওপর আক্রমণ চালানোর কারণে ইরানের ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পরিকল্পনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। এর মধ্য দিয়ে ইসরায়েলকে সংঘাত আরও বড় করা থেকে ফিরিয়ে রাখতে চাইছে তারা।
গত শনিবার ইরানের চালানো হামলায় ইসরায়েলে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে সামান্য। তবে এ থেকে ইরান ও ইসরায়েলের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ইরানের তিন শরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার জবাব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলের সামরিক প্রধান হার্জি হালেভি। দেশের ভেতরও চাপের মুখে রয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
ইসরায়েলকে বড় মাপের এই জবাব দেওয়া থেকে ফিরিয়ে আনতে ইরানের বিরুদ্ধে আর্থিক ও রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরও জোরদার করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ। আসন্ন দিনগুলোতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন কর্মসূচির ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিকল্পনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি আশা করছে, তার মিত্ররাও একই পথ অনুসরণ করে তেহরানকে নিষেধাজ্ঞার চাপের মুখে ফেলবে। গত মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সালিভান এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানান।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন জানান, তিনি মিত্রদের সঙ্গে কাজ করবেন। ইরানের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থের জোগান বন্ধ করতে ওয়াশিংটন সব বিকল্প খতিয়ে দেখবে বলেও জানান তিনি। শিগগিরই যে ইরানের ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ হতে যাচ্ছে, সেটিরও ইঙ্গিত দেন ইয়েলেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি-প্রধান জোসেফ বরেল ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে জরুরি ভিডিও কনফারেন্স শেষে জানান, কিছু সদস্যদেশ ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার পরিসর বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছে। জোটের কূটনৈতিক সেবাকে এ বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করারও আহ্বান জানিয়েছে ওই সদস্য দেশগুলো।
গত মঙ্গলবারই ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ জানান, তিনি কূটনৈতিক আক্রমণের লক্ষ্যে কাজ করছেন। ৩২টি দেশকে তিনি চিঠি লিখে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে ও দেশটির রেভল্যুশনারি গার্ড কোরকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তকমা দিতে বলেছেন।
সিরিয়ার দামেস্কে ইরানি দূতাবাসে ইসরায়েলের হামলার জবাব দিতে পাল্টা আক্রমণ করেছিল তেহরান। দেশটির পক্ষ থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, তারা এখন এ বিষয়টি মিটে গেছে বলেই মনে করছে। তবে ইসরায়েল যদি আবারও হামলা চালায়, তাহলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ‘যন্ত্রণাদায়ক’ জবাব দেওয়া হবে।
জো বাইডেন ইরানের হামলার পর পরই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে জানিয়েছেন যে তারা পাল্টা আক্রমণে কোনো সহায়তা করবেন না। গত মঙ্গলবার ফোনালাপে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক নেতানিয়াহুকে বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়া কারও স্বার্থের জন্য মঙ্গলজনক নয় এবং এটি শুধু ওই অঞ্চলে অনিরাপত্তাকেই আরও বৃদ্ধি করবে। তিনি ‘মাথা ঠাণ্ডা’ রাখার পরামর্শও দেন।
জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োকো কামিকাওয়া ইসরায়েলকে সংযত আচরণ করার জন্য দৃঢ়ভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন। ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজের সঙ্গে মঙ্গলবার আলাপ করেন তিনি।
অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ইসরায়েল এবং ইরান-সমর্থিত দলগুলোর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে সংঘর্ষ হতে দেখা গেছে। ওই দলগুলো সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেন ও ইরাকের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছে।
মঙ্গলবার দিনগত রাতে লেবাননের ভেতর আহত হয়েছে চার ইসরায়েলি সেনা। গাজা যুদ্ধের পর এবারই প্রথম স্থলভাগে ইসরায়েলি সেনারা লেবাননে প্রবেশ করেছে বলে উল্লেখ করেছে রয়টার্স। গাজায় হতাহত থেমে নেই। সেখানেও নিজেদের তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, ইসরায়েলি আক্রমণে গাজায় প্রাণ হারিয়েছে ৩৩ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে আক্রমণ করে হামাস। সে হামলায় মারা যায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি, হামাস সঙ্গে করে ২৫৩ জন জিম্মি গাজায়ও নিয়ে আসে। পরে হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্য নিয়ে গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। তবে সে অভিযানে তাদের নির্বিচার হামলায় বেসামরিক মানুষই প্রাণ হারিয়েছে বেশি। গাজার জনগোষ্ঠী গিয়ে পৌঁছেছে মানবিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে। সূত্র: রয়টার্স