ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফা ভোট গ্রহণ শুরু হচ্ছে শুক্রবার (১৯ এপ্রিল)। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশটিতে শুক্রবার শুরু হওয়া নির্বাচন চলবে ১ জুন পর্যন্ত। সাত দফার এই নির্বাচনে ভারতের দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার নিম্নকক্ষ লোকসভার ৫৪৩ আসনের আইনপ্রণেতাদের নির্বাচিত করবেন প্রায় ১০০ কোটি ভোটার।
২০১৪ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রথমবার তার দল বিজেপিকে ক্ষমতায় নিয়ে আসেন। তার শাসনামলে ভারত আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পরাশক্তি হিসেবে নিজের শক্তিবৃদ্ধি করতে মরিয়া হয়ে ছুটছে। ১৪০ কোটি জনসংখ্যার পরমাণু শক্তিধর দেশটি ভূরাজনৈতিক ক্ষেত্রে অন্যতম বড় এক খেলোয়াড়। তবে অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক উত্থানের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে মোদির হাত ধরে প্রসারিত ধর্মীয় মেরূকরণের হাওয়ার কারণে দেশটি এক দশক ধরে আলোচনায়। এবার নির্বাচনেও হিন্দুত্ববাদী প্রচারের হাওয়া প্রবল।
ভারতের এবারের নির্বাচনে ভোট দেবেন প্রায় ৯৬ কোটি ৮০ লাখ ভোটার। ২০১৯ সালের নির্বাচনে ৬৭ শতাংশ ভোটার তাদের ভোট দিয়েছিলেন, যা ছিল ভারতের নির্বাচনি ইতিহাসের সর্বোচ্চ। দেশের ২৮টি রাজ্য আর ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে চলবে এবারের ভোটাভুটি। নির্বাচনের ফল ঘোষণা হবে ৪ জুন। এবারও বিজেপির সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোটের।
তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা
এদিকে নির্বাচন শুরুর দুদিন আগে ইশতেহার প্রকাশ করল মমতা ব্যানার্জীর দল তৃণমূল কংগ্রেস।
বুধবার (১৭ এপ্রিল) কলকাতায় দলীয় সদর দপ্তরে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র, তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রাউন, বর্তমান অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ইশতেহার প্রকাশ করেন সাবেক অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।
বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি, উর্দু, নেপালি, সাঁওতালি (অলচিকি) ছয়টি ভাষায় ইশতেহার প্রকাশ করেছে তৃণমূল। তাদের এবারের ইশতেহারের নাম দেওয়া হয়েছে ‘দিদির ১০ শপথ’। এতে বিনামূল্যে রেশন, বিনামূল্যে গ্যাস সিলিন্ডার, সিএএ কার্যকর না করা, দৈনিক ন্যূনতম মজুরি থেকে স্বাস্থ্যবিমার সুবিধার মতো নানা প্রতিশ্রুতি রয়েছে ইশতেহারে।
এ দিন সাবেক অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বলেন, নির্বাচনি ইশতেহার আসলে দিদির শপথ। মমতা ব্যানার্জী দেশের মানুষকে যে প্রতিশ্রুতি দেবেন, তা পূরণ করার শপথ নিয়েছে তৃণমূল। কেন্দ্রে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের সরকার গঠন করার সঙ্গে সঙ্গে সব প্রতিশ্রুতি পূরণে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকবে তৃণমূল কংগ্রেস।
তৃণমূলের ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ অনুসারে ভারতের সব কৃষকের জন্য ন্যূনতম সহায়ক মূল্য প্রদানের আইনত গ্যারান্টি দেওয়া হবে। সব ফসলের দাম উৎপাদনের গড় খরচের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি ধার্য করা হবে।
স্বচ্ছ আইন করা হবে, সিএএ বিলুপ্ত করা হবে, এনআরসি বন্ধ করা হবে, ইউসিসি দেশজুড়ে প্রয়োগ করা হবে না।
জ্বালানির দাম কমবে, দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা প্রত্যেক পরিবারকে বিনামূল্যে বছরে ১০টি গ্যাস সিলিন্ডার দেওয়া হবে।
প্রতি মাসে প্রত্যেক রেশন কার্ডে পাঁচ কেজি করে বিনামূল্যে রেশন দেওয়া হবে। নিরাপত্তা বাড়বে সবার, উচ্চশিক্ষায় বৃত্তি বাড়ানো হবে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর যুবকদের, তপশিলি জাতি ও উপজাতি অন্য অনগ্রসর শ্রেণির জন্য উচ্চশিক্ষায় বৃত্তি বাড়ানো হবে। সারা দেশে ৬০ বছর বয়সীদের বার্ধক্য ভাতা বাড়িয়ে বার্ষিক ১২ হাজার রুপি করা হবে।
স্বল্পমূল্যে পেট্রোপণ্য মিলবে, মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা হবে। দাম ওঠানামা করার জন্য ‘প্রাইস স্টেবিলাইজেশন ফান্ড’ তৈরি করা হবে গোটা দেশে।