নির্বাচনে জয়ী হতে কে না চায়? কেউ কোনো নির্বাচনে প্রার্থী হলে আমরা ধরেই নিই- ওই ব্যক্তি জেতার জন্যই অংশ নেন। এদিক থেকে ব্যতিক্রম ৬৫ বছর বয়সী কে পদ্মরাজন। তিনি শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) থেকে শুরু হওয়া ভারতের লোকসভা নির্বাচনে একজন প্রার্থী। কিন্তু জেতার জন্য নয়, হারার জন্যই তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন।
এর আগে একটি-দুটি নয়, গুনে গুনে ভারতের স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন নির্বাচনে ২৩৮ বার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন পদ্মরাজন। প্রতিবারই হেরেছেন। তবে তাতে একটুও দমে যাননি। নির্বাচনে অংশ নিয়েই যাচ্ছেন। মজার বিষয় হচ্ছে- তিনি নিজেই জানিয়েছেন, ‘সব প্রার্থী নির্বাচনে জয়ী হতে চান। আমি নই।’ সব নির্বাচনে পরাজিত এই প্রার্থী মনে করেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাটাই বিজয়। যখন পরাজয় অনিবার্য বলে বুঝতে পারেন, তখন খুশি মনেই তা মেনে নেন।
পদ্মরাজন তামিলনাড়ু রাজ্যের মেত্তুর শহরের বাসিন্দা। টায়ার মেরামতের একটি দোকান আছে তার। ১৯৮৮ সাল থেকে তিনি ভারতের বিভিন্ন স্তরের নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে আসছেন। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরুর পর লোকজন পদ্মরাজনকে নিয়ে উপহাস করতেন। তবে তিনি বলেছেন, সাধারণ মানুষও যে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন, তা তিনি প্রমাণ করতে পেরেছেন।
আজ থেকে ভারতে জাতীয় নির্বাচনের (লোকসভা নির্বাচন) ভোটগ্রহণ শুরু হচ্ছে। ওই নির্বাচনে তামিলনাড়ু রাজ্যের ধর্মপুরি জেলা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পদ্মরাজন। নির্বাচনে এতবার অংশগ্রহণের কারণে অনেকে তাকে ‘ইলেকশন কিং’ নামে ডাকেন। স্থানীয়, লোকসভাসহ ভারতের বিভিন্ন স্তরের নির্বাচনে তাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেখা গেছে। ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ী, মনমোহন সিং ও কংগ্রেস দলের নেতা রাহুল গান্ধী— সবার কাছেই হেরেছেন তিনি। পদ্মরাজন বলেন, ‘জয়ী হওয়াটা বড় বিষয় নয়। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কে, তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই।’
তিন দশকের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন নির্বাচনে মনোনয়ন ফি বাবদ তাকে লাখ লাখ রুপি গুনতে হয়েছে। এবারের লোকসভা নির্বাচনে অংশ নিতে ২৫ হাজার রুপি মনোনয়ন ফি দিয়েছেন তিনি। নির্বাচনে ১৬ শতাংশের বেশি ভোট যদি না পান এ জামানত তিনি ফেরত পাবেন না।
এতবার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যর্থতার মধ্যে পদ্মরাজনের অর্জন একটাই। সেটা হচ্ছে লিমকা বুক অব রেকর্ডস, এশিয়া অব রেকর্ডস ও দিল্লি বুক অব রেকর্ডসে ভারতের সবচেয়ে অসফল প্রার্থী হিসেবে তার নাম উঠেছে।
পদ্মরাজনের বড় সাফল্যটি এসেছে ২০১১ সালে। তখন তিনি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে অংশ নিয়ে ৬ হাজার ২৭৩ ভোট পান। ওই নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী পেয়েছিলেন ৭৫ হাজারের বেশি ভোট। টায়ার মেরামতের দোকান চালানোর পাশাপাশি পদ্মরাজন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করে থাকেন।
তবে পদ্মরাজন বলেন, তিনি তার সব কাজের মধ্যে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। যেসব মানুষ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইতস্তত বোধ করেন, তাদের অনুকরণীয় আদর্শ হতে চান পদ্মরাজন। সচেতনতা তৈরি করতে চান। জীবনের শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত নির্বাচনে লড়াই চালিয়ে যেতে চান তিনি। তবে তার ধারণা, যদি কখনো জিতেও যান, তবে তা তিনি সইতে পারবেন না। হাসতে হাসতে এই ব্যক্তি বলেন, ‘আমি কখনো জিতে গেলে আনন্দে আমার হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেতে পারে।’
প্রসঙ্গত, ভারতের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্য যেকোনো ব্যক্তি যেকোনো জায়গা থেকে ভোটে লড়তে পারেন। এর জন্য তাকে হলফনামা দাখিল করতে হয়। কেন নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সাধ হলো- এ বিষয়ে পদ্মরাজন বলেন, ‘সাইকেলের দোকানে বসে হঠাৎই এক দিন আমার ভোটে লড়াই করার ইচ্ছা হলো। সেটা ১৯৮৮ সালের কথা। তারপর আমার পুরো জীবনই বদলে যায়।’
তবে সবচেয়ে বেশি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নিজের নাম দেখতে চান তিনি। এই রেকর্ড রয়েছে অন্য এক ভারতীয়র ঝুলিতে। কে পদ্মরাজনের আগে কাকা যোগিন্দর সিং ধরতিও ধারাবাহিকভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন।
‘ধরতি পাকাড়’ নামে পরিচিত কাকা যোগিন্দর সিং ১৯৬২ সাল থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু করেন। ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে যখন তার মৃত্যু হয় ততদিনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ফেলেছিলেন প্রায় ৩০০টি নির্বাচনে। তিনি স্থানীয় পর্যায় থেকে রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত বিভিন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
তিনিও ভোটে হারার উদ্দেশ্যেই লড়তেন। যদিও অংশগ্রহণ করতেন নির্বাচনি প্রচারে। তার প্রচার ছিল অন্যরকম। নির্বাচনি এলাকায় গিয়ে যোগিন্দর সিং তাকে ভোট না দেওয়ার জন্য জনগণের কাছে আবেদন করতেন। সূত্র: বিবিসি, হিন্দুস্তান টাইমস ও ইন্ডিয়া টুডে