ঢাকা ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, শুক্রবার, ০৬ জুন ২০২৫
English
শুক্রবার, ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ভারতের লোকসভা নির্বাচন ‘ইলেকশন কিং’ কে পদ্মরাজন

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৪৪ এএম
‘ইলেকশন কিং’ কে পদ্মরাজন
কে পদ্মরাজন

নির্বাচনে জয়ী হতে কে না চায়? কেউ কোনো নির্বাচনে প্রার্থী হলে আমরা ধরেই নিই- ওই ব্যক্তি জেতার জন্যই অংশ নেন। এদিক থেকে ব্যতিক্রম ৬৫ বছর বয়সী কে পদ্মরাজন। তিনি শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) থেকে শুরু হওয়া ভারতের লোকসভা নির্বাচনে একজন প্রার্থী। কিন্তু জেতার জন্য নয়, হারার জন্যই তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন।

এর আগে একটি-দুটি নয়, গুনে গুনে ভারতের স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন নির্বাচনে ২৩৮ বার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন পদ্মরাজন। প্রতিবারই হেরেছেন। তবে তাতে একটুও দমে যাননি। নির্বাচনে অংশ নিয়েই যাচ্ছেন। মজার বিষয় হচ্ছে- তিনি নিজেই জানিয়েছেন, ‘সব প্রার্থী নির্বাচনে জয়ী হতে চান। আমি নই।’ সব নির্বাচনে পরাজিত এই প্রার্থী মনে করেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাটাই বিজয়। যখন পরাজয় অনিবার্য বলে বুঝতে পারেন, তখন খুশি মনেই তা মেনে নেন।

পদ্মরাজন তামিলনাড়ু রাজ্যের মেত্তুর শহরের বাসিন্দা। টায়ার মেরামতের একটি দোকান আছে তার। ১৯৮৮ সাল থেকে তিনি ভারতের বিভিন্ন স্তরের নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে আসছেন। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরুর পর লোকজন পদ্মরাজনকে নিয়ে উপহাস করতেন। তবে তিনি বলেছেন, সাধারণ মানুষও যে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন, তা তিনি প্রমাণ করতে পেরেছেন। 

আজ থেকে ভারতে জাতীয় নির্বাচনের (লোকসভা নির্বাচন) ভোটগ্রহণ শুরু হচ্ছে। ওই নির্বাচনে তামিলনাড়ু রাজ্যের ধর্মপুরি জেলা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পদ্মরাজন। নির্বাচনে এতবার অংশগ্রহণের কারণে অনেকে তাকে ‘ইলেকশন কিং’ নামে ডাকেন। স্থানীয়, লোকসভাসহ ভারতের বিভিন্ন স্তরের নির্বাচনে তাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেখা গেছে। ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ী, মনমোহন সিং ও কংগ্রেস দলের নেতা রাহুল গান্ধী— সবার কাছেই হেরেছেন তিনি। পদ্মরাজন বলেন, ‘জয়ী হওয়াটা বড় বিষয় নয়। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কে, তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই।’

তিন দশকের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন নির্বাচনে মনোনয়ন ফি বাবদ তাকে লাখ লাখ রুপি গুনতে হয়েছে। এবারের লোকসভা নির্বাচনে অংশ নিতে ২৫ হাজার রুপি মনোনয়ন ফি দিয়েছেন তিনি। নির্বাচনে ১৬ শতাংশের বেশি ভোট যদি না পান এ জামানত তিনি ফেরত পাবেন না। 

এতবার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যর্থতার মধ্যে পদ্মরাজনের অর্জন একটাই। সেটা হচ্ছে লিমকা বুক অব রেকর্ডস, এশিয়া অব রেকর্ডস ও দিল্লি বুক অব রেকর্ডসে ভারতের সবচেয়ে অসফল প্রার্থী হিসেবে তার নাম উঠেছে।

পদ্মরাজনের বড় সাফল্যটি এসেছে ২০১১ সালে। তখন তিনি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে অংশ নিয়ে ৬ হাজার ২৭৩ ভোট পান। ওই নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী পেয়েছিলেন ৭৫ হাজারের বেশি ভোট। টায়ার মেরামতের দোকান চালানোর পাশাপাশি পদ্মরাজন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করে থাকেন। 

তবে পদ্মরাজন বলেন, তিনি তার সব কাজের মধ্যে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। যেসব মানুষ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইতস্তত বোধ করেন, তাদের অনুকরণীয় আদর্শ হতে চান পদ্মরাজন। সচেতনতা তৈরি করতে চান। জীবনের শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত নির্বাচনে লড়াই চালিয়ে যেতে চান তিনি। তবে তার ধারণা, যদি কখনো জিতেও যান, তবে তা তিনি সইতে পারবেন না। হাসতে হাসতে এই ব্যক্তি বলেন, ‘আমি কখনো জিতে গেলে আনন্দে আমার হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেতে পারে।’

প্রসঙ্গত, ভারতের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্য যেকোনো ব্যক্তি যেকোনো জায়গা থেকে ভোটে লড়তে পারেন। এর জন্য তাকে হলফনামা দাখিল করতে হয়। কেন নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সাধ হলো- এ বিষয়ে পদ্মরাজন বলেন, ‘সাইকেলের দোকানে বসে হঠাৎই এক দিন আমার ভোটে লড়াই করার ইচ্ছা হলো। সেটা ১৯৮৮ সালের কথা। তারপর আমার পুরো জীবনই বদলে যায়।’

তবে সবচেয়ে বেশি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নিজের নাম দেখতে চান তিনি। এই রেকর্ড রয়েছে অন্য এক ভারতীয়র ঝুলিতে। কে পদ্মরাজনের আগে কাকা যোগিন্দর সিং ধরতিও ধারাবাহিকভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন।

‘ধরতি পাকাড়’ নামে পরিচিত কাকা যোগিন্দর সিং ১৯৬২ সাল থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু করেন। ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে যখন তার মৃত্যু হয় ততদিনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ফেলেছিলেন প্রায় ৩০০টি নির্বাচনে। তিনি স্থানীয় পর্যায় থেকে রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত বিভিন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।

তিনিও ভোটে হারার উদ্দেশ্যেই লড়তেন। যদিও অংশগ্রহণ করতেন নির্বাচনি প্রচারে। তার প্রচার ছিল অন্যরকম। নির্বাচনি এলাকায় গিয়ে যোগিন্দর সিং তাকে ভোট না দেওয়ার জন্য জনগণের কাছে আবেদন করতেন। সূত্র: বিবিসি, হিন্দুস্তান টাইমস ও ইন্ডিয়া টুডে

আইসিসির প্রতিবাদকারী ৪ বিচারকের ওপর ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞা

প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২৫, ০৫:২৭ পিএম
আপডেট: ০৬ জুন ২০২৫, ০৬:২৩ পিএম
আইসিসির প্রতিবাদকারী ৪ বিচারকের ওপর ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞা
হোয়াইট হাউসে এক বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প (বামে), ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) চার বিচারকের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ওয়াশিংটন। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ান জারি এবং আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তোলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে (আইসিসি) একহাত দেখে নিল ট্রাম্প প্রশাসন।

এদিকে হেগ-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) এটিকে ‘অবৈধ’ এবং ‘রাজনীতিকরণ’ আখ্যায়িত করে এই উদ্যোগের তাৎক্ষণিক নিন্দা জানিয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের ঘোষিত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে- মার্কিনমুলুকে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা এবং যুক্তরাষ্ট্রে রক্ষিত সম্পদ জব্দ করা।

বৃহস্পতিবার (৫ জুন) মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, এই চার ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্র এবং আমাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে আইসিসির অবৈধ এবং ভিত্তিহীন কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে জড়িত।

শুক্রবার ( ৬ জুন) এক প্রতিবেদনে এই খবর জানায় বার্তাসংস্থা ল'ওরিয়েন্ট টুডে ।

আইসিসির বিরুদ্ধে নজিরবিহীন প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, আইসিসি রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে আদালতের পক্ষ থেকে খেয়াল খুশিমতো তদন্ত পরিচালনা, অভিযোগ গঠন, এমনকী রায় পর্যন্ত দেওয়া হয়।

নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া ওই চার বিচারক হচ্ছেন উগান্ডার সোলোমি বালুঙ্গি বোসসা, পেরুর লুয দেল কারমেন ইবানেয কারানযা, বেনিনের রেইনে আদেলাইদে সোফিই আলাপিনি গানসোউ এবং স্লোভেনিয়ার বেতি হোলের।

রুবিও অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও আমাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন ও অবৈধ পদক্ষেপ নিয়েছে আইসিসি। আর ওই চার বিচারক প্রত্যক্ষভাবে আদালতের কর্মকাণ্ডে জড়িত।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তীব্র নিন্দা জানিয়ে আইসিসি বলেছে, বিশ্বজুড়ে অবর্ণনীয় নিপীড়ন সহ্য করা লাখ লাখ মানুষের ন্যায়বিচার ও আশার প্রতীক হচ্ছে আইসিসি। যুক্তরাষ্ট্র তাদের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বিচারিক ব্যবস্থার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করল।

আইসিসি বিচারক বোসসা ও ইবানেয কারানযা ২০১৮ সাল থেকে আদালতের সঙ্গে যুক্ত আছেন। ২০২০ সালে তারা এমন একটি আপিল রায়ে অংশ নেন, যা মার্কিন সেনাদের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানে যুদ্ধাপরাধ তদন্ত শুরুর অনুমতি দেয়। 

যদিও ২০২১ সাল থেকে আদালত মার্কিন সেনাদের বিরুদ্ধে তদন্তকে অগ্রাধিকার না দিয়ে আফগান সরকারি বাহিনী ও তালেবানের অপরাধ তদন্তে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

বাকি দুই বিচারক গানসোউ ও হোলের ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং ইসরায়েলের তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গাজা সংঘর্ষে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা অনুমোদনে ভূমিকা রাখেন। পাশাপাশি হামাস নেতা ইব্রাহিম আল-মাসরির বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

আইসিসির সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে তিক্ততা এই নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়ে আরও বৃদ্ধি পেল। আগের মেয়াদেও আন্তর্জাতিক আদালতের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছিলেন ট্রাম্প। ২০২০ সালে আফগানিস্তান ইস্যুতে আইসিসির কিছু পদক্ষেপ পছন্দ না হওয়ায় তৎকালীন কৌঁসুলি ফাতৌ বেনসৌদা এবং তার অন্যতম প্রধান সহযোগীর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন তিনি।

এর আগে ফেব্রুয়ারিতে, যুক্তরাষ্ট্র আইসিসির প্রসিকিউটর করিম খানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, যিনি ইসরায়েলি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এই প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। 

এদিকে আইসিসি দ্রুত এক বিবৃতিতে প্রতিক্রিয়া হিসেবে জানায়, এই পদক্ষেপগুলো বিশ্বব্যাপী ১২৫টি সদস্য রাষ্ট্রের অধীনে পরিচালিত একটি আন্তর্জাতিক বিচারিক প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করার স্পষ্ট প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়। 

সংস্থাটি আরও জানায়, আইসিসি তার কর্মীদের সম্পূর্ণ সমর্থন করে এবং অবিচলভাবে তাদের কাজ চালিয়ে যাবে।

এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মানবাধিকার রক্ষাকারী সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের লিজ ইভেনসন জানান, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য আইসিসিকে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনে সংঘটিত গুরুতর অপরাধের জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করতে বাধা দেওয়া। মার্কিন সহযোগিতায় গাজায় ইসরায়েলি নৃশংসতা বন্ধ করার জন্য ব্যবহার করা উচিত। সবচেয়ে গুরুতর অপরাধের জন্য বিচার চাইছেন এমন ব্যক্তিদের শাস্তি দেওয়ার জন্য নয়।

তিনি এএফপিতে পাঠানো এক বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েল কেউই আইসিসির সদস্য নয়। গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার ও বিচারের দায়িত্বপ্রাপ্ত একটি স্থায়ী এখতিয়ার। তারা তাদের নাগরিকদের বিচার করার জন্য এর ক্ষমতা স্বীকার করে না।

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে আইসিসির তৎকালীন প্রসিকিউটর ফাতু বেনসুদাকেও আমেরিকান নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন। ২০২১ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই যা জো বাইডেন তুলে নেন।

এদিকে, শুক্রবার ভোরে এই উদ্যোগের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। 

নিজের এক্স-হ্যান্ডেলে এক পোস্টে তিনি লিখেন, ‘রাজনীতিক আইসিসি বিচারকদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিওকে ধন্যবাদ। আপনি সঠিকভাবে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র এবং সমস্ত গণতন্ত্রের বিপরীতে নৃশংস সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার অধিকার রক্ষা করেছেন।’

সুলতানা দিনা/অমিয়/

এবার রীতিমতো যুদ্ধে জড়ালেন ট্রাম্প-ইলন মাস্ক

প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২৫, ০৩:০২ পিএম
আপডেট: ০৬ জুন ২০২৫, ০৩:০৬ পিএম
এবার রীতিমতো যুদ্ধে জড়ালেন  ট্রাম্প-ইলন মাস্ক
ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইলন মাস্কের বিরোধ এখন প্রকাশ্য। অথচ কয়েকদিন আগেও তাদের 'বন্ধুত্ব' ছিল সবার আলোচনার বিষয়। এবার তাদের মধ্যকার দূরত্বের গুঞ্জন মুহূর্তেই 'বাগযুদ্ধ' হিসেবে সবার সামনে আবির্ভূত হলো।

সরকারি একটি বিলকে কেন্দ্র করে  ট্রাম্পের সঙ্গে রীতিমতো ঝগড়া শুরু হয়েছে ইলন মাস্কের।  প্রেসিডেন্টকে ‘অকৃতজ্ঞ’ বলে উল্লেখ করে মার্কিন এই ধনকুবের দাবি করেন, তিনি যদি আর্থিক সহায়তা না দিতেন— তাহলে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে যেতেন ট্রাম্প।

নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায় মাস্ক বলেন, ‘আমি না থাকলে ট্রাম্প নির্বাচনে হেরে যেতেন, রিপ্রেজেন্টেটিভের (মার্কিন পার্লামেন্ট কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ) নিয়ন্ত্রণ থাকত ডেমোক্র্যাটদের দখলে আর সিনেটে (কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ) রিপাবলিকান-ডেমোক্র্যাটদের অনুপাত থাকত ৫১-৪৯।’

এরইমধ্যে, ট্রাম্প প্রশাসনের ওপর ভর করে ইলন মাস্কের যেসব ব্যবসা চলছে সেগুলো নিয়ে তাকে হুমকিও দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এসব ব্যবসাকে মাস্কের স্পেসএক্স কর্মসূচির প্রাণ বলা চলে।

নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেন, ‘আমাদের বাজেটে কোটি কোটি ডলার সাশ্রয়ের সবচেয়ে সহজ উপায় হলো ইলনের সরকারি ভর্তুকি এবং চুক্তি বাতিল করা। ’  

আর ট্রাম্প যদি সত্যিই তার সরকারকে মাস্কের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেন, তাহলে এই টেক বিলিয়নেয়ারের চিন্তিত হওয়ার কারণ আছে বলে মনে করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (০৫ জুন) বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানায়, এদিন ওভাল অফিসে জার্মান নেতার সাথে দেখা করার সময়, ট্রাম্প মাস্কের প্রতি তার হতাশার কথা খোলামেলাভাবে বলেন।

এর জবাবে,মাস্ক এক্স-এর পোস্ট করে, ট্রাম্পকে একের পর এক আক্রমণ শুরু করেন, যেখানে তিনি প্রমাণ ছাড়াই ইঙ্গিত দেন যে প্রয়াত যৌন অপরাধী জেফ্রি এপস্টাইনের সাথে সম্পর্কিত অপ্রকাশিত ফাইলগুলিতে ট্রাম্পের কারসাজি রয়েছে।

এরপর ট্রাম্প বেশ কয়েকবার পাল্টা আক্রমণ করে বলেন যে, মাস্ক  ‘ পাগল ’ হয়ে গেছেন এবং এরপর তাকে ট্রাম্প প্রশাসন ছেড়ে দিতে বলা হয়। এছাড়া তিনি মাস্কের কোম্পানিগুলোর সাথে সরকারি চুক্তি বাতিল করার হুমকিও দেন ।

এদিকে এই লড়াইয়ের মধ্যে, টেসলার শেয়ারের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে ১৪% কমে গেছে, যা মাস্কের ইভি জায়ান্টকে ১ ট্রিলিয়ন ডলারের সীমার নিচে নামিয়ে দিয়েছে।

২০২৪ সালের জুলাই থেকে শুরু হওইয়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার সময় থেকেই ট্রাম্পের সঙ্গে মাস্কের ঘনিষ্ঠতার শুরু । সে সময়  রিপাবলিকান পার্টির ট্রাম্পের বিভিন্ন প্রচারণা সভায় মাস্ককে নিয়মিত দেখা গেছে। 

এক প্রতিবেদনে মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট জানায় , ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণা তহবিলে কমপক্ষে ২৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার চাঁদা দিয়েছেন মাস্ক।

নির্বাচনে জয়ী হয়ে শপথ নেওয়ার পর সরকারি কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও সরকারি ব্যয় সংকোচন করতে ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি বা ডোজ নামের একটি দপ্তর খোলে ট্রাম্প প্রশাসন। সেই দপ্তরের প্রধান করা হয় মাস্ককে।

মাস্ক ডোজর প্রধান নির্বাহী হওয়ার পর কয়েক মাস ধরে সরকারি অর্থ অপচয় রোধের নামে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর ও বিভাগের হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়, স্থগিত করা হয় প্রায় সব ধরনের বৈদেশি সহায়তা প্রদান।

এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীন বিভিন্ন গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থাতেও সরকারি ভর্তুকি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

ফলে স্বাভাবিকভাবেই জনপ্রিয়তা কমতে থাকে ট্রাম্পের। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে একাধিক আদালতে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করেন চাকরিচ্যুত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ সহায়তা প্রদান স্থগিত করায় দেশের ভেতরেও সমালোচনায় বিদ্ধ হতে থাকে ট্রাম্প প্রশাসন।

মাস্কের নিয়োগ নিয়েও যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেসের এমপিদের একাংশ এবং ট্রাম্পের রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান পার্টির নেতা-কর্মীদের একাংশ অসন্তুষ্ট ছিলেন। কংগ্রেস এখনও ডোজকে সরকারি বিভাগ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।

এসব কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও তার নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছিল মাস্কের। এর মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাম্প্রতিক একটি বিল স্বাক্ষরকে ঘিরে নতুন তিক্ততার সৃষ্টি হয় ট্রাম্প ও মাস্কের মধ্যে।

গত মাসে কর হ্রাস সংক্রান্ত ‘জনকল্যাণমূলক’ বিলে অনুমোদন দেওয়ার পরে ট্রাম্প বলেন, ‘এটি একটি বড় এবং সুন্দর বিল’ (ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট)। তার পরেই ট্রাম্পের সঙ্গে মাস্কের মতবিরোধ প্রকাশ্যে চলে আসে।

মাস্ক দাবি করেন, তিনি এবং তার সহকারীরা ট্রাম্প প্রশাসনের অন্দরে থেকে এত দিন ‘অপ্রয়োজনীয় ব্যয়’ কমাতে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, সেসব ব্যর্থ হয়ে যাবে ওই একটি বিলের কারণে। বিলটি তাকে দেখানোর আগেই ট্রাম্প মার্কিন কংগ্রেসে পাশ করানোর জন্য পাঠিয়ে দিয়েছেন বলেও সমাজমাধ্যমে অভিযোগ করেন মাস্ক।

সুলতানা দিনা/  

ন্যাটোতে নতুন মার্কিন শীর্ষ জেনারেল

প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৫, ১১:২৫ পিএম
ন্যাটোতে নতুন মার্কিন শীর্ষ জেনারেল
ছবি: সংগৃহীত

ইউরোপে মার্কিন সামরিক বাহিনীর শীর্ষ পদে এবং ন্যাটোর সুপ্রিম অ্যালিড কমান্ডার ইউরোপ পদে লেফটেন্যান্ট জেনারেল অ্যালেক্সাস গ্রিনকেভিচকে মনোনয়ন দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ঐতিহ্যগতভাবে এই পদে একজন মার্কিন জেনারেল দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

বৃহস্পতিবার  (৫ জুন) ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এই খবর  জানায়।

ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত দেশটির ইউরোপীয় মিত্রদের জন্য স্বস্তিদায়ক হবে কারণ গত কয়েক মাস ধরে ট্রাম্প ইউরোপকে তার নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যয় আরও বাড়ানোর জন্য চাপ দিয়ে আসছেন। এতে ন্যাটোয় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেয়।

গ্রিনকেভিচের এই নিয়োগ চূড়ান্ত করতে মার্কিন সিনেটের অনুমোদন প্রয়োজন হবে। তিনি বর্তমানে পেন্টাগনে জয়েন্ট স্টাফের পরিচালনা বিভাগের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

২০২২ সালে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর ন্যাটো বাহিনীর দায়িত্ব নেওয়া জেনারেল ক্রিস্টোফার কাভোলির স্থলাভিষিক্ত হবেন গ্রিনকেভিচ। কাভোলি ইউক্রেনকে সহায়তায় বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহযোগিতা তদারকি করেছেন।

ট্রাম্প প্রশাসন শুরু থেকেই ন্যাটোর সদস্য দেশগুলোকে তাদের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াতে চাপ দিচ্ছে। বর্তমানে জিডিপির ২ শতাংশ প্রতিরক্ষা ব্যয়ের লক্ষ্য থাকলেও ট্রাম্প চাইছেন এই হার ৫ শতাংশে উন্নীত করতে। যদিও এখন পর্যন্ত কোনও দেশই এই লক্ষ্য পূরণে পৌঁছায়নি, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও নয়।

ন্যাটো সদর দফতরে এক সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেন, ‘সকালের বৈঠকে যা শুনেছি, তাতে আমি আশাবাদী। অনেক দেশই ইতোমধ্যে ২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে এবং আমরা প্রায় ৫ শতাংশ লক্ষ্যে একমত হওয়ার কাছাকাছি চলে এসেছি।’

১৯৫১ সালে প্রথম এই পদে ছিলেন মার্কিন জেনারেল ডুইট ডি. আইজেনহাওয়ার। ইউরোপে ন্যাটোর সব অভিযান তদারকি করা এই পদের দায়িত্ব অনেকটাই প্রতীকি হলেও এর কৌশলগত গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ন্যাটোর একীভূত প্রতিরক্ষা পুনর্গঠনের সময়ে তা আরও গুরুত্বপূর্ণ।

সুলতানা দিনা/

বরখাস্ত হলেন নিউজিল্যান্ডের সংসদে হাকা নৃত্য করা সেই মাওরি সাংসদ

প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৫, ০৯:০৯ পিএম
আপডেট: ০৫ জুন ২০২৫, ০৯:১০ পিএম
বরখাস্ত হলেন নিউজিল্যান্ডের সংসদে হাকা নৃত্য করা সেই মাওরি সাংসদ
হানা মাইপি ক্লার্ক। ছবি: সংগৃহীত

নিউজিল্যান্ডের সংসদে মাওরি সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী হাকা নৃত্য করে প্রতিবাদ জানিয়ে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পাওয়া বিরোধী দল তে-পাতি মাওরি পার্টির সংসদ সদস্য হানা মাইপি ক্লার্ক বরখাস্ত হয়েছেন। এই প্রতিবাদে তার সঙ্গে যোগ দেয়া আরও দুই মাওরি এমপিকেও বরখাস্ত করা হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (০৫ জুন) ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা বিবিসি জানায়, বিরোধী দল তে-পাতি মাওরি পার্টির সংসদ সদস্য হানা মাইপি ক্লার্ককে সাত দিনের জন্য বরখাস্ত করা হয়েছে। আর দলটির দুই সহ-নেতা রাওইরি ওয়াইতিতি ও ডেবি এনগারেওয়া-প্যাকারকে ২১ দিনের জন্য সংসদ কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

নিউজিল্যান্ডের সংসদে বিরোধী ওই পার্টিকে যখন প্রশ্ন করা হয়—তারা মাওরি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে ব্রিটিশ রাজের ১৮৪০ সালের চুক্তি পুনঃ ব্যাখ্যা করার একটি বিতর্কিত বিলকে সমর্থন করে কি না, তখনই তিন সাংসদ হাকা শুরু করেন। পরে ‘ট্রিটি প্রিন্সিপালস’ নামের এই বিলটি শেষ পর্যন্ত অবশ্য বাতিলই করা হয়েছে।

এই বিলকে কেন্দ্রকরে দেশজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভ তৈ্রি হয় এবং গত নভেম্বরে দেশটির পার্লামেন্টের সামনে ৪০ হাজারের বেশি মানুষ বিক্ষোভ করেন।
ডেবি এনগারেওয়া-প্যাকার বলেন, ‘আমাদের মাওরি হওয়ার কারণে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। আমরা আমাদের জনগণের দাবি ও প্রত্যাশাকেই সবার আগে গুরুত্ব দেই।’

এদিকে তিন সাংসদের বরখাস্ত নিয়ে সংসদে তীব্র বিতর্ক হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রী উইনস্টন পিটার্স তে পাতি মাওরি পার্টিকে ‘চরমপন্থী দল’ বলায় ক্ষমা চাইতে বলা হয়। 

আর বরখাস্ত হওয়া সবচেয়ে কম বয়সী ও আলোচিত সাংসদ মাইপি ক্লার্ক আবেগ নিয়ে বলেন, ‘আমাদের কণ্ঠ কি এতই উচ্চ যে শাস্তি পেতে হচ্ছে?’

অন্যদিকে,সংসদের একটি কমিটি জানায়, হাকা করার ফলে সংসদ সাময়িকভাবে থেমে যায় এবং এটি অন্য সদস্যদের শঙ্কিত করতে পারে।

তবে প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লাক্সন দাবি করেন, ‘শাস্তির বিষয়টি হাকার বিরুদ্ধে নয়, বরং সংসদের নিয়ম না মানার বিরুদ্ধে।’ তবে শাস্তি হিসেবে এই সাংসদেরা বরখাস্ত হলেও বিলটি বাতিল হওয়ায় মাওরি জনগণের পক্ষে এটি ছিল বড় এক বিজয়।

সুলতানা দিনা/

দেশজুড়ে গুপ্তচর সন্দেহে গ্রেপ্তারি, কিসের এত ভয় ভারতের?

প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৫, ০৮:১৭ পিএম
আপডেট: ০৫ জুন ২০২৫, ০৮:২২ পিএম
দেশজুড়ে গুপ্তচর সন্দেহে গ্রেপ্তারি, কিসের এত ভয় ভারতের?
প্রতীকী ছবি

বিভিন্ন দেশে গুপ্তচরবৃত্তি নতুন ঘটনা নয়। তবে অপারেশান সিঁদুরের পর থেকেই রীতিমতো অস্বাভাবিক হারে গুপ্তচর সন্দেহে গ্রেপ্তার হচ্ছেন বেশ কিছু ভারতীয় নাগরিক। সেই লম্বা নামের তালিকায় রয়েছেন, হরিয়ানার ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রা, সিআরপিএফ জওয়ান মোতি রাম জাট, রাজস্থানের সরকারি কর্মী শকুর খান-সহ একাধিক সন্দেহভাজন। তাদেরকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির বিভিন্ন থানার পুলিশ এবং গোয়েন্দা বিভাগ। 

তবে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি, সিআরপিএফ জওয়ান মোতি রাম জাটের গ্রেপ্তারের ঘটনাটিকে সুরক্ষা বাহিনীর কর্তৃপক্ষকে বেশি চিন্তায় ফেলেছে।

বুধবার (০৪) মোহালি থেকে গ্রেপ্তার হন আরেক ইউটিউবার জসবীর সিং। পাঞ্জাব পুলিশ জানায়, জ্যোতি মালহোত্রার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল জসবীরের।

সোমবার (০২) কলকাতার বেশ কিছু জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছে এনআইএ। এর পর মহম্মদ মাসুদ আলম নামে এক ট্র্যাভেল এজেন্টকে জেরা করেন এনআইএ কর্মকরতারা। তাকে সন্দেহভাজন টাকা লেনদেনের  বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। দিল্লি থেকে গ্রেপ্তার সিআরপিএফ জওয়ান মোতি রাম জাটের সূত্র ধরেই এই তল্লাশি চালানো হয়।

এছাড়া মঙ্গলবার (০৩)পাঞ্জাব এবং রাজস্থান থেকে গ্রেপ্তার হন আরো দুই ব্যক্তি। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতা গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘গুপ্তচরেরা সব দেশেই থাকেন। তবে রাজনৈতিক বা সামরিক শান্তি বিঘ্নিত হলে তাদের গতিবিধি বাড়ে। 

তবে ভারতের ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশের গুপ্তচরের ধরপাকড় নতুন নয়। সাধারণত অর্থ, ধর্মীয় মত বা রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রভাব ইত্যাদির টোপে সাধারণ মানুষ এই কাজে জড়িয়ে দেন। সব সময় গোপন তথ্য পাচার নয়, সাধারণ দৈনন্দিন তথ্য সরবরাহ যুদ্ধ পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।’

তার মতে, ‘কারো কাছে তথ্য থাকলে এবং কোথায় বা কার সেই তথ্য প্রয়োজন তা জানা থাকলেই, সে বিপজ্জনক।’
সুরক্ষা বাহিনীতে গুপ্তচর!

সিআরপিএফ জওয়ান মোতি রাম জাটের গ্রেপ্তারের ঘটনায়, গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্মকর্তা ডিডাব্লিউকে জানান, ‘চর যেই হোক না কেন, তাদের হ্যান্ডলাররা সাধারণ মানুষ হন। ফোর্সের কেউ হন না। সামরিক বাহিনীর অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা বিভাগ শক্তিশালী। এখন প্রায় সব তথ্য ইন্টারনেটের মাধ্যমে পাওয়া যায়। তবে যে কোনো অপারেশনের আগে অঞ্চল প্রস্তুত করার জন্য গুপ্তচরদের কাজে লাগানো হয়। তাই যে কোনো সুরক্ষা বাহিনীর কেউ মোল বা অন্য দেশের চর হলে তা বিপদের।’

সাধারণত সুরক্ষা বাহিনীর তথ্যের গোপনীয়তার বিভিন্ন স্তর আছে। সামরিক বাহিনীর সংখ্যা কত হবে বা পারমাণবিক ওয়ারহেডসের ঠিকানা কী হবে, তা গোপন বা ক্লাসিফায়েড তথ্য। এ ধরনের তথ্য সম্পূর্ণ গোপনীয়তার মোড়কে মুড়ে ফেলা হয়। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতার রাজনৈতিক মহলের এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা অবশ্য বলেন,‘গুপ্তচর হওয়ার জন্য সামরিক বাহিনী বা পুলিশ বাহিনীতে থাকার প্রয়োজন হয় না। হ্যাঁ, কেউ যদি গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকে তা হলে তথ্যের উপর তার নিয়ন্ত্রণ বেশি থাকবে। কিন্তু সাধারণ মানুষকে দিয়েও যথেষ্ট তথ্য পাচার করা সম্ভব।’ 

সুলতানা দিনা/