ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফার ভোট ‘যথেষ্ট ভালো’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, দ্বিতীয় দফার ভোটে ভারতের বিভিন্ন স্থানে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল।
মোদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে দ্বিতীয় দফার ভোটকে ‘যথেষ্ট ভালো’ বলে মন্তব্য করেন। পাশাপাশি ভারতজুড়ে মানুষকে ভোট দেওয়ার জন্য ধন্যবাদও জানান তিনি। মোদি লিখেছেন, ভোটাররা ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের (এনডিএ) সুশাসন চান। তরুণ ও নারী ভোটাররা এনডিএর দৃঢ় সমর্থনকে শক্তিশালী করে তুলছেন।
গত ১৯ এপ্রিল প্রথম দফার ভোট শেষ হওয়ার পরও একই ধরনের মন্তব্য করতে দেখা গেছে মোদিকে। সেবারও তিনি জানান, ক্ষমতাসীন দল ভালো প্রতিক্রিয়া দেখেছে।
এবারের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি চার শরও বেশি আসন পেতে চাইছে। তাদের সে স্বপ্ন পূরণ হবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। কারণ এটি বাস্তবে রূপ নিতে হলে দক্ষিণে বড় জয়ের প্রয়োজন পড়বে। এমনিতে এনডিএ জোটের পক্ষে পুরো ভারতেই রেকর্ডসংখ্যক ভোট পড়ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে এনডিটিভি।
বেঙ্গালুরুতে ভোটে অংশ নেননি অনেক ভোটার
ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের বেঙ্গালুরুতে মোট ভোটারের প্রায় অর্ধেকই গত শুক্রবার লোকসভা নির্বাচনে অংশ নেননি। কর্ণাটকের ১৪ আসনে ভোটার উপস্থিতি ৬৯ দশমিক ২৩ শতাংশ ছিল বলে অনুমান করছে নির্বাচন কমিশন।
ওই রাজ্যে মোট তিনটি আসনে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। সেগুলো হলো মধ্য বেঙ্গালুরু, উত্তর বেঙ্গালুরু ও দক্ষিণ বেঙ্গালুরু।
মধ্য বেঙ্গালুরুতে মোট ভোটার উপস্থিত হয়েছিলেন ৫২ দশমিক ৮১ শতাংশ। উত্তর বেঙ্গালুরুতে ভোটে অংশ নেন ৫৪ দশমিক ৪২ শতাংশ। অন্যদিকে দক্ষিণ বেঙ্গালুরুতে ভোট দিয়েছেন ৫৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। তিন আসনের প্রতিটিতেই ২০১৯ সালের তুলনায় ভোট কমেছে।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা ভোটারদের এই উপস্থিতির হার নিয়ে হতাশ। এনডিটিভির খবর বলছে, কর্মকর্তারা ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু পারেননি। নির্বাচন কমিশনের শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এর পেছনে কোনো ব্যাখ্যা নেই। এটিই সত্য।’ ভোটার সেভাবে উপস্থিত না হওয়ার জন্য নির্বাচন কর্মকর্তারা তীব্র গরমকেও দায়ী করছেন।
ভোট কমেছে পশ্চিমবঙ্গেও
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় ভোট দেওয়ার হার কমেছে পশ্চিমবঙ্গেও। দার্জিলিং, রায়গঞ্জ ও বালুরঘাট- তিন কেন্দ্রে শুক্রবার সকাল থেকেই ভোটারদের আনাগোনা ছিল। গরম উপেক্ষা করে অনেককেই দেখা গেছে হাজির হতে। কিন্তু তারপরও গতকাল শনিবার নির্বাচন কমিশন যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে, তা থেকে স্পষ্ট যে ২০১৯ সালের তুলনায় ওই তিন কেন্দ্রে ভোট প্রায় ৫ শতাংশ কম পড়েছে।
কেরালায় ভোট কারচুপির অভিযোগ
রাহুল গান্ধীকে ওয়ানাড় থেকে প্রার্থী হতে নিষেধ করেছিলেন বাম নেতারা। কিন্তু তিনি তা শোনেননি। এ নিয়ে ইন্ডিয়া জোটের দুই শরিকের মধ্যে উত্তেজনা দানা বাঁধছিল। সেটিই আরও চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে শুক্রবারের ভোটের পর।
শনিবার (২৭ এপ্রিল) রাহুলের ঘনিষ্ঠ কংগ্রেস নেতা এআইসিসির সাধারণ সম্পাদক কেসি বেনুগোপাল সরাসরি ওই রাজ্যের সিপিএম নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে ভোটে কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন।
বেনুগোপাল এবার কেরালার আলাপ্পুঝা কেন্দ্র থেকে লড়েছেন। শনিবার তিনি বলেন, কেরালায় এবার ভোট ছিনতাই করেছে সিপিএম। মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের সরকার প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন তিনি।
ভোটার কম হওয়ার বিষয়টিও উঠে এসেছে বেনুগোপালের অভিযোগে। তিনি বলেন, ‘কেরালার বাম ক্ষমতাসীনরা ভোটের দিন সাধারণ ভোটারদের হেনস্তা করেছেন। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় এবার ভোটের হার কম হওয়ার পেছনেও এটি অন্যতম কারণ।’
মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস শিবিরে গোলমাল
মহারাষ্ট্রের কংগ্রেস নেতা মোহাম্মদ আরিফ নাসিম খান দলীয় প্রচার কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন। তার অভিযোগ, দল ওই রাজ্যে কোনো মুসলিম নেতাকে মনোনয়ন দেয়নি।
দলীয় প্রধান মল্লিকার্জুন খাড়গেকে এক চিঠিতে তিনি লিখেছেন, বিরোধী জোট মহা বিকাশ আঘাদি (এমভিএ) থেকে এবার একজনও মুসলিম প্রার্থী মনোনয়ন পাননি। এ কারণে তিনি লোকসভা নির্বাচনে প্রচার চালাননি।
আরিফ নাসিম খান লিখেছেন, ‘মোট ৪৮টি লোকসভা আসন থেকে এমভিএ মহারাষ্ট্রে একজনও মুসলিম প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়নি।’
তিনি আরও জানান, মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক মুসলিম সংস্থা, নেতা ও দলীয় কর্মীরা প্রত্যাশা করছিলেন যে কংগ্রেস অন্তত একজন প্রার্থীকে সংখ্যালঘু কমিউনিটি থেকে মনোনয়ন দেবে, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা হয়নি। ৬০ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ আরও বলেন, দলীয় নেতা ও কর্মীরা তাকে এখন জিজ্ঞাসা করছেন– কংগ্রেস মুসলিমদের ভোট চায়, কিন্তু মুসলিম প্রার্থী কেন চায় না?’
চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘এসব কারণে আমি থাকতে পারছি না এবং মুসলিমদের কোনো জবাব দিতে পারছি না।’ সূত্র: এনডিটিভি, আনন্দবাজার পত্রিকা