মিসরের রাজধানী কায়রোতে যুদ্ধবিরতি নিয়ে দ্বিতীয় দিনের মতো মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন হামাস নেতারা। তবে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি।
রবিবার (৫ মে) এই আলোচনার সঙ্গে খুবই ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তার বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, হামাস বলছে- যেকোনো মূল্যে গাজা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে হবে। ইসরায়েলি বাহিনীকে গাজা ত্যাগ করতে হবে। এই দাবির সঙ্গে সংগঠনটি আপস করতে রাজি নয়।
তবে ইসরায়েল এখন পর্যন্ত যুদ্ধ শেষ করার কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি এবং গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারেও তারা ইচ্ছুক নয়। তেলআবিব কেবল হামাসের কাছে জিম্মি থাকা ১৩০ জনের মধ্যে কয়েকজনকে মুক্ত করে আনতে চায়। বিনিময়ে সাময়িক যুদ্ধবিরতি ও বড় সংখ্যায় ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দিতে তারা রাজি আছে।
গত শনিবার ইসরায়েলের একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ‘কোনো অবস্থাতেই যুদ্ধ অবসান হতে পারে- এমন কোনো চুক্তিতে আমরা সম্মত হব না। হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ ও ভালোর জন্য ধ্বংস করার লক্ষ্যে তেলআবিব কাজ করছে।’
অপর আরেক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বলেছেন, ইসরায়েল ব্যাপক যুদ্ধবিরতিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নয়। এ কারণেই আলোচনা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। যদিও হামাসের প্রতিনিধিদল এখনো কায়রো অবস্থান করছে। তারা আশা করছেন, মধ্যস্থতাকারীরা ইসরায়েলকে তাদের অবস্থান পরিবর্তনের জন্য চাপ দিতে পারে।
গাজায় ইসরায়েলি হামলা চলছেই
কায়রোর যুদ্ধবিরতি আলোচনার মধ্যেও গাজায় ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত রয়েছে। উত্তর গাজায় বোমা হামলায় একজন মা ও তার দুই সন্তান নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া বিমান হামলায় দক্ষিণ রাফায় আরও তিনজন আহত হয়েছেন।
গতকাল রবিবার হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ৬৮৩-তে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ৭৮ হাজার ১৮ জন। ভবনের নিচে চাপা পড়ে আছে বহু মরদেহ। ফলে মৃতের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি।
পশ্চিম তীরে চলছে গ্রেপ্তার অভিযান
গাজায় হামলা চালানোর পাশাপাশি অধিকৃত পশ্চিম তীরেও ফিলিস্তিনিদের আটক করা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি পুলিশ ও সেনারা। ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, হেবরন, নাবলুস, তুলকারেম, জেরিকো, রামাল্লা ও জেনিনে ইসরায়েলি বাহিনী নতুন করে অভিযান চালিয়েছে। সাবেক বন্দি ও শিশুসহ অন্তত ২৫ জন ফিলিস্তিনিকে তারা আটক করেছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ৮ হাজার ৫৭৫ জনকে আটক করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
আল-জাজিরা বন্ধে ভোট
প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভা গতকাল রবিবার ইসরায়েলে আল-জাজিরার কার্যক্রম বন্ধ করার পক্ষে ভোট দিয়েছে। এক সরকারি বিবৃতিতে এমনটাই বলা হয়েছে। এ ছাড়া নেতানিয়াহু নিজেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, ‘আমার নেতৃত্বাধীন সরকার ইসরায়েলে উসকানিমূলক চ্যানেল আল-জাজিরা বন্ধ করতে সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
এর আগে ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটে বিদেশি সম্প্রচার মাধ্যম বন্ধ করা সংক্রান্ত আইন পাস হয়েছিল।
তবে ইসরায়েলে এখনো আল-জাজিরার কার্যক্রম চলছে। কর্তৃপক্ষ সুনির্দিষ্ট করে জানায়নি- কখন এটি বন্ধ করা হবে। নেতানিয়াহু নেতৃত্বাধীন ইসরায়েলের বর্তমান প্রশাসন কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার ভূমিকা নিয়ে সন্তুষ্ট নয়। একাধিকবাব সরাসরি বিষয়টি তারা জানিয়েছে। এ ছাড়া গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আল-জাজিরার বেশ কয়েকজন প্রতিবেদকও নিহত হয়েছেন। যা নিয়ে তেলআবিবকে দুঃখ প্রকাশও করতে দেখা যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনিপন্থিদের বিক্ষোভ অব্যাহত
চলতি সপ্তাহেও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন ফিলিস্তিনিপন্থি বিক্ষোভকারীরা। ভার্জিনিয়া ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের বরাতে গতকাল রবিবার সিএনএন জানিয়েছে, শনিবার রাতেও ক্যাম্পাসে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালানোয় ২৫ জন বহিরাগতকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদেরকে আলবার্টা কাউন্টি রিজিওনাল জেলে পাঠানো হয়েছে।
এ ছাড়া একই দিনে শিকাগোর আর্ট ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাসে আন্দোলনরত প্রায় ৫০ ফিলিস্তিনিপন্থিকে আটক করেছে। ইনস্টিটিউটের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, বিক্ষোভকারী একজন নিরাপত্তাকর্মীর কাছ থেকে ক্যাম্পাসের জাদুঘরের গেটের চাবি ছিনিয়ে নেয়। পরে জরুরি বহির্গমন দরজা ও ব্যারিকেড গেট তারা বন্ধ করে দেয়। পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে বিক্ষোভকারীদের সরে যেতে অনুরোধ করে। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা তারা এই ইস্যুতে আলোচনাও করে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে। কোনো সমাধান না আসায় পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। শিকাগো পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদেরকে গ্রেপ্তারে সবচেয়ে নিরাপদ পন্থা অবলম্বন করা হয়েছে। সূত্র: রয়টার্স/আল-জাজিরা/সিএনএন